Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2018

সৈন্যদল

- জাহাঁপনা! - উঁ...।  - জাহাঁপনা! - ধ্যার। আবার কী হল? শান্তিতে একটু দেশলাই কাঠি দিয়ে কান খোঁচাব তারও উপায় নেই। থেকে থেকে জ্যাঁহ্যাঁপঁন জ্যাঁহ্যাঁপঁন। কী চাই? - আসলে হয়েছে কী জাহাঁপনা...।  - বুঝলে মন্ত্রী, তোমায় নিয়ে এই এক সমস্যা। ধানাইপানাই ছাড়া কোনও কথা বলতে পারবে না। ঢেঁকুরের কথা বলতে এসে আগে বলবে বাসি লুচির গল্প। ধেত্তেরি। আমি এখন ব্যস্ত। তুমি পরে এসো'খন।  - জাহাঁপনা, ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরী।  - বটে? - আজ্ঞে।  - জরুরী? - রীতিমত। জাহাঁপনা।  - আমার যে পা মালিশের তেল গরম হয়ে গেছে। আর যে সময় নেই হাতে।  - কয়েকটা ব্যাপারে আপনার হুকুম বড় দরকারি...।  - তোমার মাইনেটা এ'বার থেকে আমাকেই দিও। আমাকেই যখন সব সামাল দিতে হবে তখন...। - হুকুম দিন। আমিই তবে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ফেলি...।  - সিদ্ধান্ত? তুমি কি রাজা? - আজ্ঞে না।  - তবে তুমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? তুমি কি চক্রান্ত করছ আমার বিরুদ্ধে? ব্যাটাচ্ছেলে! দুধ কলা মদ দিয়ে আমি কালসাপ পুষছি? - আমি ও'ভাবে বলতে চাইনি জাহাঁপনা।  - পিঠে ছুরি ঢোকাবে তার আবার ও'ভাবে এ'ভাবে কী? - একটু শুনুন আমার

খোকা আর দেশ

আহ্। খোকা। কত ভালোবাসার। নার্সিংহোমে প্রথম কোলে নেওয়া তুলতুলের। মিহি কুঁইকুঁই কান্নার মিঠে সুর বুকে আগলে নেওয়ার। খোকা। নরমস্য নরম আঙুলের ছোঁয়ার। নাহ্, অপরিষ্কার কর্মব্যস্ত হাতে ছোঁয়া যায়না খোকাকে, ওর গা বড় সরল। আদরের, তাতে ধুলো লাগতে নেই। খোকার ঘুমে পাখির বাসার ঠুনকো আসবাব, সামান্য শব্দে কেঁপে ওঠে সে। তার মুখের বিরক্তিতে বুকে মোচড় খেলে যায়। অতএব বাড়তি কোনও শব্দ নয়; শুধু ঘুমপাড়ানির মাপা সুর। সমস্ত ঘাম ধুলো শুষে নিক বাবার জামা, মায়ের কাপড়। সমস্ত সবুজ হোক খোকার। টলটলে চুমু থাক খোকার গালে। খোকার বুকের নরম ধুকপুক শুনুক মায়ের কান, খোকার গালে ঠেসে থাক বাবার সদ্য দাড়ি কাটা গাল। থাকুক খোকার সামান্য পেটে ব্যথায়  মায়ের যন্ত্রণা মাখানো ছটফট,  থাকুক বাবার 'কেন কিছু করতে পারছি না'র কাচুমাচু। বোমার আঘাতে,রক্তে, ধুলোয়, অমানুষিক যন্ত্রাণায় হতবাক সে খোকার পাথুরে নিশ্চুপ মুখ বুকে বয়ে বেড়াতে কত হাজার বার মরতে হয় তার মা বাবাকে? খোকার ব্যথায় বাবা কোন সংগ্রাম সান্ত্বনা খুঁজে নেবে? খোকার গাল বেয়ে নামা রক্তে খোকার মা কোন সিরিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, পাক

সিঁড়ি

তিন ত লায় এক কামরার ভাড়া ঘর। সে'খানে নরেনবাবুর একার সংসার, দিব্যি চলে যায়। দিব্যি চলেও যাচ্ছিল বারো বছর ধরে। একটা চৌকি, একটা স্টোভ, কিছু বাসনপত্র, বিস্কুট চানাচুরের বয়াম, ঘরভাড়া সূত্রে পাওয়া স্টিলের তোবড়ানো আলমারি; ভালো থাকার যথেষ্ট রসদ মজুত রেখেছিলেন নরেনবাবু। অফিস ফেরতা বাসডিপো থেকে জানালা নিয়ে মৌজ করে বাড়ি ফেরা। বাড়ি ঢোকার মুখে মধুর হোটেল থেকে রাতের খাবার কিনে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে এসে ওঠা। মনোরম গতে বাঁধা পড়ে গেছিলেন তিনি। এই বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে নামা ওঠার ব্যাপারটা বড় ভালো লাগে তাঁর। অনেকের যেমন অনেক কিছু ভালো লাগে, ঠিক তেমনই। অফিসের  দিলীপবাবুর ভালো লাগে ব্রিজ খেলতে, হালিশহরের ন'কাকা ভালোবাসেন নস্যি নিতে, পাড়ার গণেশ মাতাল ভালোবাসে রামপ্রসাদী; ঠিক তেমনই নরেনবাবু ভালোবাসেন সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় সুরে সুরে সিঁড়ি গুনতে। বেয়াল্লিশ খানা সিঁড়ি। প্রতিদিন নামার সময় গোনেন এক, দুই, তিন থেকে বেয়াল্লিশ। আর ওঠার সময় গোনেন বেয়াল্লিশ, একচল্লিশ,  চল্লিশ থেকে এক। প্রতিবার। প্রতিদিন। কোনওদিন যদি অন্যমনস্ক হয়ে গোনার ছন্দে বাধা পড়ে, তাহলে নেমে বা উঠে গিয়ে ফের প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। তা বারো বছর ধ

পোস্টঅফিস

সে আকাশ সবসময় মেঘলা। ঘোলাটে, তবে গুমোট নয়। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ কিন্তু ঝেঁপে নামার কোনও লক্ষণ নেই। সে আকাশের নিচে দাঁড়ালে মনকেমন জাঁকিয়ে বসে, অথচ ভালোলাগাটুকুও দিব্যি রয়ে যায় অল্প শীতে গায়ে জড়ানো ভাগলপুরি চাদরটার মত। সে ছলছলে আকাশের নিচে জুবুথুবু এক লাল পাথুরে টিলা। আর সে টিলার  মাথায় ছোট্ট লাল বাড়িটা আদতে একটা পোস্টঅফিস। সে পোস্টঅফিসের ঘর ছোট্ট হলে কী হবে, তা'র ভিতরে জায়গার অভাব নেই। স্তুপ স্তুপ চিঠি জমা হয় সে'খানে। ঘরের এক কোণে এক সাতপুরনো টেবিলের গা ঘেঁষে রাখা এক মচমচে জীর্ণ চেয়ার আলো করে বসে থাকেন পোস্টমাস্টার অনন্তবাবু। এই পোস্টঅফিসে তিনিই পোস্টমাস্টার, তিনিও পিওন, তিনিই আর্দালি। এত কাজ তাঁর অথচ ব্যস্ততা ব্যাপারটা অনন্তবাবুর ধাতে সয় না। মেঘলা হাওয়ার মতই তার মেজাজে সামান্য আয়েশি ফুরফুর রয়েছে সর্বদা, কানে তাঁর সর্বক্ষণ সরোদের আশ্বাস। ফিনফিনে নীল ফতুয়া আর ঢলা পাঞ্জাবিতে একা গোটা পোস্ট অফিস সামাল দিয়ে থাকেন অনন্তবাবু। অবশ্য ব্যস্ত হয়েই বা কী লাভ হত, এ'খানে প্রতি মুহূর্তে স্তুপ স্তুপ চিঠি জমা পড়ে। কোনও কোনও চিঠি দিস্তেদিস্তে অভিমানে সুদীর্ঘ,  কোনওটা আবার দু'কল

ডুব

- হাত বাড়িয়ে দে খোকা। দে! - পারছি না। - চেষ্টা কর। ঠিক পারবি। - মাগো, পারছি না। - পারবি। আর একটু। আর একটু এগিয়ে আয়। হাত দে। হাত দে বাবু। - মা, বড় কষ্ট। বড় শীত। বুকজল মা। বড্ড কাঁপুনি...। - কথায় কাজ নেই খোকা। হাত দে। হাত দিতেই হবে। দ্যাখ। দিব্যি টেনে তুলব। আয় বাবা। আয়। - মাগো। বুকে কষ্ট মা। শ্বাস আটকে যায়। - কাঁদে না খোকা। এর বড় ছেলে হয়ে কাঁদতে আছে? - দুপুরের গন্ধ নাকে আসে মা। গরমকালের দুপুর। তুমি বলতে ঘুমো। বিল্টু ডাকতে আসত। ফুটবল। আমতলার মাঠে। - বিল্টুকে দেখবি না খোকা? চ'। বাড়ি যাব। চ'। - মাগো। বিল্টুর বাড়ির ছাদে দু'টো নয়নতারার চারা মা। - চোখ বুজতে নেই খোকা। তাকা। এই যে আমি বাবু। হাত বাড়িয়ে দে। আয় সোনা। - গলাজল মা। আর যে ভেসে থাকতে পারি না।  যন্ত্রণা। - আয় বাবা। আয়। আসতে হবেই। - অন্ধকার মা। বড় জ্বর। - কাঁদে না খোকা। - তোমার গায়ে মোমের গন্ধ। যেতে দিও না মা। - হাত দে না খোকা। দে। আয়...আয় বাবা। - তোমার ওই নীল শালে কী গরম মা। মাগো। - আয়। - ডুবে যাই যে। আর যে ভাসতে পারি না। - কাঁদে না বাবা।  আছি তো। - আসি মা। *** - আসি মা। - দু'দিন থাকবি না খোকা?

ধুরন্ধর বটু গোয়েন্দা

- এ কী! দোর্দণ্ডপ্রতাপ দারোগা গোবিন্দ হালদার সকাল স্বয়ং সকাল এই অধমের বাড়ি? - বটুবাবু! বাজে কথা সময় নেই। গামছা পরে খালি গায়ে নিমের দাঁতন মুখে মৌরুসিপাট্টাও চলবে না। শার্ট আর প্যান্টেলুন গলিয়ে চটপট বেরিয়ে আসুন। ক্যুইক। - ক্যুইক? সে সম্ভাবনা নেই স্যার। কী কুক্ষণেই যে দার্জিলিং-অরেঞ্জ ফ্লেভারের ইসবগুল নিয়েছিলাম। রঙেই বাহার, কাজে অষ্টরম্ভা। - দোহাই বটুবাবু। আপনার ওই নক্সাটক্সা এখন বাদ দিন। মেজর ক্রাইসিস। আপনি অকুস্থলে না পৌঁছলে আমার প্রমোশনটা ঝুলে যাবে। - ঘটেছেটা কী? - বিস্ফোরণ মশাই। - এক্সপ্লোশন? - আহ। ও'টা ফিগারেটিভলি বলা, তবে এ'টা এক্সপ্লোশনের বাবা। চুরি। তাও খোদ এমএলএর বাড়িতে। - হরেকেষ্টবাবুর বাড়িতে চুরি? - আলমারির লকার ভেঙে। কুড়ি লাখ গন। - বাড়ির আলমারির লকারে কুড়ি লাখ? প্রমোটারির কমিশনে বাড়াবাড়ি রকমের দাঁও মারতে শুরু করেছিলেন ভদ্রলোক। চোর তো সোশ্যাল ওয়ার্ক করে গেছে স্যার। যাক গে, তবে এই চুরির ব্যাপারে আমি কী করব? বটু গোয়েন্দা পাড়ায় পাড়ায় চোর খুঁজতে বেরোবে? - হরকেষ্টবাবুর ধারণা চোর বাড়ির কোনও চাকরই হবে। চুরি হয়েছে আজ ভোর রাত্রে। বাইরে থেকে কেউ দরজা ভেঙে ঢোকেনি, সিঁদ

এ'দিকে আর ও'দিকে

- গুরুদেব।  - কিছু বলবে ভাই? - শুধব।  - নিশ্চয়ই। প্রশ্ন আছে, তাই তো মন সতেজ। যে মনে প্রশ্ন নেই, সে মন তো পান-খেকো দাঁতের গায়ের লালচে ছোপ মাত্র।  - যেয়াজ্ঞে। তাহলে শুধোই? গুরুদেব? - ভয় কীসে? শুধোও। প্রশ্ন সুধা এ বুকে সঞ্চারিত না হলে আমি জ্ঞানের অ্যালুমিনিয়াম বাটি তোমার সামনে উপুড় করে দেব কী করে? - বলছিলাম যে গুরুদেব...আপনার চ্যালাগিরি করে তো কম ঘুরলাম না। হিমালয়ে তপস্যা, অস্ট্রিয়ায় ব্যালাড শোনা, মোজাম্বিকে চ্যারিটি ক্যাম্প, সাউথ পোলে পেঙ্গুইন সেবা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কলকাতা গেলাম না যে।  - দুর্জনে বলে আমি নাকি কলকাতার বড় ব্যবসায়ী বিনোদ দত্তকে ঠকিয়ে টু পাইস কামিয়েছিলাম। যৌবনে। আর তারপর নাকি আমি পুলিশের ভয়ে সন্ন্যাসী সেজে কলকাতা ছেড়েছি। কী সব বিশ্রী গুজব।  - লোক না পোক গুরুদেব। এরা পারলে বিরিয়ানির থালা ফেলে দু'টো লঙ্কা ডলে গসিপ চিবিয়ে খাবে।  তা আপনি কি গুজবের ভয় কলকাতা যান না গুরুদেব?  - ইহলোক পরলোকে পায়চারী করে বেড়াই কি কলকাতার বিনোদ দত্তকে ডরাব বলে ভাই? আর তাছাড়া কলকাতার পুলিশের ওপর মহলের অনেকে আমার ভক্ত। আমি পঞ্জিকা দেখে দিন বাতলে দিলে তবে তারা