Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2021

প্ল্যান-প্রোগ্রাম

- এই যে ভুলোদা৷ দোলের দিন সন্ধ্যেয় একটু আড্ডা-আড্ডা গা করছিল, তাই ভাবলাম তোমার বাড়িতেই হানা দিই..।  - আরে বিট্টা যে৷ আয় আয় আয়৷ কদ্দিন পর এলি রে ভাই..কদ্দিন পর। - আছ কেমন? - ও'সব প্লেস্যান্ট্রি এক্সচেঞ্জ পরে হবে'খন৷ আগে বল কী খাবি...কবজি না ডুবিয়ে নিস্তার পাবি না কিন্তু বিট্টে..এই বলে রাখলাম৷ - হে হে হে হে, সে হবে'খন ভুলোদা৷ অত ব্যস্ত হয়ো না তো..আগে দু'টো সুখদুঃখের গপ্প হোক! - আরে খাবারদাবার জম্পেশ না হলে আড্ডা জমে নাকি? - জমে না, তাই না? - একদমই না৷ তা যদি খাবার অর্ডারই করি বিট্টা, কী প্রেফার করবি - চাইনিজ না মুঘলাই? স্টার্টারে চাইনিজ রেখে যদি মেনকোর্সে ইন্ডিয়ান রাখি..। - আরে তুমি তো গোড়াতেই শশব্যস্ত হয়ে পড়লে ভুলোদা..শোনো, দুপুরে লাঞ্চটা ভালোই হয়েছে৷ এখনই তেমন খিদে নেই..খানিকক্ষণ গপ্পগুজব করে না হয়...।  - নো স্যার৷ খাওয়ার ডিসিশিন আগে৷ তারপর আড্ডা৷ তবে লাঞ্চটা যদি তোর ওজনদার হয়ে থাকে,  তা'হলে চাইনিজ আর মুঘলাই-য়ের মিক্সটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে তাই না৷ এমনিতে ভাবছিলাম ড্রাই চিলি প্রন, চিকেন স্প্রিংরোল আর গার্লিক ফিশ স্টার্টারে। তারপর ডিনারে বিরিয়ানি, মাটন রেজাল

গানের দাওয়াই

- এই যে৷ স্যার! শুনেছেন কী? ওরা গান গাইছে৷ - বাহ্৷ বাহ্৷ কদ্দিন গজল-টজল শুনিনা ভাই সেক্রেটারি৷ - আরে! আপনার এগেইন্সটে গান গাইছে৷ সং অফ প্রটেস্ট! - তা'তে কী? - আপনার লেগপুল করে গান গাইছে যে! - তা'তেই বা কী?  - আরে! আরে আপনাকে ইনসাল্ট করে গান বেঁধেছে! - এই সেরেছে! তুমি কি নিশ্চিত সেক্রেটারি?  ও গানে আমায় ইনসাল্ট করা হচ্ছে? - রীতিমতো জুতো মারা হচ্ছে৷ এর একটা বিহিত না করলে আপনার নাকের ডগায় ফোস্কা পড়বে৷  - আরে সামান্য গানই তো গেয়েছে৷ সৈন্যসামন্ত তো জড়ো করেনি৷ তুমি বড় খামোখা চিন্তা করো সেক্রেটারি।  - দেখুন স্যার৷ বন্দুক চালালে কামান দাগা যায়৷ তর্ক জুড়লে খিস্তি করা যায়৷  কুস্তি করলে লেঙ্গি মারা যায়৷ কিন্তু গান গাইলে মহামুশকিল মাল্টিপ্লাইড বাই কেলোর কীর্তি৷ কলার টেনে মানুষের পিলে চমকানো যায়, সুর ভোলানো মুশকিল৷  - গান কী ডেঞ্জারাস ভাই সেক্রেটারি!  - টোটাল বিষ! - তবে? উপায়? কানটান মুলেটুলে যদি...? - এ কী ক্লাস-পালানো ছেলেছোকরা পেয়েছেন?  - ছেলেপিলে লেলিয়ে ওদের হারমোনিয়াম সরিয়ে নেওয়া যায় যদি?  - কাঁচকলা হবে৷ একজনের হারমোনিয়াম কাড়লে দশজন বাক্স বাজিয়ে গান জুড়বে৷ শেষে পাড়ার জলসা র

মনখারাপিস্ট বনাম মামলেটিয়ে

মনখারাপ জমাট বাঁধলে সে এসে পিঠে হাত রেখে বলবে, "যত্ন করে জোড়া ডিমের মামলেট ভেজেছি ভাই৷ এসো, ব্যালকনিতে বসে খাবে"। আমি মুখভার করে বলব "এই অসময়ে আবার মামলেটের কী দরকার"! সে বলবে, "অসময়েই তো আমরা গীতবিতান হাতড়ে মরি৷ অসময়েই তো আমরা বাউল শুনে আঁকুপাঁকু করি৷ অসময়েই তো মনের শ্যামল মিত্র ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয় ভায়া৷ সুসময়ে তো নিউজচ্যানেলকেও রাগসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা যায়৷ এই ডিমভাজা তো সুসময়ের অমলেট নয়, বরং দুঃসময়ের মামলেট৷ তোমার জন্য সময়টা গোলমেলে বলেই তো এমন যত্ন করে ফার্স্টক্লাস ডিম ভেজে আনলাম"৷ গড়িমসি করে মামলেটের প্লেটখানা হাতে নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যাব৷ মোড়ায় বসে ইতিউতি চামচ চালিয়ে মামলেটে কাটাকুটি শুরু করব। মুখে দু'এক টুকরো ডিমভাজা পড়তেই গায়েমুখে মিঠে হাওয়া এসে ঠেকবে৷ তখন সে শুধোবে, " কী ভায়া, কেমন"? আমি তৃপ্তি চেপেচুপে রেখে দায়সারাভাবে মাথা নাড়ব৷  সে বলবে, "এ'বার একটু বিভূতিভূষণ রিসাইট করব"। আমি মৃদুকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে বলব, "তার আবার কী দরকার"! সে বলবে, " ভায়া, কলকাতায় বইমেলার কী দরকার? মহাভারতে

গোলেমালে

চারপাশের সমস্ত কিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত ঠেকছিল। কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ কল্পলোক না কী যেন বলে? তেমনই কিছু একটা যেন৷ উপযুক্ত ইমোজির অভাবে নিজের মনের অস্থির অবস্থাটা সঠিকভাবে কাউকে বুঝিয়ে উঠতেও পারছিলাম না৷  চারপাশটা মন দিয়ে দেখেশুনে স্তম্ভিত হতেই হলো - এ যে কোয়াড এইচ-ডি ডিস্প্লেকেও হার মানাচ্ছে৷ সবকিছুই কী  স্পষ্ট, যেন চাইলেই ছুঁতে পারব৷ ওই দেখো, সত্যিই ছুঁতে পারছিলামও৷ বালিশের ওয়াড়, বিছানার চাদর, খাটের পাশের টেবিলের ওপর ওপরে সাজানো ফুলদানি - হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে৷ ও মা, সে ফুলদানিতে আবার রজনীগন্ধা- রীতমত ছোঁয়া যায়, সে মিষ্টি সুবাসও নাকে আসছে বইকি। কিন্তু ছুঁলে কোন কাঁচকলাটা হবে? ফুলদানি বা রজনীগন্ধা কোনওটাই তো পিঞ্চ-টু-জুম করা যাচ্ছিল না। অস্বস্তিটা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছিল৷  এমন সময় পাশের ঘর থেকে খোকা দুদ্দাড় করে ছুটে এসে গলা জড়িয়ে ধরল৷ আমার আদরের খোকা, দেখেই বড় সাধ করল লাভ্ রিয়্যাকশন দিতে। ও মা, সে উপায়ও নেই৷ বাধ্য হয়ে রসকষহীন একখানা চুমু বসিয়ে দিতে হল খোকার গালে৷ এরপর গজরগজর করতে করতে ঘরে এসে ঢুকলো বউ। সে আবার আর এক সমস্যা- চারপাশ হাতড়েও মিউট করার কোনও বোতাম খুঁজে প

সুমন আর দাদু

আমি আর দাদু একসঙ্গে সুমন আবিষ্কার করেছিলাম৷ বন্ধুর থেকে ধার করা ক্যাসেটে - "ইচ্ছে হল"। তখন সবে ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷ দুপুরের দিকে পরীক্ষা, তাই সকাল থেকেই বুক ধড়ফড়, গা-কাঁপুনি৷ গোটা বছর মন দিয়ে পড়াশোনা না করার বিশ্রী গ্লানি। সে অস্বস্তি কাটাতে ভরসা ছিল ফিলিপ্সের টেপ-রেকর্ডার আর দাদুর 'আরে এগজামই তো, হাতিঘোড়া-বজরাপানসি তো নয়' মার্কা হাসি৷  সেই সকালগুলোর স্মৃতি ফিকে হওয়ার নয়৷ সুমনের সুরে দাদু মাথা দুলিয়ে চলেছে, হাঁটুতে তাল ঠুকছে, আর 'বাহ্ বাহ্' বলে বিড়বিড় করে চলেছে৷ একদিকে অধরা সিলেবাস মনের কলার টেনে ধরছে আর অন্যদিকে সুমনের বাঁশুরিয়াদাদা বুকের মধ্যে ঢুকে ঝাড়পোছ শুরু করে দিয়েছে৷ মা হাঁকডাক শুরু করেছে স্নানে যাওয়ার জন্য, পরীক্ষার জন্য সময়মত না বেরোলেই নয়৷ কিন্তু ক্যাসেটের সেই দাপুটে সুমন থামছেন না। খাটের এককোণে সুমনাপ্লুত দাদু, ডায়াগোনালি অন্যকোণে আমি৷ মাঝে অদরকারী কিছু বইখাতা৷  দাদু মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে বলছে, "সবজিওয়ালা বন্ধু তো বটেই৷ এই সুন্দর সেন্টিমেন্টটা নিয়ে আমরা আগে গান বাঁধিনি বা শুনিনি কেন বলো দেখি ভাই"? অরুণ মিত্রের উঠে

এমন একটা সোমবার

সহকর্মী মিহি সুরে ডেকে বলবেন, "ভাই, তোমার জন্য আজ পান্তুয়া এনেছি, বাড়িতে বানানো৷ তোমার বৌদির স্পেশ্যালিটি৷ লাঞ্চের পর আমার টেবিলে একবার আসা চাই কিন্তু"। বস পিঠ চাপড়ে বলবেন, " গত হপ্তায় তো রোজই দেরী করে বেরিয়েছ৷ আমার নজর এড়ায়নি কিন্তু৷ শোনো, আজ বিকেলে চটপট বেরোবে৷ আরে বাবা যন্ত্র তো নও, মানুষ তো! আর শোনো, সবসময় অমন গোমড়াথেরিয়াম হয়ে ঘুরে বেড়াও কেন বলো তো? একটা হোমওয়ার্ক দিলাম, রোজ রাতে শোওয়ার আগে মিনিমাম আধঘণ্টা তারাপদ পড়বে, কেমন"? লাঞ্চের সময় টিফিন খুলে মন-প্রাণ-বুক রোববার দুপুরে রাঁধা বাসি বিরিয়ানির সুবাসে আচ্ছন্ন হবে৷ হঠাৎ কোনও ক্লায়েন্ট ফোন করে বলবেন,"রোজই তো কোনও না কোনও কম্পলেন নিয়ে ফোন করি৷ আজ কিন্তু স্রেফ থ্যাঙ্কিউ বলতে ফোন করেছি৷ সার্ভিসের ব্যাপারে আপনাদের সিরিয়াসনেসটা বেশ ইম্প্রেসিভ, চালিয়ে যান৷ আর শুনুন, একদিন আমাদের অফিসের দিকে চলে আসুন না৷ একটু আড্ডা মারা যাবে। হাইক্লাস দার্জিলিং টী থাকবে৷ আর জানেন তো, আমাদের ক্যান্টিনের ফিশ কাটলেটের একটা কাল্ট-স্টেটাস আছে অফিস-পাড়ায়"। বিকেলের দিকে বৃষ্টি নামবে, কিন্তু ভাসিয়ে দেবে না৷ স্রেফ গুমোট কাটানো ফুরফুরে