Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2012

বালতীর ব্যাপার

আমার বালতী ভারী পছন্দের । লোহার বিদঘুটে মধ্যযুগীয় বালতী নয় , যারা শ্যাওলা মাখা নাইলনের দড়িতে ঝুলে কুয়োর ভিতর বাইরে আসা যাওয়া করতো। টুকটুকে কলেজমুখী মেয়েদের মত ঝকঝকে প্লাস্টিকের বালতী । চমকিলা লাল , দাবিময় সবুজ , দুর্দান্ত নীল ; বিভীন্ন সাইজের জল-পাত্র । মধ্যবিত্তের মার্গো-মার্কা বাথরুমের ধ্রুবতারা এই বালতীগুলি। কত রকমারি হাতল , স্টীলের পাতলা হাতলে প্লাস্টিকের গ্রীপ ; এক ধাপ এগিয়ে প্লাস্টিকের হাতলে রাবারের গ্রীপ। ছেলেবেলায় মাঝারি সাইজের বালতী বয়ে ছাদে নিয়ে যেতাম শীতকালে ; বালতীর মুখ গামছায় ঢেকে রেখে দিতাম জল গরম করতে। তারপর সর্ষের তেল রগড়ে সেই প্রেম-মাখা জলে স্নান ; বালতী-প্রীতি সে সময় থেকেই হয়তো । বালতীর আর নারী কোথায় মায়াবিনী ? দুটি ব্যাপারেই উচ্চতা-গভীরতা দুইই আছে।আর দুজনেই চলনে ছলকে ওঠে। এ প্লাস্টিক-বালতী জলবিহীন অবস্থায় যতটা অনাবিল , পালক-ভার স্থিততায় মিষ্ট ; জলবাহী অবস্থায় ততটাই  পর্বত-ভারী এবং অবুঝপনায় দুষ্ট। ঠিক যেমন নারী ।

রবিবারের জলখাবার

হিং'য়ের কচুরী: দক্ষিণেশ্বর “ বাঙালি রকেট হলে রবিবারের জলখাবার হলো Launching-Pad”- ছোটোমামা সপ্তাহ কেমন কাটবে ? মেজাজ দুরুস্ত থাকেবে তো ? শরীর ঝ্যামেলায় ফেলবে না তো ? হপ্তা-ভর সব কিছু খাপে খাপ খেলে যাবে তো ? এর জন্যে একটাই Pre-Condition । জম্পেস রবিবাসরীয় জলখাবার । বাজার-বিজয় সেরে , হাত-পা ধুয়ে , টেবিলের ওপর আনন্দবাজার মেলে বসে , জলখাবারে ফোকাস ; এর অন্যথা হয়েছে কী সপ্তাহের জন্যে মেজাজটা ধাপার মাঠ হয়ে যাবে । আর জলখাবারে থাকবে কী ? একটা Ready Reference তৈরি করে রাখলাম: (বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লিষ্টি-টি ক্রমশ পরিশীলিত ও পরিবর্ধিত হবে , এমন আশা রাখি)

প্রথম সিগারেট

(সূত্র:"আমার প্রথম সুখটান; ৩ মার্চ, ২০০০। একটি সিগারেট খেয়ে, প্রচুর ক্লোরোমিণ্ট হজম করে, তিনটি ঘন্টা বাইরে কাটিয়ে, তবে ঘরে ঢুকেছিলাম। সুখ-স্মৃতি"- অর্জুন ) মাধ্যমিক খতম। আমি এখন রাজা , আমি এখন ডাইনোসোর । আমি এখন পিরানহা । যতদিন না রেজাল্ট বেরোচ্ছে , আমি প্রক্সীমা-সেঞ্চুয়ারী ; ঝিলিক মারবো , কিন্তু কারুর হাতে আসবো না । পিতা , মেজদা , ছোটোমামার রেডিয়াসের বাইরে এখন আমার অস্তিত্ব । রেজাল্ট বেরোলে আড়ং-ধোলাই জুটবেই । অতএব তার আগে যতটুকু পারি মৌজ করে নিতে হবে । নটায় ঘুম থেকে উঠছি , দেদার ফেলুদা-টিনটিন পড়ছি , দিনে দু ঘন্টা মাছ ধরছি কেল্টোদের পুকুরে , পাড়ার টিমে রাইট ব্যাকের জায়গাটা প্রায় কব্জা করে ফেলেছি , আর দিনে একটা করে সিনেমা । এমন মাধ্যমিক বার বার আসুক । তুরীয় জীবন বয়ে যাচ্ছিলো। এক চড়া রোদের দুপুরে মাথায় ছাতা মেলে , কেল্টোদের পুকুরে ছিপ ফেলে বসে অছি । ফাতনার দিকে চেয়ে গুণ গুণ করে অঞ্জন দত্ত গাইছি আর মুড়ি চিবোচ্ছি । চোখে অল্প অল্প ঘুম লেগে আসছে , এমন সময় গদাম শব্দে “পচা” শুনে মনোসংযোগ চটকে গ্যালো । ফিরে দেখি বাবলা , ক্লাসমেট এবং দোস্ত ।

তেল দ্য সর্ষে

শুনেছি যে দুই মাস বয়েস থেকেই আমার দিদা আমায় সর্ষের তেলে দলাই-মলাই করে রোদে ফেলে রাখতেন ঘন্টার পর ঘন্টা । তখন এমন প্যাকেট সর্ষের তেলের সময় আসেনি। পাড়ার ঘানীতে গিয়ে দাদু নাকি নিজে নিয়ে আসতেন আলট্রা-খাঁটি সে সর্ষের তেল। তার ঝাঁঝ নাকি এয়সা ক্ষতরনাক ছিল যে শিশির ছিপি খুলতেই চোখে জল চলে আসতো । সেই চাবুক সর্ষের তেলে দৈনিক প্রায় চুবিয়ে রোদ পোহানো হতো আমায়।শুনেছি বেদম চিত্‍কার করতাম সেই তেলের জ্বালায়। দাদু ভাবতেন নাতির গলায় সুর আসবে , ক্ল্যাসিকাল গাইয়ে হবে (সেই নাতি অবশেষে তেল বেচছে)। কিন্তু একটানা ওই তেল-রগরানিতেই নাকি আমার সর্দি-কাশির ধাত বিলকুল নেই। সে যাই হোক , ওই তৈল-মর্দন সেশনগুলো থেকেই আমার সর্ষের তেল প্রীতি শুরু। শীতকালে ছাদে গিয়ে সর্ষের তেল মেখে স্নান তো অমোঘ-উত্‍সব ছিলো একসময়ে। মালকোচা মেরে পরা গামছা , পেতলের ছোট বাটির কানায় কানায় ভর্তি সর্ষের তেল

পাঁচ সেকেন্ডের কলকাতা

রাত দেড়টায় ঘর্ঘর করে শেষ ট্রাম চলে যায় হ্যারিসন রোডের ওপর দিয়ে। লাগোয়া গলির সাতপুরনো স্যাঁতস্যাঁতে দোতলার ঘরটা কেঁপে ওঠে সে শব্দে। বহু জীর্ণ মেস বাড়িটার তস্য-জীর্ণ কাঠের জানলাগুলো মচড়মচড় করে ওঠে। ট্রামটা যেতেই পাশের বাড়ির মেনিটা একবার ম্যাঁও করে ওঠে। উঠবেই। রোজ।   নিচে সদর দরজার পাশে ঠ্যালা লাগিয়ে শুয়ে থাকে রামলোচন। ট্রাম যেতেই লহমার জন্যে তার ঘুম ভাঙ্গে, আর “সিয়ারাম” বলে এক পাড়াভোলানো দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। চিলেকোঠার পায়রাগুলো খলবল করে ওঠে কয়েক মুহূর্তের জন্যে। চৌকিতে শিরশিরে কাঁপুনি টের পাওয়া যায়। ট্রামের ঝুমঝুমির তালে পাশে দাঁড়ানো টেবিলের নড়বড়ে পায়ার কনকন অনুভূত হয় দিব্যি। এই কয়েক মুহূর্তে শব্দ-মেশালিতে সেই মেসবাসী কিশোরের কলকাতা-যোগ। এই শব্দগুলোকে ঘিরেই তার কলকাতাকে ভালোবাসা, স্নেহ। জেগে থাকা হুটোপুটি-মার্কা কলকাতার আর অন্য কোনও শব্দ বা ডাক কিছুতেই নিজের মত করে ঠাহর করতে পারে না সে। বুঝতেও পারে না।  সে মেস-কিশোর কবিতা বোঝে না, পড়ার ভানও না। শুধু রোজ রাতের ওই ট্রামের ডাকে সে নিয়মিত ভূতের ভয় পায়। জীবনানন্দকে সে ভূত বলে চেনে। প্রতি রাতে মেসের জানালা বেয়ে ভেস

বটেই তো

বস: ভারী গুমোট! আমি: বটেই তো! বস: ফেব্রুয়ারী তেই এই ? আমি: বটেই তো। বস: ভাব তাহলে মার্চে কী হবে ? আমি: আগুন জ্বলবে। বস: না না অত গরম পড়বে না চট করে। আমি:সেটাও অবিশ্যি ঠিক। অত চট করে অত গরম পড়বে না । বস:তবে বলা তো যায় না.. আমি: ঠিক , বলা তো যায় না.. বস: ভাবছি আরও একটা এসি কিনবো এবার। আমি: তবে আমিও একটা কুলার কিনবো ভাবছি। বস:কেন ভাবছো ? আমি: সত্যি তো , কেন ভাবছি.. বস: ভেবো না বেশি আমি: বটেই তো বস: আজ কী বার যেনো ? আমি: বিষ্যুদ বস: শনি হলে জমে যেত আমি: ক্ষীর হয়ে যেত বস: কেনো ? ক্ষীর কেনো বলছো ? আমি: জমে যেত বললেন যে ? বস: আইস-ক্রিম কী জমে না ? আমি: বটেই তো , আইস-ক্রিম। বস: ওই তোমার এক দোষ , খালি মুখে মুখে তক্ক আমি: বটেই তো বস: শুধরে ফেলো , চটপট আমি:আলবাত , immediately ! বস: আজ কী তারিখ যেনো ? আমি: উনিশে মার্চ বস: হুম , দ্যাখো ,  মার্চ শেষ হতে চললো , অথচ এখনো সন্ধ্যের হাওয়ায় বেশ ঠান্ডা আমেজ আছে.. আমি: বটেই তো ইত্যাদি , ইত্যাদি