Skip to main content

Posts

Showing posts from July, 2020

ফারুক

ভাজা মৌরির মত মুচমুচে প্রেমে ঢলে পড়তে পড়তে, দুপুরের নিশ্চুপ পুকুরপাড়ে প্রেমিকার হাত টেনে ধরে, উত্তম বলেছিলেন "শোনো, তুমি আমাকে বলো; ফারুক শেখ"। ** লাইনের শুরুতেই দাঁড়িয়েছিলেন অমিতাভ। অথবা অমিতাভ দাঁড়িয়েছিলেন বলেই  যেন সে লাইনের জন্ম। কিন্তু খানিক পরেই ভুল ভাঙল অমিতবাবুর। আর ভুল ভাঙতেই শ্যামলবাবুর গানের সুর তাঁর প্রাণে এসে ঠেকলো; " ও মন কখন শুরু কখন যে শেষ, কে জানে"।  কারণ ততক্ষণে তিনি টের পেয়েছেন যে ওই মাদুরে গা এলিয়ে বসা মায়াবী মানুষটিকে স্পর্শ করে এমন সাধ্যি কোনও লাইনেরই নেই। "T9999 - ওয়াহ্, ফারুকসাহাব। ওয়াহ্" বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অমিতাভ। ** ট্রেন ছুটছিল? ছুটছিল। এক প্ল্যাটফর্ম মানুষ থমকে ছিল? বিলকুল। চলন্ত ট্রেনের একটা দরজায় শাহরুখ অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন? ছিলেন, দাঁড়িয়ে ছিলেন এক খতরনাক ধুকপুকের বোঝ বুকে নিয়ে।  সে আসবে৷ ছুটে আসবেই। তাকে ছুটে আসতেই হবে। কিন্তু ছুটে আসা প্রেমিকাকে দেখার আগেই ঘটে গেল গোলমালটা। প্ল্যাটফর্মের এক পানের দোকানের সামনে দাঁড়ানো, সাদা কুর্তায় উজ্জ্বল, খোশমেজাজি মানুষটির দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ শাহরুখ নেমে পড়লেন;

বিমলবাবুর দরজা

- ও বিমলবাবু। ও বিমলবাবু। ও বিমলবাবু। - কী চাই? - দরজাটা খুলুন। তারপর তো কথা হবে। - এত রাত্রে এমন হাঁকডাক শুরু করেছেন কেন? - আরে মশাই আগে দরজাটা তো খুলুন। - এই রাতবিরেতে? দুম করে দরজা খুললেই হল? - আহা, আমি তো আর অচেনা কেউ নই।  - যে'টুকু চিনি..ততটুকু যথেষ্ট নয়। - চেনার কি কোনও শেষ আছে বিমলবাবু? নেই। - দেখুন। এত রাত্রে আমি দরজা খুলব না। কভি নহি। - এ এক অদ্ভুত জেদ। অভিমন্যুর মত। রথের ভাঙা চাকা বাগিয়ে সাতজন মহারথীকে ঠেকানো যায় বলুন? দরজা আপনাকে খুলতেই হবে। - থ্রেট করছেন? - অন দ্য কন্ট্রারি। আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। - যত বাজে কথা। দরজা আমি খুলব না। - দরজা কি কাগজ? আমি কি এনআরসি? আচ্ছা বেশ। আমি না হয় দরজার এ'পাশেই বসে জিরিয়ে নিই খানিকক্ষণ।  -  আচ্ছা ঘ্যাঁতা ইয়ে তো আপনি। - আপনার ইচ্ছে করছে দরজা খুলতে। - মোটেও না৷ খবরদার ম্যানিপুলেট করবেব না৷ ও দরজা আমি খুলব না। না, না, না।  - আজ যে গোটা রাত আমাদের গল্পগুজব করার কথা বিমলবাবু। - রাত্রে না ঘুমিয়ে আপনার সঙ্গে গল্প করব? আমি কি পাগল না প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চি? - আপনি ভালোবাসিয়ে বিমলবাবু৷ ভালোবাসিয়ে। এ দরজা না খুলে আপনার উপায়

শখ ও স্নেহ

শখ অতি খতরনাক ব্যাপার। মেসের চৌকিতে এ'পাশ ও'পাশ করতে করতে সেই খতরনাক ব্যাপারটির খপ্পরেই পড়লেন রাধামাধব।  রেলের কর্মচারী রাধামাধবের বাড়ি আসানসোলে, কলকাতার এই মেসবাড়িতে পড়ে থাকা শুধু চাকরীর দায়ে। অন্যদিনের মত আজও মেসের ঠাকুরের দায়সারা রান্নায় তিতিবিরক্ত হয়ে গজরগজর করতে করতে শুতে এসেছিলেন তিনি৷ অন্যদিনের মত আজও সে গজরগজরের রেশ কেটে যাওয়ার আগেই তার ঘুমিয়ে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু বাধ সাধল শখ।  রাধামাধবের হঠাৎ গরম রসগোল্লা খাওয়ার শখ হল। ফুটন্ত শখের  দু'চামচ উৎসাহ এসে পড়লে কলকাতা শহরে উপায়ের অভাব হয় না। মেসের অনতিদূরে তেওয়ারি মিষ্টির দোকনখানা রাত দু'টো পর্যন্ত খোলা থাকে,  হালুইকররা সে'খানে কুস্তিগিরদের মেজাজে সর্বক্ষণ কর্মব্যস্ত। শখটাকে প্রথমে দাবড়ে চুপ করানোর চেষ্টা করলেন রাধামাধব,  মগজকে বোঝালেন; রাতবিরেতে এমন হ্যাংলামো অত্যন্ত অদরকারী৷ পাশের তাক থেকে পানমশলার কৌটো নামিয়ে মুখে দিলেন মনকে নরম করতে। কিন্তু তা'তেও কাজের কাজ কিছু না হওয়ায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠে, গায়ে ফতুয়া গলিয়ে, মানিব্যাগ হাতে বেরিয়ে পড়লেন।  শখের প্রাণে বিলম্ব ব্যাপারটা বিছুটির মত ঠেকে। তাই দ্রুত পায়

কবীরিয়ানি

- পুরস্কারটা পেয়ে কেমন লাগছে অপূর্ববাবু? - কী বলব। এত বড় একটা সম্মান৷ সে'টাও মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমার হাতে তুলে দিলেন। ভাবলেই এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। - মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আপনার নোবেল পাওয়া উচিৎ। আফটার অল, একটা গোটা রাজ্যের ভাগ্যপরিবর্তন ঘটেছে আপনার এই আবিষ্কারের হাত ধরে। - আজ্ঞে..ইচ্ছেটা আমার মনেও যে ছিল না তা নয়। সুইটেবল ক্যাটেগরির অভাবে অ্যাপ্লিকেশনটা ফাইল করা গেলনা। যাকগে, বাংলার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি৷ সে'টাই অনেক। - শুনেছি গত সাতমাস ধরে ট্রায়াল চালিয়েছেন? - প্যান্ডেমিকের বাজারে পাবলিক হেলথ নিয়ে তো আর ছেলেখেলা চলেনা। এই আবিষ্কার নিয়ে সাতটি স্তরে হিউম্যান ট্রায়্যাল চালিয়েছি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাকসেস রেট। একশোয় একশো। - কবীরয়ানি নামটার পিছনে কোনও ইন্সপিরেশন?  - ‘‘মায়ায় অন্ধ বসুন্ধরায় কেউ চেনেনা আমাকে। বাতাসও নই মাটিও নই, আমি শুধুই জ্ঞান। সবার ঊর্ধ্বে আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা’’। শুনেছেন তো? - কবীরের দোঁহে? - রাইট। তবে সামান্য ট্যুইস্ট করে চালাই৷ কবীর বলেছিলেন 'আমি শুধুই শব্দের এক ফেরিওয়ালা'। আমি বলি 'আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা'। কখন ক

বিপ্লবের ঘুম

- ডাক্তার। - হুম...। - ডাক্তার! - হুঁ। - ডাক্তার চৌধুরী! ব্যাপারটা কী? - ওহ। সরি বিপ্লববাবু। সরি। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। - চুপ করে রয়েছেন অনেকক্ষণ।  তাই ভাবলাম...দেখুন...আপনি আমার কাউন্সেলর..আপনিও যদি চুপ থাকেন..। - আসলে...কী বলব সে'টা ঠিক..। আপনার কথাগুলোই প্রসেস করার চেষ্টা করছিলাম..। - ওহ। আই সী৷  - আপনার ধারণা...। - ধারণা?  রিয়ালিটি৷ অবিশ্যি, অনেকগুলো রিয়ালিটির একটা।  - লেট মী সামারাইজ। আপনার ধারণা প্রতিবার ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের একটা নতুন জীবন শুরু হয়। - দ্যাট ইজ করেক্ট। - অর্থাৎ আমি আজ রাত্রে ঘুমোতে গেলাম ডাক্তার রীতা সান্যাল হিসেবে। আমার ধারণা আমি আগামীকাল সকালবেলা আমার সাদার্ন এভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে; ঘুম থেকে উঠে, ব্রেকফাস্ট সেরে চেম্বারে এসে বসব, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে টেনিস খেলতে যাব। কিন্তু আদতে কাল সকালে আমার ঘুম ভাঙবে সম্পূর্ণ অন্য একটা জগতে।  যে'খানে বয়স, শরীর, চেহারা সব এক থাকলেও আমার পরিচয়, মন ও চারপাশটা একদম আলাদা। আগামীকাল হয়ত আমাত ঘুম ভাঙবে বাঁকুড়ার সুতপা দত্ত হিসেবে,  হাইস্কুল টীচার। আর আমার আগের দিনের ডাক্তার রীতা সান্যালের স্মৃতি সমস্ত ধুয়েমু

প্যান্ডেমিকের পুজোর প্ল্যান

- কী ব্যাপার ছোটকা? ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে মেডিটেট করছ নাকি? - জুলাই মাস শেষ হতে চলল রে নিতাই। - তা'তে কী? - বছর এই সময়টা..। - এই সময়টায় কী? - এই সময় আমার বসকে তেল দেওয়ার কথা। বস নাচতে বললে ধেইধেই করব, বাজে চুটকি বললে হেসে গড়াগড়ি খাব, বসের ক্যাটক্যাটে রঙের বিশ্রী শার্ট দেখে বলব 'লুকিং অসাম'। - বসকে তেল? ও মা, তুমি নাকি কেরিয়ারের জুজুকে পাত্তাটাত্তা দাও না৷ তা'হলে আবার আপিসিও তৈলমর্দন কেন? - কেরিয়ার? প্রমোশনটমোশনের তোয়াক্কা? তা আমি সত্যিই করিনা। একার সংসার। ইএমআইয়ের ফাঁদে পা দিই না।  বসের তোয়াক্কা আমি করবই বা কেন? তবে...। - তবে? -  তবে পুজোর ছুটি আদায় করার জন্য আমি  মা কালীর পায়ে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো ঠেকিয়ে নিতেও হেসিটেট করব না। বসকে তেল তো কুছ ভি নহি। - ও। তা, তুমি বুঝি জুলাই মাস থেকে বসকে তেল দেওয়া শুরু কর? পুজোর ছুটি আদায়ের জন্য? - শুরু করি জুন থেকে। মালিশ করে করে তাঁর ঘেউঘেউ মেজাজ নরম করে মিউমিউতে আনতে মাসখানেক লাগে। আর তারপর শুরু হয় রিয়েল স্ট্রাগল।  - লেট মি গেস। আইআরসিটিসির ওয়েটিং লিস্ট? - পেরেকের মাথায় ঘা দিয়েছিস। এই সময়টায় শিলিগুড়িমুখো সমস্ত ট্রে

প্যান্ডেমিক

- ধুর শালা প্যান্ডেমিক! উফ! - যা বলেছ ভায়া। প্রাণ ওষ্ঠাগত এক্কেবারে। - কী খতরনাক ভাইরাসের পাল্লায় যে পড়লাম..। - এক্কেবারে হুলুস্থুল অবস্থা। তাই না? - গোড়ার দিকে কিছুতেই ঠাহর করতে পারিনি যে জল এদ্দূর গড়াবে। - গভর্নমেন্টই ঘোল খেয়ে গেল হে। আমরা তো টোটাল আতিপাতি আর আলটিমেট এলেবেলে।  - গভর্নমেন্টকে দোষই বা দিই কী করে বলো। এমন ক্যালামিটি এই সেঞ্চুরিতে আগে কেউ কি দেখেছে? বিলেত আমেরিকা টলে গেল, আমরা কোথাকার কোন হরিদাস পাল। তা ভায়া, ভ্যাক্সিনের খবর কিছু শুনেছ? আশার আলো আছে কিছু? - কানাঘুষো যা শুনছি..তা খুব একটা কনফিডেন্স ইন্সপায়্যারিং নয়৷ অন্তত বছর দুয়েকের আগে তো তেমন কোনও আশা দেখছি না...। - দু'বছর? দু'বছর ফেসমাস্ক না পরে থাকতে হবে? - যে দেবতা যাতে তুষ্ট। মাস্ক পরলেই এই ভাইরাস এসে ক্যাঁক করে ধরবে। এমন খতরনাক ব্যাপার যে হতে পারে তা কেউ কোনওদিন ভাবতে পেরেছিল? - সত্যিই, একটানা মাস্ক না পরে থাকা, সে যে কী অস্বস্তিকর।  মনে হয় যেন উলঙ্গ হয়ে ঘোরাঘুরি করছি৷ রাত্রে তো ঘুমই আসতে চায়না। মাঝেমধ্যে পাশবালিশ দিয়ে মুখ নাক ঢাকি বটে কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোল চেটে মেটানো যায় বলো। - গিন্নীকে দ

হেবো গুণ্ডার হবু স্যাঙাৎ

- নাম? - আজ্ঞে, অনিন্দ্য। - ঝাঁজ নেই। - আজ্ঞে? - নামে ঝাঁজ নেই। অমন নেতানো নাম নিয়ে বড় জোর বেনামি জমির দালালি করা যেতে পারে,গুণ্ডামি নয়। হেবোগুণ্ডার স্যাঙাৎ হতে হলে নামে ধার চাই হে। - অমন বলবেন না হেবোদাদা। অমন বলবেন না। বড় আশা করে এসেছি আপনার কাছে। গুগল দেখে বোমা বানানো শিখেছি, একলব্য হয়ে ঘরে বসে নিজের খাটের তোষকে ছুরি ঢোকানো প্র‍্যাক্টিস করেছি৷ সবই শুধু আপনার কথা ভেবে। বড় সাধ, একদিন আপনার চরণে নিজেকে সঁপে দেব। বড় সাধ।  - সে কত লোকের কত রকমের সাধ হয়। কেউ চায় ওবামার সঙ্গে বসে লুডো খেলতে, কেউ চায় মুকেশ আম্বানির ক্যাশিয়ার হতে। চাইতে তো ক্ষতি নেই চাঁদ৷ কিন্তু রামকৃষ্ণ না অনুপম কে একটা বলে গেছে; সব পেলে নষ্ট জীবন। - একবার যখন আপনার দেখা পেয়েছি হেবোদাদা , ওই শ্রীচরণের আশ্রয় ছেড়ে আমি আর নড়ছি না। - আইআইটির ক্যাম্পাসে ঘুরতে গেলেই কি আইআইটির একজন হওয়া যায় রে পাগলা? সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি খেলেই কি জন্টি রোডস হওয়া যায়? যায় না। আমার আশ্রয়ও ঠিক তেমনই৷ কত খতরনাক খুনী মাস্তান আমার পিছন পিছন ঘুরঘুর করছে। এই তো সে'দিন এক সিরিয়াল কিলার এসে হত্যে দিয়ে পড়ল। কিন্তু..। - কিন্তু? - ঘুরঘুর করলেই হল

টেলিপ্লে

এই নিয়ে দুশো বাইশ নম্বর চিঠি পেলেন রাধামাধব। একেবারে নিয়ম বেঁধে। আর্লি রাইজার রাধামাধবের ঘুম ভাঙবে ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটায়; মোবাইলের অ্যালার্মে। আড়মোড়া ভাঙার আগেই বালিশের তলায় চালান করে দেওয়া আঙুলের ডগাটি ঠেকবে গিয়ে খামের আরামদায়ক খসখসে।  সেই খামটা বালিশের তলা থেকে টেনে বের করে আনতেই একটা মনকেমন করা মিষ্টি সুবাসে ঘর ভরে যাবে। ঠিক যেন ওই শিউলি আর পায়েস মেশানো একটা গন্ধ। সে সুবাস নাকে এসে ঠেকলেই মনে চনমন, প্রাণে ফুরফুর।   একে মাঝবয়সী মানুষের একার সংসার, তার ওপর বিশ্রী একটা ভাইরাসের ঠেলায় প্রায় বছর দুয়েক  বাড়ির বাইরে এক পাও বেরোনো হয়নি। ইন্টারনেটের ঘ্যাঁচরঘোচর, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের হিজিবিজি আর নিষ্প্রাণ হোম ডেলিভারির চোটে প্রাণ প্রায় শুকিয়ে যেতে বসেছিল।কিন্তু সেই শুকনো খটখটে প্রাণে দু'পশলা বৃষ্টির মত এলো এই চিঠি।  ব্যাপারটা শুরু হয় মাস সাত-আটেক আগে। তা প্রায় ভোজবাজিই বলা চলে।   ভোরবেলা ঘুম ভাঙলেই একটা করে চিঠি। রোজ। সে চিঠির হাতের লেখাটি বড় সুন্দর; ছাপার অক্ষরের মত উজ্জ্বল কিন্তু কাঠকাঠ নয়, বেশ মিষ্টি। সাদা খামের ওপরে যত্নে লেখা নাম; রাধামাধব দত্ত। আর সেই

বটুগোয়েন্দার ইলিশচুরি

- এই যে বউ...। - অত চেল্লাচিল্লি কেন। - চেল্লাচিল্লি করার মতই দাঁও মেরেছি। - চোরের গলায় অত তেজ ভালো না..। - বিশু দারোগা চোর বলে চোপা করলে গায়ে লাগেনা। কিন্তু তুমিও চোরছ্যাঁচড় বলেই হ্যাটা করবে গো বউ? শিল্পীর কদর করবে না? - উঁ। ভীড় বাসট্রেন থেকে এর ব্যাগ ওর থলে সরানোও নাকি শিল্প। ধুর ধুর শিল্পী ছিলেন মধুজ্যেঠু। গেরস্ত বালিশে মাথা ঠেকানোর দশ মিনিটের মধ্য সিঁদ কেটে মালপত্তর সরিয়ে হাওয়া। - আরে সে মান্ধাতা আমলে পড়ে থাকলে চলবে কেন। ইন্টারনেটে চারদিকে কিস্তিমাত হচ্ছে। এ যুগে সিঁদ কাটলে লোক হাসবে যে। তবে যাক। আজ এক্কেবারে কেল্লাফতে করেছি। এই দ্যাখো। - রামোহ্। চামড়ার দামী ব্যাগ নয়, জমকালো বটুয়া নয়, এ যে দেখি বাজারের থলে...। তাও ময়লা...। - কিন্তু বউ, এ থলের মধ্যেই যে সাতরাজার ধন।  - আহ, কী আছে সে'টা বলবে তো। - ডাউন মেমারি লোকালে ফিরছিলাম। তখনই নজরে পড়ল লোকটাকে। গোবেচারা চেহারা, ট্রেনের দরজার এক্কেরে মুখে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছেন বাবু। ...দেখেই বুঝেছি এর মাথায় কাঁঠাল ভাঙা বাংলায় বানানভুল করার চেয়েও সহজ। ব্যাস। অমনি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তা ভদ্দরলোকের হাতে ঝোলানো থলির ভিতর উঁকি মারতেই বু

তিব্বতি মাদুলি

- মনখারাপ? - আজ্ঞে। প্রচণ্ড। টেরিফিক লেভেলে মনখারাপ। - সে তো বুঝলাম। কিন্তু কেন? জয়েন্টে ফেল? মিনিবাসের পকেটমারিতে সত্তর টাকা জলে?  - কই। না তো। - তোমার বয়সে তো এ'সবই হয় খোকা...। - খোকা? অমল বলে ডাকলেই হয় তো। ফার্স্ট ইয়ারে রয়েছি স্যার। - স্যার? সাতাশ বছর হল তিব্বত থেকে ফিরে তন্ত্রসাধনা করছি। তাবিজমাদুলি দিচ্ছি। স্যারট্যার আবার কী। এ কি ডালহৌসির প্রাইভেট ফার্ম নাকি। গদগদ সুরে বাবাজী বলে ডাকো।   - বাবাজী। আমার যে বড্ড মনখারাপ। সুপার-গভীর মনখারাপ। জিভে ফুচকাও তিতকুটে হয়ে ঠেকছে; এমন মনখারাপ।  - কেস সিরিয়াস, সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু মনখারাপের সোর্স না জানলে মাদুলিটা দেব কী করে? - আমিও কী ছাই জানি? বড় আশা করে এসেছিলাম তিব্বতি মন্ত্রতন্ত্র ঝেড়ে আপনি যদি ট্র‍্যাক করতে পারেন।  - নাহ্। অমন আনতাবড়ি মাদুলি আমি দিতে পারিনা৷ আমি ফচকে ব্যবসায়ী নই, সাধক।  - ঝড়ে বক ছাড়ুন না কিছু একটা। এমন ওজনদার মনখারাপ দিনের পর দিন বয়ে বেড়ালে শোল্ডার ডিসলোকেট করে ফেলব তো।  - ছাড়ব? ঝড়ে বক? - নয়ত আর তন্ত্র কীসে? - দাঁড়াও, কনসেন্ট্রেট করি। - আমার মনখারাপের সোর্স...কন্সেন্ট্রেট করলে খুঁজে পাবেন? বাবাজী?  -

বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন

- কাকে চাই? - ম্যাডাম, এ'টা কি অমলেশ সমাদ্দারের বাড়ি? - ওই ঢাউস নেমপ্লেটটা চোখে পড়েনি? ও'টায় কি অমলেশ সমাদ্দার লেখা আছে? - এইচ দত্ত। ওহ, সরি। সরি। আসলে..। - বাড়ির নম্বর কিছু আছে? - বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন। - গুলিয়েছেন। - গুলিয়েছি? - এক্কেবারে। - আসলে গুগল ম্যাপ ধরে..। - ম্যাপকানা হয়ে অলিগলিতে ঢুকলে ওই হয়। ঝাড়া আড়াইশো মিটার পিছিয়ে গিয়ে শনিমন্দির পড়বে। সে'টার বাঁদিকের গলিতে ঢুকে ডান হাতের চার নম্বর বাড়ি। - থ্যাঙ্কিউ। - ও মা! কড়াইয়ের মাছ পোড়া লাগল বোধ হয়...। ** ঘাটে এসে গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করল নির্মলের। শেষ বিকেলের রোদ্দুর নরম হয়ে এসেছে। ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে পছন্দসই একটা জায়গা দেখে জলে গোড়ালি ডুবিয়ে বসল সে। প্যান্টে শ্যাওলার দাগ বসে যাবে, যাক গে। আজ গায়ে বুকে বড় নিবিড় ভালোলাগা লেগে আছে।  পকেট থেকে বাদামের প্যাকেটটা বের করে ডান হাতের মুঠোয় কয়েকটা নুনমাখানো বাদাম ঢেলে নিয়ে সামান্য গুনগুন শুরু করল নির্মল।  বুকের ভিতরটা কেমন তিরতির করছিল, ওই ভালোলাগায়। সুমির সংসার; সে এক জমকালো ব্যাপার। সুমির রান্নাঘরের কড়াইতে মাছ। সুমির কোমরে গোঁজা শাড়ির আঁচল। সুমির থুতনিতে ঘাম

খুনখারাপি আর মামলেট

 - ব্রাদার, একটু অপেক্ষা করা যায় না? - চোপ শালা। বন্দুকের ছ'টা গুলিই গেঁথে দেব মুণ্ডুতে..। - অপচয় করবে কেন? একটা গুলিতে যদি খেলখতম করা যায়, তা'হলে বাকি পাঁচটা নষ্ট করার কোনও মানে হয়? - এই! মাইরি! বলছি...। - ভাতের দানা হোক কি বুলেট। অপচয় দেখলেই বুকে বড় বাজে। - কপালে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে রেখেছি, তারপরেও এত ফটরফটর? আচ্ছা ত্যাঁদড় মাল মাইরি। -  আমার বাপ, আমার অঙ্কের মাস্টার, আমার মায়া। সবার মুখেই আজীবন ওই এক কথা শুনেছি। আমি নাকি রাম-ত্যাঁদড়। তা ও'টাকে আমি কম্পলিমেন্ট হিসেবেই ট্রীট করি বুঝলে হে। কোনও কিছু একটু না বাজিয়ে আমি এক্সেপ্ট করতে পারিনি কোনওদিনই।  - মায়া কে? - আমার স্ত্রী। ওই যে..। - কে? কে? কে ওখানে? - আরে ধুর ধুর। এই কলজে নিয়ে মার্ডার করতে নেমেছ? লাশ নামানো কি অতই সস্তা? ও'দিকে কেউ নেই হে। ওই দেওয়ালের ছবিটা দ্যাখো। ওই যে। মায়ার ছবি। সে ফাঁকি দিয়ে সুট্ করে সরে পড়েছে অনেক আগে। মায়ার মত মেয়ে হয় না গো ব্রাদার। এই যে তুমি অসময়ে এলে, শুকনো মুখে তোমার সে কিছুতেই বসে থাকতে দিত না। ঘরে আর কিছু না থাকলে দু'টো ডিম অন্তত চট করে ভেজে দিত। আর কফি। আহা, মায়ার হাতের ক