Skip to main content

Posts

Showing posts from July, 2022

জনসেবা

প্রিয় সুমি, হাসপাতাল থেকে লিখছি। মন ভার৷ জিভ বিস্বাদ৷ গা-হাত-পা ব্যথা৷ যা হোক, নিজের দুঃখকে কোনওদিনই তেমন বড় করে দেখিনি, আজও দেখব না৷ মানুষের ভালো করতে চেয়ে এ বন্ধুর পথ আমি নিজেই বেছে নিয়েছি, সামান্য দু'একটা চোরকাঁটা বা সেফটিপিনের খোঁচায় দমে গেলে চলবে কেন? যাক গে। যা বলতে কলম ধরলাম।আজকাল আর অসহায় মানুষদের কথা কেউ মন দিয়ে ভাবে না৷ কত সহায়সম্বলহীন মানুষ যে সহমর্মিতার অভাবে দুর্ভাগ্যের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই৷ এই আমার কথাই ধরো৷ সাধারণ মানুষের জন্য তো কম করলাম না এ'কবছরে৷ এ'পাড়ায় টিউবওয়েল চাই, ও'পাড়ায় ডিসপেনসারিতে ভালো ডাক্তার চাই, অমুক অঞ্চলে রাস্তার মেরামতি দরকার, তমুক অঞ্চলে তেলেভাজার দোকান বসানো দরকার৷ নেতা মানুষের কাজ কি কম সুমি? অথচ দেখ, এত কিছু করিয়ে দেওয়াটা কেউ দেখল না৷ এরা দেখে শুধু কে আমায় জোর করে সামান্য কমিশন গছিয়েছে, কে ভালোবেসে ক্ষীরকদমের বাক্সে পুরে তোমার জন্য চোদ্দ ভরির হার দিয়েছে৷ চারদিকে নেগেটিভ মাইন্ডসেট৷ ওরে বাবা টিউবওয়েল সাপ্লায়ার আমার বাড়ির চারতলার ঘরের মেঝে মোজায়েক করে দিয়েছে কি দেয়নি; তা জেনে পাবলিকের কী লাভ? আরে টিউবওয়েল তো জায়গা মত বস

আড়াইশো গ্রাম দুঃখ

দু -আড়াই'শো গ্রাম দুঃখ পকেটে নিয়ে দিব্যি ঘুরছিলাম৷ আশেপাশে শোরগোল শুনলেই পকেট খামচে ধরছি৷ নিরিবিলি পেলেই পকেট থেকে সেই ড্যালাটা বের করে পোষা খরগোশের মত হাত বুলোচ্ছি৷ টো-টো করে দিব্যি কাটছিল। হঠাৎ কী খেয়াল হলো, গিয়ে পৌঁছলাম রেলস্টেশনে। তারপর ফের কী হল, দেখলাম একটা ট্রেন হেলতেদুলতে এসে দাঁড়ালে। ফাঁকা কামরা দেখে টুপ করে উঠে বসলাম ট্রেনের জানালার পাশে৷ ফুরফুরে হাওয়ায় চোখ লেগে এলো। ওই হল গিয়ে কাল! ভদ্দরলোকের তুলতুলে ব্যথা-ব্যথা আমেজের ঘুম; ভগবানের সহ্য হবে কেন? ওই। তারপর যা হয় আর কী৷ কোন এক ব্যাটা বেআক্কালে বেয়াদপ রাস্কেল, আমার পকেট মেরে  অমন বাইশ ক্যারাটের দুঃখ সাফ করে, "এতেও-ভেসে-যাব-না-ভাইটি" ব্র‍্যান্ডের সল্টেড বাদাম রেখে সরে পড়েছে৷ এক্কেবারে রাহাজানি, আর কী৷ ধেত্তেরি৷

ফান্ড

সকালের ঝকঝকে নীল আকাশ, ফুরফুরে শরতের হাওয়া। একটা জরাজীর্ণ চারতলা স্কুলবাড়ি। ছেলেপিলের দল নেই, বোঝাই যায় ছুটির দিন। তা বলে হইচইয়ের অভাব নেই। অন্তত জনা চল্লিশ লোক মিলে স্কুলবাড়ি আর তার সামনের মাঠটাকে সরগরম করে রেখেছে। চার-পাঁচজন মিলে মাঠের পশ্চিম কোণে স্টেজ বাঁধছে।  আর সাত-আটজন বাবু-গোছের লোকজন তাদের "হ্যান করো, ত্যান করো, জলদি জলদি করো" বলে তাড়া লাগিয়ে চলেছে। বাবুরা অবশ্য ভুলেও কাজে হাত লাগাচ্ছে না, পাছে কাজ সময়মত শেষ হয়ে যায়। একটা ঢাউস ফ্লেক্স ব্যানার টানাটানি করে দু'জন লোক হন্যে হচ্ছে, আর একজন মাতব্বর কন্ট্রাক্টর গোছের লোক তাদের ওপর তম্বি করে চলেছে। জনা-দশেক লোক স্টেজের সামনে ভাড়া করা প্লাস্টিকের চেয়ার সাজাতে ব্যস্ত। আর যথারীতি অন্য আর এক বাবুদের দল বিভিন্ন জরুরী ইন্সট্রাকশন দিয়ে ক্রমাগত তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে চলেছে। কিন্তু এই সমস্ত গোলমালকে বিন্দু মাত্র পাত্তা না দিয়ে এক বছর তিরিশের যুবক স্কুলের স্যাঁতস্যাঁতে বারান্দায় একটা ক্লাসরুম থেকে বের করে আনা নিচু বেঞ্চের ওপর বসে একটা মচমচে টেবিলের ওপর ঝুঁকে কিছু কাগজপত্তর মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ওঁর নাম অনুপ চ্যাটার্জী, পরনে চেক ফু

ডাক

খোকাখুকুদের ডাকঃ "এই যে দাদা"। দাদা-দিদিদের ডাকঃ " এই যে ভাই"। লেজেন্ডদের ডাকঃ "এই যে ব্রাদার"। আল্ট্রা-লেজেন্ডদের ডাকঃ "এই যে বেরাদার"। আল্ট্রা-লেজেন্ড প্রো-ম্যাক্সদের ডাকঃ "এই যে ভাইটি"। আল্ট্রা-লেজেন্ড প্রো-ম্যাক্স-প্লাসদের ডাকঃ "এই যে ভাইটু"।

পার্লামেন্টারি

- দোলগোবিন্দবাবু! - *ফুড়ুৎফুড় নাক ডাকার শব্দ* - ও দোলগোবিন্দবাবু! এই যে! মিস্টার দোলগোবিন্দ গোলদার!  - এই! কে! ডাকাত নাকি? এই পুলিশ ডাক! এই কেউ আমার ফলস দাতটা নিয়ে আয়। এই কেউ আমার বন্দুকটা নিয়ে আয়। আর ট্যাপা, সবার সমানে ফ্যাট করে বলে দিসনা এ'টা তোর খেলনা  রাইফেল! - আপনার লজ্জা করেনা দোলগোবিন্দবাবু? - অ্যা! ও, ওহ। সরি সরি! সরি ইওর অনার! আমি ভাবলাম ড...ডাকাত পড়েছে। তবে খামোখাই ভয় পেয়ে গেছিলাম মশাই। আমি তো আর চোরছ্যাঁচোর নই যে আমার মেজানাইন ফ্লোরে রাখা ডিভানের গদির পেটে কোটিকোটি কালোটাকা পোরা রয়েছে। আমার আবার ভয় কীসের। - ইওর অনার আবার কী! আপনি মাঝেমধ্যেই নিজেকে কাঠগড়ায় দেখতে অভ্যস্ত তাই না?  - ওহ, তাই তো। এ'টা তো পার্লামেন্ট। সরি। সরি। একটু চোখ লেগে এসেছিল তো। তাই গুলিয়ে গেছিল। যাকগে, বলুন স্পীকারবাবু। - বলবেন আপনি। সে'জন্যই আপনাকে ডাকাডাকি। - ওহ হো। আগের ভদ্দরলোকের ওই ভ্যান্তেরা শেষ হয়েছে এতক্ষণে? উফ, বাপ রে বাপ। কী বাজে কথা রে বাবা...। - এ'খানে একটা ডেকোরাম আছে। এ'টা পরনিন্দাপরচর্চার জায়গা নয়। জরুরী ডিসকাশন চলছে। বিরোধী হিসেবে আপনার কী বক্তব্য আছে সে'টাই বলুন। প্

বিনোদবাবু আর আদা-চা

মার্ক অ্যান্ড ডগলাস কোম্পানির ফাইলটা ছুঁড়ে ফেললেন বিনোদবাবু। ফাইলের ভিতরের কাগজগুলো এলোমেলো হয় ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল৷ টানা আড়াইমাস বড় খেটেখুটে প্রপোজালটা তৈরি করেছিলেন৷ নিখুঁত ভাবে সাজানো প্ল্যান৷ মার্ক অ্যান্ড ডগলাসের পারচেজ ম্যানেজার মিস্টার পোদ্দার সে প্রপোজালে একবার নজর বুলিয়েই বলেছিলান, "বিউটিফুলি ডান"। সিনহা সাহেব বিনোদবাবুর পিঠ চাপড়ে পোদ্দারকে বলেছিলেন, "বিনোদ আমাদের অ্যাসেট৷ ও' যখন উঠেপড়ে লেগেছে, আপনার কোনও চিন্তাই নেই"৷ বিনোদবাবুর সেই প্রপোজালটা আজ পাস হয়ে গেল, কিন্তু প্রজেক্ট সামলানোর দায়িত্ব পেল সৌম্য দত্ত৷  প্রতিবাদ করেছিলেন বিনোদবাবু, কিন্তু লাভ হয়নি৷ বরং সিনহা সাহেব দাঁত চেপে বললেন যে বিনোদবাবু যেন 'নুইসেন্স ক্রিয়েট' না করেন৷  অভয়চরণ আদা দেওয়া চা নিয়ে এসেছিল, মুখঝামটা দিয়ে তাকে কফি আনতে বললেন বিনোদবাবু৷ হতবাক অভয়চরণ কথা বাড়ায়নি৷ ছেলেটা এমনিতেই বেশ নম্র। এরপর  কম্পিউটারে বসেই বিনোদবাবু দেখলেন সিনহা সাহেব ইমেলে নতুন প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির হুকুম দিয়েছেন।  মেজাজটা আরও ঘেঁটে গেল৷ ইনবক্স বন্ধ করে পায়চারি শুরু করলেন তিনি৷ বয়ে গেছে এমন বিচ্ছিরি পরিবেশে দি

কালী

গুপ্তিপাড়ায় মায়ের পিসির বাড়ি। ছোটবেলায় সে'খানে কয়েকবার গেছি রটন্তী কালীপুজো দেখতে। সে পুজো হত মাঝরাতে, শীতের অমাবস্যার কনকন ছাপিয়ে জমজমাট আয়োজন। গুপ্তিপাড়ার দাদু, অর্থাৎ মায়ের পিশেমশাই নিজেই পুজো করতেন। ঋষিসুলভ মানুষ; শান্ত, গম্ভীর অথচ হাসিহাসি মুখ। প্রচুর আত্মীয়স্বজন জড়ো হত। নিপাট ভক্তির সঙ্গে হইহইরইহই মিলেমিশে সে অন্ধকার রাত্রি আলোআলো হয়ে উঠত। সন্ধ্যে থেকে বড়রা পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত, ছোটরা খামোখা ছুটোছুটি করে হন্যে হত এবং এন্তার কানমলা খেত। পুজো শুরু হতে হতে মাঝরাত। নেহাতই ছোট ছিলাম, রাত জেগে পুরো পুজোটা ঠিক দেখা হয়ে উঠত না।  পরের দিন দুপুরে একটা জবরদস্ত ব্যাপার ঘটত। দুপুরবেলা খাওয়ার পাতে জুটত ভোগের নিরামিষ পাঁঠার মাংস। পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া রান্না, অতএব নিরামিষ। এই অকাট্য যুক্তির কাছে মাথা না নুইয়ে উপায় নেই। আর সেই ভোগের মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত মাখার সময়ই প্রথম টের পেয়েছিলাম যে বাঙালির কালীপুজোয় নিরামিষের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ভবেন সমাদ্দার আর লজেন্সওলা

১।  - লজেন্স দেব বড়দা? - দেবেন? - দিয়েই দি', নাকি? - অমন করে বলছেন যখন, দিন। আর তো তিনটে স্টেশন। লজেন্স চুষতে চুষতেই ব্যান্ডেল চলে আসবে'খন। - মিনিমাম দু'টো লজেন্স লাগবে কিন্তু। তিনটে স্টেশন কভার করতে।  - একটা আদা দিন। আর একটা লেবু। - ভেরি গুড। আসুন। - থ্যাঙ্কিউ। তা, বিক্রিবাটা কেমন চলছে? - রোববারের সন্ধ্যেটা এলেবেলেই থাকে। দেখছেন না, ফাঁকা কামরা। - আগে কোনটা মুখে দেওয়া যায় বলুন দেখি। আদা না লেবু? - লেবু আগে। লেবু আগে। লেবু জিভকে শানাবে কিন্তু একটা টক ভাব ফেলে রেখে যাবে। আদা সে টক-ভাব উড়িয়ে দিয়ে পালিশ দিয়ে যাবে। - ঠিক, ঠিক। আচ্ছা লজেন্সভাই, প্যাকেটে ক'টা করে লজেন্স থাকে? - পাঁচটা করে। দেব নাকি? একটা আদা আর একটা লেবুর প্যাকেট? - নিশ্চয়ই।  ২। - এই যে, লজেন্সদাদা, ঘুম ভাঙল? - আমি...আমি কোথায়...।  - ভবেন সমাদ্দারের বাড়িতে।  - আপনি ভবেন সমাদ্দার? - আমিই। - ব্যান্ডেল লোকালে আপনিই আমার থেকে লজেন্স কিনলেন তো...।  - দু'টো লুজ। আর দু'টো প্যাকেট। - কিন্তু তারপর আর কিছুই মনে পড়ছে না কেন...। আচ্ছা, আপনি কি আমায় কিডন্যাপ করেছেন? - লজেন্সদাদা, একটা জরুরী কাজের জন্য আপনাকে আমার