Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2022

অর্ক আর সুমন

স্কুল থেকে ফিরেই দুদ্দাড় করে স্নান, হুশহাশ করে ঝোল-ভাত সাফ করা। এর পর অর্ক গিয়ে বসে ছাতের ঘরে। এ'টাই তার দুপুর-সাম্রাজ্য। আর তার সাম্রাজ্যে সবচেয়ে দামী জিনিস হল একটা ফিলিপ্সের পুরনো টেপরেকর্ডার।  মেজদা এক জন্মদিনে উপহার পেয়েছিল, কলকাতার কলেজে পড়তে যাওয়ার আগে অর্ককে উইল করে দিয়ে গেছে।  তা'তে প্রচুর হিন্দি গান শোনে অর্ক। প্রচুর। কুমার শানু, উদিত নারায়ণ, অলকা ইয়াগ্নিক আর সাধনা সরগম; তার খুব পছন্দ। ফুলকাকার ধারণা অত লারেলাপ্পা হিন্দি গান শুনে অর্ক বখে যাবে। বাবার ধারণা ফুলকাকা বড্ড বেশ চালবাজ, সে'টাই বাঁচোয়া।  বাবা বলে "যে গান পছন্দ সে গানই শুনবি। গানও যদি অন্যের মতে শুনতে হয়, তা'হলে আর বেঁচে থেকে হবেটা কী"। ** - এক্সকিউজ মী। এই যে আপনি..আপনাকে কি আমি চিনি? - আরে, মিস্টার চ্যাটার্জী৷ হোয়াট আ প্লেজ্যান্ট সারপ্রাইজ। আমি আপনারই অপেক্ষায় বসেছিলাম তো৷  আমিই দুলাল। - এই অঞ্চলে আমি এর আগে আসিনি৷ একটা জরুরী কাজে আচমকাই এ'দিকে..। এই চায়ের দোকানও আগে দেখিনি৷ আচমকাই চলে এলাম। আমি জানতাম না এই বেঞ্চিতে আপনি বসে থাকবেন৷ নেহাত আপনার মুখটা একটু চেনা ঠেকল.. তাই দাঁড়িয়ে জিজ্ঞে

আলভারেজের ধনরত্ন

ঘুম ভাঙার পর আলভারেজ থ৷ এ কী৷ দিব্যি তাঁবুর মধ্যে ক্যাম্বিসের খাটে লম্বা হয়েছিল৷ অথচ ঘুম ভেঙে দেখছে সে একটা বিশাল বাওবাব গাছের তলায় শুয়ে৷ হাত-পা বাঁধা। আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আলাভোলা মুখের জনা পাঁচেক জংলি লোক৷ আলভারেজ বুঝলে এরা বুস্ত্ববা উপজাতির লোক, এ অঞ্চলে এদের সাংঘাতিক দৌরাত্ম্য। এদের বড় একটা কেউ দেখেনি কারণ তানজানিয়ার জঙ্গলের এই দুর্গম অঞ্চলে বড় কেউ তেমন সুবিধে করতে পারেনা৷ গতকাল রাত্রেই আলভারেজ ভাবছিল যে এ পোড়া জায়গায় হীরে খুঁজে হন্য হয়ে লাভ নেই; এ অঞ্চলের একেকটা মশাও এক্কেবারে পান্তুয়ার সাইজের। এ'খান থেকে সময়মত কেটে পড়াই মঙ্গলজনক। আলভারেজ ভেবেছিল আজই বেলার দিকে হীরের লোভ ত্যাগ করে কলকাতায় এসে বিরিয়ানির দোকান দেবে৷ বেশ কয়েকজন ইন্ডিয়ান তাঁকে বলেছে কলকাতায় বিরিয়ানির দোকান দেওয়া মানেই নাকি 'গোল্ডডাস্ট'৷ কিন্তু তার মধ্যে এই ঝামেলা৷ বুস্ত্ববাদের মধ্যে নেতাগোছের একজন এগিয়ে এসে ভাঙা হিন্দিতে কিছু বললে৷ আলভারেজ অবাক হলে না, এই গভীর জঙ্গলে আর কিছু না থাক; বলিউডি এফএম চ্যানেলের রমরমা খুব৷ আলভারেজ নিজেও কাজ চালানোর মত হিন্দি শিখে নিয়েছে৷ - তোমার সাহস তো কম নয় সাহেব৷ আমাদের অঞ্চলে

চপ ও মেসোমশাই

বছর আষ্টেক আগে৷ কোথায় একটা যাওয়ার পথে হুগলীর কাছে হাইওয়ে ঘেঁষা একটা জায়গায় গাড়ি থামানো হয়েছিল৷ রুখাশুখা খটখটে দুপুর৷ সে'জায়গায় দোকানপাট বড় একটা যে ছিল তাও নয়৷ কিন্তু খিদে এতটাই প্রবল ছিল যে ভাতের হোটেল খুঁজে বের করার ধৈর্য ছিলনা৷ পাশাপাশি দু'চারটে গুমটি গোছের দোকান দেখেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম৷ গুমটিগুলোর মধ্যে যে'টাকে সবচেয়ে 'রিসোর্সফুল' মনে হয়েছিল, সে'টার দিকেই এগিয়ে গেলাম৷ কাছে গিয়ে দেখলাম সাংঘাতিক অলরাউন্ডার দোকান৷ চা-বিস্কুট, সিগারেট-বিড়ি, চপ-ঘুগনি, মুড়ি-পাউরুটি; সব মিলে এই অসময়ে এই বেজায়গায় বেশ সুব্যবস্থাই বলতে হবে৷ দোকানি মেসোমশাই একটা ঘটংঘটং শব্দ করে চলতে থাকা টেবিলফ্যানের দিকে পিঠে করে ঝিমুচ্ছিলেন৷ "ফ্রেশ চপ" ভাজা হবে কিনা জানতে চাওয়ায় তার মেডিটেশনে ব্যাঘাত ঘটল৷ তবে ঘুমের চেয়ে খদ্দের জরুরী। অতএব এক ঝটকায় চোখ থেকে ঘুমঘুম ভাব উড়িয়ে জানান দিলেন যে বেসনটেসন গুলে ফের চপ ভাজার ব্যবস্থা করতে সেই বিকেল৷ তবে আশ্বাস দিলেন যে স্টকের আলুরচপ মিয়ানো হলেও স্বাদে যে টপক্লাস। খিদে পেটে অত বাছবিচার করলে চলে না৷ আর আমার এবং আমার বন্ধুর পেটের মধ্যে চলতে থাকা ছুঁচোর কী

স্যামপ্লিং

এই সাইজের স্টিলের প্লেট সাধারণত আড়ালে-আবডালে পড়ে থাকে৷ শৌখিন খাবারদাবার পরিবেশনের সময় এদের কদর বড় কম। তেমন কিন্তু এ'গুলো অবহেলার বস্তু নয় মোটেও৷ এ'দের মূলত দু'টো কাজ৷ এক, ব্যাকএন্ড৷ এ'গেলাস ও'পাত্রের টেম্পোরারি ঢাকনি হিসেবে৷ দুই, ফ্রন্ট এন্ড, আইকনিক ভূমিকা; স্যাম্পলিং প্লেট৷ রোব্বারের মাংসের ঝোলের কড়াই থেকে তুলে নেওয়া একটা সরেস পিস আর সামান্য ঝোল; সঙ্গে হাফ-হাতা পোলাও৷ স্যাম্পলিং চলে স্নানের আগে৷ স্নানের সময় গড়িয়ে যায়৷ নুন বেশি, ঝাল কম; এ'সব অভাব-অভিযোগের করেকশন চলে৷ অতএব প্লেট রিফিল হয়৷ রান্না নিখুঁত হলে রিফিলের গতি বেড়ে যায়৷ ফুচকা খাওয়ার স্ট্রাকচার আর ডিসিপ্লিন দিয়েই মাংস-পোলাও 'স্যাম্পলিং'। গুরুজনরা বলেছেন "সে'টাই হল Soul of Robbar"। এরপর সে প্লেট চেটেপুটে সাফ করে, তেলতেলে আঙুল চাটতে চাটতে নিজের প্রিয় গামছার খোঁজে বারান্দায় ছুটে যাওয়া৷ লাঞ্চে দেরী করলে চলবে কেন?

আমার জানলা দিয়ে যায় না দেখা

- কী বুঝছ ভায়া৷ - অ..অদ্ভুত৷ - ভূতের মুখে অদ্ভুত শব্দটা কেমন লাগে যেন। - বেঁচে থাকতেও আমি ভূতে বিশ্বাস করতাম বটে৷ কাজেই ফস্ করে মরে গিয়েও যখন দেখলাম পুরোপুরি হাপিস হয়ে যাইনি, তখন চমকে যাইনি৷ কিন্তু এই সারপ্রাইজটা তখনও এক্সপেক্ট করিনি অমলদা। - আরে আমারও তো মরার পর সে' অবস্থাই হয়েছিল ভাই বিনোদ৷ ভূত হয়ে দেদার ঘুরব, টেনশন-ফেনশন থাকবে না ভেবে দিব্যি ছিলাম৷ ইচ্ছে ছিল মাঝেমধ্যে এর ওর পিলে চমকে দেওয়ার৷ অথচ দেখ কত হ্যাপা৷ এর চেয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কম৷ - অনেক কম। এমন জানলে নিজের শরীরটার অনেক যত্ন নিতাম৷ হাবিজাবি খেতাম কম৷ নিয়মিত যোগব্যায়াম করতাম৷ - কিন্তু এ পাপ থেকে তো মুক্তি পেতে না৷ কয়েক বছর এ'দিক ও'দিক হত৷ - ব্যাপারটা এখনও কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকছে অমলদা৷ সত্যিই কি তাই? - নতুন ভূতদের পুরনো ভূতরা গাইড করে দেয়৷ তোমাকেও ভালো মনে আমি বুঝিয়েপড়িয়ে নিচ্ছি৷ ঠকাব কেন বলো৷ - ছিঃ ছিঃ, আমি তা বলতে চাইনি৷ কিন্তু মানুষ মারা যাওয়ার পর তাদের ভূত টাইম ট্র ‍ ্যাভেল করে জন্মের সময়ে ফিরে যায়, এমনটা কেমন যেন...কেমন যেন..। - বিদঘুটে৷ তাই না? - তাই তো। - জন্ম থেকে মৃত্যু লূপে দেখে যেতে হবে৷ হাজার হাজার ব