Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2016

অস্ত গেলেন রজনী

উত্তমবাবু বিড়বিড় করে চলছিলেন। একটানা। "রজনী নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই উত্তম যিনি চলেন তফাতে"। ডিনারে ইলিশের পেটি রিফিউজ করে আর এক রাউন্ড কাঁচকলার ঝোল চাইলেন তিনি। ** - কী হয়েছে বলো তো উত্তমবাবুর? কাজে মন নেই। সে'দিন অ্যাকশন বলতেই দেখি চমকে উঠলেন। কথাটা প্রথম শুনছেন যেন। - জনশ্রুতি,  ভদ্রলোক ভূত দেখেছেন। - আহ। গুজব! - হবে হয়তো। তবে মরা হাতি আর ছিটগ্রস্ত উত্তম...। - লাখ টাকা? ** উত্তমবাবু লিপস্টিক আর বাইকের যোগসাজশ নিয়ে সুতীব্র ভাবনাচিন্তা করছিলেন। বেআক্কেলে লোকটা মাঝেমাঝেই "অ্যাকশন" বলে চিন্তার সুতো ছিঁড়ে দিচ্ছিল। মহা আপদ। ** - কুছু কোরেন। কুছু কোরেন। পিলিজ। - এতো হাইপার হচ্ছেন কেন বলুন তো? - হাইপার হোবে না? গজব কা মুসিবত। উর উপরে আমার থার্টি ল্যাখস রাইড কোরছে। থার্টি। অউর সিরিফ আমার পরেশানি নহি। বাজার মে ক্রোর ইনভেস্টেড আছে। - হুঁ। ব্যাপারটা এতটাই সিরিয়াস? - ভেরি সিরিয়াস। কল হামি স্কচ অফার করলেম, উ বললে চাখনা মে রোস্টেড কচু কঁহা? - রোস্টেড কচু? - জি হাঁ। - ব্যাপারটা সিরিয়াস যা বুঝছি। - বহুত। সিরিয়াস। কন্সট্যান্ট বড়বড়; উত্তম রজনী, রজনী

মিরাকিউরল

প্রবল ঝাঁকুনিতে দুলালবাবুর ঘুমটা গেলো চটকে। দিব্বি শুয়েছিলেন পাহাড়ের ডগায়, মিহি হাওয়ায় গায়ে কাঁথা টেনে পরম ভালোবাসা মাখানো ঘুম। ঘুমটা ভালো করে ভাঙতে টের পেলেন গড়গড়িয়ে নেমে আসছেন পাহাড় বেয়ে। মহা মুশকিল। শেষে থামলেন গিয়ে এক জোড়া লোমশ পায়ের সামনে এসে। "স্যার, রিয়েলি সরি! হনু এমন বিটকেল কাজ করবে সে'টা ভাবতে পারিনি। রিয়েলি ইনকনসিডারেট অফ হিম। কাঁচা ঘুম ভাঙলো বুঝি দুলালবাবু?" "সে তো ভাঙলই। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক..."। "আমি জাম্বু। জাম্বুবান "। "অ। তা আমার এখানে কী মনে করে নিয়ে আসা হলো?"। "লক্ষণবাবু রীতিমত অসুস্থ। শুনেছি আপনার কাছে মোক্ষম দাওয়াই রয়েছে। ওই মিরাকিউরল না কী নাম যেন?"। "আরে ও নাম তো তিলু দিয়েছে। অবিশ্যি সে রাইট আমিই ওকে দিয়েছি। ভিভিএস বাবু অসুস্থ বুঝি?" "ভিভিএস? না না। এ মিডিওকার লক্ষণ! রামের ব্রাদার"। "অসুস্থ?"। "ক্রিটিকাল, তাই তো আপনার সে সঞ্জীবনীর খোঁজ করছিলাম"। "এক ডিবে আছে বটে, ওতেই হয়ে যাবে"। "অরিজিনাল তো?"। "আমার দুনিয়াটাই ফ্লিপকার্ট-সম জাম্বুবা

দিবাকর ঘোষের প্ল্যান

- আপনিই...? - নীলু সেন। নমস্কার। - নমস্কার। আমি দিবাকর ঘোষ। - শ্যামনগরের বামুনপাড়ায় বাস। জগদ্দলের ডালমিয়া মিলসে ক্লার্ক। - এত কিছু তো আমি আপনাকে জানাইনি। - এ লাইনে ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করার আগেই আমাদের সব খোঁজ খবর নিয়ে নিতে হয় দিবাকরবাবু। খৈনি চলে? - নাহ। - ওহ। ভদ্দরলোক তো। এবার কাজের কথা বলুন...। - ইয়ে মানে...কাজটা..আসলে...। - অত আমতাআমতা করছেন কেন? এত রাত্রে নদীর ধারে কে কান পাতবে? টাইম নেই। অ্যাসাইনমেন্ট কম আছে হাতে? ক্যুইক। মার্ডার না সিরিয়াস প্যাঁদানি?  - মার্ডার নীলুবাবু। - চল্লিশ। - হাজার? - লাখা বললে পারবেন? চল্লিশটা বেস প্রাইস। পুলিশ হলে রেট ডবল। পলিটিকাল নেতা হলে আড়াই লাখ। - না না। নেতা বা পুলিশ নয়। সাদামাঠা মানুষ। - ভাই? বাড়ির শেয়ার চাইছে? - নাহ। - তবে? - মিনু দাস। - মেয়েছেলে? - হ্যাঁ মানে...। - পোষা মেয়েমানুষ? - না না। - তবে কে? অবশ্য বলতে না চাইলে ঠিক আছে। প্রাইভেসি রেস্পেক্ট না করে এ লাইনে থাকা যায় না। - এই খামে ছবি আর ঠিকানা আছে। - থ্যাঙ্কস। ইয়ে, বিশ অ্যাডভান্স। - কাল দিলে চলবে? - কাল রাত সাড়ে দশটা, এখানেই। - আচ্ছা। বেশ। *** - বাবা, তুমি এত

ভ্যানিশচন্দ্র

- দর্শকদের বলুন আপনার নাম...। - আমি...আমি...। - আমার দিকে তাকিয়ে নয়। দর্শকবন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলুন। - আমি শশধর মাইতি। বৈদ্যবাটিতে বাড়ি। - বন্ধুরা, বৈদ্যবাটির শশধর মাইতির জন্য এক রাউন্ড জোর হাততালি হয়ে যাক। শশধরবাবু, এই বাক্সতে আমি আপনাকে ঢুকিয়ে দেব। - এইটায়? - আজ্ঞে। এইটায়। আর তারপর...। - ভ্যানিশ? - ঠিক ধরেছেন। ভ্যানিশ করে দেব আপনাকে। আপনার ভয় করছে? - একটু কেমন কেমন লাগছে। এই প্রথম ভ্যানিশ হওয়া তো। - আসুন এবার বাক্সের ভিতরে। - যাই? - আসুন....বন্ধুরা...এই দেখুন...বৈদ্যবাটির শশধর মাইতি এবারে আমার জাদু বাক্সে প্রবেশ করলেন। কী তাই তো? ** - কই। আসুন। - আ...আপনি....। - হ্যাঁ। আমি। - কিন্তু জাদুকর সাহেব, আপনি তো বাক্সের বাইরে ছিলেন। আমায় বাক্সের ভিতরে পাঠালেন ভ্যানিশ করবেন বলে...। - ও'টা আমি না। আমার ভ্যানিশ। - আপনার ভ্যানিশ? - আজ্ঞে। - মানে কী? - মানে বাইরেরটা অরিজিনাল না। ভ্যানিশ করে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি। ও ম্যাজিক ফ্যাজিক দেখিয়ে বেড়ায়। আমি এই বাক্সে থাকি। ইন অরিজিনাল। দিব্বি। চা খাবেন? - চা আছে? - ম্যাজিক বাক্স তো। আমি আর আপনি ছাড়া পুরোটাই ম্যাজিক। - বুঝুন কাণ্

দীপু, দাদু ও নজরুল

শহরে সোঁদা গন্ধ বইয়ের মলাটের মাঝে থাকে। এখানে ছাতের সিমেন্ট-মেঝের শ্যাওলায় বৃষ্টি মিশে যে সুবাস গুঁড়ো হয়ে বাতাসে ওড়ে; তাকে চিনেতে হয়, জাপটে ধরতে হয়। বৃষ্টিভেজা রাতের গামছায় গা মুছে নেমে আসা ভোরের ছাদে; দীপুকুমার উঠতেন দাদুর হাত ধরে।  ছাদের উত্তর কোণে  খান চারেক টবে নয়নতারার ভিড়; তাদের পাপড়িতে টুপটুপে জল। ফ্যাকাসে খয়েরী আকাশ টলটল করতো। দাদুর ধবধবে ফতুয়ার ওপর বাটিক ছাপার পাতলা চাদর জড়ানো, ধুতি লুঙ্গির মত করে পরা। দাদুর চোখে নরম হাসি; চিরকালের। মানুষটা বকতে শেখেননি, টেবিল চাপড়াতে শেখেননি। নয়নতারাদের গালে এমনভাবে হাত বুলিয়ে দিতেন; তাদেরও আরাম হত বুঝি। তখনও দীপুবাবু হাফ প্যান্টে, তখনও দীপুবাবুর হাত দাদুর হাতে।  ভোর ঘাসের মত জড়িয়ে ধরতো তাদের দু'জনকে; ভালোবাসা ঝিরঝির করতো ভোরের বৃষ্টিমাখা মিহি হাওয়ার তালে তালে। দাদু বলতেন এ সময়টা ভৈরবীর, ছাতের পাঁচিলে ঠুকতেন দাদ্‌রা।  "দাদুভাই, একদিন যখন অনেক বড় হবে তখন দেখবে; নজরুল হিসেবের বাইরে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। এই ধর চায়ের কাপের পাশে বা ভাঁজ করে রাখা গল্পের বইয়ের শিয়রে। সেদিন আর অঙ্ক কষে তাকে পাশে সরিয়ে রাখতে পারবে না। সে'

ডেট

- অপ্টিমিজম একটা অসুখ। - ব্যারাম তোমার মাথায় শুভ্র।  উফ। - কী এমন ভুল বলেছি? -  অপ্টিমিজম অসুখ? আশাবাদী হওয়া অসুস্থতার লক্ষণ? অপরাধ? - অপরাধ আমি বলিনি মিতা। ডেলিরিয়াস হওয়াটা অপরাধ নয়। - শুভ্র। প্লিজ। গো। - তোমার ডেট এখনও এসে পৌঁছায়নি।  রিল্যাক্স। আর পার্ক স্ট্রিটে যে জ্যাম দেখলাম ওর আসতে মিনিমাম আরও আধ ঘণ্টা। - অনিকেত তোমায় দেখলে তোমার চোয়াল ফাটিয়ে দেবে। - এ জন্যেই আমি অবাক হয়ে যাই। তুমি মিলটন ভক্ত। আর তুমি প্রেম করছ এমন একজনের সাথে যার স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেশন অফ প্রটেস্ট হচ্ছে চোয়াল ফাটানো ঘুষি। তবে ইন আ ওয়ে ইউ কনফর্ম টু মাই থিওরি। - প্রথমত। আমার ফিয়ন্সের ব্যাপারে ননসেন্স শুনতে আমি রাজী নই। দ্বিতীয়ত, কোন থিওরি? - যে লাইফ হ্যাস নাথিং পসিটিভ টু অফার। জীবন মানেই অন্ধকারে ড্রেনের পাশে বসে মিইয়ে যাওয়া মুড়ি পচা রসগোল্লার রসে মেখে খাওয়া। - শুভ্র। শাট আপ। ইউ আর ডিসগাস্টিং। - আমি ডিসগাস্টিং? আমি? তোমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো সত্যিগুলো বলি বলে ডিসগাস্টিং? - তুমি উঠবে না আমি ওয়েটারকে ডেকে কমপ্লেন করব? - ওয়েটারকে ডাকতেই হলে আমার জন্য একটা পেগ বলে দাও। ওয়ান ফর দ্য রোড। - ইউ আর টু মা

বৃষ্টির তিন

প্রেম হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। মন্মথ সিগারেত ছুঁড়ে ফেলে ছাত থেকে হুড়মুড় করে নামতে গেলে। ভিজলে মুশকিল, আগামীকাল এগজ্যামিনেশন। ফিজিক্স। নয়নতারা চাইলে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে চাইলে। আগামীকাল ছেলের বাড়ি থেকে আসছে তাকে দেখতে। যদি তারা পছন্দ করে ফেলে? শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি ফের বৃষ্টি ভিজতে না দেয়? সিঁড়ির বাঁকে একটা জবরদস্ত ধাক্কার প্রোগ্র‍্যাম করা ছিল। দু'টো ইন্ডিপেন্ডেন্ট কার্ভ মিলে মিশে যাবে। কিন্তু খামখেয়াল বড় গোলমেলে চিজ। ঈশ্বর দেখলেন চপের দোকানটা আজ বন্ধ। উঠে গিয়ে বেসিনের আলগা ভাবে লাগানো কলের মাথা কষে ঘুরিয়ে বন্ধ করলেন। দড়াম বৃষ্টি শুরু না হতেই থেমে যাওয়ায় মন্মথকে দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে হলো। ছাতের দরজার মুখ থেকে ফেরত এলে মনমরা নয়নতারা। কাল দু'জনের এগজ্যামিনেশন। মন্মথ আবার পাশ করতে বদ্ধপরিকর। যুদ্ধ সে এক ধুন্ধুমার বৃষ্টির রাত। স্ট্রিট ল্যাম্পের নিভু নিভু হলুদ গুলে যাচ্ছিল সরু গলির অন্ধকারে। বাতাসে অল্প জুঁই আর রামের ভাসা ভাসা সুবাস। সামান্য অ্যাসবেস্টসের চালার আশ্রয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ মহেন্দ্রলাল। আধ ঘণ্টার ওপর হয়ে গেল; বৃষ্টি ধরার নাম নেই। "দত্তবাবু"! ডাক

রজনীর অফিস দুপুর

- দেশলাই আছে? - আসুন। - থ্যাঙ্কস। - অফিসে নতুন মনে হচ্ছে? ক্যান্টিনেও দেখিনি আগে। স্টোর্সে হরেনবাবুর বদলে এসেছেন? - অফিস? আমায় ধরে রাখবে তেমন অফিস কোথায়? - মানে? - মানে...শুনেছিলাম আপনাদের ক্যান্টিনের বাটা মাছের ঝোলটা বেশ চমৎকার। তাই দিয়ে চাট্টি ভাত খেয়ে গেলাম। আপনাদের ল্যাবের সমাদ্দার আমার চেনা। ওর থ্রুতেই এলাম। - সোমবারের ব্যস্ততার বাজারে অন্য অফিসের ক্যান্টিনে এলেন বাটার ঝোল খেতে? - সোমবারকে ডরালে আমার নাম রজনীকান্ত হত না মশাই। সোমবারের গলায় বকলস পরিয়ে ঘুরি আমি। - বটে? - অফকোর্স। সকালটা কেটেছে লাইব্রেরিতে। এখন লাঞ্চ হয়ে গেছে। এবার সিগারেট ফুরোলেই সোজা অটো ধরে বাড়ি। সোমবারের দুপুরে আবার আমার ভাতঘুম জমে ভালো। আমার রিল্যাক্সেশন, আর এই আপনাদের ঘানি টানা। মনডে ব্লুজ। - তা বটে। বাঙালি ক্লার্ক হয়ে জন্মেছি যখন, সোমে হদ্দ না হয়ে উপায় কী? - করেক্ট। - এই দেখুন না। এগারোটা নাগাদ অফিসে ঢুকতে হলো আজ। - এগারোটা? - ফার্স্ট ডে অফ দ্য উইক। দেরী করার উপায় আছে? এসে সবে আজকের  আনন্দবাজার,  আজকাল আর বর্তমানটা একটু উলটে পালটে দেখছি...এই ধরুন চল্লিশ মিনিটের বেশি হয়নি। অমনি গুপ্ত এসে ইলেকশনের

ঘট

টাকা জমানোর সেই জমকালো ঘটখানা বড় প্রিয় তাঁর। হাটবাজার থেকে কেনা দুপাঁচ টাকার সস্তা মাটির ঘট নয়, এ ঘট রীতিমত সোনা দিয়ে বাঁধানো। গায়ে নিঁখুত কাজ। হীরে, চুনি,  পান্না; কত কী বসানো। সর্বক্ষণ ঝলমল করছে। তিনি মাঝেমাঝেই নিজের লুঙ্গি টেনে পালিশ করে নেন ঘটখানা। ঘটের ঝিলিক এসে পরে তাঁর হাসিতে। শুধু দুঃখ একটাই; টাকা জমানো আর বড় একটা হয়ে ওঠে না। শয়ে শয়ে বড় নোট ঘটে গুঁজে রোয়াব দেখানোর দিন গিয়েছে। আজকাল কখনও কোনদিন নসীব হলে ঘটে পড়ে আট আনা। গোটা টাকার নোট বা কয়েন প্রায় পড়েই না, পড়লেও মাসে একটা কী দু'টো। ঘটের ভিতরটা খাঁখাঁ করে। অল্প কিছু টাকার মৃদু ছনছনটুকুই আয়েশ করে শুনে নেন তিনি। সে আয়েসেই মাঝেমধ্যে ঘটের গায়ে নিজের মেজাজি হাত বুলিয়ে নেন আলিমুদ্দিনবাবু।

সন্ধ্যেবেলার

বিকেলের শেষ নরম রোদের কণাটা যখন নরম পায়ে দিনের চৌকাঠ পেরিয়ে গায়েব হয়ে যায়, মাধবীলতার উঠোন নিকোনো ঠিক তখনই শেষ হয়। প্রতিদিন। সদ্য নেমে আসা অন্ধকারে গা ভাসিয়ে মাধবীলতা বাড়ির পিছনের পুকুরে গিয়ে গা ধুয়ে আসে। এসে নতুন কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাধামাধবের সামনে প্রদীপ আর ধুনো জ্বেলে দুদণ্ড বসা তার। নরম মিহি সুরে কোনওদিন হয়তো গেয়ে ওঠে "শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজ মন"। কোনদিন বা গলায় থাকে সামান্য কাঁপুনি; "বাপরে নিমাই আমার, যাইও না যাইও না"। মাধবীলতার শাঁখের শব্দে তার অন্ধ প্রতিবেশিনী বৃদ্ধা সৌদামিনীর আঙুল মন্ত্রমুগ্ধতার নিয়মে কপালে এসে ঠেকে; বৃদ্ধা অসময়ে শিউলির গন্ধ পান। নিয়মিত। সন্ধ্যার শেষ প্রান্তে প্রদীপ হাতে যখন  উঠোনের দিকে হেঁটে যায় মাধবীলতা; তখন তার পায়ের আলতা ভেজা-ঘাস-মাটির সুবাসে আরও স্বপ্নালু হয়ে ওঠে হয়তো। তুলসী মঞ্চের কাছে এসে এক মুহূর্তের জন্য  তারার হিসেব বুঝে নেওয়ার ভঙ্গিতে  আকাশের দিকে চেয়ে থাকে সে। প্রতিদিন। সন্ধ্যা তখন সমাহিত। পরমুহূর্তেই ব্লাউজের ভিতর থেকে বের করে আনা প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্রদীপের আলোয় জ্বেলে নেয় মাধবীলতা। অপেক্ষার ধোঁয়া উড়িয়ে তুলসী মঞ

ডাক্তার দত্তর হিপনোটিজম

- ধরো, একটা সবুজে সবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তর।  - সবুজে সবুজ ডাক্তার? - এক্সপ্রেশনে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে? - সবুজে সবুজ ব্যাপারটা এগজ্যাক্টলি কী?  - মানে পোয়েটিকালি স্পিকিং আর কী। ওই। সবুজে সবুজ তুমি নীলিমায় নীল।  - ওহ। আই সি। বেশ বলে যাও।  - হ্যাঁ। সবুজে সবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তরটা হেলান দিয়ে রয়েছে চুইয়ে নামা নীলে। সবুজে নীলে মিলে একটা অপরূপ প্রাণবন্ত ক্যানভাস তৈরি করেছে। অমিয়, তুমি এ মুহূর্তে সেই ক্যানভাসটা দেখতে পাচ্ছ।  - দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু মা তারা ফার্মেসির ক্যালেন্ডারটা চোখের সামনে এমন খচর খচর করে নড়ছে, যে সবুজ নীলের কল্পনাটাকে ঠিক জার্মিনেট করানো যাচ্ছে না। - ক্যালেন্ডার। সে কী! চোখ বুজে কল্পনা করতে হবে। এলিমেন্টারি।  - প্রিলিমিনারি ইন্সট্রাকশনে তেমনটাই ছিল? - অফ কোর্স। চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করবে। তারপর নিজের ভাবনার ঘোড়ার রাশ আমার হাতে ছেড়ে দেব।  - হ্যাঁ। হ্যাঁ। মনে পড়েছে। কিন্তু ডাক্তার...।  - ফের কী হল? - একটা মাইনর প্রশ্ন। আমার ভাবনা যদি ঘোড়ার মত না হয়ে একটা টুকরো এলেবেলে মেঘের মত হয়? অথবা শাড়ির আঁচলের মত ফস্‌ফসে? - ঘোড়া পোষ্য। কিন্তু মেঘ? না। আর