Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2015

ধর্ম

ধর্ম অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছিল। অনেকক্ষণ ধরে। একটা চাপ ধরা অস্বস্তি। একটা দমবন্ধ করা বুক চিন্‌চিন্‌ তার পিছু ছাড়ছিল না।ঘামতে শুরু করায় পরনের টিশার্টটা খুলে রেখেছিল। নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিল ধর্মর। মনে হচ্ছিল যেন একটু তাজা হাওয়া গায়ে লাগলে ভালো লাগতো। কিন্তু মন চাইলেও জানলা খোলার উপায় ছিল না। হাজার হাজার ফ্যানের চোখ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ-বাল্ব তার ঘরের দিকে অনবরত তাক করা আছে। সেলিব্রেটি হয়ে থাকার মাশুল যে কী সাঙ্ঘাতিক। চরসের রসও আজ শরীরকে তাজা করতে পারছিল না। ধর্মর চোখ ছলছলে হয়ে আসছিল বার বার। আবছায়া ঘরেও কালো চশমায় চোখ ঢেকে বসেছিল সে; পাছে আচমকা আয়নায় নিজের চোখ দেখে ফেলতে হয়।  সাহস হয় না আজকাল নিজের চোখের দিকে তাকাতে।  কান ফাটানো শব্দে ঘরের মোবাইলটা বেজে উঠলো। ধর্ম টের পেল যে তিন নম্বর ম্যানেজারের ফোন। এই ম্যানেজারদের কাঁধে ভর দিয়েই চলার অভ্যাস করে ফেলেছিল ধর্ম; সেলিব্রেটিদের তেমন ভাবেই কাটাতে হয় জীবন। ধর্ম যে ভাবে পা ফেলবে, হাসবে, কথা বলবে, আদর করবে; পাবলিকে সেটাই আঁকড়ে ধরবে। কাজেই প্রত্যেকটা পা ফেলা, প্রত্যেকটা হাসি ধর্মকে সাহস অত্যন্ত হিসেব করে ফেলতে হয় এবং সে হিসেবটুকু কষে দেয় তার ম্য

মেয়েটা

তখন আমি বেশ ছোট। প্রেম করা ব্যাপারটা তখনও ডেঁপোমি বলেই জানি। বিকেলে হন্যে হয়ে ক্যাম্বিস বলে ক্রিকেট খেলি। জ্যামিতিকে ভয় পাই। নন্টেকে ফন্টের চেয়ে বেশী ভালোবাসি। সদ্য সাইকেল চালানো শিখে মনে হয় ডানার আনন্দ বুঝি। তিনটে সিঁড়ি না টপকে পা ফেলতে পারি না। ফুল প্যান্ট পরি শুধু বিয়েবাড়ি যেতে হলে। আঁকাতে ভালোবাসি আর আঁকার মাস্টারকে ভালোবাসি না। ফড়িং ধরতে পারি, আর তার লেজে সুতো বেঁধে ঘুড়ির মত ওড়াতে পারি। গদা আর তীর-ধনুক, দু’টোতেই সমান পারদর্শী। স্কুল ফেরতা দুপুরে মাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না। রবিবারে বাবার পাশে গুটিসুটি হেঁটে মাছের বাজার যাই, এই মাছ নাও-ওই মাছ নিও না বলে কাদা জলে ছপছপ করি।  সন্ধেবেলা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে হাত পা ধুয়ে দুধ মুড়ি খেতে বসি। অকারণে বন্ধুদের সাথে পেট ফাটিয়ে হাসতে পারি, একে অপরের টিফিন কেড়ে খেতে পারি।

প্ল্যানচেট

ফতুয়ার ওপরের বোতামটা খুললেন  অনিমেষ। হাওয়াই চটি জোড়া খুলে হাতে নিলেন। পাজামাটা হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে নিলেন। ভেজা বালির ওপর দিয়ে হেঁটে গেলেন ছপাতছপ ঢেউয়ের দিকে। গোড়ালি ডোবা জলে এসে দাঁড়ালেন। ঢেউয়ের ঝটপট আর বুকে মুখে ঝড়ো হাওয়া এসে মনটা ঠাণ্ডা করে গেল। আজ অমাবস্যা। আকাশে হয়তো মেঘও রয়েছে, একটাও তারা নেই। এ অঞ্চলটা মূল শহরতলির ভিড় থেকে বেশি কিছুটা দূরে। কাছের রাস্তাতে লোকজন কেউই নেই। অনিমেষের হোটেলও অন্তত আধ কিলোমিটার দূরে, মাঝে পুরোটাই ফাঁকা। রাত্রের কালোতে শুধু সমুদ্রের ঢেউয়ের বুকের সাদা ফেনাটুকু দেখা যায়। পায়ের তলায় বালি সরে যাওয়ার ভালো লাগা শিরশিরানি। সব মিলে ভালো না লাগার কোন উপায় নেই। পাহাড়ের গুণ হল সে  শ্রোতা । কিন্তু সমুদ্র আগ বাড়িয়ে দু’টো কথা নিজে বলে যায়। অন্ধকার আজ এতটাই নিকষ যে ঘড়ি দেখতে পারলেন না। মোবাইল ফোন জ্বেলে সময় দেখলেন অনিমেষ, রাত পৌনে দু’টো। এপ্রিলের রাত্রি হলেও, গভীর রাতের সমুদ্রের ধারালো হাওয়া সত্তর বছরের চামড়ায় বিঁধতে বাধ্য। কিন্তু আজ কোন কিছুই পরোয়া করার সময় নয়। অনিমেষের ভীষণ ভালো লাগতে আরম্ভ করেছিল। ভীষণ। কতদিন পর সে গোপালপুর এলে। শেষ এসেছিল বছর দশেক আগে। তখনও অপল

গান

“এসো এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে”, গাইছিলেন অনন্তবাবু, “বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছো অন্তরে”। আজ অফিস থেকে একটু বেশিই আগে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সামান্য ফাঁকি আর কি! অনন্তবাবু তো কবিতা লিখতে পারেন না, তাই হিসেব লেখার কেরানীগিরির কাজে আলতো ফাঁকি দেওয়াটাই তার কাছে কবিতা লেখার মত আরামের।ব্যাচেলর হওয়ায় জীবনটায় একটা দরদী জেল্লা আছে। বাজারপত্তর নেই, বউয়ের ব্লাউজ কেনার বা বাপের বাড়ি যাওয়ার বায়না নেই, ছেলে-মেয়ের এটা দাও সেটা দাও নেই।  বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাড়িতে ঢুকে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে ঝুল বারান্দায় বসে পড়া। কাঠের চেয়ারে হেলান আর বেঁটে বেতের মোড়ার উপর পা। খাসা। হাতে এক কাপ লেবু চা, নিজের বানানো। এক বাটি মুড়ি মধ্যে এক পিস্‌ বেগুনী, অফিস ফেরতা নিধুর চপের দোকান থেকে আনা। আগে আনতেন দু’পিস্‌ করে। মাগ্যির বাজারে একটা বেগুনীই যথেষ্ট, তাছাড়া বয়স বাড়ছে- দু’খানা বেগুনী হজম করার দিন আর নেই।

প্রশ্নোত্তর - ১

যদি যুধিষ্ঠির কে করা যক্ষের প্রশ্ন আর উত্তরগুলো যদি একটু অন্যরকম হত? কেমন হত? এর ওপর একটা লেখা অনেকদিন আগে পোস্ট হয়েছে।  এবার একটু অন্যরকম ভাবে প্রশ্ন উত্তরগুলো গুছিয়ে নেওয়া। এখানে প্রথম কিস্তি।  ভালো কী ? এগরোল। খারাপ কী ? ডিম ছাড়া যে কোন রোল। (চিকেন/মাটন রোল বলে কিছু হয় না, হয় এগ চিকেন নয় এগ মাটন। আদর্শ - ডাব্‌ল এগ চিকেন/মটন)।   সুখী কে ? সদ্য ভাজা এগরোল যার হাতে এই মাত্র এলো। দুঃখী কে ? এগরোলের ক্যালরি মাপেন যিনি। সবচেয়ে দ্রুত কী? এগরোল প্রেমীর “এগরোল খেতে হবে” চিন্তা। সবচেয়ে শ্লথ কী? রোলের অর্ডার দেওয়া আর হাতে পাওয়ার মাঝের সময়ে ঘড়ির কাঁটা খানি। সব চেয়ে ভারী কী? পেঁয়াজ কম শসা বেশি এগরোলের দায়ভার। সব চেয়ে হালকা কী? এগরোল খাইয়ের মেজাজ। কলঙ্কের চেয়েও কালো কী? ভেজ রোল। হীরের চেয়েও দামী কী? এগরোলের ভিতর সঠিক পরিমাণে টাটকা কাঁচা লংকা কুচি আর লেবুর রসের কম্বিনেশন। সাফল্য কী? নিখুঁত এগরোল বানিয়ের খোঁজ পাওয়া। ব্যর্থতা কী। এগরোল খুঁজে না পেয়ে প্যাটিস জাতীয় কিছু খাওয়া।

দিবাকর আর লে-হালুয়া

সেদিন সকালে উঠে দিবাকর বুঝলেন যে তিনি নিজের খাটে নেই। আশেপাশে চেয়ে দেখলেন যে ঘরটাও তার বৈদ্যবাটীর বাড়ির নয়। এমন বিশ্রী হলদে দেওয়ালের ঘর আর দু’টি দেখেননি দিবাকর। তবে কী তিনি কিডন্যাপ হয়েছেন? কিন্তু তিনি কিডন্যাপ হবেন কেন? পোস্টঅফিস ক্লার্কের চাকরীতে ক’পয়সাই বা আয়। আর তিন কুলে তার আছেটাই বা কে যে তাকে ছাড়াতে কিডন্যাপারদের টাকা দেবে? ** -    কী ব্যাপার দিবাকরবাবু? অমন হাঁকুপাঁকু করছেন কেন? -    আপনি কে? আপনার গলাটা কোথা থেকে আসছে? আমি দেখতে পারছি না কেন আপনাকে? -    এই ঘরের এক কোণে একটা স্পীকার লাগানো আছে। আমার কণ্ঠস্বর আপনি সেই স্পীকার থেকেই শুনতে পারছেন। -    আমি কোথায়? -    নিস্পারনিস্কে। -    নিস কী? -    নিস্পারনিস্ক। আপনি নিস্পারনিস্কে আছেন।

সুরেলা বাপের ছিচ্‌কে ছেলে

"বাংলা আমার জীবনানন্দ", বাপ গাইছিলে মনের সুখে। "জীবনানন্দ কে বাবা?" ছেলে জানতে চাইলে।  "বাংলার নিট পেগ, বুঝলি?", বাপ মিচকি হাসলে। ** সেদিন যেমন। বাপ গান ধরলে, "আমায় ডুবাইলি রে,আমায় ভাসাইলি রে" ছেলে শুধলে "এমন গান গাইছ কেন বাবা?" বাপ বললে "সন্দীপ রে'র সিনেমা দেখে ফেলেছি যে"। ** বাপ গাইছিলেন "বড় একা লাগে এই আঁধারে"। 

অমু ও অফিস

জামরুলের পাতার মত একটা ফিসফিসে ভালো লাগা গন্ধ অমুর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বসের সামনের চেয়ারে বসেই বেশ অফিস বিরোধী আরামে গা এলিয়ে আসছিল তার। কানের মধ্যে একটা নরম ঝিমঝিম ,  কড়ে আঙুলের ডগায় এক ফোঁটা সর্ষের তেল নিয়ে কানের ভেতর আলতো করে বুলিয়ে নিলে যেমন ভালো লাগে- ঠিক তেমনটা। জিভে সামান্য শুকনো লংকার আদুরে রেশ রয়ে গেছিলো ,  লাঞ্চে আজ অফিসের পাশের ফুচকাওলার থেকে আনা আলু কাব্‌লি ছিলো ;  ডাল , ভাত ,  অমলেটের পাশাপাশি। জিভের ঝালটাও ভালো লাগায় এসে মিশছিলো। টেবিলের উলটো দিক থেকে ঝড়ের বেগে উড়ে আসছিলো খিস্তি, অফিসের পরিবেশের হিসেবে যা যথেষ্ট কাঁচা। বস আগুন। অমুর কাজ নিয়ে অবিশ্যি বস বিশেষ অনুযোগ করার সুযোগ পান না। তবে “মুখে মুখে তর্ক” করার অভ্যেসেটা যে অমুকে একদম কর্পোরেট ইতর বানিয়ে দিচ্ছে দিন দিন, এটা নিয়েই তলোয়ার শানাচ্ছিলেন ত্রিপাঠি সাহেব; অর্থাৎ বস। এটিকেট  জ্ঞানের অভাব নিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় হচ্ছিলে অমু। প্রথমে অমুর মেজাজ গেছিল বিগড়ে। কান দু’টোর গরম হয়ে যাওয়া সে মোক্ষম টের পাচ্ছিল। বেফালতু ওয়ার্ক এথিক্‌স নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন মানে হয়! অমুর দোষ বলতে বসের টাইপ করা একটা অফিস মেমোর বানান ও ব্যাকরণ

সোমবারের জঘন্য যত জোক্‌স

-    আচ্ছা ঘোষদা, সোমবার এলেই আপনার মেজাজ এমন খিঁচরে থাকে কেন বলুন দেখি? -    ঢপের কাজ, ভাটের প্রেশার, রোব্বারের মাটনের হ্যাংওভার আর টিফিন কেরিয়ারে আলু পটল। মেজাজ ভালো থাকবে কী করে মাইতি? আর তুমিই বা অমন দাঁত বের করে ফি সোমবার ঘুরে বেড়াও কেন শুনি। খুব পীরিত নাকি অফিসের সাথে? -    আরে ধুর। অফিস আবার একটা জায়গা হল। ফাইল আর ফাইল আর বড় সাহেবের জুতোয় আমাদের থুতু। ধুর ধুর। আমি হাসি সোমবারের লেগ পুল করে। -    সোমবারের লেগ পুল করে? -    মানে সোমবার কে নিয়ে ঠাট্টা করে আর কী। নিজেই নিজেকে শুনিয়ে থাকি। সোমবারি ঠাট্টা। আর নিজেই ফিক ফিক করে হেসে থাকি। সিক্রেট টু মাই মন্ডে স্মাইল্‌স। বুঝলেন কিনা ঘোষদা? -    মানে ? কিরকম? -    বলি? -    অফ কোর্স। শুনি। -    আচ্ছা বলুন দেখি, যে সোমবার কে মীর ভালোবাসেন, তাকে তিনি কী বলে ডাকেন?

অমু ও জমানো

অমু, সে ছোটবেলা থেকেই খুব জমাতে ভালোবাসতো। বিভিন্ন রকম জমানোর সখ। কখনও কেতাবি, কখনও অদ্ভুত। ক্লাস টু’তে জমানো শুরু করেছিল বাসের টিকিট দিয়ে। কলকাতার প্রাইভেট বাসের সরু লম্বা টিকিটগুলো। কয়েক বাণ্ডিল জমা হওয়ার পর মতি পাল্টে ট্রেনের টিকিট জমানো শুরু করেছিল। তখনও ইলেকট্রনিক টিকিটের জমানা আসেনি, হলদে রঙের ছোট টিকিট যাতে ঘটাং করে কালো কালিতে তারিখ ছাপা হত। সেই ট্রেনের টিকিট জমিয়েছিল এক থলে। দেশলাই আর সিগারেটের বাক্সও একই সাথে জমাতে আরম্ভ করেছিল, একটু বড় বয়েসে এসে। আগন্তুক সিনেমাটা দেখে সে নতুন শব্দ শিখল নিউমিসম্যাটিস। কয়েন জমানো শুরু করেছিল সেই দেখে। খান কয়েক ব্রিটিশ, নেপালি আর বাংলাদেশি কয়েন জোগাড় করতে গিয়েই টের পেলে যে ছাত্র বয়েসে এই শখে টু পাইস বেশি খরচ হওয়ার চান্স আছে, বাপের যোগান তেমনটি নেই। সেই হিসেবেই স্ট্যাম্প জমানোর দিকেও যায়নি সে।