Showing posts with label বাংলা ভাষা. Show all posts
Showing posts with label বাংলা ভাষা. Show all posts

Monday, February 21, 2022

বাংলার ক্লাস



বাংলায় আমি চিরকালই নড়বড়ে। হাতের লেখা মারাত্মক খারাপ, বানানে বৃহস্পতি। অবশ্য অন্যান্য ভাষায় আমার অবস্থা আরও করুণ। সত্যি বলতে কী; ভাষাগত ভাবে আমি চিরকালই জুবুথুবু৷ তা সত্ত্বেও  ব্লগটা শুরু করেছিলাম নেহাতই টেকনোলজির মায়া কাটিয়ে উঠতে না পেরে৷ ২০০৭ নাগাদ ব্লগ ব্যাপারটা বেশ নতুন৷ উঠলো বাই তো করে নিজের একটা কটক-যাই-ওয়েবসাইট দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়, যা কিছু হিজিবিজি লিখেও ফেলা যায়৷ এ লোভ পাশ কাটিয়ে চলে আসা সহজ নয়৷ সেই থেকে বংপেন৷ পরে বহুবার মনে হয়েছে নামটা কেমন যেন; বং এবং পেন, দু'টোর কোনওটাতেই বাংলার ব'ও নেই। কিন্তু নামটা তদ্দিনে ডাকনামের মত হয়ে গেছে৷ বাবাই, টুকাই, পাপাই; এই ধরণের ডাকনামের মানে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও মানেই হয়না৷ তেমনই, আমার মাথার মধ্যে বংপেনও খানিকটা ওই বাবাই-পাপাইয়ের মতই একটা ডাকনাম৷ 

ব্লগে প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম ইংরেজি ফন্টে৷ মানে লিখতাম বাংলাতেই, কিন্তু রোমান হরফ ব্যবহার করে৷ সে'খানে বাংলা হয়ে যেত Bangla। এর মূল কারণ দু'টো৷ এক, তখনও অভ্র কীবোর্ড ততটা ছড়িয়ে পড়েনি বা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি৷ ওয়ার্ড ফাইলে বাংলা টাইপ করা একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতা ছিল৷  দুই, পরীক্ষার খাতার বাইরে বাংলা আদৌ লেখার অভ্যাস ছিল না৷ সে সময় হাতে স্মার্টফোন না থাকায় বাংলা টাইপ করার ব্যাপারটা নেহাত এলেবেলে ছিল না৷ সবচেয়ে বড় কথা, একটানা বাংলায় লিখব ভাবলেই গলা শুকিয়ে আসত৷ 

কাজেই রোমান হরফে বাংলা লিখে ব্লগের শুরু৷ তখন লেখা ব্যাপারটাকে আদৌ পাত্তা দিচ্ছি না। ইন্টারনেটে লেখা ভেসে উঠছে; থ্রিল সে'টুকুই৷ কিন্তু এরপরেই টের পেলাম আদত ম্যাজিকটা। সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যাজিক৷ আমরা (আমিও) সোশ্যাল মিডিয়াতেই অনবরত দুঃখ করে চলি যে এই মাধ্যমটা ভীষণ নির্মম। মানুষ এ'খানে একে অপরের কলার টেনে কাদায় গড়াগড়ি যাচ্ছে, এ ওর বাপ তুলে গাল দিচ্ছে, ও এর গুষ্টির পিণ্ডি চটকাচ্ছে৷ গুজব আর গালিগালাজে পরিপূর্ণ চারদিক৷ অথচ ফেসবুক ট্যুইটারের নেশা ছাড়তে না পেরে আমরা ক্রমাগত হাহুতাশ করে চলেছি৷ 

যাকগে, যে ম্যাজিকের কথা বলছিলাম। এই প্রবল গোলমেলে ইন্টারনেটের জগতে ব্লগের ঝাঁপ খুলে টের পেলাম দু'চারজন মানুষ পাশে এসে বসতে শুরু করেছেন (ইয়ে, ভার্চুয়ালি), লেখার দিকে চোখ বুলোতে শুরু করেছেন৷ আর সবচেয়ে বড় কথা; কথাবার্তা শুরু হল৷ লেখা নিয়ে, বাংলাভাষা নিয়ে। একসময় টের পেলাম আমারই বয়সী এক ছোকরা মাঝেমধ্যেই ব্লগে কমেন্ট ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়, "ভায়া, রোমান হরফে নয়৷ ইউনিকোডে লেখো৷ বাংলায় লেখো"৷ যাই লিখি ছাই একই কমেন্ট৷ খানিকটা বাধ্য হয়ে খোঁজ নিলাম ইউনিকোড ব্যাপারটা কী, আবিষ্কার করলাম অভ্র৷ একটা বিচ্ছিরি দুরুদুরু নিয়ে শুরু হল অভ্রতে লেখা৷ সেই ছোকরাটি অবশ্য নিজের 'সুপারভিশন' সরিয়ে নেয়নি৷ ওর নাম রোহণ, ওর মত বাংলাপ্রাণ মানুষ আমি খুব বেশি দেখিনি (ইয়ে, আমি কতটুকুই বা দেখেছি)।  রোহণের (বলাই বাহুল্য ওর একার নয়) সৃষ্টিসুখই বাংলা প্রকাশনায় এখন নতুন হাওয়া (ততটাও নতুন নয় আর৷ রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে)।

কপাল বটে আমার৷ হিজিবিজি যা কিছু লেখা, কিছু সহৃদয় মানুষ যত্ন করে পড়তেন এবং খেটেখুটে প্রুফ রীড করতেন। কারুর কারুর সঙ্গে আলাপও হল৷ ক্রিকেট লিখিয়ে অভিষেকদার সঙ্গে আলাপও ওই ব্লগেরই মাধ্যমে৷ অভিষেকদা রীতিমতো মাস্টারি করেছে বেশ কিছু বছর। লেখার ভুলত্রুটিতে বিরক্ত হয়ে বাড়ি এসে পেটানোর হুমকিও দিয়েছে৷ কিন্তু হাল ছাড়েনি৷ বানান এখনও গুলিয়ে যায়, ভাষা এখনও নড়বড়ে, তবে ভুলের ভয়াবহতা খানিকটা কমেছে মূলত অভিষেকদার বকুনির ভয়ে। (লেখায় গোলমাল আছে এখনও বিস্তর, খানিকটা কমেছে, এই যা)৷ 

পত্রভারতীর ত্রিদিববাবু প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও বংপেনের গল্প পড়েছেন আর ধৈর্য ধরে ভাষা এবং স্টাইলের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন৷ সে আলাপও ইন্টারনেট ধরে। আমায় সামনে বসিয়ে একদু'বার লেখা পড়েছেন৷ প্রতিবারই মনে হয়েছে পত্রপাঠ বিদেয় করবেন৷ কিন্তু ওই, লাখটাকার কপাল; ভদ্রলোক কোনওবারই তিতিবিরক্ত হননি৷ " ও এমন কিছু নয়" ভাব করে ভুলচুকগুলো দাগিয়ে দিয়েছেন৷ আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। 

সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বংপেন ব্লগে লেখা পড়ে বহু মানুষ প্রুফরীড করে আমার লজ্জা ঢেকেছেন (চেষ্টা করেছেন অন্তত)৷ কত মানুষ ভালো বাংলা বইয়ের খোঁজ দিয়েছেন৷ ব্লগতুতো সম্পর্কের কত সহৃদয় মানুষ ভালো বাংলা সিনেমা দেখিয়ে ছেড়েছেন৷ কত মানুষ লেখার ভুল ধরিয়ে দিয়ে সরে পড়েননি, ভাষাগত বদঅভ্যাস ছাড়ানোর সহজ উপদেশ দিয়ে উপকার করেছেন৷ স্বীকার করে নিই, বংপেন ফেসবুকের পেজের কমেন্ট সেকশনের মত ধারালো প্রুফরীডার না থাকলে আমি সত্যিই বড় বিপদে পড়তাম। 

মোটের ওপর, বংপেন সম্ভবত গোটাটাই 'ক্রাউড ফান্ডেড'৷ কেউ বানানের লেগো টুকরো এগিয়ে দিয়েছেন, এগিয়ে দিয়েছেন ভাষার স্টাইলের লেগো টুকরো। এ সমস্ত জুড়েটুরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বংপেন; মচমচ শব্দ আছে কিন্তু ভেঙেচুরে পড়ছে না৷ এই ব্লগের সূত্রেই বাংলাভাষা প্রসঙ্গে বিস্তর ধমক, কানমলা, গাঁট্টা, আর স্নেহপ্রাপ্তি ঘটেছে। সে'সব নিয়েই আমার বাংলা-শিক্ষা। বংপেন থেকেই জুটেছে বাংলার 'মাস্টারমশাই-দিদিমণি'দের৷ 

পনেরো বছর আগের তুলনায় ভুলভ্রান্তি খানিকটা কমেছে (তবে আবারও বলি, কমেছে মানে স্রেফ ওই সমুদ্র থেকে দু'চার মগ জল সরেছে আর কী)। আরও কমবে, আরও একটু ভালো বাংলা লিখতে শিখব ধীরেসুস্থে; উচ্চাশা বলতে সে'টুকুই৷ 

ধন্যবাদ। 

আর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা৷

Friday, February 21, 2020

মায়ের ভাষা

- বিনোদ, তোর মাথাটা গেছে!

- সে কী...।

- তোর খামখেয়ালিপনা এ'বার পাগলামোর পর্যায় চলে যাচ্ছে। তোর এই অসভ্যতাগুলো আমি সেক্রেটারি হিসেবে সহ্য করতে পারি। কিন্তু বন্ধু হিসেবে তোকে সাবধান করে দেওয়াটা আমার কর্তব্য৷ 

- তুই কি আমার কাছে শুধুই একজন সেক্রেটারি রে বিশে?

- তা নই বলেই মেগাস্টার বিনোদ দত্তর সামনে বুক ঠুকে কথাগুলো বলতে পারছি। কিন্তু বিনোদ, শুনে রাখ। পাবলিক তোর এই পাগলামো বেশি দিন বরদাস্ত করবে না।

- চা খাবি?

- কথা ঘোরাস না। সিংঘানিয়া চটে বোম হয়ে আছে। আর ওকে দোষ দিই বা কী করে বল্! ওর চ্যানেলে এত বড় একটা ইভেন্টের লাইভ টেলিকাস্ট, এদ্দিনের পাবলিসিটি যেটার ফোকাসে ছিলিস তুই৷ সেটা এইভাবে গুবলেট পাকিয়ে দেওয়া; চ্যানেলের মালিক হিসেবে সিংঘানিয়া তোকে স্যু কেন করবে না বলতে পারিস?

- মাতৃভাষার ভালোবাসা; বিনোদ ও বিনোদন। বেশ গালভরা একটা নাম রেখেছিল বটে সিংঘানিয়ার চ্যানেল। কী বলিস বিশে?

- তোর গা চিড়বিড়ানো হাসিটা এ'বার বন্ধ কর। সিংঘানিয়ার প্রডাকশন কোম্পানি ছাড়া ইন্ডাস্ট্রি অন্ধকার। ওঁর টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে অমন চ্যাংড়ামি করে তুই কত বড় অন্যায় করেছিস জানিস?

- চ্যাংড়ামো? আমি চ্যাংড়ামো করেছি?

- করিসনি? সঞ্চালক একের পর এক প্রশ্ন করে গেল আর তুই বোবা-কালা হয়ে বসে রইলি৷ হাজার প্রশ্নেও টুঁ শব্দটি করলি না। লাইভ শোতে টেলিভিশনের সামনে বসা কয়েক কোটি লোক হাসালি! দু'ঘণ্টার অনুষ্ঠান আধঘন্টার মধ্যে মুলতুবি করতে হল। স্পনসররা ফায়্যার, সিংঘানিয়ার অন্তত সাত কোটি টাকা জলে গেল৷ তোর অফিসে আজ ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছে৷ আর আগামীকালের কাগজগুলোর হেডলাইনের কথা ভেবেই শিউরে উঠতে হচ্ছে। 

- তুই ওভাররিয়্যাক্ট করছিস বিশে। আমি বরং চা বানাই।

- অসহ্য। জাস্ট অসহ্য।

- অমন অস্থির হচ্ছিস কেন বল তো?

- হব না? তুই স্টার হতে পারিস, আমি তো একজন পাতি সেক্রেটারি।  মিডিয়ার কলগুলো আমার কাছে আসছে, তোর কাছে নয়। কাল সিংঘানিয়ার অফিসে গিয়ে আমাকেই গড়াগড়ি খেতে হবে। নিজের মাথায় ছাতা ধরা লোকগুলোকে এ'ভাবে ঠেলে দিসনা বিনোদ। 

- শান্ত হ। সিংঘানিয়ার কাছে আমি নিজে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসব, কেমন?

- এমন পাগলামির কারণটা আমায় বলবি? সঞ্চালকের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলি না কেন?

- কারণটা শুনবি? সত্যিই শুনতে চাস?

- অন্তত আমায় না বলে তোর ছাড় নেই।

- আসলে, স্টুডিওর চেয়ারে বসতেই; হঠাৎ এই অনুষ্ঠানের নামটা মনের মধ্যে কেমন যেন একটা দোলা দিয়ে গেল। মাতৃভাষার ভালোবাসা। তাই হঠাৎ ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দিল বুঝলি, ভাবলাম আমার মাতৃভাষাতেই না হয় কথা বলি।

- এই সেই চন্দ্রবিন্দুর চ। ইয়ার্কি হচ্ছে? মাতৃভাষায় কথা বলতে চেয়ে লাইভ টেলিকাস্টে তুই চুপ করে বসে রইলি? 

- জানিস বিশে, স্টুডিওর ওই আলোর ঝলমলে হঠাৎ খুব মায়ের কথা মনে পড়ল৷ আমার মা। মা যে কী ভালো খেত তা কোনোদিনই জানতে পারিনি; শুধু জানতাম মাছের ভালো টুকরোগুলো পরিবারের সকলের পাতে দিয়ে যে কাঁটাল্যাজা পড়ে থাকবে, তা দিয়েই মা ভাত মেখে খাবে। মায়ের পাতে কোনোদিন ভাত কম হত না, বাড়ির সবাইকে খাইয়ে আধমুঠো ভাত পড়ে থাকলে মায়ের খিদেও আধমুঠোয় এসে দাঁড়াত। হাঁড়িতে ভাত না থাকলে মায়ের খিদেও পেত না। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ঠাকুরদাকে মা ভক্তি করত, সেই ঠাকুরদা জোর গলায় জানান দিতেন মেয়েমানুষের কণ্ঠস্বর উঁচুতে উঠলে গেরস্তের অকল্যাণ, মায়ের গলা শোনাই যেত না প্রায়।   আমার জন্মের বছর দুই আগে আমার এক দিদি জন্মেছিল। ঠাকুমা খুব চেয়েছিলেন নাতি হবে, নাতনির মুখ দেখে মনের দুঃখে মাকে বলেছিলেন; "পোড়ামুখী, পরের বার যেন চাঁদপানা  খোকার মুখ দেখতে পাই"৷ আমার ধারণা মা সেদিনও চুপটি করেছিল। ঠাকুমার সেই দীর্ঘশ্বাসের বোঝা বয়ে আমার সেই দিদিটি বেশি বেঁচে থাকতে পারেনি৷ জানিস বিশে, আমি জানি না মায়ের প্রিয় রং কী, মা পাহাড় বেশি ভালোবাসে না সমুদ্র!৷ মায়ের নিশ্চুপ পেরিয়ে মায়ের খবর নেওয়াই হয়নি কোনোদিন। তাই স্টুডিওতে বসে গ্লোসাইনে "মাতৃভাষার ভালোবাসা" দেখে মায়ের জন্য যে কী ভীষণ মনকেমন করে উঠল...। তাই সেখানে যতক্ষণ ছিলাম আমি আমার মায়ের ভাষা আঁকড়ে পড়ে রইলাম৷ আমায় মায়ের ভাষা। 

- পৃথিবীতে যতজন বাংলায় কথা বলে,  তার চেয়ে অনেক বেশি মা-মেয়ে বোধ হয় তোর মায়ের ভাষাতেই কথা বলে। 

- হেহ্। 

- চা খাবি রে বিনু?

Wednesday, May 23, 2018

সাধক আত্মারাম

- আপনি ভূত?
- আজ্ঞে।
- প্রপার?
- সাড়ে তিন বছর হল।
- অপঘাত?
- ন্যাচুরালি।
- নাম?
- জেমস বন্ড।
- য্যাহ্।
- রিয়েলি।
- সাহেব ভূত?
- বাঙালি। বজবজ।
- অথচ নাম জেমস বন্ড?
- নিজে দিয়েছি। ভূতের নাম বাদল চক্রবর্তী হলে মানায়?
- ও। আমি তান্ত্রিক। বহুদিন ধরে চেষ্টা করছি; আত্মা নামানোর।
- এই এক অদ্ভুত রোগ মানুষের। খালি ভূতের ন্যাজ ধরে টানা।
- লেজ?
- রেটোরিকাল। আপনি সত্যিই তান্ত্রিক?
- আজ্ঞে। সাধক আত্মারাম।
- মেটা নাম। তবে তান্ত্রিকটান্ত্রিকে আমার বিশ্বাস নেই।
- সে কী। ভূত হয়ে তান্ত্রিকে বিশ্বাস করেন না?
- ও'সব বুজরুকি মশাই।
- আপনি তো কম্পলিকেটেড ভূত দেখছি।
- খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তো? চট করে বশীকরণ, অর্শরোগ সারানোর মাদুলি; এ'সব অফার করেন নিশ্চয়ই?
- না করলে চলবে কেন?
- ওই কাগুজে বুজরুকি আমার ভালো লাগে না।
- বুজরুকি?  ইয়ার্কি হচ্ছে? বুজরুকি হলে আপনার মত বজবজে ভূতকে আমার এই ড্রয়িং রুমে টেনে আনলাম কী করে? এ'টা অবশ্য ঠিক যে এত বছরে আপনাকেই প্রথম নামাতে পারলাম।
- নামালেন মানে?
- আমি। আপনাকে নামালাম। বহুদিনের সাধনার ফল।
- ধ্যুত। যত ন্যাকামো। আমি নিজে নেমে এসেছি।
- আমার মন্ত্রবলে আপনি নামেননি?
- নো স্যার। আমি আপনার মন্ত্রভুলে নেমেছি।
- মানে?
- এই আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলাম, আচমকা আপনার বাড়ি থেকে সংস্কৃত শব্দের ভুল উচ্চারণ শুনে কেঁপে উঠলাম। উচ্চারণের কোয়ালিটি শুনে আমি বুঝতে পারি কার বানানের দৌড় কদ্দূর। এক রকমের সুপারপাওয়ার বলতে পারেন। জ্যান্ত থাকতেও এ কাজই করে বেড়াতাম। আপনার উচ্চারণ যা শুনলাম মশাই, আপনার ণত্ব বিধান ষত্ব বিধান তো ডেফিনিটলি ডকে। অন্যদিকে তো অনেক জল মেশানো আছেই।
- বানানটা আমার একটু কাঁচা বটে...।
- বললাম তো, একটুঠেকটু নয়। অত্যন্ত কাঁচা। এমন চলতে থাকলে খবরের কাগজে গোলমেলে বিজ্ঞাপন দিয়েই কাটাতে হবে। বুজরুকি ছেড়ে এ'বার কিছু একটা করুন।
- যাই বলুন। টেকনিকালি তো ভূত নামিয়েছি।
- আমি নেমেছি। ইচ্ছে করে।
- ভুল বানান, ভুল উচ্চারণের জোরে নেমেছেন।
- স্বেচ্ছায়।
- রাইট। তেনারা, আই মীন আপনারা, স্বেচ্ছায় নামতে না চাইলে তো নামানো যায় না।

***

- আপনি বাদল চক্রবর্তী?
- না।
- থুড়ি, আপনিই জেমস বন্ড?
- আজ্ঞে।
- ভূত?
- অবভিয়াসলি। আপনি?
- ভূত। অবভিয়াসলি। মনোজ হালদার। তা, আত্মারামের খাঁচায় আপনিও ভর্তি হলেন? আমার এখানে মাস ছয় হয়েছে।
- মহাফেরেব্বাজ। ইয়ে, এই খাঁচার ভূতের দল নিয়ে কি ব্যাটা সত্যিই ভূতের রেটোরিকাল থার্ড রাইখ বানাচ্ছে?
- নয়ত আপনার আমার মত গ্রামার নাজি ভূতদের ফাঁদ পেতে ধরছে কেন বলুন।
- মতলবটা কী?
- আর্মি মজবুত হলে সবাইকে লেলিয়ে দেওয়া সমস্ত ভুল বানানের দিকে। প্রতিটা বানান ভুল বেছে বেছে এলিমিনেট করা হবে। বিশ্বজোড়া স্পেলচেকের ফাঁদ। বানানভুল করা মাত্র ভূতে এসে কান মলে যাবে।
- মহা বিটকেল মানুষ তো। নমস্য। বেশ ভক্তি তৈরি হচ্ছে।

Tuesday, February 21, 2017

পিতৃভাষা বনাম মাতৃভাষা

মাতৃভাষা। পিতৃভাষা নয় কিন্তু। আমাদের ভালোবাসা আবেগ সমস্তটুকু মাতৃভাষাকে ঘিরে।

পিতৃভাষা হলে সে ভাষার জন্য এমন প্রাণপাত করা সম্ভব হত না। পিতৃভাষা দিয়ে মাটি কোপানো যেতে পারত, মাথা ফাটানো যেতে পারত। কিন্তু সে ভাষাকে তুলিকলম ধারণ করে উঠতে পারত না।  

আর এই ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝে উঠতে কেটে গেল এতগুলো বছর। তবে এদ্দিনে স্থির বুঝেছি যে ব্যাপারটা যদি মাতৃভাষার বদলে পিতৃভাষা হত, তাহলে একুশের ফেব্রুয়ারির দিনে কালো ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরতে হত। 

তা, পিতৃভাষা হল না কেন? 

পরিস্থিতি ১ঃ
রোগা হয়ে গেছি। 

মা - 
"তোর অমানুষিক খাটনি যাচ্ছে রে। খাওয়াদাওয়াটা অবহেলা করিস না বাবা। আর দিনে এক গ্লাস করে দুধ খেতে তোর এত আপত্তি কীসের বল তো"?

বাবা-
"দিন দিন টিকিটব্ল্যাক করা চেহারা হয়ে যাচ্ছে তো রে ব্যাটা রাস্কেল"।


পরিস্থিতি ২ঃ
মোটা হয়ে গেছি।

মা-
"ছেলের আমার রাজপুত্রের মত চেহারা"। 

বাবা-
"তোর বোধ হয় আর হাইট বলে কিছু রইল না, না রে? শুধুই ডায়ামিটার"। 

পরিস্থিতি ৩ঃ
রেজাল্ট বেরিয়েছে। 

মা-
"নম্বর যা খুশি হোক, তুই মানুষের মত মানুষ হ খোকা"। 

বাবা- 
"হাফ ন্যাড়া করে ইলেক্ট্রিক পোলে টাঙিয়ে রাখা উচিৎ ব্যাটাচ্ছেলেকে। গরু যে কিনে দেব তারও উপায় নেই, গরুদের ইনসাল্ট হবে"। 

পরিস্থিতি ৪ঃ
ডান হাতের হাড় ভেঙ্গেছে।

মা-
*হাউ হাউ করে কান্না*

বাবা-
"কে বলেছিল মোটরসাইকেলে হাত দিতে? স্কাউন্ড্রেলটার বাঁ হাতের হাড় আমি ভাঙবো"। 

পরিস্থিতি ৫ঃ
জ্বর।

মা-
"মাথা ব্যথায় খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা? বাম লাগিয়ে দিই"?

বাবা-
"সামান্য টেম্পারেচারে এমন ছটফট? আমার কপালেই এমন নেদু একটা ছেলে জুটলো? ডিসগ্রেস্‌"। 

**

অতএব। 
মোদের গরব মোদের আশা
আ মরি মাতৃভাষা। 

Sunday, February 21, 2016

একুশ, বুল্টি ও বাঙালি

- বুল্টি।
- দাদা।
- বুল্টি। আমার গলার মধ্যে যে কন্সার্ন, থুড়ি, যে চিন্তা মিশে আছে সে'টা টের পাচ্ছিস?
- আজ মা নিরামিষ রাঁধছে?
- সিরিয়াস বুল্টি। থুড়ি। ইয়ে। পরিস্থিতি গম্ভীর কিন্তু।
- ব্যাপার কী?
- আজকের দিনটা খেয়াল আছে?
- রোববার। তোর সকাল সকাল ওঠার কথা নয়।
- ধ্যার। ভাষা দিবস। একুশে। আমার ভায়ের রক্তে।
- ওহ। তাই তো।
- তাই তো মানে? আর কদ্দিন?
- কদ্দিন কী?
- কদ্দিন তুই বাংলা সাহিত্যকে অবহেলা করে অংবং ক্রিস্টি রোলিঙয়ে আটক থাকবি? সে'সব পড়। কিন্তু এবারে শরদিন্দু,  বিভূতিভূষণ না পড়লে যে আর চলবে না।
- চলবে  না?
- নাহ! আর যে যা করে করুক। আমার বোন বাঙালি হয়ে বাংলা পড়বে না, সে'টা আমার হজম হবে না। আর শোন। এ বিষয়ে তোর ইচ্ছে তৈরি করাটা জরুরী। কাজেই আমি দায়িত্ব নিয়ে কাল থেকে টেলিগ্রাফটা বন্ধ করে দিয়েছি। স্রেফ আনন্দবাজার।
- হোয়াট??
- হোয়াট নয়। বল "কী"।
- দাদা, প্লীজ।
- বুল্টি, তুই বাঙালি। ইংরেজিতে এত চমৎকার সব প্রবন্ধ লিখছিস। এবার বাংলায় লেখ! মানে লিখতেই হবে তোকে।
- কী মুশকিল। বাংলায় লিখতে আমি কমফর্টেবল নই। ইংলিশ মিডয়ামে পড়ছি বলেই হয়তো...।
- এক্সকিউজ.. থুড়ি...অজুহাত দিস না বুল্টি।  ইংরেজি মাধ্যমে আমিও পড়েছি।
- আই অ্যাম রিয়েলি প্রাউড যে তুই বাংলায় এত ভালো দাদা। আমার পিছনে পড়লি কেন?
- প্রাউড? প্রাউড আবার কী? বাঙালি মেয়ে হয়ে গর্ব বলতে পারিস না? আরে বাংলার মত মিষ্টি ভাষা হয় না। বাংলাই সেরা।
- দাদা।
- বুল্টি।
- ল্যাঙ্গুয়েজ সুইটনেস ইনডেক্স আছে কোনও?
- এ আবার কেমন কথা?
- তুই ভারতীয়। তুই মানিস যে ভারতবর্ষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ?
- না।
- গুড। আমিও মানি না। আচ্ছা, তোকে কেউ যদি বলে রোজ বাইশবার তেরঙ্গার সামনে সেলাম ঠুকতেই হবে?
- আমার ইয়ে...তেরঙ্গায় অ্যালার্জি নেই। তবে কেউ হুকুম করলে গা জ্বালা করে।
- যদি কেউ বলে সকাল সকাল চার বার বন্দেমাতরম না বললে তোক জব্বর কানমলা দেওয়া হবে, তাহলে?
- আরে এ তো আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
- বেশ। এবার হে স্বাধীন ব্যক্তি, আমার ইংলিশ ডেইলি যদি ইমিডিয়েটলি চালু না করেছ, তুমি দাদা বলে আমি তোমার বাঙালি কলারটা ছেড়ে দেব না।

Tuesday, September 16, 2014

বানান

অনিমেষ বুঝতে পারছিলেন যে ক্লান্তি একেই বলে। টানা দু'ঘণ্টা ফুটবল পিটিয়েও এমন ক্লান্তি কখনও শরীর জুড়ে আসেনি। তর্ক সাধতে তার জুড়ি নেই, দুর্বার তর্কের ঝড়ও তাকে কোনদিন এমন শ্রান্ত করে দেয়নি। সাংবাদিকতার পেশায় প্রায় জীবনভর কাটিয়েও এমন অসহায় ভাবে ঢলে পড়তে হয়নি কখনো তাকে। তবে এ ঠিক ক্লান্তি নয়; অবসাদ বলা ভালো – বেদনামাখা অবসাদ ঠিক বলা চলে না অবশ্য। বুকের ব্যথাটা বরং আদৌ টের পাচ্ছিলেন না যেন। তবে বুঝতে পারছিলেন হিসেব মোটামুটি গুটিয়ে আনা গেছে। বিরানব্বুই। আর কত!

-   “বিনি আছিস?”, অনিমেষ বালিশ থেকে মাথা তুলবার চেষ্টা করলেন, পারলেন না।
-   “কিছু বলবে বাবা?”
-   “তমাল এসেছিল না?”
-   “তমাল কাকু তোমার পাশেই বসে তো”
-   “ওহ, তমাল না কি ওদিকে?”
-   “ অফ কোর্স, ঠাহর করতে পারছ না? বয়েস হয়ে গেল তোমার”
-   “বিনি, একটু অন্য ঘরে যাবি? তমাল-কাকুর সাথে কিছু...”
-   “বেশি কথা বোল না বাবা...”
-   “প্লিজ বিনি”
-   “আমি আসছি, কাকু দেখো বাবা যেন বেশি...”
-   “তুই যা। আমি আছি। চেহারার অবস্থা তো বেশ ঘোড়েল বানিয়েছ অনিমেষ-দা, কি ব্যাপার বল তো। সেঞ্চুরির ইচ্ছে নেই?”
-   “তোর ইচ্ছে নেই ? সেঞ্চুরির?”
-   “ছিল। তবে লিভারের আর হার্টের যা অবস্থা, নব্বুই ছুঁতে পারব না বোধ হয়। মেরেকেটে আর বছর তিন। কি কথা বলতে ডেকে আনলে বল এবার”

Monday, February 4, 2013

আব্বেয়ার

আব্বেয়ার!

কুল হও, ইংরেজিতে খিস্তি মেরে ভুত ভাগিয়ে দাও উও ভি সহি কিন্তু শালা-শূয়রের বাচ্চা হেঁকে ইজ্জতের শাকালু করে ফেলো না।

হিপ হও, প্রেমিকার কানে  “ উফ, সেক্সি বাটস”  বলে মূর্ছা যাও সেলাম পাবে, কিন্তু “তুমুল নিতম্ব” বলেছো কি সোজা হিল-জুতো-পেটা।

Thursday, October 27, 2011

ভাষা-বোমা

গত কুড়ি বছর ধরে মেজো-পিসিদের বাড়িতে রামখিলান গোয়ালা দূধ দিয়ে চলেছেযখনই পিসির বাড়ি যাই,রামখিলানের দূধ দিতে আসবার সময় বাড়ি থাকার চেষ্টা করি; তার মূল কারণ হলো রামখিলান আর আর আমার মেজোপিসির'র কথোপকথন। বিহার থেকে ৩৭ বছর আগে এসেও, এখনো রামখিলান বাংলা ভাষার মার-প্যাঁচ কব্জা করতে পারেনি। । আর তার সাথে আমার পিসির হিন্দী মিলে যে আণবিক-ককটেল তৈরি হয়, তা অনাবিল। যাবতীয় গরমিল সত্ত্বেও মেজোপিসি নিজের হিন্দী এবং রামখিলান নিজের বাংলা ছেড়ে এক চুল নড়বেনা। ফলশ্রুতি? ভাষাগত হিরোশিমা, দৈনিক

Saturday, September 24, 2011

শুদ্ধ বাংলা বিশুদ্ধ বাংলা


প্রশ্ন: শুদ্ধ কি প্রকারে শুদ্ধতর হয় ? বাহ্যিক পরিবর্তন ছাড়াও সমূহ ব্যবহারিক পরিবর্তন কি ভাবে সম্ভব? দশটি উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা করো
উত্তর: শুদ্ধ হতে শুদ্ধতর হওয়া এবং বাহ্যিক পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহারিক পরিবর্তনের যে পদ্ধতিটি, তার উত্তম প্রয়োগ-দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পারি আমাদেরই আপন মাতৃভাষায়
অতএব, বঙ্গ-ভান্ডার চষে দশ খানি বিবিধ-রতন নীচে লিপি-বদ্ধ করা হলো:
শব্দ ১- ব্যাপক:
প্রাচীন ব্যবহার : কলিকাতা শহরে ওলাউঠার প্রাদুর্ভাবে ব্যাপক হারে মানুষ মরিতে লাগিলো
আধুনিক ব্যবহার: ব্যাপক মেয়ে, সাধু ভাষায় যাকে বলে ডানা লেস পরি
শব্দ ২- আগুন:
প্রাচীন ব্যবহার : এত বেলা হয়ে গ্যাল এখনো উনুনে আগুন পড়ল না রে মুখপুড়ির দল?”
আধুনিক ব্যবহার: হোয়াট আ কভার ড্রাইভ, আগুন শট, জিও দাদা
শব্দ ৩- গুরু:
প্রাচীন ব্যবহার : তুমি গুরু তুমি রাম, তুমি ভগবান, তোমারি লগিয়া তাই কাঁদে মোর প্রাণ
আধুনিক ব্যবহার : ভ্যানতারা না মেরে একটা সিগারেট দাও দেখি গুরু

Monday, February 21, 2011

ভাষা দিবসিও কথোপকথন


স্থান: 17 তলার একটি ফ্ল্যাট, দক্ষিণ কোলকাতা
কাল: ২১ ফেব্রুয়ারী
পাত্র-দ্বয়: পিতা, বয়স ৩৯, চাকুরে / পুত্র, বয়স ৭, ছাত্র
কাল্পনিক?: আদৌ নয়। পিতা'টির অনুরোধে নাম গুলি চেপে যাওয়া হলো।


পুত্র: হোয়াট ইস দিস ল্যাংগুয়েজ-ডে ড্যাড? এনি আইডিয়া?
পিতা: গেট আইডিয়া মাই সন!
পুত্র: হোয়াট?
পিতা: ইয়ে, ল্যাংগুয়েজ ডে মিন্স ভাষা দিবস, আই মিন দ্য ডে টু সেলিব্রেট ইওর ল্যাংগুয়েজ ডিয়ার সনি।