Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2020

"দ্য লোল্যান্ড" প্রসঙ্গে

যিনি "দ্য লোল্যান্ড" রেকমেন্ড করেছিলেন তিনি এককথায় এ উপন্যাস সম্বন্ধে বলেছিলেন; "বিষাদসিন্ধু"। বিষাদসিন্ধুতে যে মিঠে রোদ্দুর এসে মিশেছে, সে'টা টের পেতে হল বইটা পুরো পড়ে। ঝুম্পা লাহিড়ীর লেখা আমি সদ্য পড়েছি। কিছুদিন আগে পড়েছিলাম 'নেমসেক' আর দু'তিনদিন আগে শেষ করলাম নেমসেক। সে বই সম্বন্ধে চারটে মনের কথা। ১। কলকাতা সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে ক্লিশেয় মাখামাখি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। মনে রাখতে হবে যে লাহিড়ীর পাঠক আন্তর্জাতিক; তাঁদের কাছে যে ধরণের কলকাতা বিষয়ক ডিটেলিং চমৎকার  ঠেকবে, বাংলার (এবং কলকাতার) বাঙালির কাছে সেই ডিটেলিংই ক্লিশে ভারে ক্লিষ্ট মনে হতে পারে৷ কিন্তু লাহিড়ীর গুণ সে'খানেই। তাঁর বর্ণনা প্রায় নিখুঁত, বাহুল্যবর্জিত আর তাঁর ভাষা প্রাণবন্ত।  কলকাতার যে'টুকু তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে, সে'টুকু পড়লে আজীবন কলকাতায় বন্দী কোনও মানুষেরও দিব্যি ভালো লাগবে বলে আমার মনে হয়। অফিস যাওয়ার পথে রোজ টালিগঞ্জ পেরিয়ে যাই, এ বইতে টালিগঞ্জ একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক'দিন ধরে যখনই টালিগঞ্জ পেরোতে হয়, 'দ্য লোল্যান্ড'য়ের সুভাষ, উদয়ন আর গৌরীর কথা মনে

দাদার লাইব্রেরি

- দাদা। - কী ব্যাপার পিলু? এত রাত্রে? - মনে হল তুই হয়ত এখনও ঘুমোসনি। তাই ভাবলাম যাই একবার...। - আয়। বস। - কী পড়ছিস? -  ইংরেজি নভেল পড়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম একটু শরদিন্দু ঝালিয়ে নিই। তোর ডিনার হয়েছে রে পিলু? - দাদা। রাত ক'টা বাজে সে খেয়াল আছে? পৌনে একটা৷ আর নীলাকে তো জানোই, রাত ন'টার মধ্যে খাওয়াদাওয়া না করলেই এক্কেবারে হুলুস্থুল শুরু করবে। - নীলার শাসনে আছিস তাই কোলেস্টেরলে পিষে মারা যাসনি এখনও।  - ছেলেবেলায় মায়ের শাসন। আর এখন বৌয়ের। তোর তো আর সে বালাই নেই, বেশ আছিস। - বৌ না থাক। বই তো আছে। আর বইও শাসন করে, সোহাগও করে। এই লাইব্রেরি কত সাধ করে বানানো বল দেখি। - তা বটে। টিকলিকে তো আমি বারবার বলি, জ্যেঠুর লাইব্রেরিতে যা৷ দু'টো বই উল্টেপাল্টে দেখ৷ তোর মত ভোরেশাস রীডার না হোক, মাঝেমধ্যে দু'একটা বই তো পড়তেই পারে বলো। কিন্তু না। সে দিনরাত শুধু ওই মোবাইলে মুখ গুঁজে পড়ে আছে।  - দিনকাল পাল্টেছে। বইটাই তো আজকাল একমাত্র রিসোর্স নয়। তুই বরং ওকে জোর করিস না।  - জোর করলেও সে মেয়ে পাত্তা দেবে নাকি৷ ব্যক্তি স্বাধীনতার যুগ। তার ওপরে সদ্য কলেজে যাওয়া শুরু করেছে, তা'তে ব

বংঈটসের বিরিয়ানি রান্না প্রসঙ্গে

এই অসময়ে মনখারাপ হলেই সর্বকালের অন্যতম সেরা (এবং জরুরী) ভিডিও অর্থাৎ  বংঈটসের কলকাতা বিরিয়ানির রেসিপিটা লূপে চালিয়ে দিয়ে একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকছি আর "মার্তণ্ড মার্তণ্ড মার্তণ্ড" রিদমে "বিরিয়ানি বিরিয়ানি বিরিয়ানি" বিড়বিড় করছি। এই রেসিপি ভিডিও সম্বন্ধে কয়েকটা মনের কথা না বললেই নয়।  ১। ভিডিওর গোড়াতে বিরিয়ানির হলদে আলু নরম সুরে ভাজা হচ্ছে, তারপর পেঁয়াজের 'বিরিস্তা'। মনে তখন শ্যামল মিত্তিরে ফুরফুর।  ২। তারপর বিরিয়ানি মশলা তৈরি। সে কী থ্রিল!  আর্কিমিডিস চৌবাচ্চা-স্নান যেন নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছি। সামান্য তুকতাকে যে কী ঘ্যামগোত্রের বিগব্যাং ঘটতে পারে..আহা। ৩। এরপর পাঁয়তারা পক্ষের শেষ, অ্যাকশন পক্ষের শুরু। মাংসের ম্যারিনেশন। দই,মশলাপাতি দিয়ে মাংসমাখা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল এইবেলা গভর্নমেন্টের উচিৎ আইন করা; যাতে নজরুলগীতি বা বাউল না গেয়ে কেউ যেন ম্যারিনেশনের মাংস না মাখে।  ৪। সরু লম্বা চালের ভাত দেখলে এমনিতেই মনে হয় পৃথিবীতে আজও কতটা গভীর রোম্যান্স জমে আছে। আর যে চাল বিরিয়ানিতে গিয়ে ঠেকবে, তা সেদ্ধ হতে দেখা তো মেডিটেশনের ঠাকুরদা। ভিডিওর এ

বসের প্ল্যান

- বস! - বলে ফেলো দত্ত। - বলছি, সেলসটীম খুব রেস্টলেস হয়ে উঠছে, মেমোটা এবার ইস্যু না করলেই নয়।  - কীসের মেমো? - ওই যে। সামনের কোয়ার্টারের সেলস টীমের টার্গেট। ছেলেরা হপ্তাখানেক ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে কিনা...।  - সেলসের ছেলেপিলে; প্রয়োজনে লোহাকুচির চচ্চড়ি দিয়ে ভাত মেখে খাবে, মনুমেন্টের মাথায় মশারি টাঙ্গাবে, জিরাফের গলায় নেকটাই পরাবে। মেমোটেমোর মত নেকু জিনিসে তাদের কাজ কী।  -  বস, যাই বলুন। এত হাই টার্গেট সেট করা হচ্ছে আজকাল। আগাম টার্গেট মেমোটা পেলে ছেলেমেয়েগুলো একটু আগেভাগে প্ল্যান করে নিতে পারত। একটু প্রস্তুত হতে পারত। তাছাড়া এই মেমোতে শুধু যে টার্গেট আছে তা তো নয়। ইনসেন্টিভ পাল্টে যাচ্ছে। অনেকের চাকরীবাকরী নিয়েও টানাটানি হতে পারে, অন্তত মেমোর ড্রাফট পড়ে আমি তেমনই বুঝছি।  - দত্ত, তোমার চাকরী নিয়ে তো টানাটানি পড়বে না। তুমি খামোখা অত মাথা ঘামাতে যাচ্ছ কেন? - কিন্তু এই লুকোছাপাতে সেলসটীমের মনবল একটু...একটু...। - সেলসটীমের মনোবল দিয়ে কোন কাঁচকলাটা হবে দত্ত? ইয়ার এন্ড রিভিউতে বাহাত্তর খানা স্লাইড জুড়ে দলের মনোবলের বাহার দেখাব?  - বস। আপনি গুরু, আমিই গরু। তবে পারমিশন

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন ১৩

ফের একদিন।  ভীড়। ধরুন, ওই চৈত্র সেলে গড়িয়াহাট মার্কা ভীড়। আর ভীড়ে হাঁসফাঁস অবস্থায় কেউ আমার পা মাড়িয়ে ফেলবেন। এবং তারপরেই চেনা স্ক্রিপ্ট ভেস্তে দিয়ে মারকাটারি মিরাকেল।   "অন্ধ নাকি শালা" বলে আমি চিৎকার করে উঠব না। "ভীড় ফুটপাথে অমন ট্যালার মত ল্যাম্পপোস্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে অথচ সামান্য টোকা লাগলে ন্যাকাপনা। আচ্ছা গবেট মাল" মার্কা পাল্টা উত্তর ভেসে আসবে না।  বরং পা মাড়িয়ে যাওয়া মানুষটি ঘুরে হন্তদন্ত হয়ে কাছে আসবেন। জিভ কেটে বলবেন; "ছিঃ ছিঃ,অমন ইস্টুপিডের মত কেউ হেঁটে যায়? আমি একটা অখাদ্য। বলি, পায়ে কি খুব লেগেছে দাদা"? আমি তৎক্ষণাৎ লাজুক সুরে জানাব " আরে না না, ভীড়ের মধ্যে অমন অল্পস্বল্প হয়েই থাকে। আরে পা মাড়িয়েছেন, বুলডোজার তো আর চালাননি। আমিই বরং অকারণে থমকে দাঁড়িয়ে গেছিলাম। কোনও মানে হয়? হাতে অতগুলো ভারী ব্যাগ নিয়ে ছুটছেন আপনি, পায়ে পা লাগতেই পারে। ধুস, ও নিয়ে ভাববেন না"। দু'টো দিলখোলা হাসির আদানপ্রদান হবে। পা মাড়িয়ে দেওয়ার ব্যথা বা পা মাড়িয়ে দেওয়ার লজ্জা;তিরিশ সেকেন্ডে গায়েব কিন্তু সে হাসির ওম তিরিশ দিন মন চনমনে রাখবে।  হাল ছাড়িন

ব্যালেন্স

- সুমিতদা!  - হাঁপাচ্ছিস কেন? - মিস্টার লাহিড়ীর ব্যাপারটা শুনেছেন? - বস আগে। এক গেলাস জল খা। তারপর না হয়...। - সুমিতদা...বসার সময় কোথায়? লাহিড়ীর কেসটা তো অনন্তপুর থানার আন্ডারে।  এখন বেরোলেও পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে। আপনার ড্রাইভার আজ এসেছে নাকি ট্যাক্সি ডাকব? - অরিন্দম। বড্ড উত্তেজিত হয়ে আছিস। নিমাইদাকে বলেছি দু'টো চা দিতে৷ লাঞ্চ করেছিস তো? - লাঞ্চের আর সময় পেলাম কই৷ অনলাইনে খবরটা ফ্ল্যাশ হতেই ছুট দিলাম..। - আমারও লাঞ্চ করা হয়নি। চা'টা খেয়ে নে। তারপর নিমাইদাকে বলছি ছুটে গিয়ে দু'টো রোল নিয়ে আসবে। - সুমিতদা..আমাদের হাতে অত সময় নেই...আপনি খবরটা শুনেছেন তো? - পুলিশ লাহিড়ীর এগেন্সটে কেস নিয়েছে৷ বিভিন্ন পলিটিকাল কাঠি নেড়েও মাফিয়া লাহিড়ী পুলিশকে ঠুঁটোজগন্নাথ করে রাখতে পারেনি। আর হ্যাঁ, এই বয়সেও অবিনাশ মিত্তিরের পার্সিভারেন্সের জবাব নেই। ওই একটা সাতপুরনো আধভাঙা বাড়ি আঁকড়ে থেকে বুড়ো যা ফাইট দিল..ব্রাভো। থ্রেট, ইন্টিমিডেশনে থেমে না থেকে, নিজের গুণ্ডাও লেলিয়েছিল লাহিড়ী৷ কিন্তু তবুও বুড়োকে টলিয়ে বাড়িটা খালি করাতে পারল না।  ওই গুণ্ডাবাহিনীর জোরে লাহিড়ী তো কম পুকুর বোজাল

মা, এক নির্ভীক সৈনিক

"ভালোবাসার ছোট্ট হরিণ" আমার পড়া প্রথম শৈলেন ঘোষের লেখা, আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে৷ সে গল্প খুব ভালো লেগেছিল শুনে পাশের বাড়ির এক সহৃদয় কাকু আমায় পড়িয়েছিলেন "মা এক নির্ভীক সৈনিক"। ধার করা পূজাবার্ষিকীতে পড়েছিলাম, তাই পড়ার পর বুকে পাথর রেখে সে বই ফেরত দিতে হয়েছিল। অত ছোটবেলায় যে'টা সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল সে'টা হল 'স্তেপস'য়ের হিংস্র যাযাবর উপজাতিদের দৈনন্দিন জীবন। 'সাইথিয়ান' শব্দটা উল্লেখ উপন্যাসের শুরুর দিকেই ছিল আর আমার মনে মধ্যে শব্দটা গেঁথে গিয়েছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা কারণে। সাঁইথিয়া নামে একটা রেলস্টেশন এ বাংলায় আছে, এই অকারণ মিল খুঁজে পেয়ে থ্রিলড হয়েছিলাম। বহুবছর পর ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়েছিলাম সাইথিয়ানদের সম্বন্ধে;  আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইউরেশীয় অঞ্চলের স্তেপস দাপিয়ে বেড়াত এই যাযাবর উপজাতিরা। শৈলেনবাবু লিখেছিলেন সাইথিয়ান (Scythian)-দের মধ্যে বিভিন্ন জাত; তার একটি হলো আসগুজাই। উইকিপিডিয়া বলছে সাইথিয়ানদের বিভিন্ন নামে ডাকা হত যেমন সাকা, ইসকুজাই, ইত্যাদি।  গল্পের মূলে রয়েছে আসগুজাই দলের সেনাপতি স্তানের পুত্র কোহেন এবং কোহ

পঁচিশে বৈশাখ আর নৈবেদ্য

আজ সারাদিন ফেসবুক ও ট্যুইটার রবিপ্রণামে ভরপুর। আঁকা, পাঠ, গান, নাচ থেকে কার্টুন পর্যন্ত; যোগ দিয়েছেন সব বয়সের মানুষ৷ আর এ'সব কিছু আমার যে কী ভালো লাগল। কত চেনা মানুষ হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে বসেছেন বা খালি গলায় গান ধরছেন, কত খোকাখুকু কী অপূর্ব ভাবে কবিতা আবৃত্তি করছে, ঘরের মধ্যে বা ছাতের ওপর হয়ত কেউ নেচেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে।  এক সময় মনে হত; আমাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে গেলানোর একটা প্রবণতা আছে। হয়তো আছেও বা৷ কিন্তু এখন মনে হয় এই যে এত মানুষ সাহস করে গান গেয়ে উঠছেন, কবিতা পড়ছেন, ছবি আঁকছেন; সে সাহসের মূল্য অসীম। এবং সেই গাওয়া গান বা পাঠ করা কবিতা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া; সে সাহস খানিকটা যুগিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে কেউ দড়াম করে গাইতে বললে অনেকেরই অস্বস্তি হয়; দুম করে ওই ভাবে গাওয়া যায় না নাচা যায়? কিন্তু এই স্মার্টফোন আর ফেসবুক/ট্যুইটার গোছের প্ল্যাটফর্ম মিলেমিশে; ব্যাক্তিগত স্পেস আর এক্সপোজার ব্যালেন্স করে একটা চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।   ফেসবুক জমানার আগে জানতাম পাড়ার স্টেজে বসে হারমোনিয়াম বাজাতে যে পারবে না তাঁর গান পাতে দেওয়া চলে না; রবিস্যারের গান হ

মগজে নতুন চুটকি

কোনও জোক বা চুটকি যখন প্রথম মাথার মধ্যে এসে দাঁড়ায় তখন তাকে মনে হয় উত্তমকুমার। স্যুটবুট পরে, শর্মিলা ঝলসানো হাসি হেসে; সে কলম ঝাঁকিয়ে অটোগ্রাফ দেবে। অথবা মোটরবাইকে-সুচিত্রা-বইতে-পারা কনিফেডেন্স নিয়ে বিশ্বজয় করবে। মনে হয়;  বাহ্, এই চুটকিটার জন্যই তো এদ্দিন বসেছিলাম। এই তো সেই জোক যা ইন্টেলেক্টে অঞ্জনবাবুর দাড়ি চুলকে দেবে, অথচ শিব্রাম মার্কা ইম্প্যাক্টে চুটকি শুননে-ওয়ালারা হেসে গড়াগড়ি যাবে। এই তো সেই জোক যা শুনে একদিকে পাড়ার ফক্কর বন্ধু নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রেমিকাকে পারফিউম কিনে না দিয়ে আমায় ওল্ডমঙ্কের বোতল উপহার দেবে আর অন্যদিকে বাবা বাহবা জানিয়ে  বলবে "বারো ঘণ্টা পর যখন আমার হাসি থামবে, তখন বেরোব তোর জন্য মাটন আনতে"। সে চুটকি অ্যাইসা ভাইরাল হবে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোকে বিবেকামুণ্ডম গোছের কিছু ধমক দেওয়ার আগে সে চুটকি 'ক্র‍্যাক' করবেন। আবার সে ঠাট্টা এতটাই লিটলম্যাগিও গভীর হবে যে তা নিয়ে ঝাড়া আড়াইমাস কফিহাউস সরগরম থাকবে।  মোদ্দা কথা হল কোনও নতুন চুটকিটা যতক্ষণ নিজের মাথার ভিতর থাকে, মনে হয় " কেয়াবাত, গালিবদা! কেয়াবাত"। কিন্তু মগজের মধ্য থ

ভাড়া

- আরে শিবু নাকি? - আজ্ঞে। - আরে থাক থাক থাক, রাস্তাঘাটে আবার প্রণাম করা কেন। - না করবেন নায়েবমশাই। না করবেন না। পায়ের ধুলোটুকু অন্তত নিতে দিন। আপনাকে যে আমি কী বলে...। - আহা, আমায় কিছু বলতে যাবেই বা কেন। চলো, বেলা বাড়ছে। স্টীমারে উঠি চলো গিয়ে। - নায়েবমশাই, আপনি আমাদের উদ্ধার না করলে আমরা ভেসে যেতাম। এই অসময়ে আপনি দেবদূতের মত আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ালে...। - দ্যাখো শিবু। আমি তো মাইনে করা চাকর মাত্র। তবে হ্যাঁ, পেন্নাম যদি ঠুকতেই হয়; তবে ঠোকো জমিদার মশাইয়ের নামে। - জমিদারমশাইয়ের জন্য জান কবুল নায়েবমশাই। এদ্দিন আমরা ভাবতাম মানুষটা বড় কঠিন..কিন্তু তাঁর মধ্যে যে এত মায়া..। - নারকেল দেখেছ তো শিবু? নারকেল? তার বাইরেটা কেমন।বিশ্রী  ছিবড়ে?  আমাদের জমিদারমশাইও ঠিক তেমনি। বাইরেটা যতই শুকনো হোক, তাকে একটু বাজিয়ে দেখলেই জলের নড়াচড়া টের পাবে।  -  তা তো বটেই। নইলে গরীবমানুষের জন্য এতটা কেউ করে? - যবে থেকে জমিদারবাবুর কানে উঠেছে যে নদীর ও'পারে হরিহরপুর গাঁয়ে মড়ক লেগেছে; অমনি তাঁর ঘুম হাওয়া। বারবার শুধু পায়চারি করছেন আর শুধোচ্ছেন "নায়েব, আমার ফুলপুর গাঁয়ের অনেক মানুষ ওই হরিহরপুরের

আ গোল্ডেন এজঃ রেহানার মুক্তি ও যুদ্ধ

থার্ড রাইখের ওপর শিরার সাহেবের পাহাড়প্রমাণ (এবং গুরুত্বপূর্ণ) বইটা পড়ার বেশ কিছুদিন পর পড়েছিলাম 'দ্য বুক থীফ'। প্রথম বইটা জরুরী ঐতিহাসিক দলিল। পরেরটা সে ইতিহাসের পটভূমিতে লেখা কাল্পনিক উপন্যাস; এক বইচোর খুকির গল্প। ইতিহাস নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু ইতিহাসের চাকা ঘোরে মূলত তারিখে,  সংখ্যায়, স্মৃতিফলকে এবং রাজনৈতিক মতবাদের হাওয়ায়। এ'টা ইতিহাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয় মোটেও; তথ্য ও যুক্তিনির্ভর না হয়ে ইতিহাসের উপায় নেই৷ কিন্তু মানুষের গল্প শুধু তথ্য ও যুক্তি দিয়ে বাঁধা অসম্ভব। মানুষের খিদের গল্প শুধু মন্বন্তরে মৃতের সংখ্যা বা শাসকের শয়তানি বা প্রতিবাদি জনতার প্রতিঘাতের খবর জানিয়ে শেষ হয়ে যায়না। তবে সেই পুরো গল্পটা বলার দায় ইতিহাসের নয়, সম্ভবও নয়। নিজের পাতের খাবার পাশের বাড়ির অভুক্ত শিশুর জন্য সরিয়ে রাখা গৃহিণীর গল্প জমিয়ে রাখার পরিসর ইতিহাসের বইতে নেই৷ পকেটে পিস্তল নিয়ে ঘোরা কোনও অকুতোভয় তরুণ বিপ্লবী যখন  পুরনো চিঠির গন্ধ শুঁকে বারুদের গন্ধ ভুলতে চেষ্টা করে, সে ব্যাপারটা কোনও দস্তাবেজে লিখে রাখা চলেনা। গৃহযুদ্ধে বাপ হারানো ছোট্ট খোকার ফ্যালফ্যালে চোখে শরতের আকাশে

অশোক ও অসীমা

১। উপন্যাস থেকে তৈরি হওয়া সিনেমা। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত থাম্বরুল হল আগে উপন্যাসটা পড়ে তারপর সিনেমায় পৌঁছনো। উপন্যাসের 'ডিটেলিং' স্বাভাবিক ভাবেই সিনেমার স্ক্রিনে ঘণ্টা দুই-আড়াইয়ের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়৷ তাছাড়া উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহকে কিছুটা কাটছাঁট না করে সিনেমার ফ্রেমে বসানো মুশকিল।  তার মানে এই নয় যে গুরুত্বের দিক দিয়ে সাহিত্য সবসময়ই সাহিত্য-নির্ভর সিনেমার ওপরে থাকবে। এডিটিং আর নির্দেশনার গুণে সিনেমা যে স্বতন্ত্র হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তেমন উদাহরণ যে অজস্র আছে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।  সিনেফাইলরা সে বিষয়ে আরও বিশদে বলতে পারবেন৷ কিন্তু ওই, আমার বরাবরই মনে হয় যে ভালো লাগা বই থেকে তৈরি হওয়া সিনেমা যতটা সাগ্রহে দেখা যায়, সে সিনেমা আগে দেখে প্লটের নির্যাস বুঝে নিয়ে বইটা পড়তে শুরু করা অনেক বেশি কঠিন। ঝুম্পা লাহিড়ীর 'নেমসেক' বইটা আমি সংগ্রহ করি নেমসেক সিনেমার বিভিন্ন ছবি দেখে। দু'টো ছবি আমায় বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে;   এক। যে'খানে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে একগাল হাসি নিয়ে ইরফান দাঁড়িয়ে, পাশে টাবু। টাবুর মাথা ঝুঁকে পড়েছে ইরফানের কাঁধে। দুই। টাবু