Monday, July 30, 2012

চাকরির চক্করে

গৌতমবাবুর সঙ্গে দেখা বহুদিন পরবাজারেগৌতমবাবু ছিলেন আমাদের কেমিষ্ট্রীর শিক্ষক।ভীষণ ভালো ফুটবল খেলতেন, পাড়ার ক্লাবের কোচও ছিলেন। ঢিপ করে প্রণাম করে নিজের পরিচয় দিলাম। চিনতে পারলেনআমি জানালাম কোথায় আছি এখন, কীই বা চাকরি করছি।গৌতমবাবু নরম হেসে বললেন:  

“চাকরি? চাকরির একটি মাথাদুটি কান, একটি নাক, একটা মুখ দুটো হাত, দুটো পাএকটি হৃদয়চাকরি স্তন-বানও বটে।চাকরির প্রতি এমন স্নেহ নিয়ে কৈশোর থেকে যৌবনের দিকে ট্র্যাভেল করেছোপড়াশোনার কসরত্‍ করেছো, কেতা-অভ্যেস করেছো, বিবেকানন্দ পড়ে ডন-বৈঠক দিয়েছো, কথা বলার চাকুরিও-মায়াবী ভঙ্গিমা রপ্ত করেছো, নারী-প্রেম নিশ্চই তোমার ট্র্যাভেল-ট্র্যাকে বোম মেরেছে তবু  তুমি লাইন-চ্যুত হওনি।এখন তুমি একজন পরিপূর্ণ যুবক! পকেট নিকোনো চাকরি। যার একটি মাথা, দুটি কান, একটি নাক, একটা মুখ, দুটো হাত, দুটো পা একটি কোলেস্টেরল-মাখা হৃদয় জানি না তোমার সাথে আবার কবে দেখা হবে, তাই বলিবিয়ে করেছো দারুন ব্যাপার। ইউ উইল বি আ ফাদার সাম ডে। সন্তান কে এমন শিক্ষা দিও যাতে সে  শৈশবকে কফিনে সার্ভ করার আগে শৈশবের কপালে আলতো চুমুটুকু খেতে পারে।চলি। কেমন?”

মনে রাখার ব্যাপার-স্যাপার

ন্যাবা-জ্যেঠুর বাড়িতে রাত সাড়ে এগারোটায় ঢুঁ মারতে হলো দাদুর হাঁটুর ব্যাথার হোমিওপ্যাথিক টোটকার জন্যে। ন্যাবা-জ্যেঠুর হোমিও-চিকিত্‍সাতেই দাদুর হাঁটু নাকি পুর্ণিমা-অমাবস্যাতে ম্যাক্সীমাম রিলিফ পায়। আজ আচমকা ব্যথাটা চাড় দেওয়াতে এই রাত-দুপুরে দাদু দেরাজ খুলে দেখলেন ওষুধের স্টক নীল। ন্যাবা-জ্যেঠু দাদুর মর্নিং ওয়াক সঙ্গী হওয়ায় রাত্রিবেলা প্রয়োজনে বিরক্ত করতে বিশেষ অসুবিধে নেই। ভদ্রলোকের হোমিওপ্যাথিতে এ অঞ্চলে বেশ পসার রয়েছে।সদ্য বিপত্নীক। এক মাত্র ছেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে দিল্লিতে থাকে। পেল্লায় বাড়িতে একাই থাকেন।  

কলিং বেল টিপতেই ন্যাবা জ্যেঠু নিজেই দরজা খুললেন।দাদুর প্রয়োজনের কথা বললাম। ঘুম যে ভাঙ্গাইনি সেটা ন্যাবা জ্যেঠু নিজেই জানালেন; “যদিও আর্লি ট্যু বেডয়ের ফিলসফিতেই বিশ্বাস, তবে আজ জেগে রয়েছি অন্য কারণে, ছেলের তরফ থেকে বিশেষ ফোন আসবে”বিশেষ ফোন কেন জিজ্ঞেস করাতেই ন্যাবা-জ্যেঠু খোলসা করলেন : “গত বছর এই দিনে তোমাদের জ্যেঠিমা মারা গেছিলেন, তাই নিমুর (ন্যাবা জ্যেঠুর ছেলে)ফোন একটা এক্সপেক্ট করছিবেচারী ভারী মা ন্যাওটা ছিলোআজকের দিনটা নিশ্চই আমার সাথে ফোন করে একটু মন হালকা করে চাইবে। গোটা দিনের ব্যস্ততায় হয়তো ফোন করতে পারেনি, নিশ্চয় একবার ফোন করবে...” বলতে বলতেই ন্যাবা জ্যেঠুর ফোন বেজে উঠলো, “নিমু উইল লিভ ফর হান্ড্রেড ইয়ারস...কল এসেছে...মিনিট-পনেরো দাও আমায়, কথা বলেই ওষুধ টা এনে দিচ্ছি”। সঙ্গে একটা সাহেবী “এক্সকিউজ মী” জুড়ে ন্যাবা জেঠু পাশের ঘরে গেলেন কথা বলতেঠিক ৪৫ সেকন্ডের মাথায় ফেরত এলেন

-“কী ব্যাপার জ্যেঠু, লাইন কেটে গ্যালো নাকি?”, জিজ্ঞেস করলাম,
“না:”, জ্যেঠু হাসলেন, “কাল ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ণ ফাইল করার শেষ দিন, আমার ভারী ভূলো মন তো, তাই আমার চার্টার্ড-পুত্র আমায় মনে করিয়ে দিলে যাতে আমি এই বেসিক ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে একটা গোলমাল না করে দিই, তুমি পাঁচ মিনিট বসো; আমি ওষুধ নিয়ে আসছি”