Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2022

বিরিয়ানির কবিগান

বিরিয়ানি ব্যাপারটা নিয়ে এত মাতামাতি বোধ হয় আইডিয়াটার নিপাট সারল্যের জন্য৷ ভাত-মাংস, একই পাত্রে, একই সঙ্গে৷ অবশ্য সরল ব্যাপারটা খাইয়েদের জন্য৷ রাঁধিয়েদের কাজটা সহজ নয় তেমন, এ বড় জটিল শিল্প৷ ভাতের দানা কতটা শক্ত রইল, মাংস যথেষ্ট তুলতুলোলো কিনা, মশলার ব্যবহারে যথেষ্ট সংযম দেখানো গেছে কিনা; এমন হাজারো হ্যাপা৷  কিন্তু আউটপুট ব্যাপারটা সুকুমার সমগ্রর মত জম্পেশ; সহজসরল অথচ ম্যাজিকে টইটুম্বুর একটা ব্যাপার। বিরিয়ানি ছাড়া খানাপিনা ভাবতে হলে আপনাকে ঝোল বাছতে হবে, রুটি বা ভাতের রকমফের দেখতে হবে, তার পাশাপাশি এ'টি এবং ও'টি৷ বিরিয়ানি ব্যাপারটা তুমুল; মাংস-ভাত, ঝোলে ল্যাপ্টালেপ্টি নেই কিন্তু শুকনো দলা হয়ে গলাতেও আটকে যাবে না৷ আর সেই অনাড়াম্বরের জন্য হয়ত খানিকটা খরচেরও সাশ্রয় ঘটে; ওই তিনচারটে পদের দরকার স্রেফ বিরিয়ানিতে মিটে যাওয়ায় (এই ছবিতে বিরিয়ানির পাশাপাশি যে মুর্গির রগরগে ঝোল আছে, সে'টা নেহাতই উত্তমকুমার পাশে আমার মত গাম্বাটের হ্যা-হ্যা করে দাঁতিয়ে দাঁড়ানোর মত অদরকারী)।  বিরিয়ানি চিনামাটির প্লেটেও চলে, রূপোলী থালাও আলো করে থাকে আবার  সস্তা সাদা কাগজের বাক্সেও একই রকম জমজমাট এবং উপভোগ্

দুধে-ভাতে-মেডিক্লেমে

মেডিক্লেমের মত ভালো খরচ আর হয়না৷ প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা হওয়ার চেয়েও জরুরী বোধ হয় মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স৷ নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার দেশে অবশ্য সে ব্যাপারটা অনেকের জন্যই সহজলভ্য নয়৷ তবে ঈশ্বরী পাটনীর দুধে-ভাতে থাকার স্বপ্নে একটা বড় অংশ জুড়ে বোধ হয় বিপদেআপদে ফতুর না হয়ে খানিকটা লড়তে পারার ক্ষমতা৷  সরকারি হাসপাতালের নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগও অবশ্যই আছে৷ কিন্তু মেডিক্লেমের ভরসায় বেসরকারি চিকিৎসার দিকে তাকানোর দুঃসাহসটুকু অন্তত পাওয়া যায়৷ প্রাইভেট মানেই ভালো? না৷ কিন্তু, কোনও দরজাই বন্ধ নেই; এ ভরসার মূল্য ওই দুধভাতের সমান৷  আমার এক পরিচিত মানুষ মাঝেমধ্যেই চেনা লোকজনকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স আছে কিনা, থাকলে প্রিমিয়াম নিয়মিত জমা করা হচ্ছে কিনা৷ এমন গায়ে পড়া প্রশ্নে অনেক বিরক্ত হন, আমিও হয়েছি একসময়৷ কিন্তু তা'তে সেই পরিচিত মানুষটার উৎসাহে ভাটা পড়েনা৷ তিনি জোর গলায় বলেন, "ভালো আছিস কিনা জিজ্ঞেস করার চেয়ে মেডিক্লেমের খোঁজ নেওয়া ভালো"।  তবে সেই পরিচিত মানুষটির গায়ে-পড়া যতই উড়িয়ে দিই, একটু অবাক হই যখন অনেকে একটা নিয়মিত আয় থাকা সত্ত্বেও মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স ব্যাপ

বাংলার ক্লাস

বাংলায় আমি চিরকালই নড়বড়ে। হাতের লেখা মারাত্মক খারাপ, বানানে বৃহস্পতি। অবশ্য অন্যান্য ভাষায় আমার অবস্থা আরও করুণ। সত্যি বলতে কী; ভাষাগত ভাবে আমি চিরকালই জুবুথুবু৷ তা সত্ত্বেও  ব্লগটা শুরু করেছিলাম নেহাতই টেকনোলজির মায়া কাটিয়ে উঠতে না পেরে৷ ২০০৭ নাগাদ ব্লগ ব্যাপারটা বেশ নতুন৷ উঠলো বাই তো করে নিজের একটা কটক-যাই-ওয়েবসাইট দাঁড় করিয়ে ফেলা যায়, যা কিছু হিজিবিজি লিখেও ফেলা যায়৷ এ লোভ পাশ কাটিয়ে চলে আসা সহজ নয়৷ সেই থেকে বংপেন৷ পরে বহুবার মনে হয়েছে নামটা কেমন যেন; বং এবং পেন, দু'টোর কোনওটাতেই বাংলার ব'ও নেই। কিন্তু নামটা তদ্দিনে ডাকনামের মত হয়ে গেছে৷ বাবাই, টুকাই, পাপাই; এই ধরণের ডাকনামের মানে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও মানেই হয়না৷ তেমনই, আমার মাথার মধ্যে বংপেনও খানিকটা ওই বাবাই-পাপাইয়ের মতই একটা ডাকনাম৷  ব্লগে প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম ইংরেজি ফন্টে৷ মানে লিখতাম বাংলাতেই, কিন্তু রোমান হরফ ব্যবহার করে৷ সে'খানে বাংলা হয়ে যেত Bangla। এর মূল কারণ দু'টো৷ এক, তখনও অভ্র কীবোর্ড ততটা ছড়িয়ে পড়েনি বা আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি৷ ওয়ার্ড ফাইলে বাংলা টাইপ করা একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতা ছিল৷  দুই, পরীক্ষার খাতা

মিহিরবাবু দায়িত্ব

রাতের দিকে ঘাটটা বেশ নিরিবিলি৷ কে বলবে যে এ'খানেই দিনেরবেলা একটা ছোটোখাটো মেলা বসে যায় প্রতিদিন৷ পাশেই সুপ্রাচীন মন্দির, লোকে বলে বড় জাগ্রত এ'খানে অধিষ্ঠিত দেবী। এককালে নরবলি হত, এখন শুধু প্রতি অমাবস্যায় পাঁঠাবলি হয়৷ প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে ঘাট ভরে যায় মানুষে, ভক্তরা এ'খানে এসেই স্নানটান করে৷ দোকানপাটও রয়েছে বেশ কিছু, পুজোসামগ্রী থেকে কচুরিমিষ্টির দোকান, এমন কি ভাতের হোটেলও আছে দু'চারটে৷ কিছু নৌকাও থাকে, অল্প ভাড়ায় দিব্যি আধঘণ্টা নদীর বুকে ঘুরে আসা যায়। অন্ধকার হলেই অবশ্য সব শুনশান; শুধু হরেনের চায়ের দোকান খোলা থাকে৷ মিহিরবাবু ভক্তও নন, ট্যুরিস্টও নন৷ কাজেই দিনেরবেলা এ'অঞ্চলটা এড়িয়ে চলেন। সন্ধ্যের পরেই অবশ্য তাঁর এ'দিকে আসাটা জরুরী। হরেনের সঙ্গে দু'হাত তাস খেলে বাঁধানো ঘাটে একটা জুতসই জায়গা বেছে নিয়ে খানিকক্ষণ বসে থাকেন৷ খানিকক্ষণ নদীর হাওয়া খাওয়া আর গুনগুন করে মুকেশের গান গাওয়া৷ রাত আটটার পর দোকান বন্ধ করে ঘাটের দিকে এগিয়ে এসে হাঁক পাড়েন হরেন, "ওঠো মিহিরদা, রাত হল"৷  ঘাড় ঘুরিয়ে মিহিরবাবু বলবেন, "ঝাঁপ নামিয়েছিস'? এরপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই

সুন্দর নার্সারি

দিল্লীর সুন্দর নার্সারি যেমন সবুজ, তেমনই ছিমছাম৷ জানুয়ারির উইকেন্ড-ভিড়েও দেখেছি যে নিজেদের জন্য নিরুপদ্রব, ঘেসো এবং পরিস্কার এলাকা দিব্যি জুটিয়ে নেওয়া যায়৷ আজ একাই দুপুর-দুপুর ঝোল-ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম৷ প্রথমে ভাবলাম নতুন কোনও জায়গায় যাই, তারপর মনে পড়ল সুন্দর নার্সারির কাছাকাছিই রয়েছে নিজামুদ্দিন মার্কেট যে'খানে দিনকয়েক আগেই এসেছিলাম চমৎকার কাবাব খেতে৷ কাজেই নার্সারি ঘুরে সুন্দর কাবাব খেয়ে বাড়ি ফেরার প্ল্যানটাই যুক্তিযুক্ত মনে হল৷  প্রথম দিল্লী এসে যখন সুন্দর নার্সারির কথা শুনেছিলাম তখন ভেবেছিলাম  শৌখিন মানুষের ডালিয়া পিটুনিয়া আর ভালো কোয়ালিটির সার কিনবার জায়গা বোধহয়৷ ইতিহাস আর জেনারেল নলেজে কাঁচা হলে যা হয়৷ কিন্তু ভুল ভাঙার জন্য সশরীরে আসার দরকার নেই, গুগল করলেই হল৷ ষোলো শতকে মুঘলরা বানিয়েছিল পেল্লায় আজিম বাগ, সাহেবসুবোদের হাতে এ'খানে নার্সারি তৈরি হল ১৯১৩ নাগাদ৷ বর্তমানে নাকি শ'তিনেক রকমের গাছপালা রয়েছে এ'খানে৷ আমার মত অসবুজ গাম্বাট মানুষের জন্য অবশ্য গাছপালা মূলত চার রকমের; পেল্লায়, মাঝারি,  ছোটখাটো আর ঘাস-জাতিয়৷ কাজেই 'রেয়ার প্ল্যান্টস' দেখে লাফিয়ে ওঠার জ

মাল্টিটাস্কিং

মাল্টিটাস্কিং ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত৷ কাজ এগোয় না, শুধু মাল্টিটাস্কিংই চলতে থাকবে৷ সবার কম্পিউটারেই আজকাল বিরাশি সিক্কার র‍্যাম। কেন? ব্রাউসারে বাহাত্তরখানা ট্যাব খোলা থাকবে, সতেরোটা এক্সেল, বারোটা ওয়ার্ড ডুকুমেন্টে কাজ চলবে, পাশাপাশি ইমেল চালাচালি৷ আর সবার ওপরে চলবে জুম মিটিংয়ের 'জী হজৌরি'। এ'সব দিয়ে কী হবে? হবে মাল্টিটাস্কিং৷ এক কাজ নিয়ে পড়ে থাকা মানে আধুনিক কর্পোরেট জগতের বিরিয়ানিতে কুমরোর টুকরো হয়ে পড়ে থাকা। বড়বস চাইবেন রিপোর্ট, মেজোবস খুঁজবেন ইমেল, সেজবস দেখবেন পাওয়ারপয়েন্ট, ছোটবস ডাকবেন মিটিংয়ে, আর আপনি? আপনার ইএমআই-য়ে ম্যারিনেট করা কপালে রয়েছে 'যে আজ্ঞে' আর মাল্টিটাস্কিং৷ দিনের অর্ধেকটা কেটে যায় এক্সেল থেকে জুমের মধ্যে দৃষ্টি চালাচালি করে,  ইমেল থেকে পাওয়ারপয়েন্টে ফোকাস জাগলিং করে, আর ফোনে খেজুর চালাতে চালাতে মেমো পড়ে৷ ওইটুকু পথ চলাতেই আনন্দ। শ্বাস ফেলতে না পারার মধ্যেই উত্তরণ সুপার এফিশিয়েন্ট কর্পোরেট সৈন্যদের। তারা লাঞ্চ সারবে কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে। তারা মুখ খুললেই বুলেট পয়েন্ট ছিটকে বেরোবে। তাদের টু-ডু লিস্ট সাইজে নভেলদের টেক্কা দেবে। তাদের ডেস্কটপের

পুলিন আর সমুদ্র

পুলিন ছিলেন মেজমামার ভক্ত৷ ছেলেবেলায় মামার সঙ্গে কতবার সমুদ্রের ধারে ছুটি কাটাতে গেছেন৷ পুরীর পড়ন্ত বিকেলে মেজমামা সৈকতে এসে দাঁড়াতেন হাঁটু পর্যন্ত পাজামা গুটিয়ে। সমুদ্রের দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়তেন৷ ঢেউয়ের আরামদায়ক আসা-যাওয়ায় গোড়ালি ভিজত বারাবার, নরম হয়ে আসত মন৷ গপ্পিয়ে মানুষটা নিশ্চুপ হয়ে আসতেন, মুখে লেগে থাকত ভালোবাসাবাসির হাসি৷ হাওয়ার ঝাপটার পাশাপাশি ঢেউ ভাঙার শব্দ, ভেজা বালির গন্ধ আর সন্ধ্যের আকাশের রঙ সমস্তটুকুই মেজমামা নিজের মধ্যে শুষে নিতেন৷ সে নাকি এক তপস্যার মত ব্যাপার৷ চল্লিশ বছর আগে পরীক্ষায় বসে কষতে না পারা অঙ্কের সলিউশন মনের মধ্যে উঁকি দেয় সে সময়৷ সতেরো বছর আগে হারিয়ে ফেলা ফাউন্টেন পেনটা আদতে কোথায় ফেলে এসেছিলেন তা ঠিক মনে পড়ে যায়। রীতিমত ম্যাজিক!  পুলিন নিজে অবশ্য সে ম্যাজিকের তল পেতেন না৷ মেজমামা চলে যাওয়ার পরেও তাঁর স্মৃতির টানে বারবার সমুদ্রের দিকে ঘুরতে গেছেন পুলিন৷  ট্রাউজার গুটিয়ে দাঁড়িয়েছেন সমুদ্রে, পা ভিজিয়েছেন ঢেউয়ে৷ কিন্তু মেজমামার সেই সমুদ্র-নির্বাণ আয়ত্ত করা যায়নি৷ বারবার নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হয়েছে, মানুষ দিনদিন ক্ষুদ্র হয়ে পড়ছে; মনের ফ্লেক্সিবিলিটি

থ্রিল

- ভুতো৷ চ'৷ একটু হাওয়া খেয়ে আসি৷ - এখন পারব না মামা। - আরে চ' না৷ ডিমরুটি খাওয়াবো।  - ধুস। - চিকেন রোল? - আমি ব্যস্ত। - রাস্কেল ছেলে! সামনের বোর্ডের পরীক্ষা আর তুই বসে মোবাইলে গেম খেলছিস৷ কচু ব্যাস্ত! - গেমিংয়ের থ্রিল তুমি বুঝবে না মামা৷ বয়স হয়েছে তো৷ তু মি হাওয়া খেয়ে এসো৷  - থ্রিলের তুই কী বুঝিস রে? - আরে মামা। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পাশ কাটিয়ে টার্গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়া৷ পদে পদে খুনোখুনির আশাঙ্কা৷ ডায়ে গেলে গাড়িচাপা, বাঁয়ে ক্লিক করলে অতল খাদ৷ সামনে স্নাইপার, পিছনে ড্র‍্যাগন৷ এই হল আলটিমেট থ্রিল৷  - ওহ৷ বুঝেছি৷  - কী বুঝেছ মামা? - তুই বেসিক্যালি আইআরসিটিসিতে টিকিট বুক করছিস৷

নিরুপম আর ব্রেকিং নিউজ

বাসের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসেছিলেন নিরুপম৷ দুপুরে জব্বর বৃষ্টি হয়েছিল, তাই সন্ধ্যের হাওয়ায় একটা দিব্যি ফুরফুরে ছিল। সে হাওয়া উপভোগ করতে করতে ভুলভাল লিরিক্স আর গোলমেলে সুরে ডাকটেলসের হিন্দী টাইটেল সং গুনগুন করছিলেন তিনি৷  "জিন্দেগী তুফানি হ্যায়, যঁহা হ্যায়, ডাকটেলস"৷  দুনিয়াটা সত্যিই রঙিন৷  এমন সময় কাঁধে টোকা৷ - শুনুন৷ - আমায় বলছেন? - আপনার গায়ে টোকা মেরে অন্যকে কিছু বলতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? - টিকিট কেটেছি৷ এই যে৷ - আমার কাঁধে ব্যাগ ঝুলছে? আঙুলের ফাঁকে খুচরো আছে? কথায় হাইস্পীড আছে? - না।  - কাজেই আমি কন্ডাক্টর নই। দরকারটা অন্য। এবং জরুরী।  - কী ব্যাপার বলুন তো..আর আপনি কে? - আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী।  এ'বার যা বলছি শুনুন মন দিয়ে। এই যে গান গাইছেন..। - সরি...খুব লাউডলি গেয়ে ফেলেছি কি? কিছু মনে করবেন না ভাই..। জানি, আমার সুরতাল বোধ কিঞ্চিৎ গোলমেলে, গলা ছেড়ে গাইলে একটা সোশ্যাল আনরেস্ট তৈরি হওয়াটা আশ্চর্য নয়..। আসলে আজ হাওয়াটা এমন স্যুইট..বুঝলেন..যে একটা আমেজ..। - না। লাউডনেস নিয়ে অসুবিধে নেই। - ও মা। তবে? - ও গান আপনি গাইবেন না। - আজ্ঞে? - গাইবেন না৷ ট্রেনেবাসে তো নয়ই৷ বাথরুমেও নয়৷

বাতেলা রকেট

দড়াম করে মিথ্যে বলে দিলেই তো হল না৷ "হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা" কেত চাই৷  কথায় কথায় "আর একটু হলেই এস্পারওস্পার করে দিচ্ছিলাম" গোছের ঘ্যাম চাই৷  ভরদুপুরে 'এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো' গাইবার ধক থাকা চাই৷  আর চাই একদল মানুষ, যারা কথায় কথায় বলবে "ওয়াহ তাজ"!  গুলশ্রেষ্ঠ বলবেন, "এভারেস্টের মাথায় উঠেছিলাম ভিজে গামছা মেলতে"। অমনি জি-হুজুরের দল চিল্লিয়ে উঠবে, " উফ, কী দিয়েছেন৷ আপনার কাছে কী এভারেস্ট আর কীই বা বেহালা"। ক্যাপ্টেন বারফাট্টাই বলবেন, "খেলতে নেমে চাইলেই বারো গোলে জিততে পারতাম। কিন্তু গোল না দিয়ে তিনটে খেলাম কেন? ওই৷ তুলোর মত মন৷  আমি গোল দিলে যদি কেউ দুঃখ পায়? তাই...চেপে গেলাম। দয়ার শরীর হলে যা হয় আর কী"৷ অমনি 'এইত্তো চাই' জনতা ফ্যাঁচফ্যেঁচিয়ে উঠবে, "কী ভাবে পারেন এমন ভাবে কাঁদাতে৷ কী ভাবে পারেন বুকের মধ্যে রাখা একদলা মাখনে এমন অবলীলায় স্নেহের ছুরি চালাতে"।  বাতেলা-রকেট বলবেন, " মানছি আজ আপনাদের পকেট কেটেছি৷ মানছি আজ আপনাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙেছি৷ মানছি আজ আপনাদের পাতে বেড়ে রাখা ভাত ছাইপো

আহ্! মিউজিক!

কী বিদঘুটে স্বপ্ন রে বাপ! শীতের রাতের জবরদস্ত ঘুম গেল বিশ্রীভাবে চটকে৷ তবে ঘুম ভাঙলই যখন, তখন লিখেই রাখি। কী দেখলাম স্বপ্নে? একটা সুপরিচিত পেল্লায় হলঘর৷ অবিকল যেন কফিহাউসের মত, এমন কি রবীন্দ্রনাথের ঢাউস ছবিটাও দিব্যি দেওয়াল আলো করে রয়েছে৷ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সে'ছবিতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, পায়চারি করছেন। ফ্রেম থেকে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে যাচ্ছেন আবার ফেরত আসছেন৷ যাচ্ছেন, আসছেন, যাচ্ছেন, আসছেন৷ আর মাঝেমধ্যেই ফ্রেমের বাইরে কার দিকে যেন তাকিয়ে স্মিত হাসছেন।  চেয়ারগুলো টেবিলগুলো সবই ফাঁকা, খিটখিটে ওয়েটারদাদাদেরও দেখা নেই৷ শুধু বিদঘুটে জোব্বা গায়ে চাপিয়ে এক দাড়িয়াল সাহেবসুবো মানুষ রবীন্দ্রনাথের ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে, টেনিস ম্যাচ দেখার মত রবীন্দ্রনাথের পায়চারি দেখে চলছেন তিনি। ভদ্রলোকের মুখে একটা মিঠে আনন্দের ছাপ, আর চোখে একটা মজাদার ঝিলিক৷ রবীন্দ্রনাথও মাঝেমধ্যে পায়চারি থামিয়ে তাঁর দিকে চেয়েই হাসছেন। বেশ খানিকক্ষণ পায়চারির পর ফ্রেমের মধ্যেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বসলেন৷ ফ্রেমের বাইরে হলঘরে দাঁড়ানো সেই সাহেব দাড়িয়ালও এ'বার একটা কফিহাউসিও চেয়ার টেনে বসে মুখে লেবুলজেন্সের মত কিছু এ

বিপজ্জনক

রোজ অফিস থেকে ফেরার পথে শ্যামলের দোকানে দাঁড়িয়ে এককাপ চা আর দু'টো বিস্কুট খাই৷ অফিস না থাকলেও সন্ধ্যের এই সময়টা এ'দিকে ঢুঁ মেরে যাই৷ কোনও যে ইয়ারদোস্তদের আড্ডার টানে আসি তাও নয়। আমি একা মানুষ, বেশি গল্পগুজবে সবিশেষ স্বস্তিও পাই না৷ শ্যামলের চা আহামরি না হলেও সে'টার মধ্যের কড়া ব্যাপারটা আমার পছন্দ, আর ওই অস্পষ্ট একটা কয়লামাখানো সুবাসটাও বেশ৷ আমার মতই, শ্যামলও বেশি কথার মানুষ নয়৷ তবে আমি অলস, শ্যামল কর্মঠ; সারাক্ষণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ চায়ের সসপ্যান বসাচ্ছে, মামলেট ভাজছে, হিসেব লিখছে, খদ্দেরের খেজুর সামাল দিচ্ছে - নিঃশব্দে, হাসিমুখে। এক মুহূর্তের জন্যও সে জিরোচ্ছে না৷ চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমি শ্যামলের দোকানের উলটো দিকের পেল্লায় আধভাঙ্গা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকি৷ প্রতিদিন, বহুবছর ধরে এ' নিয়মে আমি অভ্যস্ত৷ ব্যাপারটা অনেকটা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকার মত৷ বাড়িটা গায়ে একটা মার্বেল ফলক আছে; সে'টাও খানিকটা ভাঙা৷ তা'তে লেখা "স্থাপিত ঃ ১৮৬-"। ফলকের খানিকটা খসে পড়ায় শেষ সংখ্যাটা বোঝা যায় না৷ তবে ওই, অন্তত দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো৷ ফলকের পাশেই একটা বোর্ড লাগানো,

দাওয়াই

অফিস ফেরত ক্লান্তি উড়িয়ে দেওয়ার ওষুধ - গলা ছেড়ে গান আর জোরদার স্নান।  'কদ্দিন বাড়ি যাওয়া হয়না' মার্কা মনখারাপের দাওয়াই - সঞ্জীবের পাতা উলটে চোখ ছলছলে হে-হে আর দেবনাথে সেঁধিয়ে আইকস। 'কিস্যু ভালো লাগছে না' কাটানোর টোটকা - ইয়ারদোস্তকে পাঠানো 'কী রে শালা' টেক্সট আর মামলেট ভাজার তোড়জোড়। সব গোলমাল হয়ে যাওয়ার ভয় সামাল দেওয়ার মন্ত্র - ইলিশ আসছে, তারপর পুজোর ছুটি, তারপর নলেন।  হাতের হারিকেন ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা চেপে দেওয়ার ফর্মুলা - মায়ের কানের কাছে অদরকারী ঘ্যানঘ্যান, বাবার পিছনপিছন ভিজে বেড়াল মার্কা ঘুরঘুর।

দেবু দত্তর মানিব্যাগ

শ্রদ্ধানন্দ পার্কের কাছাকাছি পরেশের রুটি-ঘুগনির স্টলে মৌজ করে পেটাই পরোটা পেটাবার তাল করে দোকানের বেঞ্চিতে এসে বসেছিলাম৷ এমন সময় সিরিয়াল কিলার দেবু দত্ত পাশে এসে বসে দু'স্লাইস পাউরুটি, চারটে ডিমসেদ্ধ আর দেড় বাটি ঘুগনির অর্ডার দিলে। আমার চোয়াল গেল ঝুলে, আরিব্বাস। আজ কার মুখ দেখে বেরিয়েছিলাম!  যে' দেবু দত্তকে লালবাজার ইন্টারপোল সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে, সে কিনা আমার পাশে বসে ঘুগনিতে পাউরুটি ডুবিয়ে খাবে? অবিশ্বাস্য যে। সোজাসুজি তাকানোর আদেখলামোটা আমার না-পসন্দ, কিন্তু উত্তেজনা সামাল দেওয়া দায়৷ দেবু দত্তকে চিনতে পারা মামুলি ব্যাপার নয়। এই যেমন আজ খয়েরি প্যান্ট আর গোলাপি চেক হাফশার্ট পরে বসে আছে, থুতনিতে কাটা দাগ, কাঁচাপাকা পেল্লায় গোঁফ, নাদুস-নুদুস চেহারা, মাথা আলো করা টাক, গালে অমায়িক হাসি; হয়ত পরিচয়  জিজ্ঞেস করলেই জানান দেবে যে সে নাকি বঙ্কুবিহারি বয়েজ হাইস্কুলের ভূগোল শিক্ষক হরেন মল্লিক। অথচ আগামীকালই হয়ত ভদ্রলোককে দেখা যাবে হাইকোর্ট চত্ত্বরে; তালপাতার সেপাইয়ের মত হাড়গিলে চেহারা। স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরে ডাব বিক্রি করছেন; শশব্যস্ত উকিল আর উদ্ভ্রান্ত মক্কেলরা তার খদ্দের৷  কিন্ত