Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2020

জন্মদিন আর চাকরীর গল্প

- বায়োডেটাখানা তো মন্দ নয়। - থ্যাঙ্ক ইউ। - ফীডব্যাক নাম্বার ওয়ান। আপনার পশ্চারটা ঠিক নয়৷ ইয়ং ম্যান, ইউ আর স্লাউচিং। এ'রকম সিরিয়াস ইন্টারভিউয়ের সে'টা মোটেও বরদাস্ত করা যায়না।  - ওই। সামান্য গা ম্যাজম্যাজ, তাই আর কী। যাকগে। বলুন। - এই চাকরীর জন্য আমরা একজন চটপটে ক্যান্ডিডেট খুঁজছি। সামান্য ম্যাজম্যাজে গা এলিয়ে দেওয়া শখের প্রাণ গড়ের মাঠ মার্কা মানুষ দিয়ে আমাদের চলবে না। - আপনার চোখ তো থার্মোমিটার নয়। ম্যাজম্যাজটাকে সামান্য বলে কোয়ালিফাই করাটা কি ঠিক হচ্ছে? - এঁড়ে তর্কের টেন্ডেন্সি। ফীডব্যাক নাম্বার ট্যু। - ও'টাকে আমি স্ট্রেন্থ বলেই জানি। বরাবর। - আপনি কোনওদিন বোর্ডরুমে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন?. - আপনি কোনওদিন কফি হাউসে আড্ডা দিয়েছেন? - এ'টা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। - কর্পোরেটে আপনারা আদত উত্তর এড়িয়ে চলার জন্য পাওয়ারপয়েন্টে প্রেজেন্টেশন ব্যাবহার করেন।  ওই একই প্রয়োজনে আমি কবিতা লিখি। দু'একটা লেখায় সুরও দিয়েছি। শুনবেন নাকি?  - তার চেয়ে বরং আপনার প্যাশনের ব্যাপারে শুনি৷ কী করতে ভালো লাগে আপনার? - আপনি কি সত্যিই আমার ভালোলাগাগুলো জানতে চাইছেন? না আমার অধ্যবসায় নিয়

রবিবারের হিসেবকিতেব

সকাল। লুচি বেগুনভাজা মুখে দিয়ে শ্যামল মিত্রের গান,  আর পাশাপাশি কয়েক পাতা শীর্ষেন্দু, অদ্ভুতুড়ে সিরিজ।  জলখাবার শেষে জিলিপি চিবুতে চিবুতে নারায়ণ দেবনাথ। আকাশের সিচুয়েশন যাই থাক, আদত রোদ্দুর জেনারেট করতে হবে মনের মধ্যে। এবং সে রোদ্দুর হতে হবে 'ও মন কখন শুরু কখন যে শেষ' মার্কা সুপার-মিঠে।  *** প্রি-দুপুর। রান্না চলাকালীন স্টিলের বাটিতে দু'পিস মাংস এক পিস আলু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। তখন আবার কানের ইয়ারফোনে মান্নাবাবুর 'ও আমার মন যমুনার' সুর ফ্লো করবে। স্নানের আগে মনটাকে একটু মাটন-মান্না রোম্যান্সে ম্যারিনেট না করলেই নয়। *** দুপুর। খেতে বসে তাড়া নেই। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার হুড়োহুড়ি নেই। আড্ডা আছে, এঁটো হাত শুকিয়ে যাওয়া আছে। নিজের রান্নার অ্যানালিসিস আর অন্যের রান্নার প্রশংসা আছে। আর আছে লাঞ্চ সেরে খাটে ফ্ল্যাট হয়ে হেমন্তবাবুর হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া। প্রো-টিপঃ ব্যাকগ্রাউন্ডে লো ভল্যুমে জীবনপুরের পথিক আর চোখের সামনে ক্যালভিন অ্যান্ড হবসের কমিক্স বই দিব্যি খাপেখাপ মিলে যায়।  ভাতঘুম শব্দটায় তুলসীবাবু রয়েছেন,সিয়েস্টায় রয়েছেন ছবি বিশ্বাস। গান আর কমিক্সের মিশেলে কোনও র

আইডিয়ালিস্ট

- ঘুষ? - অফারটাকে আপনি ঘুষ হিসেবে কেন দেখছেন মিস্টার সান্যাল। আমাদের জন্য আপনার যে'টুকু ইনকনভিনিয়েন্স হবে, এ'টা তার জন্য সামান্য একটা কম্পেনসেশন। - দেখুন মিস্টার তালুকদার। আমি নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন। আর নিজের কাজটাকে ইনকনভিনিয়েন্স বলে আমি মোটেও মনে করিনা। আপনার ফার্মের ফাইলটা আমি দেখেছি৷ ইট উইল বি প্রসেসড ইন ডিউ কোর্স। - ডিউ কোর্সে তো হবেই৷ - অফ কোর্স। তাছাড়া আপনাদের প্রপোজাল আমি নিজে রিভিউ করেছি৷ ইউ হ্যাভ প্রেসেন্টেড আ ভেরি কমপেলিং কেস। বড়সাহেবদের মনে ধরবে নিশ্চয়ই। কাজেই এই বিশেষ কম্পেনসেশনের চিন্তাটা বাদ দিতে পারেন। -  মিস্টার সান্যাল৷ বড়সাহেবরা তো স্রেফ সই করবেন। ডিসিশন মেকিং তো আপনার লেভেলেই..। - বড়সাহেবরা ভেন্ডর সিলেকশনের মত জরুরি প্রপোজালে অন্ধের মত সই করবেন, আপনার এমন ধারণা কিন্তু ভুল। - আমরা ছাপোষা ভেন্ডর। কিন্তু আপনার গুরুত্বটা বুঝি মিস্টার সান্যাল৷ আমাদের প্রপোজালটা যে ইনফিরিয়র কোয়ালিটির নয়, সে'টা আপনি জানেন। আপনি স্পেশ্যালি রেকমেন্ড করে আমাদের ফাইলটা এগিয়ে দিলে সার্ভিসের দিক থেকে আপনাদের ফার্মের যে কোনও ক্ষতি হবে না সে আশ্বাস আমি দিতে পার

পুজো আসছে

- পুজো আসছে বিপিনদা। পুজো আসছে। - পুজোর পাঁচটা দিন বাদ দিলে গোটা বছরই তো বাঙালির "পুজো আসছে পুজো আসছে" করে কেটে যায়। - ধ্যাত। আপনি বড় রুখাসুখা। ওই ফাইলবোঝাই টেবিল ছেড়ে একটু বারান্দায় এসে দেখুন না। আকাশের দিকে তাকালেই মনে হবে এই হল রিয়েল পুজোবার্ষিকী।  - পুজো আসছে৷ করোনা থাকছে। - তা বটে। তবু এমন আকাশ দেখলে..। - এ'বছর জুমে প্যান্ডেল হপ করতে হবে। - না। প্যান্ডেল হপার আমি নই। - তবে কী? রেস্টুরেন্টে ঘণ্টা পাঁচেক লাইন দিয়ে পুজোসস্পেশাল বাসি বিরিয়ানি?  - পুজোয় রেস্টুরেন্টের খপ্পরে পড়িনা। বড়জোর স্টলের রোল। পুজোর আদত হইহইরইরই তো নিজেদের হেঁসেলে। - করোনাই তো, এমন আর কী। পুজোর পাঁচদিনই বরং ভীড় ঠেলে মাছ মাংস মুর্গি কিনুন। গিলুন যতখুশি। কী আর হবে, প্রাণটাই না হয় যাবে। এ বাজারে প্রাণ ধরে রাখাও বড় জ্বালা। - না না। কোভিডিয়ট আমি নই। তাছাড়া জানেনই তো। মাইনেতেও কোপ পড়েছে৷ এ'বেলা ও'বেলা চর্ব্যচোষ্য হয়ত ম্যানেজ হবে না। - কিছুই যখন হবে না, তখন পুজো আসছে পুজো আসছে করে লাফানোর কী আছে? - যদ্দিন মা বেঁচে ছিল, পুজোয় প্রতিবার বাড়ি ফিরতাম জানেন। প্রতিবার। অগস্ট পড়লেই ফেরার টিকিট ক

ননীগোপালের খেল

১। ল্যাম্পপোস্টে সাঁটা পোস্টারটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলেন ভবদুলাল মিত্র। ভরদুপুরে এমন দুম করে শশব্যস্ত ফুটপাথের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ায় বিস্তর ধাক্কাধাক্কি সহ্য করতে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু পোস্টারের ওপর থেকে কিছুতেই চোখ সরাতে পারছিলেন না তিনি। পোস্টারে একজন জাদুকরের মুখের স্কেচ৷ মুখটা গোলগাল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, সরু শৌখিন গোঁফ আর ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি৷ মাথায় একটা প্রকাণ্ড পাগড়ি। ওই সাদামাটা ময়লা পোস্টারটা যেন উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে সেই জাদুকরের আলো আলো হাসিতে।  আশেপাশের একটা মানুষও সে পোস্টারটার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াচ্ছে না। অথচ সে জাদুকরের মায়াময় হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খানিকটা যেন বিহ্বল বোধ করছিলেন ভবদুলালবাবু। সামান্য মাথা ঝিমঝিমও শুরু হয়েছিল৷ হলুদ কাগজের ওপর কালো কালিতে ছাপানো সে পোস্টারটি অতি সাধারণ,  চোখে না পড়ার মতই। ঘোরটা কিছুক্ষণ কাটলে ভবদুলালবাবু ল্যাম্পপোস্টটার কাছে এগিয়ে গেলেন পোস্টারের লেখাটা পড়তে। "জাদুসম্রাট ননীগোপাল হালদারের ইন্দ্রজাল"। আগামী শো; বাইশে অগস্ট, ১৯৯২"। ১৯৯২। ১৯৯২। ১৯৯২।  উনিশশো চুরানব্বই সালের ল্যাম্পপোস্টে এই পোস্টার কীভাবে এলো তা কিছুতেই ঠ

কলকাতা ও পাহাড়

- ফুলু রে। - নভেলের গুরুতর জায়গায় রয়েছি। ডু নট ডিস্টার্ব।  - তাই বলে বন্ধুর হাহাকারটা অনুভব করবিনা? - বোচা, তুই আমার রুমমেট৷ এই মেস ছাড়া আমাদের আর কোনও যোগসূত্র নেই। যে মানুষ গল্পের বই পড়ার কনসেন্ট্রেশনে ব্যাঘাত ঘটায়, সে আর যাই হোক বন্ধু নয়। - ও তোর মনের কথা নয় ফুলু৷ শোন না। - উফ। কী হয়েছে? - কদ্দিন ঘুরতে যাই না রে। - প্রায়ই তো দেখি ঘুরতে বেরোচ্ছিস। ইলিয়ট পার্ক, মিলেনিয়াম পার্ক..। - ধুর ধুর। সে'সব নয়৷ কদ্দিন পাহাড়ে যাইনা। - ঘুরে এলেই পারিস। - ছুটি পাচ্ছি কই? আর যা রেজাল্ট করেছি, ছুটি পেলেও বাবা ঘুরতে যাওয়ার টাকা দেবে ভেবেছিস? ধুস৷ কলকাতায় বসে বসে মনটন এক্কেবারে হেচড়ে গেছে। পাহাড়ের একটু হাওয়া যদি গায়ে লাগাতে পারতাম রে৷ মনমেজাজ চনমনে হয়ে উঠত। - পাহাড়ের হাওয়া গায়ে লাগানোর জন্য পাহাড়ে যাওয়ার দরকারটা কী? - হুম? - তোর মত ট্র‍্যাভেলারের একটাই অসুবিধে৷ ট্রেনে-বাসে ধাক্কাধাক্কি,  ব্যাগ-সুটকেসের ওয়েটলিফটিং আর ট্র‍্যাভেল এজেন্টের ধাতানি  ছাড়া তোরা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটুকু স্পর্শ করতে পারিসনা। - ট্রেনে বাস ব্যাগ সুটকেস ছাড়া পাহাড়ে ঘুরতে যাব? - এক্সপ্লোর করার শর্টকাটগুলো জানলে স্কটসাহেব

সুভাষবাবু ও রাধামোহন

- আ...আপনি এসেছেন?  - কী চাই? - আ..আ..আ..আপনি সত্যিই এসেছেন? - হাতে সময় কম। - নমস্কার স্যার। সরি..স্যালুট স্যার.। থুড়ি..লহ প্রণাম। - এ'সব আবার কী রাধামোহন? - আ..আপনি আমার নামও জানেন?  - নাম না জেনে তোমার বাড়িতে আসব ভেবেছ? - নেতাজী অমর রহে। - প্ল্যানচেটে ডেকে বলছ অমর রহে? তোমার সেন্স অফ হিউমর তো বেশ সরেস। - মাফ করবেন হে মহামানব। হে স্বাধীনতার ইয়ে..মানে কাণ্ডারী..। - এ তো মহাজ্বালায় পড়া গেল৷ বলি ক্লাস সিক্সের এস্যে লেখা কতক্ষণ চালাবে? প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আমায় ডাকতে চেয়েছিলে কেন? - সুভাষবাবু৷ সরি..পরমপূজনীয় নেতাজী..আপনি ফিরেছেন জানলে গোটা বাঙলা..না না..গোটা ভারতবর্ষ আনন্দে উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে উঠবে৷আমার আজ কী সৌভাগ্য... দু'হাজার কুড়ি সালে নেতাজি এসে পৌঁছলেন এই সামান্য অকাল্ট প্র‍্যাক্টিশনারের ড্রয়িংরুমে৷ আপনার সামনে আমি নতজানু স্যার। - আত্মারা কখনও ফেরে না ভাই৷ ওই, মাঝেমধ্যে উঁকি দিয়ে যাই। - আপনি মাঝেমধ্যে উঁকি দিলেই হবে৷ আপনার অনুপ্রেরণায় ভর দিয়ে আমরা সঘন গহন তমসা কাটিয়ে নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যাব। - এই সেরছে। কী কাটাবে?  - ওই যে স্যার। সঘন গহন তমসা। কাটিয়ে দেব। প্রতিটি

কলকাতা কলকাতা মনকেমন

ফট করে কলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরে এসে পড়ার মধ্যে যে প্রকাণ্ড মনখারাপ, তা ম্যানেজ করা সহজ নয়। মাঝেমধ্যেই বুকের মধ্যে হুহু; আহা, কবে যে আবার বাড়ি ফিরব। কলকাতার রাস্তাঘাটের খানাখন্দগুলোর কথা মনে পড়লেও বুকভার হয়ে আসে। কলকাতার বাড়ি থেকে আধমাইল এগোতেই রাস্তার ঠিক মধ্যিখানে সে এক ইয়াব্বড় গর্ত। সে গর্ত প্রতিটি ইলেকশনের আগে ভরাট হয় আর প্রতি বর্ষায় সে ফিনিক্সের মত স্বমহিমায় ফিরে আসে। কলকাতা ছাড়ার পর সে গর্তকেও বড় আপন বলে বোধ হয়; আহা, দিব্যি কেমন মাঝেমধ্যেই সে গর্তে গাড়ি-বাইকের চাকা পড়ে গোটা গা ঝনঝন করে উঠত৷ কলকাতা ছেড়ে এসে মনে হয় সে গা-ঝনঝনই যেন আমার প্রাণায়াম ছিল।  কলকাতায় থাকাকালীন বেহালার ট্র‍্যাফিক জ্যামকে কত কটুকথা বলেছি। অথচ আজ আফশোস হয়৷ সে জ্যাম যে আমায় ডারবান-পিচে দ্রাবিড়ের ধৈর্যের মত মজবুত করেছে সে'টা তখন বুঝিনি। সেই জ্যামে ঠায় বসে থেকে এফএমে রেডিওর কত সহস্র বিজ্ঞাপন যে মুখস্থ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই জ্যামে আর বিজ্ঞাপনে একবার ফিরতে পারলে যেন সামান্য শান্তি পেতাম। তবে। সামান্য যে'টুকু স্বস্তি, তা রয়েছে কলকাতার বন্ধুদের চ্যাট-সান্নিধ্যে। কিন্তু এ বন্ধুরাও অতিখতরনাক৷

বোচার প্রেম

- কী চাই? - কই৷ কিছু না তো। - অমন সাসপিশাস হাসি নিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারী করছিস কেন বোচা? - তা'তে তোর কী? আজেবাজে বইয়েই মাথা গুঁজে থাক৷ দুনিয়ার খবরে তোর কাজটা কী। - স্ট্যাটিস্টিক্স আজেবাজে কিছু নয়। - ওয়েদার দেখেছিস ফুলু? মেঘলা বিকেল, মিষ্টি হাওয়া। চারদিকে বাহারো ফুল বরসাও ব্যাপার আর তুই মেসে বসে ওইসব হাড়জ্বালানো বই পড়ছিস। পাপ হবে যে। - কী বলতে এসেছিস বলে ফেল।  - ফুলু৷ তুই দিনদিন কাঠকাঠ হয়ে পড়ছিস।  - সামনের সেমিস্টারে আগের মত গোল্লা পেলে তোর বাবা তোকে পিটিয়ে তক্তা করবেন৷ মার্ক মাই ওয়ার্ডস। - বাবার কথা ভেবে বড় খারাপ লাগে রে। ভদ্রলোক কোর্ট আর মক্কেল ছাড়া এ জীবনে কিছুই চিনলেন না৷ যদ্দিন বাড়িতে ছিলাম, বাবা প্রায়ই রাতের দিকে আমার কবিতার খাতা বাজেয়াপ্ত করে টপ টু বটম স্পেলচেক গ্রামারচেক করতেন? কবিতার খাতা জুড়ে লাল কালি দিয়ে গোল্লা গোল্লা দাগ। উফ। বিভৎস। সে ভয়েই তো কবিতা লেখা ছাড়লাম। নাহ্। বাবার ভয়ে এই মনোরম মেঘলা বিকেলে বই নিয়ে আটকে থাকলে আমিও তোর মত রুথলেস যন্ত্রে পরিণত হব। তার চেয়ে বাবার চাবকানি ভালো। - কাজের কথাটা বলে ফেল। - কাজের কথা আবার কী ফুলু? আমি কি শুধু মতলবের মানুষ? এম

পতাকা আর চীফগেস্ট

- এই যে। দত্তবাবু। কাল সোয়া সাতটার মধ্যে আসছেন কিন্তু। পৌনে আটটায় বড়সাহেব এসে পৌঁছবেন৷ ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং আটটায়। - ধুস। পনেরোই অগস্টটাও ছাই পড়ল শনিবারে। - নিজের মধ্যে মশাই একটু দেশাত্মবোধক ইয়ে জেনারেট করুন না। - দেখুন গাঙ্গুলিদা, দেশাত্মবোধ নিয়ে অকারণ খোঁটা দেবেন না। মনে রাখবেন, আ ম্যানস হোম ইজ হিস ক্যাসেল। রিয়েল পেট্রিয়ট হিসেবে কাল আমার উচিৎ নিজের বাড়ির ছাতে তেরঙ্গা উত্তলন করা। বুল্টি জনগণমন গাইবে, বুল্টির মা স্পীচ দেবে। অফিসে বড়সাহেবকে চীফগেস্ট করে তেল দেওয়াটা আর‍ যাই হোক পেট্রিয়টিজম নয়।  - স্বাধীনতা দিবস সন্তোষীমার ব্রত উদযাপন নয় যে ঘরের কোণে বসে কাজ সারবেন। দশজনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তেরঙ্গাকে সেলুট না করলে বুকের মধ্যে হুহুটা ফীল করবেন কী করে। - পতাকার প্রতি রেস্পেক্ট তো ভালো কথা। কিন্তু আমাদের মূল দায়িত্ব তো বড়সাহেবের প্রতি নুয়ে পড়া। - ও'টা নুয়ে পড়া নয় দত্তবাবু৷ ও'টা ডিসিপ্লিন। - নেতারা, বড়বাবুরা; সবাই এই স্বপ্নই দেখেন। এলেবেলে আমজনতা বুটলিকিংকে ডিসিপ্লিন হিসেবে চিনবে, সে'টাই তাঁদের কাছে আইডিয়াল স্টেট।  - উফ। আপনি বড্ড ঘ্যাঁতা।  - ব্রুটাল অনেস্টিকেও দণ্ডমুণ্ডের

অরূপ ঘোষালের শহর

- এক্সকিউজ মি। - আপ মুঝে বুলা রহে হ্যায়? - আরে হ্যাঁ রে বাবা। আপনাকেই বুলা রহে হ্যায়। - আরে, আপনিও বাঙালি যে। - নমস্কার। সঞ্জয় ঘোষ।  - নমস্কার। আমি অরূপ ঘোষাল। কিন্তু দিল্লীর রাস্তার এই ভীড়ের মধ্যে আমায় বাঙালি বলে ঠাহর করলেন কী করে বলুন দেখি? আমার চেহারা বা পোশাকে তো আলাদা করে তেমন কিছু..। - না না। চেহারা বা পোশাক নয়। তবে এই যে। এই যে ভাজাভুজিওলার ঠেলায় অমন লোভাতুর উঁকিঝুঁকি মারলেন এবং কয়েক সেকেন্ডের মাথায় উদাস হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তারপর মেঘলা আকাশের দিকে চেয়ে একটা প্রকাণ্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্থাৎ আপনার প্রাণ চপ তেলেভাজার জন্য আনচান করছে৷ কিন্তু এই বেসনে চোবানো পাউরুটি ভাজাকে ক্লাসিকাল তেলেভাজার মর্যাদা দিতে ঠিক মন সরছে না। বিড়বিড়ও করলেন খানিকটা। স্পষ্ট শুনতে পাইনি তবে লিপ-মুভমেন্ট ট্র‍্যাক করে মনে হল একটানা খানিকক্ষণ "ধুরশালা" বললেন। - আপনিই বলুন না। এই ব্রেডপকোড়া দিয়ে কি ছাই বৃষ্টির বিকেলের জিভের সুড়সুড় মেটানো যায়? ব্যাটা পকোড়া-ভাজিয়ে আবার পুদিনার চাটনি মাখিয়ে সার্ভ করছে। টোটাল ডিসাস্টার। - দিল্লী তা'হলে ঘুরতে আসেননি। পাকাপাকি ভাবে এসেছেন। আর সদ্য এসেছেন।

বাঘা তেঁতুল

**১** - কী রে বাবু। দুপুর থেকে অমন গুম মেরে বসে আছিস। মনটন খারাপ বুঝি? - ও কিছুনা। - মাকে "কিছু না" বলে পাশ কাটালে হবে রে? - যাও না মা। আমার অনেক পড়া বাকি আছে। - শিঙাড়া মালপোয়ায় মনখারাপ সারিয়ে দিতে পারি বটে। কিন্তু তুই সেধে পড়তে বসছিস, এ ব্যামোর চিকিৎসা তো আমি জানিনা। **২** - কী রে! মাঠে এলিনা কেন কাল বিকেলে? আজকেই বা এমন ঘরের মধ্যে গুম মেরে বসে আছিস কেন? - তুই যা তপু। - যা বললেই যাওয়া যায় ভাই? চ'।  মান্তুদার বাড়িতে ক্যারম পিটিয়ে আসি। - আমি যাবনা। - জব্বর মনখারাপ দেখছি।  তবে চিন্তা নেই৷ সেরে যাবে।  - যত বাজে কথা..। - এই দ্যাখ। পুজোবার্ষিকী। হাতে চলে এসেছে৷ ভালো করে দ্যাখ। সুনীল, মতি, শীর্ষেন্দু, সঞ্জীব, সমরেশ। পেপারকাকা হাতে গরম দিয়ে গেল ভাই৷ তাই তোর কাছে ছুটে আসা। **৩** - আরে৷ অত ভাবার কী আছে৷ এই ইন্টারভিউতে হল না। পরেরটায় হবে। রিল্যাক্স। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। - ভেঙে পড়িনি বাবা৷ শুধু ওই..।  - মনখারাপ। তাই তো? - না না। ও কিছু নয়..। - কিছু না হলেই ভালো। একটা ঝটিকা পুরীসফরের জন্য তৎকালে টিকিট কেটেছি। শুক্কুরবার রাতের ট্রেনে যাওয়া, সোমবার রাতের ট্রেনে ওয়াপিস। স

ফেরতবাবার দরবারে

- কী চাই। - আজ্ঞে আপনার আশীর্বাদ চাই ফেরতবাবা। আপনার আশীর্বাদ। - ও'সব ফাঁপা আওয়াজ দিয়ে লাভ নেই৷ আশীর্বাদ! ন্যাকাপনা। ধান্দা ছাড়া ফেরতবাবার দরবারে কেউ আসে না।  - না না। ভক্তিটা কিন্তু জেনুইন। - বটে? বেশ৷ তুমি আশীর্বাদ চাইলে৷ আমি মা তারার নাম করে আশীর্বাদ দিলাম৷ এ'বারে তা'হলে কেটে পড়। - অমন করে বলবেন না বাবা। বড় আশা নিয়ে এসেছি৷ হারানো জিনিস খুঁজে পেতে হালিশহর থেকে হরিয়ানার তাবড় বাবুরা ছুটে আসে আপনার কাছে। আমি অবিশ্যি এ পাড়াতেই থাকি। নাম সুকুমার দত্ত। পাতি প্রাইভেট ফার্মের ক্লার্ক বাবা। কিন্তু সাহস করে আপনার কাছে চলেই এলাম। - অঢেল ন্যাকপনা, তার ওপর বিনয়। তুমি তো হীরের টুকরো খদ্দের হে। - খদ্দের বলবেন না ফেরতবাবা৷ খদ্দের বলবেন না। আপনি এত বড় তান্ত্রিক। আমি তো ভক্ত। - তন্ত্রসাধনা করি বটে৷ সেই তন্ত্রের জোরেই লোকের হারানো জিনিসের হদিস পাই। কিন্তু তা বলে আমি আলাভোলা সাধক নই। আদ্যোপান্ত ব্যবসায়ী। আর আবারও বলি৷ খুলি বাগিয়ে, জটা মাথায়, গায়ে ছাই মেখে বসে আছি বলেই পরমসাধক বলে আমার ঠ্যাং জড়িয়ে ধরতে হবে, অমন হাতুড়ে তান্ত্রিক আমি নই। তুমি ফেলবে কড়ি আর আমি আমার তন্ত্রবলে তোমার হা

আদেখলাপনা

* বুকের মধ্যের ধুকপুকটা বড় বিশ্রী ঠেকছিল সৌভিকের।  এমনিতে সমুদ্রের হাওয়ার ঝাপটা মুখে লাগলে ভালোই লাগে ওর, কিন্তু আজ অস্বস্তি হচ্ছিল। এক ধরণের উদ্ভট ভয়। উফ, নিজেকে সত্যিই বদ্ধ পাগল বলে মনে হচ্ছিল। এর'ম উঠল বাই তো কটক যাই-য়ের কোনও মানে হয়? পুরী অবশ্য কটক থেকে তেমন দূরে নয়। কিন্তু তাই বলে ব্যাঙ্গালোর থেকে সড়ক পথে এমন দুম করে ছুটে আসার কোনও মানেই হয়না। * - সমীরণ রে। চল না ভাই। গোয়া যাই। - এই আদেখলামোগুলো না করলেই নয় রে?  - মোটেও আদেখলামো নয়। কত মানুষ গোয়া যাচ্ছে। আর আমরা প্ল্যান করলেই দোষ? - দ্যাখ সৌভিক, দু'টো ডবল এগরোলের অর্ডার ক্যান্সেল করে একটা সিঙ্গল এগরোল চাইতে হল। সেই একটা এগরোল নিয়ে দু'জনের কামড়াকামড়ি করছি কারণ দু'জনের পকেটের সমস্ত খুচরো পয়সা জুড়ে ওই একটা এগরোলই কেনা গেছে। কাজেই বেফালতু গোয়া গোয়া শুনলে গা জ্বলে যায়। - সিড, আকাশ, সমীর। ওরা কেমন দিব্যি ঘুরে এলো রে। আহা। - বটেই তো। দিব্যি ইয়াব্বড় গাড়িতে উঠে ইয়াব্বড়বড় বাতেলা ঝাড়তে ঝাড়তে বাবুরা গোয়া গেল। আর সে সিনেমা দেখে কুপোকাত শ্রীসৌভিক দত্তও স্বপ্ন দেখছেন গোয়া গিয়ে ফুর্তি করার। শোন, ও'সব বাদ দে। ক্লাস

টাক আর কলপ

- এই যে। - উঁ। - আরে ও মশাই। - কী..কী? - চোখটা খুলুন না একবার। আরে ও মশাই। আর কত ঘুমোবেন।  - কে? কে? এই! কে রে ব্যাটা তুই?  -আমি বরং তুমি করেই বলি। আর তোমায় বরংনাম ধরেই ডাকি, কেমন? শোনো বাবা নিধু, গুরুজনদের তুইতোকারি করতে নেই।  - এই বিদঘুটে সাজপোশাক পরে ঘোরাঘুরি করার মানেটা কী? আর আমি তো দোকানের দাওয়ায় বসে ঝিমোচ্ছিলাম। এ'টা আবার কোথায়? ঘুটঘুটে অন্ধকার। জঙ্গল। কে রে ব্যাটা তুই? আমায় গুমখুন করার ধান্দা করছিস নাকি?  সাবধান! জমিদার মশাইয়ের যে বাজারসরকার..ওই যে জীবন মল্লিক। সেই জীবন মল্লিকের প্রতিবেশী নিমাই সর্দারের সঙ্গে আমার পিসেমশাইয়ের খুব দহরম। রাতের মধ্যে যদি আমি গাঁয়ে না ফিরি তা'হলে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটবে। - আরে ধুর রে বাবা। আমি ভালোমানুষের পো৷ কপালফেরে মরে স্বর্গে না গিয়ে ভূত হয়ে ঘুরছি৷ তা বলে আমি গুমখুন করতে যাব কোন দুঃখে? - ভূ..ভূ...ধেৎ। বহুরূপীর আবার বাতেলা কত। - মাইরি ভাই নিধু। আমি এক্কেবারে গোটা একখানা ভূত। - ধেৎ। - গা ছুঁয়ে বলব? - থাক থাক। অত মাখামাখিতে কাজ নেই। এ'বার কাজের কথা বলে ফেলো দেখি। বৌ রাতে লুচি ভাজবে। ভেবেই ভিতরটা আনচান করছে। আমার কিন্তু বাজে গল্

আলাপ

- কম্পলেক্সে নতুন মনে হচ্ছে? - ফাইভ-এ-তে এসেছি। গতকালই। - ওয়েলকাম। আমি সত্যব্রত ধর, ফাইভ-বি।  - ওহ। তা'হলে তো আমার ইমিডিয়েট নেবার। আমি অমিতাভ সেন। তা আসুন না একদিন। দুই বাঙালির আলাপ কি চা আর টা ছাড়া জমে নাকি। - কেন? দিব্যি জমে। - না মানে..। - অমিতাভবাবু। পাশের ফ্ল্যাটে নতুন কেউ এলেই আমি আলাপ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি। কেন জানেন? - মানুষ তো সামাজিক ইয়ে। আলাপের ইচ্ছেটা তো অস্বাভাবিক নয়। যে কোনও বিপদেআপদে বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের আগে তো পাড়াপড়শিরাই ছুটে আসবে।  - এই মিসকনসেপশনটাই বড় ভাবায় আমায় জানেন। সে জন্যই আমি নতুন প্রতিবেশীদের লবিতে পাকড়াও করি।। শুনুন, ও'সব সামাজিক ইয়েটিয়ে পুরোপুরি ব্লাফ। মানুষ অত্যন্ত ধান্দাবাজ। আর প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি গা-মাখামাখি মোটে ভালো কথা নয়। - আমি ঠিক..। -  এই যে চা আর টা খেতেখেতে আলাপ, এ'সব বড় ভাবায় আমায়। - ভাবায়? কেন বলুন তো? - সেই তো আপনার বাড়ির সোফায় বসে চা পকোড়া খেতে খেতে আপনাকেই মনে মনে কঞ্জুস বা বাতেলাবাজ বা অন্যকিছু বলে হ্যাটা করব। আপনিও আমার প্লেটে পকোড়া ঢালতে ঢালতে মনে মনে বলবেন শালা আপদ।  - ও মা। তা কেন? - ঠিক তাই৷ চা পকো

রবিবাবুর সমস্যা

- এই যে দাদা, দেশলাই আছে? - নাহ্। - আপনার বুঝি সে বদঅভ্যাস নেই? - বিড়ির? নাহ্। নেই। - একমিনিট৷ আপনার মুখটা কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে..কোথায় দেখেছি বলুন তো? - বইয়ে। বায়োস্কোপে। দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারে।  - আরিব্বাস। রবিবাবু যে! - ছদ্মবেশেও এসেও যে ধরা পড়ে যাব সে'টা ভাবিনি। - ছদ্মবেশ ধারণ করতে গিয়ে সাধারণত সবাই নকল দাড়ি চাপায়৷ আর আপনাকে অরিজিনাল দাড়ি কামাতে হল। সত্যিই, আপনার ইকুইটির কতটা জুড়ে যে দাড়ি..। - বললাম তো। দেশলাই নেই। তা সত্ত্বেও আপনি বকবক চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন বলুন তো? - আসল আগুন তো আপনিই মশাই, দেশলাই তো সে তুলনায় ভিজে জনসন বাডস। - যতসব থার্ড ক্লাস উপমা। - তা বেশ তো। নোবেল তো আর আমি পাইনি৷ আপনিই দু'একটা হাইক্লাস জিনিস ছাড়ুন না। - সে উপায় কী আর আছে ভাই৷ আমি যার স্বপ্নে আছি, তার পাতি ভাঙাচোরা ভাষার বাইরে গিয়ে তো কথা বলতে পারব না৷ ইন্টেলেকচুয়ালিও তার ঘোলাটে ব্রেনের লেভেলেই থাকতে হবে। কাজেই আমায় ঘাঁটানো বন্ধ করুন। - ও, আই সী। আপনি তো আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না। - রাবিশ। সুকুমারের ব্যাটা কী এক ফালতু থিওরি সবার মাথায় ঢুকিয়ে গেল। তবে হ্যাঁ, এখন মনটন ভালো নেই। তাই গপ্প

ভজা মাস্তানের মনকেমন

- ভজাদা, ও ভজাদা। চুক্কুস করে এক চুমুক হোক না। - নাহ্। আজ ও'সব গিলতে মন চাইছে না রে মন্টু। - আজ এত বড় একটা কাজ হাসিল হল৷ আর তুমি মাইরি নিরামিষ থাকবে? - কাজ হাসিল? তাই বটে। - ভজাদা, কেসটা কী বলবে? - নাহ্। তোদের মোচ্ছব চলুক। আমি বরং ছাতে যাই। - ও, ভজাদা। কী হলো গো। বলো না। ভজাদা গো। বলো না,  বলো। - কাজটা ভালো হলো রে মন্টে? - ওই, ক্লাবঘর তৈরির ব্যাপারটা? - ওই কাজটাই তো আমরা হাসিল করলাম। তার জন্যেই তো কানু দত্ত আমাদের জন্য ঢালাও মদ-মাংসের ব্যবস্থা করে দিল। তাই না? কিন্তু কাজটা কি আদৌ ভালো হল? - আমরা লোচ্চা লোফার মাস্তান মানুষ৷ কানুদার মত হাড়বজ্জাত নেতাদের হয়ে একে মারি তাকে ঠুকি, তোলা আদায় করি৷ আমাদের কি কাজের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবলে চলে ভজাদা? তুমিই তো বলতে, আমাদের কাজ দিনে  ক্যালানো আর রাতে কেলিয়ে পড়া, সাতপাঁচ ভাবার দায়িত্ব আমাদের নয়। - হ্যাঁ। আমরা গুণ্ডা, নচ্ছার। আমাদের না হয় সাতপাঁচ ভাবতে নেই। ভদ্রলোকের ভদ্রলোকামি দেখে আমরা খ্যাঁক করে হাসবো, সে'টাই হওয়া উচিৎ৷ কিন্তু আজ ব্যাপারটা একটু গুলিয়ে গেল রে মন্টু। - গুলিয়ে গেল? কী করে ভজাদা? - টোটাল ঘেঁটে ঘ। হারুর ওই একচিলতে ভাঙা

দত্তবাবুর রিপোর্ট

- এ'টা কী দত্ত? - কেন স্যার?এ'বারের মান্থএন্ড রিপোর্ট।  - মান্থএন্ড রিপোর্ট দিয়ে আমার লাইফ এন্ড করার তাল করছ ভাই দত্ত? - ক..কেন স্যার? - রিপোর্টটা সাবমিট করার আগে নিজে পড়ে দেখেছ? - অবশ্যই। তিন তিনবার। - পড়ে কী মনে হল?  - নিজের বানানো রিপোর্ট সম্বন্ধে নিজে আর কী বলব বলুন স্যার। ওই, হিউমিলিটিতে আটকে যাই। - তবু, কষ্টেসৃষ্টে বিনয় চেপে কিছু বলো। - তা, এক কথায় চমৎকার। ক্যালিব্রি ফন্টটা আমার খুব প্রিয়, আর এই রিপোর্টে মানিয়েওছে ভালো৷ এরপর লাইন স্পেসিং বাড়িয়ে দেওয়ায় হলো কী; রিপোর্টটা সুদিং টু দ্যি আইজ হওয়ার পাশাপাশি আড়াই পাতার বদলে গিয়ে দাঁড়ালো সাড়ে পাঁচ পাতায়। অল্প কথা লম্বা প্রিন্ট আউটে প্রকাশ করতে পারায় যে কী অপরিসীম তৃপ্তি স্যার। - বিনয় সত্যিই তোমায় বেঁধে রাখতে পারেনি বিনয়। - পুরো সাড়ে পাঁচ পাতাই জাস্টিফাইড। বুলেটে সাজানো। জারগনগুলো বোল্ডে দেওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামারলিতে ফেলে ভাষাটুকু হাইক্লাস লেভেলে ঝালিয়ে নিয়েছি স্যার। আহা, এ রিপোর্ট পড়েও আরাম। - রিপোর্টে ক্যালিব্রি, স্পেসিং, গ্রামারলি, বুলেট সবই তো আছে হে দত্ত৷ কিন্তু জুলাই মাসের হিসেবের বদলে জুনের ফিরিস্তি দিয়েছ

আসলি ওস্তাদ

- মুক্তিপণের টাকাটা পাওয়া গেল না মিস্টার শাসমল। - বলেছিলাম তো নাটুবাবু। ব্যবসার যা অবস্থা, ব্যাঙ্কে অত টাকা থাকারও কথা নয়। - কালোটাকাও কিছু নেই বলছেন? - সে'খানেই কাঁচা কাজ করে ফেলেছেন আপনি। আমার পরিবারের কাউকে সরিয়ে ফেলে আমার কাছে র‍্যানসম ডিমান্ড করলে আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করলেও করতে পারতাম। আমার কালো টাকার হদিস তো অন্য কারুর জানার কথা নয়।  - কাজটা যে কাঁচা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তার মাশুল আপনাকেই গুনতে হবে। - খুন করে লাশ পুঁতে ফেলবেন? ইয়ে, ইন দ্যাট কেস আই উড প্রেফার সায়নাইড ওভার বুলেট। তবে বন্দুক আপনার, মুলুক আপনার। তাই ডিসিশনও আপনার। আমি শুধুই রিকুয়েস্ট করতে পারি। - খুন না করে উপায় কী বলুন।  যে লাইনে যা দস্তুর৷ মুক্তিপণ না পেয়েও যদি আপনাকে জ্যান্ত ফিরিয়ে দিই, নাটুগুণ্ডার ইজ্জৎ থাকবে ভেবেছেন? আর কোনও ব্যবসায়ী ভয়টয় পাবে? দরদাম করে মুক্তিপণ কমানোরও উপায় নেই, আমার ব্র‍্যান্ড ইকুইটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কী আর বলব মিস্টার শাসমল, কিডন্যাপিংয়ের জগতটায় আজকাল বড্ড কাটথ্রোট কম্পিটিশন।  - কাটথ্রোট? হেহ্। ভারী চমৎকার বললেন কিন্তু। - তবে আপনার জন্য সায়নাইডের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

প্ল্যানপ্ল্যানানি

- গত পুজোয় আমরা হিমাচল যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম৷ তাই না বউ? - তাই তো। ট্রেনে দিল্লী। দিল্লী থেকে বাসে চেপে শিমলা। - আর তারপর একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দু'হপ্তার ভ্রমণ। শিমলা, মানালি, রোটাং, কাজা, চিতকুল। আহা। - তোমার ফ্যাক্টরির হইহইরইরই নেই৷ আমার স্কুলের গোলমাল নেই৷ অ্যাই, ওয়েলিংটন থেকে দু'টো জ্যাকেট এনেছিলে তুমি, মনে আছে? কত ভাবলাম হিমাচলের কনকনে শীতে ওই জ্যাকেট দু'টো কাজে লাগবে৷  - সে জ্যাকেট-জোড়ার কথা মনে থাকবে না আবার? বেশ ভালো দরে বাগিয়েছিলাম কিন্তু। আর টপ কোয়ালিটি। - স্পিতি নদীর ধারে বসে ডিমসেদ্ধ আর ম্যাগি খাবো ভেবেছিলাম। তাই না গো বর? - আর কাজা নামের ওই গ্রামটায় দিন-তিনেক গা এলিয়ে কাটিয়ে দেওয়া? সকালে হাঁটাহাঁটি? দুপুরে আমার গান শোনা আর তোমার বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকা? - আর সন্ধ্যেবেলা জমিয়ে গল্প আর তাস। তাই না গো? - টাকাপয়সার সামান্য ইয়ের জন্য হিমাচল যাওয়া হল না বটে। কিন্তু যাই বলো, অমন জব্বর প্ল্যান ছকেও আরাম। - বটেই তো৷ কেন, তার আগের পুজোয় সেই যে আন্দামান যাব ভাবলাম? সে'টা মনে নেই? - মনে নেই আবার। সে তো গ্র‍্যান্ড প্ল্যান ছিল। তাই না গো বউ? প্লেনে পো

সুবিনয় দাসগুপ্তর বন্ধু

- অতনু গাঙ্গুলি। রাইট? - হ্যাঁ। - বায়োডেটা তো বেশ ইম্প্রেসিভ। - থ্যাঙ্ক ইউ। - টেল মি সামথিং আবাউট ইওরসেল্ফ। - মিস্টার দাসগুপ্ত, আমি ঠিক চাকরীর জন্য আসিনি। - এক্সকিউজ মি? - মাফ করবেন। আপনার সঙ্গে একটা জরুরী দরকার ছিল। কিন্তু কিছুতেই আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছিলাম না। আর আপনার ওই পেল্লায় বাড়িতে ঢোকার কথা তো ভাবতেই পারিনা। তাই বাধ্য হয়ে চাকরীর এই দরখাস্তটা করে বসলাম। ডাকও চলে এলো। এই রোলের জন্য ক্যান্ডিডেটদের যে আপনি নিজে বাছাই করেন, সে খবরটা আমি পেয়েছিলাম।  - যে কোনও টম-ডিক-হ্যারির সঙ্গে দেখা করার জন্য অ্যালকেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের এম-ডি বসে নেই। - আমি সত্যিই দুঃখিত কিন্তু..। - লুক হিয়ার গাঙ্গুলি, আমার সময়ের দাম আছে। এই অসভ্যতাটা না করলেই পারতে। - ব্যাপারটা সত্যিই জরুরী..। প্লীজ। - ইউ হ্যাভ ট্যু মিনিটস। - আমার বাবা অমল গাঙ্গুলি। লোকনাথপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে আপনার সহপাঠী ছিলেন। - অমল..অমল..। - আপনার হয়ত মনে নেই, তাই না? - না নেই। আর শুনে রাখো,  যদি ভাবো পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আমার থেকে কোনও ফেভার আদায় করবে, তা'হলে সে'গুড়ে বালি। এ'সব ধান্দাবাজি আমার সঙ্গে চলবে না।

আড্ডার আমরা

১। গসিপের তুলনায় রসগোল্লা হল খটখটে বাটখারা মত। ২। সাহিত্য, সিনেমা, খেলা, সঙ্গীত; এ'সব নিয়ে ভিডিওকলে আড্ডা দেবে প্যারিসের নিখিলেশ আর পাগলাগারদের রমা রায়। আগন্তুক সিনেমার প্রডিগাল মামার 'ভালো আড্ডা' বিষয়ক ওপিনিওনকে আমি ফেসবুক-স্যেলুট জানাতেই পারি। কিন্তু লজিক বহির্ভূত খিস্তি ছাড়া আড্ডায় খুশির তুফান ওঠে না। উঠতে পারেনা। ৩। টেনিদা লেভেলের যুক্তিনিষ্ঠা নিয়ে শার্লক-মেজাজে ধারালো হিসেব কষব। ফড়িং-লেভেলের দম নিয়ে কমল মিত্তিরের মত চেবানো-সারকাজম ছুঁড়ব। ঘ্যাম তা'তেই। ৪। এইত্তো সে'দিন৷ মিনিবাসে মেজমামার পকেটমার হল। এর থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারব; এক, মেজ মাত্রই অসতর্ক। মেজদা, মেজপিসি, মেজকা; প্রত্যেকে আদতে কেয়ারলেস ক্যালানে। দুই, মিনিবাসে যে কারুর মামা উঠলেই মানিব্যাগ গায়েব হতেই হবে। এ নিয়ে মিনিমাম আড়াই দিন চিৎকার চ্যাঁচামেচি করব। কেউ বেশি আপত্তি করলে এপিজে আবদুল কালামের 'মিনিবাসে-ওঠা-মামাদের মানিব্যাগ খোয়া যাবেই' মার্কা কোটেশন ছুঁড়ে মারব। ৫। নিজের মনের মধ্যে যে কুচুটেপনাগুলো আছে, মাঝেমধ্যেই সেগুলোর মাথায় হাত বোলাব। দুধভাত মেখে তাদের খাওয়াব৷ বাবুসোনা বলে আদর

হরনাথের কাণ্ড

- উফ৷ হাড় জ্বালিয়ে খেলে দেখছি হরনাথ। - রাগ করলেন কত্তা? - রাগ করব না? মাসে দশবার তোমার আপিসে এসে হাজিরা দিতে হবে? ওঝা হয়ে কি মাথা কিনে ফেলেছ নাকি? - আজ্ঞে। চাইলেই বা আপনার মাথা কিনতে পারছি কোথায় বলুন। - অ। আমি স্কন্ধকাটা বলে এ'বার আমায় বডিশেম করবে? - কত্তা।  একটু বসুন না৷ ওই যে, ঘরের কোণে টাটকা আঁশ জমিয়ে রেখেছি। আতিথিয়েতায় কোনও খামতি পাবেন না। এই  আমি কথা দিলাম। - রুই না কাতলা? - কত্তার যে কাতলা পছন্দ, তা কি আর জানিনা? - চালানি না লোকাল মাছের আঁশ? - আজ্ঞে, বাজারে কিপটে বলে আমার একটা বদনাম আছে বটে। তবে আপনার মত হাইক্লাস আত্মাকে ডাকার আগে ও'সব টুপাইস নিয়ে ভাবিনা।  কাছারিপাড়ার পুকুর থেকে তোলা, মাইরি কত্তা।  - উম। গন্ধটায় টান আছে বটে। - কত্তা। একটা জরুরী কথা বলার ছিল। - তুমি যে পয়লা নম্বরের ধান্দাবাজ তা আমি জানি। বলেই ফেলো।   - বলছিলাম যে, গিন্নীমার অবস্থা তেমন সুবিধের দেখছিনা।  - সে এখনও তোমার কাছে আসে? আমি পইপই করে বারণ করা সত্ত্বেও?  - আজ্ঞে, অমন মাথাগরম করবেন না প্লীজ। - মাথাই নেই ছাই তায় মাথাগরম। ফের যদি স্কন্ধকাটাকে মাথার খোঁটা দিয়েছ হরনাথ...। - চটবেন না কত্তা। চট