Saturday, September 28, 2013

কোলকাতা ও কোলকাতাইয়া


গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন কমলেশ। ওর গ্রাম বিহারের সুপল জেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রামের নামটি ভারি সুন্দর; নির্মলি। বছর পাঁচেক আগে এক ভয়ানক বন্যায় কোশী নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার ভিটে মাটি ও একটি বাছুর কে। স্ত্রী ও দুই শিশু কে নিয়ে তারপর সোজা কলকাতায় চলে আসেন কম্‌লেশ। বন্যার আগে কমলেশ শহর বলতে দেখেছে দ্বারভাঙ্গা ,মুজঃফরপুর ও পাটনা। তবে ভিটেমাটি হারিয়ে কমলেশয়ের মনে প্রথমেই আসে কলকাতার কথা। সে শুনেছিল যে সেখানে গতর খাটিয়ে দু পয়সা কামানোর সুযোগ প্রচুর।

Sunday, September 22, 2013

দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার


দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার।
ক্যালকাটা ইজ অন ফায়ার।

পুরনো পুজোবার্ষিকী সমস্ত নামানো হয়ে গেছে। ফ্রম শুকতারা টু আনন্দমেলা টু দেশ।

দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই পেট-ক্লেন্সিং তথা কন্ডিশনিং শুরু। মিনিমাম মটন, নিয়মিত অ্যান্টাসিড। যাতে পুজো এলে ‘জয় মা’ বলে খাসি-মুর্গির বন্যায় নিজের গা ভাসিয়ে দেওয়া যায়।

গড়িয়াহাট থেকে একটা পাঞ্জাবি আর একটা ফতুয়া, নিউ মার্কেট থেকে হাফ শার্ট কেনা হয়ে গেছে। খাদিম থেকে এক জোড়া জব্বর চটি কেনা হয়েছে যা পায়ে দিয়ে খিচুড়ি ভোগ বিতরণও করা যাবে আবার অনায়াসে পার্ক স্ট্রীটে গিয়ে কেতাবি হন্টনও চালানো যাবে।  

সিদ্ধি খেয়ে বেহেড নেচে নিজেকে বেইজ্জত করব না, এ প্রতিজ্ঞা অন্য বছরগুলোর মত এবারেও করেছ। ফিঙ্গারস্‌ ক্রস্‌ড।

অফিসে ক্যাসুয়াল লিভ অ্যাপ্লাই করে বসকে বেদম তোষামোদ শুরু করে দিয়েছি। একাদশী টু লক্ষ্মী পুজো ট্রিপ টু পুরী। জগন্নাথ এক্সপ্রেসের বার্থ অবিশ্যি দেড় মাস আগেই বুক করে রাখা হয়েছে।

আমেরিকা থেকে মাকু আসছে, ব্যাঙ্গালোর থেকে হুলো। অতএব সপ্তমী টু বিজয়া দুপুর-বিকেল আড্ডার টাইম টেবিল ফিক্সড।

প্ল্যান কষতে বেশ মশগুল। এই রবিবারের দুপুরেও ভাত-ঘুমের ফাঁকে নবমীর জলখাবারের মেনুটা গুছিয়ে ভেবে নিচ্ছিলাম। এমন সময় স্বপ্নে দেবীর আবির্ভাব। এক্কেবারে গতবারের বালক সঙ্ঘের প্রতিমার মত আদল। আমি নমস্কার করায় দেবী কিছুটা ভেবেড়ে গেছিলেন বটে; দশ হাতে প্রতি-নমস্কার তো আর চাট্টি-খানি ব্যাপার নয়। আমিও স্মার্টলি বললাম “ প্লিজ ব্যস্ত হবেন না দেবী, বলুন কী করতে পারি আমি ?”

দেখলাম দেবীর মুখে গভীর চিন্তা।

বললেন “ হ্যাঁ রে বাবা, আমি চাট্টি দিনের জন্যে আসি। আর আমার বাহানায় তুই গান বাজনা, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, থিম পুজো...শুধু এই সব প্ল্যান চালিয়ে যাস ? গতবার দেখলাম তুই বেমালুম লুচি আলুর দম গিলে অঞ্জলি দিলি! এটা কি তুই ঠিক করছিস বাবা ?”

দেবীর চিন্তার দিকটা বুঝলাম। তাঁকে বুঝিয়ে বললাম “ প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদার ওয়াইজ দেবী। আপনি চান আনন্দ ধারা বইয়ে দিতে ভুবনে। আলোর বেণু প্লে করতে। উই আর রাইট ইন সিঙ্ক উইথ দ্যাট স্পিরিট। এত ধর্ম দেশে মা, আর এত ঠাকুর অবতার; ভক্তি-টক্তি না ডিসপ্লে করে উপায় কী? এক মাত্র তুমি আর তোমার পুজোর চারটে দিনই আছে মা; যখন পাবলিক একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এই কটা দিনই কেবল অফিসের বস আমাদের মাথা চিবোয় না বরং আমরা সামান্য পাঁজরা কলিজা চিবিয়ে প্রাণ জুড়োই। এক মাত্র আপনিই আছেন যিনি পাবলিককে ধর্মীয় হুকুম-বাজিতে চাবকান না। আপনার পুজোই হল আদত সেকুলার পুজো দেবী, মনের পুজো, আনন্দের পুজো, একটু জিরিয়ে নেওয়ার পুজো। তাই তো আমরা আপনাকে এত ভালোবাসি। দেবী, আপনি শুধু লুচি-গেলা অঞ্জলিই দেখলেন ? আপনি দেখেননি গত বছর বিজয়ার দিন, আপনার চলে যাওয়ার দুঃখে আমি সিদ্ধি খেয়ে কেমন হাউ হাউ করে কেঁদে আকুল হলাম ?  সুনেত্রার নামটা মুখ ফস্কে স্কিড করে বেরিয়েছিল। মাইনর স্লিপ।  মনে শুধু আপনিই জ্বলজ্বল করছিলেন, দেখেননি দেবী"? 

আমার কথা শেষ হতে না হতেই দেখলাম দেবীর মুখে স্মিত হাসি আর তার দশ খানা হাত আমার মাথার ওপর পাগড়ির মত বসে। তিনি বললেন “ ব্রাভো মাই বয়। গর্বিত আমি তোকে নিয়ে। আসলে তোকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম তুই কোন নেকু উত্তর দিস কি না। জব্বর উত্তর দিয়েছিস। নে খোকা, বর প্রার্থনা কর”। 

দেবীর পা ছুঁয়ে বললাম “ দেবী, ধন দৌলত, ফ্ল্যাটবাড়ি বা প্রমোশনের মত মর্ট্যাল বরের জন্য মেজপিসি সন্তোষীমার ব্রত করছে। সে'সব বর চেয়ে তোমায় ছোট করব না। নবমীর সন্ধেয় ভারি ইচ্ছে ছিল পিটার ক্যাটে ডিনার সারার। তুমি বর দাও যাতে আমায় পাঁচ মিনিটের বেশি লাইনে না দাঁড়াতে হয়। নয়ত যা ভিড় হয় মা, সে তোমায় আর নতুন করে কী বলব”!

দেবী ভ্যানিশ হওয়ার আগে বলে গেলেন “ তাই হবে” ! 

Sunday, September 15, 2013

কারণ

দাড়ি না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ কবিগুরু হতেন। তবে গুরুদেব না থাকলে কি সফেদ ঝুলন্ত দাড়ি বাঙালি মানসে অমন দাপটে জায়গা পেত ? পেত না। কজ্‌ অ্যান্ড এফেক্ট; সঠিক ফ্রেমে না ফেললেই মুস্কিল।

এগজ্যাম্পেলটা বেশি সাদামাঠা হয়ে গেল। জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই ফ্রেমটাই ঠিকঠাক সাজিয়ে ওঠা মুস্কিল। এই যেমন সিঙ্গারা; তার টান কি নিমকি সুলভ চামড়ায় না মখমলে আলুর পুর থেকে ?

Thursday, September 5, 2013

শিক্ষক


মাঝরাত-গুলোর রোয়াবই আলাদা। যারা শহুরে রাত জাগায় অভ্যস্ত; তারা জানেন যে রাত্রের আকাশও ঠিক নিকষ কালো হয় না। রাতের আকাশের রঙ আছে, আবছা আলোছায়া আছে।

কৈশোরে, সেই আলোছায়াতেই প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম যে এই সুমন ভদ্রলোকটির গান গুলো বেসুরো নয়; বরং বেশ অবলীলায় পাঁজরে হাত বুলিয়ে যায় সে সব সুর।