Monday, August 29, 2016

রাগ অভিমান

- বাবা! ও বাবা!
- কিছু বলার আছে তোমার বৌমা?
- নয়তো এলাম কেন?
- যা বলার বলে ফেলো।
- ওষুধের ডিবেতে লেবেল করে রেখেছি। জলখাবারের পরে আর রাতে খাওয়ার পরে। ভুল হলেই কিন্তু প্রেশার আবার হাই।
- আমার প্রেশার। আমার ওষুধ। আমি বুঝবো।
- আলমারির চাবি, বিছানার তোষকের নিচে। ওই মাথার দিকে।
- চাবি তোষকের তলে থাক। পাতালে থাক। তোমার কী?
- কমলাকে রান্নায় তেলের মাপ বুঝিয়ে দিয়েছি। চিন্তা নেই। শুধু সময় করে ডিনার সেরে নেবেন। দশটা বাজে না যেন।
- তেলে চুপচুপে বেগুন ভাজা খাবো রাত বারোটার পর। তা'তে কার কী? যে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তার গালভরা কথা শুনতে আমি রাজী নই। তোমার আর কিছু বলার আছে?
- রাগ করেছেন?
- আমি কে ? রাগ করার?
- বাবার অধিকার নেই? মেয়ের ওপর রাগ করার?
- বাপ? কীসের বাপ! যে বাপকে এমন দুম করে ছেড়ে চলে যেতে বাধে না, সে আবার কীসের বাপ? আর খবরদার! আমায় প্রণাম করতে এসো না। যেতে হলে এখুনি বিদেয় হও বাজে কথা না বাড়িয়ে।
- আমার যে আর থাকার উপায় নেই বাবা।
- কেন? উপায় নেই কেন?
- যার হাত ধরে এ বাড়িতে আসা, সেই যখন আর মেনে নেয় না...আমি থাকি কোন অধিকারে? কোন নিয়মে?
- কী বলছো মা! সে ভুলেছে ভুলুক, আমি তো তোমায় ভুলিনি। এ সংসার তো তোমায় ভোলেনি মা। বরং তুমি আছ বলে তাও তাঁর সাথে যোগাযোগের রেশটুকু আছে। তুমিও যদি চলে যাও, স্মৃতির শেষ সুতোটুকুও ছিঁড়বে।
- না গিয়ে আমার উপায় নেই বাবা।
- সে তো আলাদা হয়ে সব ভুলেছে অনেকদিন হল। তবে এদ্দিন পরে তোমার সে বেদনা অনুভূত হল কেন?
- আমি তো মনে করতে চাইনি। যেতে চাইনি। হঠাৎ এদ্দিন পরে চারদিক দিয়ে লোকে বলতে শুরু করেছে। আর লোকের কথা একবার যখন শুরু হয়েছে তখন আমি মুখ বুজে থাকি কী করে? আমায় যেতে দাও বাবা। যেতে দাও।
- কিছুতেই থাকবে না মা? আমার এ বাংলা ঘর আলো করে, থাকবে না কিছুতেই?
- পূর্বের হাত ধরে পশ্চিম হয়ে এ ঘরে এসেছি। পূবের পাশে পশ্চিম, পশ্চিমের পাশে পূব, চিরকালের নিয়ম। তা পূবই যখন নেই, তখন পশ্চিম হয়ে থাকি কী করে আর বাবা? আমায় যেতে দাও। সময় হয়ে এলো।

Friday, August 19, 2016

এমনি


সকালটা রীতিমত মন্দ লাগল হালদারবাবুর।
আকাশ গোমড়া। বাতাস ভ্যাপসা। জলখাবারে পরোটার সাথে লাউয়ের তরকারি। জলখাবারে লাউ? এর চেয়ে লাউসি কিছু হতে পারে? তারপর পাশের বাড়ির মনমোহন সাঁতরা সকাল সকাল “রাশিফল চেক করেই দিয়ে যাচ্ছি” বলে আনন্দবাজার নিয়ে সেই যে গায়েব হলেন আর অফিস বেরোনো পর্যন্ত ভদ্রলোকের দেখা মিললো না। জুতোয় একটা কাঁকড় ঢুকেছে, বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে খতরনাক খোঁচা মেরে চলেছে তখন থেকে। অথচ মিনিবাসের ভিড়ে জুতো খুলে বিস্তর ঝাড়াঝাড়ি করেও কাঁকড়টাকে ফিল্টার করে বের করা গেল না। বাঁ পায়ে কড়কড় নিয়ে বাসে চিঁড়েচ্যাপটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো।
কন্ডাক্টর এরই মধ্যে বার তিনেক পা মাড়িয়ে এলেন গেলেন। রাগের চোটে বিবাদী বাগের বদলে হাওড়ার টিকিট নিলেন হালদারবাবু। ট্রেনের দুলুনিতে নাকি মনের জট খুলে যায়। অফিস যেতে আজ আর মন সরল না।


টিকিট কাউন্টারের পাশে লাগানো ফেয়ার চার্ট জরীপ করে “বেগমপুর” নামটাই মনে ধরলো হালদারবাবুর।


বেগমপুরে যখন হালদারবাবু নামলেন তখন বেলা সোয়া বারোটা। আকাশ তখনো গুমোট কিন্তু বাতাসের দমবন্ধ করা ভাবটা বিলকুল গায়েব। ঘনঘন রুমাল বের করে কপাল মোছার দরকার পড়ছে না। গত আধ ঘণ্টায় গলা বেয়ে কোন লাউয়ের তরকারির ঢেঁকুর ওঠেনি। আনন্দবাজারটা আর দরকারি মনে হচ্ছে না। জুতোর কাঁকড়টা মোটামুটি পা-সওয়া হয়ে গেছে।
সব চেয়ে বড় কথা। মিনিবাসের ভিড়ের বদলে চারিদিকে আলস্য ভরা। বড্ড মন কেমন করা নিরিবিলি। ছোট্ট স্টেশন। দু’টো প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মে চারটে করে কংক্রিটের বেঞ্চি। হালদারবাবু গুনে দেখলেন; জনা ছয়েক লোক আর খান পাঁচেক কুকুর প্ল্যাটফর্মে। তাঁর মনের ভিতরে রাখা কলকাতার জ্বরো কপালে কেউ জলপট্টি লেপতে শুরু করেছিল যেন। মেঘলা হাওয়ার শিরশির, দুপুরের থমথমে নরম আর চারপাশের সবুজ মাটি মাটি যে ব্যাপারটা, সবকিছুই শীতলপাটির মত আরামের। বেঞ্চে থেবড়ে বসে আয়েস করে অফিসের টিফিন বাক্স খুললেন হালদারবাবু।


-   দেশলাই আছে?
-   আমি স্মোক করি না।
-   অ। ক’টা বাজে? আমার ঘড়িটা আবার গতকাল হাত থেকে পড়ে গিয়ে...।
-   সোয়া চারটে।
-   কলকাতা থেকে আসা হয়েছে বুঝি?
-   আজ্ঞে।
-   বেগমপুরে কোন কাজ ছিল?
-   না।
-   অ। আজকেই ফেরা?
-   হ্যাঁ।
-   আমি অবিশ্যি এখানেই থাকি। ফাইভ মিনিট্‌স ওয়াক ফ্রম দ্য স্টেশন।  
-   হুঁ।
-   আপনাকে বিরক্ত করছি না তো?
-   না।
-   আমার নাম অমল সামন্ত।
-   আমি নিরুপম হালদার।
-   আপিস?
-   ওই। একটা প্রাইভেট ফার্ম। ম্যাঙ্গো রোডে অফিস।
-   তা, বেগমপুর কী মনে করে?
-   এমনি।
-   ইউরেকা। যাক! ঠিক ধরেছি তাহলে।
-   ঠিক ধরেছেন?
-   আজ্ঞে।
-   কী ঠিক ধরেছেন?
-   ওই। আপনারও এমনি রয়েছে।
-   বুঝলাম না। আমারও এমনি রয়েছে মানে?
-   ওই। নিশির ডাক। কিছু ভালো না লাগা। কোন কারণ ছাড়া। কন্সট্যান্ট মনে হওয়া ‘ছিটকে চলে যাই, ছিটকে চলে যাই’। এমনি এমনি। ছিটকে যেতে আপনার কোনও কারণ লাগে না। এমনিই। ছিটকে চলে যেতে পারেন। আপনার ‘এমনি’ রয়েছে। যেমন আমার হয়েছিল।
-   এমনি?
-   দিব্যি শিলিগুড়িতে করে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ এমনি এমনি জেনারেল কম্পার্টমেন্টে বসে হাওড়া। সেখান থেকে বর্ধমান কর্ডলাইনের লোকালে চেপে পড়ে বেগমপুর। কোন কারণ ছাড়া। কমপ্লিটলি এমনি। নিজেকে এমনি এমনিই এম্পটি মনে হত। তাইতেই চলে এলাম বেগমপুর। নয় নয় করে সতেরো বছর হয়ে গেল।
-   ওহ। আমার অবশ্য এমনি-ভাব কেটে যাবে কিছুক্ষণেই। বিকেলের ট্রেনেই ফিরছি। ফেরার পথে আজ আবার গোবিন্দভোগ চাল নিয়ে ফেরার কথা।
-   হেহ্‌।
-   হাসির কী হল?
-   আপনার এই ‘এমনি’ ভাব আপনাকে মঙ্গোলিয়ায় টেনে নিতে পারত, প্রিন্সেপ ঘাট ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারত, বৈদ্যবাটি নিয়ে গেলেও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু আপনি এসেছেন বেগমপুরে।
-   তাতে কী? বেগমপুর না মশাগ্রাম, কী এসে গেল তাতে?
-   বুঝতে পারছেন না এখনও?
-   কই! কী বুঝবো?
-   ডেস্টিনি বোঝেন?
-   ভাগ্য?
-   বলতে পারেন। তবে, এ’টা ভাগ্যের চেয়ে অনেক বেশি সার্টেন। আপনার ব্রেনের সার্কিটের প্রোগ্রাম আপনাকে এখানে টেনে এনেছে। এই ‘এমনি’ নিতান্ত এমনি এমনি নয় হালদারবাবু, এই ‘এমনি’ হলো ইলেক্ট্রনিক মন-খারাপ নিউরোলজিক্যালি ইনডিউস্‌ড। ই এম এন আই।
-   কী’সব বলছেন। আর মিনিট পনেরোর মাথায় ট্রেন আসছে।
-   ফেরত যাওয়ার জন্য কি বেগমপুর আসা?
-   ধুত্তোর।
-   আপনার ব্রেনের প্রোগ্র্যাম আপনাকে এখানে টেনে এনেছে “এমনি” মডিউল রান করে। আপনার আমার মাদার সার্ভার বেগমপুরে হালদারবাবু। সেই মাদার সার্ভারের টানে আপনি এখানে এসেছেন। আর ফেরার উপায় নেই।
-   কী সব হাবিজাবি বলছেন।
-   যে’টা আপনি বুঝতে পেরেও বুঝতে চাইছেন না।
-   কী বোঝার?
-   যে আপনি বেগমপুরের রেডিয়াস ছেড়ে আর বেরোতে পারবেন না।
-   আলবাত বেরোব।
-   প্রোগ্রাম অ্যালাউ করবে না।
-   প্রোগ্রাম আবার কীসের! আমি কি কম্পিউটার না রোবট? আমি মানুষ। আমি প্রোগ্রামে চলতে যাব কেন?
-   মানুষ। হেহ্‌।
-   ও কী! হাসছেন কেন?
-   মানুষ। বাঙালি আবার মানুষ!  
-   এর মানে কী?
-   আমাদের সার্ভারটার নাম জানেন কী?
-   কীসের সার্ভার?
-   যে সার্ভার আমাকে আপনাকে আর বাকি সমস্ত বাঙালিকে কন্ট্রোল করছে। সেই সার্ভার। তার নাম জানা আছে?  
-   সার্ভার আমাদের কন্ট্রোল করছে?
-   নেটওয়ার্কড কম্পিউটারদের তো সার্ভার থাকেই হালদারবাবু।
-   ছাইপাঁশ। যতসব আজে বাজে কথা।
-   এই কথাগুলো আজেবাজে? আর ও’দিকে আপনি দিব্যি আলু চচ্চড়িকে সকাল থেকে লাউয়ের তরকারি বলে চোপা করে গেলেন। সে’বেলা কিছুই আজেবাজে নয়।
-   মানে? লাউ...মানে...।
-   ‘এমনি’ একটা সিস্টেম-বাগও বটে। জিভের সার্কিটে গোল্লা পাকিয়ে দেয়। তাই হয়েছে।
-   পাগলের প্রলাপ যত।
-   মিস্টার হালদার। প্রথমবার যখন আমি ব্যাপারটা ঠাহর করতে পেরেছিলাম তখন আমিও এমনই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম । ইট ইজ ন্যাচারাল। আদত বাঙ্গালিরা আসলে মানুষ নয়, সক্কলে সার্ভার কন্ট্রোল্‌ড রোবট; এই খুনে সত্য হজম করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমিও পারিনি।   
-   আমি মানুষ নই? ইয়ার্কি হচ্ছে? জানেন আমার বার্থ সার্টিফিকেট আছে? জানেন আমার বৌ বাচ্চা আছে?
-   আমি নিজে বাঙালি। আমি জানি যে আমরাই হচ্ছে একমাত্র সফিস্টিকেটেড রোবটের জাত হু ক্যান পারফর্ম অল হিউম্যান ফাংশন্‌স। ইনক্লুডিং প্রোক্রিয়েশন অ্যান্ড ডেথ্‌।
-   বটে! আর আমাদের তৈরি কে করলে?
-   আমাদের সৃষ্টিকর্তারা কি আর এ গ্রহে পড়ে থাকবেন মিস্টার হালদার? সে নিশ্চই হাজার বছর আগের ঘটনা। আমিও এ’সব জেনেছি বেগমপুরে এসেই, সার্ভারের সান্নিধ্যে।
-   সব মানুষই তো তাহলে রোবট হতে পারে। সবই যখন এক।
-   আজ্ঞে না। পারে না। আমাদের...মানে রিয়েল বাঙ্গালিদের সার্কিটে ডারউইনের থিওরি নেই, আছে হাজার অলোকবর্ষ দূরের কোন স্বপ্নরাজ্যের মায়াবী টেকনোলজি। তবে...তবে...।
-   তবে কী?
-   তবে ওই, রোবট বাঙ্গালি-হিউম্যান ক্রস ব্রিডিংয়ে বাঙ্গালির প্রগ্রাম্‌ড রোয়াব আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে। কম্পিউটারাইজ্‌ড সুপিরিওরিটি হারিয়ে ফেলেছি আমরা। আর ক্রস ব্রিডিঙয়ে উৎপন্ন বাঙালিদের ওপর সার্ভারের কন্ট্রোল ক্রমশ কমে আসে। ক্রস ব্রিডিং যত বেড়ে চলে সার্ভারের আধিপত্য তত মিইয়ে যায়। ক্রস ব্রিডিঙের জন্যই ক্রমশ বাঙালিরা নিজের দুরন্ত প্রোগ্রামিং ছেড়ে মানুষ হয়ে চলেছে।
-   কিন্তু ফারাকটা কী? মানুষে আর বাঙালি রোবটে?
-   বাঙালি রোবটে “এমনি” মডিউল চালানো যায়, সে মডিউল চালিয়ে তাদের বেগমপুরে ডেকে আনতে পারে সার্ভার। তবে শুধু পিওর বাঙালির সার্কিটেই “এমনি” ইঞ্জেক্ট করা যায়।
-   অর্থাৎ কমপ্লিট রোবট?
-   আজ্ঞে হ্যাঁ। পিওর বাঙালি রোবট; যার সাথে হিউম্যান মিক্সিং খুব একটা হয়নি। যেমন ধরুন আপনি আমার মত পিওর বাঙালি, কাজেই সার্ভার কাজ করছে আপনার ওপর। আপনাকে ‘এমনি’ দিয়ে টেনে আনা গেছে। কিন্তু আপনার বৌ মিক্সড ব্রিড, তাঁর মধ্যে মানুষেপনা বড্ড বেশি চলে এসেছে। পরিণতিতে আপনার ছেলেও কন্টামিনেটেড।
-   ওহ।
-   এই পিওরিটি নষ্ট হওয়া নিয়ে সার্ভারের বড় দুঃখ। বড় দুঃখ। সেদিন দুঃখে সার্ভার হৃদয় বিদারক ভাবে এটা নোটিফিকেশন দিলে, আমরা যে ক’জন বেগমপুরে আছি- তারা পড়লাম।
-   কী নোটিফিকেশন?
-   কোটি কোটি সন্তানেরে হে মা জননী, রেখেছ মানুষ করে বাঙালি করনি।
-   ওহ্‌। যাক গে।
-   মিস্টার হালদার। “এমনি” ইঞ্জেক্ট করে আপনাকে সার্ভার এমনি এমনি টেনে আনেনি। পিওর ব্রিড আর বেশি নেই। আমি, আপনি আর সামান্য ক’জন। সবাইকে সার্ভার টেনে নিচ্ছেন। এই বেগমপুরে। আমাদের এক হতে হবে। হতেই হবে।
-   আপনার কি ছিট আছে? মাথায়?
-   মাথায় সার্কিট। ছিট, ঘিলু; কোনও কিছুরই স্কোপ নেই। ফিজিওলজিকালি যে’টা দেখা যায়, সে’সব ডিসেপশন। সমস্ত কিছুই; জন্ম মৃত্যু সব। আমরা যারা পিওর বাঙালি, তাদের এক মাত্র রিয়েলিটি হচ্ছে সার্ভার। সেই সার্ভার যে’টা আমাদের কন্ট্রোল করে। আমাদের মধ্যে “এমনি” ইঞ্জেক্ট করে।
-   আচ্ছা, আপনাদের...থুড়ি...আমাদের এই সার্ভারের কী একটা নাম আছে বলছিলেন, তাই না?
-   অফ কোর্স আছে। সার্ভারের নাম পিপুফিশুল্যাদ।
-   অ। হুঁ। বুঝলাম। বেশ। আপনার সাথে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো। ট্রেন ঢুকছে মনে হয়। আমি আসি।
-   “এমনি” টেনে এনেছে আপনাকে। ফেরত যাওয়ার বোধ হয় আর হবে না আপনার। বেগমপুরে আপনি ভালো থাকবেন হালদারবাবু।
-   আসি। ওই যে। ট্রেন।


চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করানোর অভিজ্ঞতা এই প্রথম হলো হালদারবাবুর। ট্রেনের লোকেদের হইহইরইরই করে কারণ জানতে চাওয়াকে পাত্তা দেওয়ার কোনও মানে হয় না। “কারণ ছাড়াই ‘এমনি’ চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করিয়েছি” বললে পিঠের ছাল ছাড়িয়ে নেবে পাবলিক।
ট্রেন থেকে নেমেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে হালদার বাবু দেখলেন বিরাশিটা মিস্‌ড কল, সব কটাই বাড়ি থেকে। মোবাইলের ব্যাটারি আলগা করে রেললাইনের অন্য প্রান্তে ছুঁড়ে ফেললেন তিনি।
লাইন ধরে হালদারবাবু যখন বেগমপুরের দিকে হাঁটা শুরু করছেন তখন আকাশ জুড়ে মন ভালো করা সন্ধ্যের লালচে আকুলিবিকুলি।