Skip to main content

Posts

Showing posts from 2013

একটি চুরির ঘটনা

১ অনিন্দ্য নিজেকে গোয়েন্দা বলতে বেশ লজ্জাই পায়। মাসে যে ক'টা কেস তার কাছে আসে, তা প্রায় সবই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী সম্বন্ধে গোপনে খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে – পাত্রর মাইনে-কড়ি ঠিক কত, পাত্রীর কোনও গোপন প্রেম রয়েছে কি না ইত্যাদি। তার তোপসে নেই, আছে শুধু তার ঘরের ও অফিসের কাজের লোক কমল। তার কাছে যে এমন কেস কিভাবে এলো। ভাবতে ভালো যতটা না লাগছে, তার চেয়ে বেশি লাগছে ভয়। দশ বছর হল এ লাইনে কাজ করছে অনিন্দ্য। তার এই সুপার শার্প ডিটেকটিভ এজেন্সি পাত্রপাত্রী খবরাখবর জোগাড়ে বেশ নাম করেছে শহরে। কিন্তু তাই বলে এমন জটিল কেস ? ডাইরেক্ট মূল্যবান সম্পদ চুরি ? এমন মক্কেল তার অফিসে আসলে কি চায়ের সঙ্গে সামান্য টা’য়ের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ ? কমলের সঙ্গে কনসাল্ট করতে হবে। ২ দীপক মিত্র’র চেহারা দেখে বয়স চল্লিশের বেশি মনে হয় না। চেহারা ভারি ডাক-সাইটে, হীরের ব্যবসায়ীর চেহারা এমনটাই হওয়া উচিৎ। গলার স্বর ঠিক বাজখাঁই নয়, তবে দম আছে। অনিন্দ্যর বেশ নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু দীপকবাবু যখন জানালেন যে চুরি হচ্ছে ‘কলকাতার শীত’, তখন অনিন্দ্যর মালুম হল যে ভদ্রলোকের মাথায় ছিট রয়েছে। মানে মা

স্যান্টার সারপ্রাইজ

মন বিলকুল  ভালো নেই। ডিসেম্বর এসে গেল তবু ধোপার ব্যাটা পশমের ওভার কোট আর প্যান্টালুন ফেরত দিলে না। লাগসই টুপিখানা সেই যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে হাওয়া, এখনও খুঁজে পাওয়া গেল না । নতুন এক খানা টুপি জোগাড় করে নেওয়া যায় বটে, তবে পুরনোটার মায়া ত্যাগ করা কি অতই মামুলি ? ওদিকে স্লেজ খানার মধ্যে রাজ্যের উচ্চিংড়ের বাস। সাফ করতে জান কয়লা হয়ে যাবে। রেইন-ডিয়ার গুলো রাম আলসে হয়ে উঠছে, দিনরাত শুধু গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর মেদ বাগাবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপদ অন্য জায়গায়। গিন্নী বেজায় জেদ ধরেছেন ডায়েট করে রোগা হতে হবে। এমন তাবড় ভুঁড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে নাকি গিন্নীর ইজ্জত ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। গত দু'মাস যাবত খাওয়া-দাওয়ায় জোর করে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাটাচ্ছেলে ভুঁড়িও গিন্নীর সাথে তাল মিলিয়ে ইঞ্চি চারেক কমে গেছে ইতিমধ্যেই ।  লাও ঠ্যালা। রস ছাড়া যেমন রসগোল্লা হয় না, তেমনি ভুঁড়ি ছাড়া কি স্যন্টা ক্লজ্‌ হয় ? চিমসে চেহারার কাউকে দুনিয়ার কোন বাচ্চা কি স্যান্টা ক্লজ্‌ বলে কদর করবে ? এই সব সাত পাঁচ ভেবে ভেবে স্যান্টার রাতের ঘুম হাওয়া। গতবারে ইকুয়েডোরের এক খুকির উপহার শ্যামনগরের এক মিচকে খোকার উপহারের সঙ্গে গ

শীত Of কোলকাতা - The Essential Elements

ডিসেম্বর জুড়ে বসছে শহরে। সন্ধ্যের মুখে হাফ সোয়েটারটি আর বেমানান মনে হচ্ছে না। কলকাতাইয়া হাওয়াতেও চামড়ায় ছ্যাঁত হচ্ছে। সেন মহাশয় নলেন গুড়ের সন্দেশে বাজার মাতাচ্ছেন। তা বাঙালির শীত পিকাসিও হয় কি প্রকারে ? বহুবিধ আবেদনময় পৌষ-মাঘি সৌখিনতার হাত ধরে। রবীন্দ্রনাথ বিনে বাঙালি হয়তো বা বাঙালি হলেও হতে পারতে; তবে পৌষ ম্যাজিক বিনে বাঙালিজ্‌ম বলে কিছু থাকতো কিনা সে বিষয়ে সবিশেষ সন্দেহ আছে। বঙ্গ-শীতের সেরা মশলাগুলো কি কি ? অগোছালো ভাবে সাজিয়ে দেওয়া যাক Essential Elements of Kolkata Winter ---- চড়ুইভাতি। অর্থাৎ পিকনিক (ফ্যামিলির সাথে) বা ফিস্টী (পাড়ার বন্ধুদের সাথে)।  The mandatory Picnic       সিঙ্গারায়

অফিসার

জীবনে রয়েছে শুধু অফিস, মাছের বাজার আর মাস কাবারি। এর বাইরে সব ফাঁকি। যেদিন অফিস ফুরোবে; রেসিডিউ হিসেবে পড়ে রইবে শুধু ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেশার। বউ, খোকা, বাবা, মা এ সবই ট্রান্সিটরি ব্যাপার। লাইফের নিউক্লিয়াস হচ্ছে অফিস। দিনে আট ঘণ্টা ঘুম, হাতে রইলে ১৬ ঘণ্টা। বাসে-ট্রেনে-বাথরুমে-বাজারে ৪ ঘণ্টা। হাতে রইলে বারো ঘণ্টা। এই ব্যবহারিক বারো ঘণ্টার মধ্যে বেবাক দশ ঘণ্টাই হজম করে নেয় অফিস। আর দু ঘণ্টা পরিবার- পরিজন – আত্মীয়স্বজন নিয়ে হাহাকার করে কি হবে ? অফিসই রামকৃষ্ণ। বস’ও খেপচুরিয়াস, বউ’ও ডাইনোসরিও। বউ কে তোল্লাই দেব আর বস কে দেব পেল্লায় খিস্তি-সব, এ কেমন কথা ? ভেবে দেখলাম বউ কে যেমন ভাবে সামাল দিই, ঠিক একই ভাবে বস কে ম্যানেজ করতে পারলেই ল্যাঠা চুকে যায়।   বস সেদিন বললে “ তোমার মার্কেট শেয়ার গোল্লায় যাচ্ছে হে, এমন গদাই –লস্করি করে চললে তোমার মুণ্ডুটি আস্ত থাকবে ভেবেছ ?” মনে মনে বস’কে বললাম- “ রেগে যেও না মাইরি, নেক্সট পুজোয় একটা বালুচরি। প্রমিস”।  ব্যাস অমনি রাগ গলে জল; বসের রাগ নয়,  আমার রাগ গলে জল।

প্যান্ডোরার বাক্স

প্যান্ডোরা অস্থির হয়ে পায়চারি করচিলেন। ঘেইমে-নেয়ে সে এক একাকার কাণ্ড। ঢাউস বাক্সখানা রাখা আছে চিলেকোঠার ঘরে। কত্তা বার বার কয়ে গিয়েচেন যেন বাক্সখানের ধারে কাছে প্যান্ডোরা না ঘেঁষে। কিন্তু মনের মধ্যে তার কেমন যেন এতাল-বেতাল হচ্ছে গো। মিনসে ভর দুপুরে অমন বাক্স নিয়ে এলেন কেন গো। আনলেনই যখন তখন চিলেকোঠার কোনায় লুইকে রাখলেন কেন গো। লুইকে রাখলেনই যখন, তখন প্যান্ডোরাকে সে বাক্সের ধারে কাছে যেতে বারণ করলেন কেন গো। মিনসে বারণ করে আবার নিজে বাড়ি থেকে বেইরে গেলেন কেন গো। এখন প্যান্ডোরা কি করবে গো।

এক্সপেরিমেন্ট

দিবাকর দু আঙুলের ফাঁকে সাবধানে টেস্ট টিউবটাকে ধরে নাড়ছিলেন। আড়চোখে খেয়াল রাখতে হচ্ছিল স্টপওয়াচের প্রতি। পাক্কা বাহাত্তর সেকেন্ড। তারপর একটা চিমটে দিয়ে টেস্ট টিউবটার টুঁটি টিপে বার্নারের ওপর ধরলেন। দিবাকরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, গরমের নয়, উত্তেজনার। এই ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে এর আগেও বহু চমৎকার ঘটনা ঘটেছে; কখনও তাঁর হাতে, কখনও বা তার সহকর্মী ইন্দ্রে’দার তত্ত্বাবধানে। তবে এই প্রথম দুজনে এক সঙ্গে মাঠে নেমেছেন কারণ কাজটা তেমনই দুর্দান্ত। এই কম্পাউন্ড আবিষ্কার হলে দুনিয়ার ভোল পাল্টে যাবে। এক সময় মনে হচ্ছিল কাজটা অসম্ভব। কিন্তু ভাগ্যিস দুজনের কেউই হাল ছেড়ে দেননি। ব্রেক-থ্রুটা আসে গত পরশু সন্ধ্যে বেলা। কি ভাবে সেটা বলাই বাহুল্য কিন্তু দুজনেই লাফিয়ে উঠেছিলেন। একটানা ত্রিশ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে তারপর থেকে দুজনে কাজ করে গেছেন। এই সামান্য কিছুক্ষণ আগে ইন্দ্রদা গেছেন একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে।

নামকরণ

লালু রেগে কাই । রাগবে নাই বা কেন ? পল্টু ব্যাটা একেবারে ইস্টুপিড। টিফিনের পরের প্রথম ক্লাসে বাংলার স্যার অমন দরাজ গলায় “ কন্যাকুমারীর রকমারি মনিহারী” কবিতাটি পাঠ করছিলেন; ক্লাসময় স্যারের আওয়াজ গমগম করে খেলা করছিল, গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল লালুর। অমনি পল্টে ব্যাটা এমন একটা বিরাশি সিক্কার হাঁচি ঝাড়লে যে সব মাটি। ছন্দপতন ঘটায় স্যার ফের ফিরে গেলেন সমাসে। রাগে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল লালুর। এই বাংলার স্যার নতুন এসেছেন, মাঝে মাঝেই স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। ক্লাসের বাকি ছেলেরা ফচকেমি করে যে এই নতুন স্যারকে দাঁড়িলেস-রবীন্দ্রনাথ বলে ডাকে, তাতে লালু ভারি মর্মাহত হয়। ইয়ে, এই মর্মাহত শব্দটা লালু নিয়মিত ব্যাবহার করছে আজকাল, সেনটেন্সে বেশ জোর আসে তাতে। লালু্র ভারি অপূর্ব লাগে নতুন বাংলা স্যারের কবিতা। স্যারের দেশ  বেড়ানোর নেশা আছে, আজ হিমালয় তো কাল কেরল। আর ঘুরে এসেই রোমাঞ্চকর সব কবিতা লেখেন। সে সব লেখায় যেমনি আবেগ, তেমনি তার ভাষা, তেমনি ছন্দ- ভারি হাইক্লাস। কবিতাগুলো লালুর মনের মধ্যে বায়স্কোপ চালিয়ে দেয়; এমন রিয়েল লেখা সেই সব।

ইভনিং শাওয়ার

বাথরুমে এত রকমের সাবান সাজানো থাকে যে নির্মল রোজই খেই হারিয়ে ফেলেন। নতুন কোম্পানি থেকে সাজানো ফ্ল্যাট দেবে তা বেশ জানা ছিল কিন্তু তার বাথরুমের চেকনাইও যে এমন হবে, সেটা আগে ভাবা যায়নি। বউ-ছেলেকে তাড়াতাড়ি অন্ডালের বাড়ি থেকে এখানে নিয়ে আসতে হবে। এখন কত তাড়াতাড়ি দীপা ও বুম্বা এখানকার সোসাইটির আদব কায়দা রপ্ত করতে পারে সেইটেই দেখবার। বাথরুমের ক্যাবিনেট খুলে মনে ভরে প্রসাধন সম্ভার দেখতে থাকেন নির্মল। হাত ধোয়ার সাবান এক, মুখ ধোয়ার সাবান অন্য।  বাকি শরীরের ধোয়ার জন্যে অন্তত চার রকমের সাবান – লিকুইড আর বার মিলে। লেবেল পড়ে নির্মল বুঝতে পারেন একেক সাবানের মর্ম একেক রকম; একেক রকম স্কিনের জন্যে একেক চিজ্‌, নিজের চামড়ার রকমটা এতদিনেও জানা হয়ে ওঠেনি নির্মলের। স্ক্রাব বলে কিছু একটা ব্যাপার রয়েছে যা দিয়ে বোধ নিজেকে বেশ রগড়ে পরিষ্কার করা যায়।

ইভনিং পার্টি

সান্যাল – আই হোপ তুমি আজকের ইভনিং পার্টির ইম্পরট্যান্স বুঝতে পারছ গাঙ্গুলি। গাঙ্গুলি  - অ্যাব্‌সলিউটলি স্যার। কন্ট্র্যাক্ট পাওয়ায় জন্যে ঢান্ডানিয়া কে যে আমরা স্পেশাল ফেভার অফার করতে পিছপা হব না, সেইটা কনভে করবার এর চেয়ে বেটার প্ল্যাটফর্ম আর পাওয়া যাবে না। সান্যাল – প্রিসাইসলি। ইন ফ্যাক্ট,আগাম হাতে গুঁজে দেওয়ার জন্যে কিছু ক্যাশ আমি সঙ্গে রাখছি। দ্য সুনার উই টাই হিম ডাউন দ্য বেটার।

চিন্তার ব্যাপার

লাঞ্চ হয়ে গেছে দেড়টার মধ্যেই। এই সময়টা দেবুবাবু একটু জিরিয়ে নেন। অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা জর্দা-পান, একটু আনন্দবাজার, অ্যাকাউন্টস’য়ের সামন্তের সঙ্গে চাট্টি কথা, একটা গোল্ডফ্লেক। অতঃপর ফের টেবিলে ফিরে এসে  ফাইল মন্থন। বারান্দাটা চওড়া। কিন্তু ভারি স্যাঁতস্যাঁতে। ব্রিটিশ আমলের বাড়ি কি না। সতের  বছর আগে জয়েন করেছেন দেবুবাবু; কিন্তু এর মাঝে অফিসে একবারও চুনকাম হয়েছে বলে মনে পড়ে না। পাঁচতলার এই বারান্দা থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ব্যস্ততা দেখতে দেখতে দিব্যি সময় কেটে যায়। আনন্দবাজারের খেলার পাতায় পৌঁছে , পান চিবোনো শেষ করে এবং গোল্ড ফ্লেক ধরিয়ে; দেবুবাবু টের পেলেন যে সামন্ত ছোকরা এখনও আসেনি। আজ সামন্ত কামাই করেনি, কারণ গুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানির ফাইলটা নিজের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল সকাল বেলা।

কোলকাতা ও কোলকাতাইয়া

গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন কমলেশ। ওর গ্রাম বিহারের সুপল জেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রামের নামটি ভারি সুন্দর ; নির্মলি। বছর পাঁচেক আগে এক ভয়ানক বন্যায় কোশী নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার ভিটে মাটি ও একটি বাছুর কে। স্ত্রী ও দুই শিশু কে নিয়ে তারপর সোজা কলকাতায় চলে আসেন কম্‌লেশ। বন্যার আগে কমলেশ শহর বলতে দেখেছে দ্বারভাঙ্গা , মুজঃফরপুর ও পাটনা। তবে ভিটেমাটি হারিয়ে কমলেশ ’ য়ের মনে প্রথমেই আসে কলকাতার কথা। সে শুনেছিল যে সেখানে গতর খাটিয়ে দু পয়সা কামানোর সুযোগ প্রচুর।

দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার

দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার। ক্যালকাটা ইজ অন ফায়ার। পুরনো পুজোবার্ষিকী সমস্ত নামানো হয়ে গেছে। ফ্রম শুকতারা টু আনন্দমেলা টু দেশ। দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই পেট-ক্লেন্সিং তথা কন্ডিশনিং শুরু। মিনিমাম মটন, নিয়মিত অ্যান্টাসিড। যাতে পুজো এলে ‘জয় মা’ বলে খাসি-মুর্গির বন্যায় নিজের গা ভাসিয়ে দেওয়া যায়। গড়িয়াহাট থেকে একটা পাঞ্জাবি আর একটা ফতুয়া, নিউ মার্কেট থেকে হাফ শার্ট কেনা হয়ে গেছে। খাদিম থেকে এক জোড়া জব্বর চটি কেনা হয়েছে যা পায়ে দিয়ে খিচুড়ি ভোগ বিতরণও করা যাবে আবার অনায়াসে পার্ক স্ট্রীটে গিয়ে কেতাবি হন্টনও চালানো যাবে।   সিদ্ধি খেয়ে বেহেড নেচে নিজেকে বেইজ্জত করব না, এ প্রতিজ্ঞা অন্য বছরগুলোর মত এবারেও করেছ। ফিঙ্গারস্‌ ক্রস্‌ড। অফিসে ক্যাসুয়াল লিভ অ্যাপ্লাই করে বসকে বেদম তোষামোদ শুরু করে দিয়েছি। একাদশী টু লক্ষ্মী পুজো ট্রিপ টু পুরী। জগন্নাথ এক্সপ্রেসের বার্থ অবিশ্যি দেড় মাস আগেই বুক করে রাখা হয়েছে। আমেরিকা থেকে মাকু আসছে, ব্যাঙ্গালোর থেকে হুলো। অতএব সপ্তমী টু বিজয়া দুপুর-বিকেল আড্ডার টাইম টেবিল ফিক্সড। প্ল্যান কষতে বেশ মশগুল। এই রবিবারের দুপুরেও ভাত-

কারণ

দাড়ি না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ কবিগুরু হতেন। তবে গুরুদেব না থাকলে কি সফেদ ঝুলন্ত দাড়ি বাঙালি মানসে অমন দাপটে জায়গা পেত ? পেত না। কজ্‌ অ্যান্ড এফেক্ট; সঠিক ফ্রেমে না ফেললেই মুস্কিল। এগজ্যাম্পেলটা বেশি সাদামাঠা হয়ে গেল। জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই ফ্রেমটাই ঠিকঠাক সাজিয়ে ওঠা মুস্কিল। এই যেমন সিঙ্গারা; তার টান কি নিমকি সুলভ চামড়ায় না মখমলে আলুর পুর থেকে ?

শিক্ষক

মাঝরাত-গুলোর রোয়াবই আলাদা। যারা শহুরে রাত জাগায় অভ্যস্ত; তারা জানেন যে রাত্রের আকাশও ঠিক নিকষ কালো হয় না। রাতের আকাশের রঙ আছে, আবছা আলোছায়া আছে। কৈশোরে, সেই আলোছায়াতেই প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম যে এই সুমন ভদ্রলোকটির গান গুলো বেসুরো নয়; বরং বেশ অবলীলায় পাঁজরে হাত বুলিয়ে যায় সে সব সুর।

ফিলিপ কোটলার ও মানব জীবন

এটা ভাঁওতার যুগ। মার্কেটিঙের যুগ। নেকু বাঙালি সেজে থাকলে কিস্যু হওয়ার নয়। এর কাঁঠাল অন্যের মাথায় ভেঙ্গে দিন গুজরান ; এই হল মন্ত্র। দুনিয়ার সামনে নিজেকে একটা প্রডাক্ট হিসেবে জাহির না করতে পারলেই চিত্তির। ফিলিপ কোটলার সাহেব পই পই করে বলে দিয়েছেন যে কোনও পণ্য কেতার সঙ্গে বেচতে হলে প্রয়োজন সঠিক বিপণন মিশেল অর্থাৎ চারটে P , যথা Product, Price, Place এবং Promotion। এই চারটে P ’কে নিজের জীবনেও যদি যুতসই ভাবে ব্যাবহার না করা যায় তবে বিষম কেস।

মাধুকরী

ঘুগনি। পাঁঠার কিমা ছড়ানো আবেদনময় ঘুগনি। এলুমিনিয়ামের ডেকচিতে টগবগ করে ফোটা পিকাসো মেজাজের ঘুগনি। মোড়ের মাথার মাধবদা’র ঠেলা।  থরে থরে ষ্টীলের প্লেটে ঘেরা ঠেলার চারপাশ। কেরোসিনের পাম্প দেওয়া স্টোভের গনগনে আঁচ। তার ওপরে মোহময় সেই ডেকচি। যার ভেতরে ফুলে ফেঁপে উথলে উঠছে ঘুগনিয় ঈশ্বর। পাশে প্লাস্টিকের মাঝারি মাপের সবুজ গামলার তিন ভাগ জুড়ে কুচোনো পেঁয়াজের ঢিপি আর বাকিটা জুড়ে লংকা কুচি।

মামা ভাগ্নে সংবাদ এবং পুজো পরিকল্পনা

ছোটমামা – “ কি বললি ? এবার পুজোয় তুই পাড়ায় থাকবি না?” আমি-“ কতবার বলব ? নো। না। নেভার। হাওড়া টু কালকা টিকিট কেটে ফেলেছি।  পুজোর পাঁচটা দিন শিমলা এবং মানালিতে কমপ্লিট রিল্যাক্সেশন” ছোটমামা – “ টিকিট কাটার সময় আমার পারমিশন নিয়েছিলি ?” আমি- “ বাবা’র পারমিশন নিয়েছি” ছোটমামা – “ ভারি এক্কেবারে পিতৃভক্তি উথলে উঠেছে। টিকিট ক্যান্সেল কর। তোর যাওয়ার কোন প্রয়োজন আমি দেখছি না। এক কাড়ি টাকা নষ্ট। কলকাতার অক্টোবরে গায়ে কম্বল চাপা দিস, শিমলে গেলে বেঁচে ফিরবি ভেবেছিস ?”

বাঙালি ও বৃষ্টির ব্যাপার-স্যাপার

বৃষ্টির ব্যাপারে কবিতা লিখে আর গান বেঁধেই যেন সব্বার দায়িত্ব খালাস। বৃষ্টিতে ভেজার বেলায় শুধু রবিনা ট্যান্ডন।  বৃষ্টির ছাঁট সামান্য গায়ে এসে পড়েছে কি আঁতকে ওঠা শুরু। জামা কাপড় বিগড়ে যাওয়া, অসময়ে জ্বর; এমন হাজার চিন্তা মানুষের মনে।   বৃষ্টির উৎপাত এড়াতে মানুষের কত ফন্দি ফিকির। কেউ বানালেন ছাদ। কেউ বুদ্ধি করে আবিষ্কার করে ফেললেন ছাতা। তৈরি হল হাই-ড্রেন। পথ চলতি মানুষের গায়ে উঠলো বর্ষাতি, পা ঢাকতে গাম বুট।

একটি মই কেনার আগ্রহ ও বাঁশ

ডাকনাম খোকন হলে কি হবে, খোকনবাবু রীতিমত কলপে এবং চ্যবনপ্রাশে জীবনযাপন করেন। সেদিনকেও চ্যবনপ্রাশের চামচ সবে মুখে চালান করেছেন, ঠিক তখন খবরের কাগজের একটি বিজ্ঞাপনে তার নজর আটকে গেল। দেখলেন এক মাদ্রাজি কোম্পানি টেলিফোনে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি মই সাপ্লাই করে। বাঙালি বাঁশের মই নয়, ফাইবার ল্যাডার। সেই মই নাকি ইচ্ছে মত ছোট-বড় করে নেওয়া যায় । কোনাকুনি, লম্বালম্বি যে কোন ভাবে বাড়ির দেওয়ালে লাগানো যায়। মইয়ের মাথায় উঠে অনায়াসে হেলান দিয়ে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেতে পারে; এতটা সুরক্ষিত ব্যবস্থা তার । খোকনবাবুর মনে হল যে সিলিং ফ্যানের ঝুল ঝাড়তে বা বুক শেল্ফের একদম উপরের তাকে গিয়ে কেরদানি করতে বা বাড়ির পুরনো ইলেকট্রিক মিটারের রিডিং পড়তে তাকে যে হিমশিম খেতে হয়, এই ফাইবার মই জুটলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। এমনকি ঘরোয়া স্পাইডারম্যান বনে যেতেও কোনও অসুবিধে নেই। এমন মজবুত মই যে খোকনবাবুর মনে হল যে এবার থেকে সকাল বেলা চা আর আনন্দবাজার হাতে ফাইবার’র মই’ইয়ের  মাথায় গিয়ে কিছুক্ষনের জন্য বসে থাকলে বেশ হয়।

পলিটিক্স ইজ ইন আওয়ার ব্লাড

পলিটিক্স ইজ ইন আওয়ার ব্লাড। শুধু গোল্ডফ্লেক্‌ ফুঁকে আর লিট্‌ল ম্যাগ ঘেঁটে ইন্টেলেকচুয়াল বনে থাকা যায় না। পলিটিক্স বুঝতে হবে এবং টেবিল চাপড়ে বোঝাতে হবে। ব্রাজিলে যদি সবাই ফুটবল-বিদগ্ধ হন, তবে কলকাতাইয়া মাত্রই রাজনীতিজ্ঞ এবং রীতিমত থুঁতনি চুলকনো সেফলজিস্ট। অবিশ্যি আমাদের রাজনীতিতে ডান-বাম তেমন কিছু নেই। উইং বলতে দুটিই ; অতি-বাম এবং প্রবল-বাম। বুর্জোয়া রাজনীতি এবং পনীরের ঝোলের পরোয়া বাংলাই কোনোদিন করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। কলেজে ভালো ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করেন, গবেটরা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে নবাবী করেন আর বুদ্ধিমানেরা রাজনীতি করেন। উপযুক্ত দাদা-দিদিদের চিনে নেওয়া, মিছিল-টিছিলে র্যাীম্প ওয়াক, ইউনিয়ন রুমে দেদার ফ্রি চা-বিস্কুট, ব্রিগেড মিটিং’য়ের দিনে পার্টি ব্যাজ আর বিরিয়ানির বাক্স এবং সর্বোপরি; এলেম থাকলে কচি নেতা’র উপাধি – এইসব মিলে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হাতেখড়ি না হলেও ক্ষতি নেই। সক্রিয় বলে অবিশ্যি কিছুই হয় না; আদতে সবই ইন-ডাইরেক্ট ; অন্যের মাথায় কাঁঠাল ক্র্যাক করে দুনিয়া চলছে।

মধুময়ের ঘুম

ঘুম পাওয়ার প্রথম ধাপে মাথার তালুতে নরম শিরশিরানি টের পান মধুময়। রাত এগারোটা নাগাদ রাতের খাওয়া সেরে নিজের বিছানায় চলে আসেন তিনি। সঙ্গে থাকে কোন সরল বই কিংবা পত্রিকা। বাসে-ট্রেনের টানাহ্যাঁচড়া আর চাকরির চক্করে শরীরে ক্লান্তি জমে থাকেই। মধুময় তিন কি চার নম্বর পাতায় গিয়েই বুঝতে পারেন যে চোখের পাতার ওজন বেড়ে চলেছে। থুঁতনি ক্রমশ নেমে আসে পাশ বালিশের বুকে। ছয় নম্বর পাতায় পৌছনোর আগেই বইটা আলগা হয়ে খাটে লুটিয়ে পড়ে। ঘুমের দানা যত জমতে থাকে , মধুময়ের কানে সিলিং ফ্যানের এক ঘেয়ে আওয়াজ তত দাপুটে হয়ে ওঠে। রোজই তিনি টের পান যে তার ডান চোখ যখন আধবোজা , তার বাঁ চোখ সম্পূর্ণ ভাবে বুজে গেছে। বেশ দৃপ্ত ভঙ্গিতে ঘুমের পিছু পিছু বেশ কিছুক্ষন ছুটে চলেন মধুময়।

অ-লংকা-র

শুকনো লংকার ঝালে রয়েছে বনেদী মেজাজের গন্ধ। জলসাঘরের ভাঙ্গা কাঁচের গেলাসের খনক্‌। চাবুকের সপাং’য়ের মেজাজ। মাছের কালিয়ার দাপটের উৎস। আলু সেদ্ধ মাখার জৌলুস। মুসুরি ডালের বাহারি ফোঁড়ন। আদরহীন সোহাগ, সাবেকী দাপট। ব্যবহার করতে জানলে মাঞ্জাবতী সুতো, না জানলে গলার দড়ি।

মেজাজ ও স্নান

নিজের ওজন বুঝে নেওয়া উচিৎ সকলের। সরি স্যার। ওজন বলতে ভুঁড়ি বা মানিব্যাগের পরিধি মাপতে বলছি না। মেজাজের গভীরতা দিকে নজর দিচ্ছি। গুরুজনেরা বলে গেছেন যে মেজাজটাই আসল রাজা। মেজাজ গড়বড়ে হলে, পকেটে টু পাইস্‌ থাকলেও আপনার ইচ্ছে করবে এইবেলা এলুমিনিয়ামের বাটি হাতে খানিক ভিক্ষে করে আসি। কাজেই মেজাজকে খোকার হাতের মোয়া করে রাখার বিশেষ প্রয়োজন। মুস্কিল হচ্ছে, মেজাজ মাপার যন্ত্র বলতে কিছু নেই। নিজের মেজাজটা যে রাজকীয় না এলেবেলে;সেটা না বুঝলে চলবে কেন। তবে, ইয়ে...উপায় আছে। মেজাজকে আঁক মেপে চিনে নেওয়ার উপায় আছে। কি ভাবে ? তা বলতেই এ পোস্টের পাঁয়তারা। মেজাজ মাপার একটা জলবৎ-তরলং উপায় হল  অতি সহজ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া – “ আপনার এখন কি ভাবে স্নান করতে ইচ্ছে করছে ?

দু'জন

কসবা থেকে গরিয়াহাট যাব। একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। নেচে-কুঁদে কোনোক্রমে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে উঠতে যাব অমনি দেখি এক বৃদ্ধ এসে হামলে পড়লেন আমার গায়ে। বৃদ্ধ বলছি কারন মাথার চুল ধবধবে সাদা। পোশাক ধোপ-দুরুস্ত, পরনের টিশার্ট’টি কেতাবাজ বললে ভুল হবে না। -       “ ইয়ে মানে আমিই ট্যাক্সি দাঁড় করালাম কি না, আপনার কি বিশেষ প্রয়োজন ?” বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করতেই হল। -       “ ঢাকুরিয়া যাব। আই হোপ দ্যাট ইউ ক্যান গিভ দিস্‌ ওল্ড ফুল আ লিফ্‌ট। “ সম্মতি সূচক হাসি দিতেই হল। দুজনেই উঠে বসলাম ট্যাক্সিতে।

চিরঞ্জিত যদি

চিরঞ্জিত আমায় যদি একবার “ এই ভাই” বলে ডাকতেন

দিবাকর এবং হাওড়া ব্রিজ

হাওড়া ব্রিজের একটা ডাকনাম দিলেন দিবাকর।   একটা চটের থলিতে  ছয় কিলো গেঞ্জি-কাপড় বয়ে দৈনিক বড়বাজার টু হাওড়া হেঁটে আসেন তিনি। একটা বাস ধরতেই পারেন কিন্তু অফিস টাইমের দম বন্ধ করা ভিড়কে ভীষণ ভয় পান দিবাকর। তবে তার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে হাওড়া ব্রিজের মায়া। সেই সতের বছর বয়স থেকে বড়বাজার থেকে গেঞ্জি কাপড় কিনে রিষড়া ’ র একটা আধ-কানা কারখানায় সাপ্লাই করে চলেছেন দিবাকর। বয়স এখন চুয়াল্লিশ। দিবাকর ভেবে দেখেছেন যে সময়মত বিয়ে হলে তাঁর ছেলে নান্টু এখন ক্লাস এইটে পড়তো আর মেয়ে নিপা ক্লাস ফাইভে। এটাও ভাবা আছে যে তাঁর একটা এলো-আই-সি আর দুটো ফিক্সড্‌ ডিপোজিট হতে পারত এ বয়েসে। বুদ্ধি করে চললে সান্যালদের এক কাঠা জমি কিনে একটা ছোট পুঁচকে বাড়ি হাঁকানো কি মহা-অসম্ভব কিছু কিস্‌সা হত ? মুস্কিল হল , বিয়ে-থা আর করা হয়ে ওঠেনি দিবাকরের। গেঞ্জির কাপড় সাপ্লাই দিয়ে যে দু পয়সা আসে তাতে তাঁর আর পিসিমার সংসার প্রায় চলে না বললেই হয়। তাও ভাগ্যি পিসেমশাই আধ-ভাঙ্গা বাড়িটা রেখে গত হয়েছেন। নয়ত পিসিমা ’ র সাথে ষ্টেশনের বস্তিতে গিয়ে থাকতে হত। এলো-আই-সি ’ র গুড়ে বালি , দিবাকরের নিজের কো

কেউ কেউ

এক দল লোক কবিতা লিখে লিখে ফতুর হয়ে গেলেন। অনেকে বিপ্লব-বিপ্লব করে করে গেঁজে গেলেন। কেউ হুট-হাট ক্যামেরায় খচ্‌খচ্‌ করে চলেন। কেউ হারমোনিয়ামে মেজাজি তাজমহল। কেউ আপিসে ছুট্টে যান, ফাইল ঘাটেন, বস পোষেন, ওয়াপস আসেন। কয়েকজন বলেন ভুতের গল্প মোমবাতিতে আর তেলেভাজায়। কেউ বা বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে “গ্লব-ট্রট্‌” করেন। কেউ যেন চুমু বিশারদ। আর কেউ কেউ ছেলেবেলার ফেলে আসা এঁদো গলির গন্ধ মনে করে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন মাত্র।  

সরলীকরণ

রাজনীতির সরলীকরণ হতেই পারে। এবং এই সরলীকরণের ভারি প্রয়োজন রয়েছে। তাতে আখেরে আমাদের প্রচুর লাভ। আহঃ, এই আখের শব্দটিতে কি সুফিয়ানা মেজাজ রয়েছে; আখের রসের মত মিষ্টি বাহার রয়েছে। তবে আখেরের কথা অন্যদিন। আজ কথা রাজনৈতিক সরলীকরণের। বর্তমানের হিসেব-কিতেব ভারি জটিল। এবং কুটিল।  ভোট দিয়ে নেতা ঠিক করা। তারপর সেই নেতাদের হাতে নিজেদের সঁপে দেওয়া। নিজেদের ভবিষ্যতকে তাদের দায়িত্বশীল হাতে অর্পণ করা। নিজেদের ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে রাজনৈতিক মাঞ্জায় ধারালো করে নেওয়া। সরকার-বাহাদুর আমাদের আখের গুছিয়ে দেবেন এমন সব মেজাজি অঙ্কে সামিল হওয়া।  কি অব্যর্থ রোমান্টিসিজ্‌ম। অথচ কি জটিল।

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা

রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা কাকে বলে ? ব্যাসন মাখা পাতলা-লম্বাটে বেগুনের টুকরোকে; টগবগে গরম তেলে ছেঁকে, কড়াই থেকে তুলে নেওয়ায় যে প্রস্তুতি।তাকে। চীনেবাদামের ঠোঙা থেকে শেষ বাদাম টুকরোটি তুলে; শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে নিজের জিভের ডগা দিয়ে লুফে নেওয়ার যে দেড় সেকন্ড। তাকে। আতপের ধোঁয়া ওঠা সেদ্ধ ভাতে ঘি'য়ের ফোঁটা মিশে যাওয়ার যে সুবাস। তাকে। দাস কেবিনের রঙ চটা টেবিলের এক কোনে বসে, প্লাস্টিকের নুন-দানি নিয়ে খেলতে খেলতে ফিশ-কবিরাজির জন্য যে অপেক্ষা। তাকে। বেদম গরমের রোদ মাখা জুন-দুপুরে- রাস্তার মোরের লেবু-জলের প্রথম চুমুকের গলা বেয়ে নেমে আসা। তাকে।

এক রেল অন্য রেল

রেলগাড়ি শব্দটার মধ্যে কি গড়িমসি স্নেহ । কাঠের হাতলের দুলুনি , বাদাম - ওয়ালার হাঁক , ঘটরঘটর ছন্দ । “ একটু চেপে বসবেন দাদা ” র জুলুম - হীন আবদার । ভাঁড়ে চা । শীতের দুপুরের রোদ ; অসময়ে বৃষ্টির ছাঁট ; ট্রেন জানলায় । কলেজ - ফেরতা পথে রেলগাড়ির ফাঁকা সীটগুলোকে অবজ্ঞা করে দরজায় দাঁড়ানো ; সদ্য আবিষ্কৃত প্রেমিকার আঙুলের ডগায় গোপন নিষ্পাপ ছোঁয়া ।    ভিড় মেখে বন্ধুদের সাথে অক্লান্ত সব গল্পগুলো ।   কাঠের সীটের কোনায় কোনক্রমে বসে আনন্দবাজারি শব্দছক্ ‌ নিয়ে নাড়াচাড়া । ট্রেন শব্দটার মধ্যে বড় কঠোর ভাবে একটা কারখানা রয়েছে