Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2017

মিছরি আর সৈনিক

- তুমি এসেছো মিছরি? - উপায় রাখলে কই? বেহায়া। বেওকুফ। - বসো। বসো। - কয়েদী মানুষের অত কথা বলতে নেই। - কিছু খাবে? - কয়েদখানায় তোমার মাথাটুকু ছাড়া খাওয়ার আর কী আছে বলবে? - কোণে একটা কুঁজো রাখা আছে। ওই দ্যাখো, ওই দিকে। ইঁদারার জলের মত ঠাণ্ডা। - আগে তোমার মাথাটুকু চিবিয়ে নিই, তারপর জল দিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলবো, কেমন? - হেহ্। কেমন আছো গো মিছরি? - সুখেই ছিলাম। সংসার। আত্মীয় পরিজন।  তারপর ওই ভূতে কিলোলো। শুনলাম তোমায় কাল ফাঁসি দেবে। যতই শত্রুপক্ষের সৈনিক হও, এককালে প্রেমিক ছিলে। লোকে দুর্নাম রটালে রটাক,ঝপাৎ করে চলে এলাম। তুমি কেমন আছ? - দিব্যি। - শহিদ শহিদ গন্ধ পাচ্ছ নিজের গা থেকে? - ধুস। আমি ভালো অমলেট বানাতে পারি। শাড়ির কুঁচি ধরতে পারি। চট করে বানিয়ে গল্প বলতে পারি। বাথরুমে ক্লাসিকাল গাইতে পারি। লুডোতে দুর্দান্ত চুরি করতে পারি। শহিদ টহিদ হওয়া আমার কম্ম নয়। নেহাত জোর করে সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়ে নিলে। নেহাত জোর করে যুদ্ধে পাঠালে। মন্দ কপাল, তাই ধরাও পড়ে গেলাম। - ভাগ্যিস দেশ ছেড়ে তোমার হাতে নিজেকে সঁপে দিইনি গো, নইলে কাল আমায় বিধবা হতে হত। - মিছরি...তুমি আসবে আমি ভাবিনি...। - বিয়ে

শ্যামল মিত্র ও অনুপবাবু

রাত দু'টো পাঁচ নাগাদ রেডিওটা আপনা থেকেই চালু হয়ে গেল। শ্যামল মিত্রর কণ্ঠ যে কী সুরেলা। "ঘুম যখন আসছেই না, তখন অত কেরদানি মেরে পাশবালিশ জড়িয়ে লাভ কী"? শ্যামল মিত্র রেডিও থেকে জিজ্ঞেস করলেন। অনুপবাবু ঠাহর করতে পারছিলেন না ভূতটা শ্যামল মিত্রের না রেডিও। "রেডিওদের মারা যাওয়ার ব্যাপার থাকে না ভাই"। ফের। শ্যামল মিত্র। এ'বার ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন অনুপবাবু। "কোন গান শুনবে? ফিল্মের একটা দিয়েই শুরু করি"? অনুপবাবু হ্যাঁ বা না বলার আগেই শুরু হয়ে গেল "জীবন খাতার প্রতি পাতায়..."। ভয়টা কমে আসছিল। শ্যামল অন্তরার দিকে যেতে তিনি পা বাড়ালেন রান্নাঘরের দিকে। এক কাপ কফির দরকার। অমনি। গান থেমে গেল। "এ কী! চললেন কোথায়? বসুন। আর দু'টো গাই"। " নাহ, এক কাপ কফি হলে বেশ হত"। "কফিতে কী হবে? আমি তো ভূত"। "না সরি, ইয়ে, আমার জন্য"। "বোঝো, কখনও শুনেছেন ভূতের কথা ভূত না হয়ে কেউ শুনতে পেরেছে"? "আজ্ঞে"? "বসুন না। আরে নার্ভাস হবেন না। মরে যাননি। রাতে শোয়ার আগে রোজ নিউজচ্যানেল শুনে ঘুমোতে যান ত

থরের ডর

হাতুড়িটা না পেলেই মন খারাপ হয়ে যায় থরবাবুর। ও'দিকে বনমালী নস্কর লেনে গিয়ে নিজের জিনিস চেয়ে ফেরত নিতেও হাজার ঝ্যামেলা, সে'সব ভাবলেই থরহরিকম্প। এ'দিকে প্রতি বছর এ সময় একবার করে হাতুড়ি গায়েব হবেই। কিন্তু দেবতাদের অত লাজুক হলে চলে না। হাতুড়িটাই যে আই-কার্ড।  দিন কয়েকের মাথায় ফেরত না এলেই সে'খানে গিয়ে হত্যে দিতে হয়। এ'বারেও হলো। এ'বার সাহস করে ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন থর; "বলছিলাম দাদা, চাদ্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেপারওয়েট, তবুও আমার হাতুড়ির দিকে ফি'বছর নজর পড়ে কেন"? সিগারেট ধোঁয়ার খান কয়েক রিং বাতাসে ভাসিয়ে উত্তর দিলেন ভদ্রলোক; "জরুরী দরকারেই তোমার হাতুড়িটা সরিয়ে আনি ভাই। সব পেপারওয়েটে তো আর রাষ্ট্রনেতাদের গোপন চিঠি চাপা দেওয়া ঠিক নয়। এমনিতেই মেসের ফচকে ছেলেগুলোর কিউরিওসিটি প্রয়োজনের চেতে কিঞ্চিৎ বেশি"। দেবতা হওয়ার আবার এই এক মুশকিল। অন্তর পড়ে ফেলা যায়। ফস্ করে বলে ফেললেন থর; "দাদা, ডিভোর্স যখন তোমাদের দু'জনেরই হয়ে গেছে, তখন তো এটাকে আর এক্সট্রাম্যারিটাল বলা যায় না। তা ছাড়া তোমার দেওয়া বন্যা ডাকনামটা তো ভালোই ছিল, লাবণ্য

এক্সেল

দিব্যি মরে উঠে এলাম বডি ফেলে। হাতঘড়িতে এখন রাত পৌনে ন'টা। পঞ্জিকা অনুযায়ী ক্ষতি নেই। কিন্তু আমি রেডি থাকলেও ব্যাটাচ্ছেলে যমদূতের দেখা নেই। মহামুশকিল। মারা যাওয়ার পর দেখছি ফ্রি ফোর-জি সিমের কনেকশনটাও কাজ করছে না। সে ব্যাটা যতক্ষণ উদয় না হচ্ছে ততক্ষন আমার ভেসে বেড়ানো ছাড়া কোনও কাজ নেই। আত্মার ওজন এতই কম যে পায়চারী করতে মাটিতে নামারও কোনও উপায় নেই। আধ ঘণ্টার মাথায় যে বস্তুটির দেখা মিললো সে'টা একটা হাওয়ায় পতপত করে ওড়া এমএস-এক্সেল স্প্রেডশিট। সে ব্যাটা আবার কথা বলে। "এসে গেছি", বলে গায়ের উপর এসে পড়লো সে। "কেন? এসে কী হবে?" "ভি-লুক আপ করে আপনার খোঁজ পেলাম। টাটকা মড়া। নিয়ে যেতে এসেছি"। "হোয়াট ননসেন্স, শিংওলা যমদূত কই"? "ও'সব তো গত সেঞ্চুরির ব্যাপার স্যার। চলুন। আর দেরী হলে নরকের এন্ট্র‍্যান্স বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আবার আপনাকে পিভট টেবিলে লুকিয়ে রাখতে হবে"। "নরক? স্বর্গে শর্টলিস্ট হল না ভাই এক্সেল"? "অত প্রমোশন প্রমোশন করলে স্বর্গ জোটনা স্যার। জিভে দেখুন। এখনও চেরী ব্লসম শু-পালিশের ছোপ লেগে আছে"। " আই

পিতৃভাষা বনাম মাতৃভাষা

মাতৃভাষা। পিতৃভাষা নয় কিন্তু। আমাদের ভালোবাসা আবেগ সমস্তটুকু মাতৃভাষাকে ঘিরে। পিতৃভাষা হলে সে ভাষার জন্য এমন প্রাণপাত করা সম্ভব হত না। পিতৃভাষা দিয়ে মাটি কোপানো যেতে পারত, মাথা ফাটানো যেতে পারত। কিন্তু সে ভাষাকে তুলিকলম ধারণ করে উঠতে পারত না।   আর এই ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝে উঠতে কেটে গেল এতগুলো বছর। তবে এদ্দিনে স্থির বুঝেছি যে ব্যাপারটা যদি মাতৃভাষার বদলে পিতৃভাষা হত, তাহলে একুশের ফেব্রুয়ারির দিনে কালো ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরতে হত।  তা, পিতৃভাষা হল না কেন?  পরিস্থিতি ১ঃ রোগা হয়ে গেছি।  মা -  "তোর অমানুষিক খাটনি যাচ্ছে রে। খাওয়াদাওয়াটা অবহেলা করিস না বাবা। আর দিনে এক গ্লাস করে দুধ খেতে তোর এত আপত্তি কীসের বল তো"? বাবা- "দিন দিন টিকিটব্ল্যাক করা চেহারা হয়ে যাচ্ছে তো রে ব্যাটা রাস্কেল"। পরিস্থিতি ২ঃ মোটা হয়ে গেছি। মা- "ছেলের আমার রাজপুত্রের মত চেহারা"।  বাবা- "তোর বোধ হয় আর হাইট বলে কিছু রইল না, না রে? শুধুই ডায়ামিটার"।  পরিস্থিতি ৩ঃ রেজাল্ট বেরিয়েছে।  মা- "নম্বর যা খুশি হোক, তুই মানুষের

দোলে দো দুল

দিব্যি জনসন ইয়ারবাড দিয়ে টিটেবিলে রাখা কোস্টারের ওপরের কফির দাগ নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটছিলেন অমিয়বাবু। মনের মধ্যে অরেঞ্জ স্কোয়্যাশের মত একটা বেলেল্লা প্রশান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। এমন সময় স্ফিঙ্ক্সের মত বিদঘুটে চেহারার একটা নারী প্রশ্ন দুলতে দুলতে চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো। "এই কানের দুলটা ভালো লাগছে না এইটা"? সন্ধ্যের শিউলিতে কেউ চিলি সস্ ঢেলে দিল যেন। চাঁদে নামতেই যেন আর্মস্টংয়ের সামনে জ্যোতিষশ্রেষ্ঠ গুণময় লাহিড়ী এসে দাঁড়ালেন। চন্দননগরের বদলে মগরায় এসে ট্রেনঘুম ভাঙলো যেন। দুল? দুল? আচমকা অমিয়বাবুর মাথার স্ক্রুগুলো মচরমচর করে উঠলো। দুল। কানের দুল। পাঁচ সেকেন্ড দোলে দো দুল দোলে দুলোনা গাইলেন অমিয়বাবু। অবশ্যই মনে মনে। পান সকলের পাতে দেওয়া চলে না। দুলে দোল খাওয়া বৌকে তো নয়ই। দুল তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?  মনে মনে চট করে সাতাত্তর হাজার পাঁচশো বিরানব্বইটা দরকারি জিনিসের কথা মনে পড়লো অমিয়বাবুর। সে লিস্টে দুল ছিল না। ভালো দুল খারাপ দুল? বলিভিয়ায় আমসত্ত্ব পাওয়া যায় কিনা তার চেয়ে বেশি দরকারি প্রশ্ন। তিমি মাছের গাদা পেটির টেস্ট আলাদা কিনা তার চেয়ে জরুরী প্রশ্ন। কলমিশাক দিয়ে

আমার সেলুন

পুরুষ জীবন কম জটিল নয়।  হুড়ুম করে যা-নয়-তাই ভেবে, দুড়ুম করে যা-নয়-তাই করে ফেলে আমাদের জীবন গুজরান হয়ে যায়, এমন সেক্সিস্ট আইডিয়া থেকে এবার বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। কমপ্লেক্সিটির সঙ্গে আমাদেরও অনবরত কুস্তি চলে।  পুরুষ জীবনের জটিলতম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুল কাটার সেলুন বেছে নেওয়া। এই একটা ডিসিশনে পালটে দিতে পারে সমাজবোধ, জীবনদর্শন। সেলুন চিন্তায় ওম দেয়, ভাবনায় রঙ দেয়, অবসরে কেত দেয়। দেয়। এই পাওয়াগুলো চিনে নিতে পারা দরকারি। জরুরী।  কথায় আছে সৎসঙ্গে আর মনের মত  সেলুনে স্বর্গবাস,  অসৎ সঙ্গ আর বিদঘুটে সেলুনে সর্বনাশ।   সেলুন বেছে নেওয়ায় কোনও থিওরি নেই, অঙ্ক নেই, লিনিয়ার ইকুয়েশন নেই। পুরোপুরি ইন্সটিঙ্কটের খেলা। নচিকেতা ভালোবাসাকে পিটুইটারির খেলা বলে ঠেলে দিয়েছিলেন, কিন্তু পিটুইটারি দেড় মাস রাত জেগে পড়াশোনা করেও সেলুন বেছে নিতে পারবে না। পুরুষ মাত্রই সেলুন-কবি।  জীবনে বহুবার এই কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যখনই বাবার চাকরী, নিজের পড়াশোনা বা নিজের চাকরীর টানে নতুন জায়গায় গিয়ে থিতিয়ে বসতে হয়েছে, সবার আগে খুঁজে নিতে হয়েছে নিজের পছন্দের হেয়ার কাটিং সেলুন। এক

দিবাকর আর সেই মেয়েটা

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ সজাগ হয়ে উঠছিল দিবাকর।  আশপাশের খুচরো শব্দগুলো কানে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। এমনিতে গলিটা নিরিবিলি।  মাঝেমধ্যে শুধু রিক্সার ক্যাঁচোরকোঁচর, সাইকেল বেলের ক্রিং কিরং, পথচলতি চপ্পলের চটরফটর বা জুতোর মিয়ানো মচমচ। হাওড়ার দিকের বিড়িতে স্বাদ আছে, দিবাকর চার প্যাকেট কিনেছিল। সেই একটা ধরিয়ে ল্যাম্পপোস্ট ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। সময় হয় এসেছে। মনের আঁকুপাঁকু ভাবটা ক্রমশ বেড়ে চলেছিল। ভরদুপুরে সেলুন বন্ধ করে চলে আসাটা পাগলামি হয়ে গেল বোধ হয়। ব্যাপারটা এমনই বিদঘুটে যে অন্য কাউকে বলার সাহস পর্যন্ত হয়নি। অবিশ্যি এমনটা না ঘটাই স্বাভাবিক। স্বপ্নাদেশ-ফেশ লোকে পায় শুনেছে, কিন্তু স্বপ্নে পাওয়া প্রেমিকা মাটি ফুঁড়ে উঠে আসবে, এমন গড়বড়ে ব্যাপার হয়নি আগে। আজও হবে না বলেই দিবাকরের বিশ্বাস। তবু, না এসে থাকা গেল না। অবশ্য, প্রেমিকা ঠিক না। পরিচিতা।  প্রেম প্রেম ভাবটা একান্তই দিবাকরের নিজের মনের মধ্যে। আর হবে নাই বা কেন। ও চোখ জোড়ায় দিব্যি কুয়োর বালতি নামানো যায়। ওই হাসিতে চমনবাহার খাওয়ার পর এক চুমুক জলের হুসহাস ঠাণ্ডা। গত বছর দশেক ধরে নিয়মিত স্বপ্নে দেখা হচ্ছে। নানান গল্প হচ্ছে।

মাঝরাতের ট্রেন

- কদ্দূর? - চুঁচুড়া। আপনি? - ভদ্রেশ্বর। - হুঁ। - যাক, কামরায় একা নই। এ'টাই নিশ্চিন্দি। - এত রাত্রে লোকাল আছে সে'টাই জানতাম না। - আমিও। ধরেই নিয়েছিলাম ভোর চারটে নাগাদ যে ব্যান্ডেলটা আছে সে'টা ধরেই...। আচমকা অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে উঠে বসলাম। - আমিও তো ইক্যুয়ালি সারপ্রাইজড। একটা বিয়েবাড়ি অ্যাটেন্ড করতে গিয়ে এই হ্যারাসমেন্ট। ভাবতেই পারিনি এতটা দেরী হবে। আচ্ছা, কামরায় একটা বোঁটকা মাছের গন্ধ আছে না? - ভেন্ডরদের কামরায় না উঠে কোনও মাছওলা এখানে উঠেছিল হয়তো। ডিসিপ্লিন ওয়াইজ তো দেশটা ডকে উঠছে। - ডিসিপ্লিন? হুঁহ্, রুলিং পার্টি যদি এমন অপদার্থ হয়, তাহলে ইনডিসিপ্লিন তো ছড়িয়ে পড়বেই। চাদ্দিকে তো এলোমেলা করে খাবলে খাই টেন্ডেন্সি। - এই আপনাদের এক দোষ। রুলিং পার্টি চাবকে নিজেদের রেস্পন্সিবিলিটি এড়িয়ে যাওয়া। - আপনি কি ওদের দালাল নাকি? - আমি দালাল কি না জানি না। তবে আপনি যে অপোজিশনের পা চাটা সে'টা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। - কী? আমি পা চাটা? - আমি দালাল? - নেহাত এত রাত তাই, নাহলে আপনার কলার ছিঁড়ে নিতাম। - অপোজিশনের মতই গুণ্ডাবাজি ভাষা দেখছি আপনার। চাইলে এখুনি আপনাকে ট্রেন থেকে নামি