Showing posts with label বিরিয়ানি. Show all posts
Showing posts with label বিরিয়ানি. Show all posts

Sunday, March 16, 2025

সলজ্জ নিবেদন



"আরে অকারণে আবার এইসব কেন"

"কী দরকার ছিলো বলো এত হ্যাঙ্গামা করার"

"সামান্য ডালভাতেই হয়ে যেতো তো। খামোখা এত ঝকমারি..."

"মিলেট বিরিয়ানি হয় জানিস? সে'টা এ'রকম আনহেলদি নয়"

"আনিয়েছ যখন দু'চামচ খেয়ে নেব না হয়। এমনিতে রুটি-তরকারি হলেও সোনামুখ করে খেয়ে নিতাম"

Wednesday, December 6, 2023

ফাইনালের পরে



(ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩: ফাইনালের পরে লেখা)

**
কাল বিরিয়ানি খাওয়ার প্ল্যান ছিল। ধরেই নিয়েছিলাম; আনন্দধারা ভুবনে বইবে,  তা'তে গা না ভাসালে চলবে কেন?

কিন্তু৷ কপালে লেখা আছে ভেজা গামছা গায়ে ভ্যাপসা গরম সন্ধেবেলা ছাতে পায়চারি করে হদ্দ হব। অথচ ছক কষব আদ্দির পাঞ্জাবি পরে নিজেকে বাবু পেল্লায়কুমার ভেবে বাহারে গজল শুনতে শুনতে হাঁটুতে তাল দেওয়ার; তা' চলবে কেন?
 
আমার প্ল্যানের কান মুলে আনন্দধারা বাবাজী পা পিছলে আলুরদমত্ব লাভ করলেন৷ তারপর মচকানো ঠ্যাঙে চুন-হলুদ লাগিয়ে বিছানায় সেঁটে রইলেন, ভুবন অন্ধকার।

সে অন্ধকার সাফ হবে কী করে? আনন্দ-বিরিয়ানির ঝাড়বাতি প্ল্যান বাতিল।
এলো বিষাদ-বিরিয়ানির সন্ধাপ্রদীপ প্ল্যান।

তা'তেই মুক্তি, তা'তেই উত্তরণ।

মনে রাখবেন, বকুলতলা ক্রিকেট ম্যাচ হেরেছিল বটে, কিন্তু তাদের 'ম্যাচ তো জিতবই' ভেবে সেই যে ঢালাও রান্নাবান্না ও ফিস্টির আয়োজন; সে'সব যারা ব্যর্থ বলে, তারা আর যাই হোক ক্রিকেটপ্রেমী নন।

পুনশ্চ:

টীম বকুলতলা, টীম বেলতলার বা কোচ লায়ন রে'র নাম যারা শোনেননি, তাদের আর ক্রিকেট দেখে কাজ নেই; তারা বরং ইঞ্জিন অয়েল সম্বন্ধে পড়াশোন করুন গিয়ে।

Tuesday, February 14, 2023

ভ্যালেন্টাইন বিরিয়ানি




ডিয়ার বিরিয়ানি,

আশা একটাই, যেন প্রাণপণ ভালোবাসতে পারি।

দেখো, যেন নাক উঁচু তর্কাতর্কিতে আটকে না পড়ি। কলকাতাইয়া -মোরাদাবাদি জাতপাত নিয়ে বেফালতু খামচা-খামচি শুরু না করি।
যেন, স্রেফ ভালোবাসায় "এইত্তো আমি" বলে আত্মসমর্পণ করার সৎ সাহসটুকু রাখতে পারি। বাতেলায় ভেসে না গিয়ে কবজি ডুবিয়ে কেল্লা ফতে করতে পারি।

পার্থিব গল্প-আড্ডা-গুলতানিতে আটকে পড়ে যেন তোমায় ঠাণ্ডা না করে ফেলি। ইয়ারদোস্ত আর তাঁদের খাওয়ার পাতের খেজুরালাপ; ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু বিরিয়ানি চাল-মাংস থেকে উঠে আসে ধোঁয়া যদি সময়মত জিভে-নাকে চালান না করতে পারি, তা'হলে ব্যর্থ আমার সঞ্জীব পড়ে চোখ-ছলছল, ব্যর্থ আমার সমুদ্র বা পাহাড় দেখে অস্ফুটে বলা; "আহা"।

তোমার প্লেটের পাশে খিটখিটে মুখে এসে যেন কোনোদিনও না বসি। যেন মনে রাখতে পারি যে সাচ্চা কমরেডের মত; তুমি সবসময়ই ছিলে, আছো, থাকবে।

আর হ্যাঁ, যেন তোমার প্লেটের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ি, হামলে না পড়ি। প্রেম-ভালোবাসায় গাম্বাটপনা যেন মিশিয়ে না ফেলি। ধীরে-সুস্থে, স্মিত হেসে, যেন গা ঘেঁষে বসতে পারি। দু'দিন বইতো নয়। 

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, বিরিয়ানি। ভালো থেকো।

ইতি, বংপেন। 

Saturday, April 9, 2022

বিরিয়ানির টেক-আনবক্সিং

টেক রিভিউয়াদের চ্যানেলে,
তাঁদের মনোগ্রাহী একপেশে স্টাইলে;

বিরিয়ানির আনবক্সিং ও রিভিউ দেখতে চাই৷ 

প্রথমে দেখানো হবে কনফিগারেশনঃ
৮ জিবি মাটন,
অক্টাকোর আলু,
কোয়াড এইচডি চাল,
তেলতেলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর,
ইত্যাদি। 

তারপরে পার্ফমেন্স টেস্টিং৷

দেখনাইয়ের রেজোলিউশন,
ফাস্টচার্জিং সুবাস৷
বোকে মোডে নলিহাড়ের মায়া,
হাইডেফিনিশন মশলার মাপা ম্যাজিক,

সবশেষে ফাইনাল রেটিং;

জিভে ক'লিটার জল বইবে।
ট্যাঁক কতটা ধসবে। 
আর, মনের গোরিলা গ্লাসে সে বিরিয়ানি কতটা দাগ ফেলবে৷

তবেই না রিভিউ৷ 

কবে পাবো আমরা বিরিয়ানির MKBHD বা "'মোস্ট-কাব্যিক-বিরিয়ানি-হাভাতে-ডিউড"কে?

Sunday, February 27, 2022

বিরিয়ানির কবিগান



বিরিয়ানি ব্যাপারটা নিয়ে এত মাতামাতি বোধ হয় আইডিয়াটার নিপাট সারল্যের জন্য৷ ভাত-মাংস, একই পাত্রে, একই সঙ্গে৷ অবশ্য সরল ব্যাপারটা খাইয়েদের জন্য৷ রাঁধিয়েদের কাজটা সহজ নয় তেমন, এ বড় জটিল শিল্প৷ ভাতের দানা কতটা শক্ত রইল, মাংস যথেষ্ট তুলতুলোলো কিনা, মশলার ব্যবহারে যথেষ্ট সংযম দেখানো গেছে কিনা; এমন হাজারো হ্যাপা৷ 

কিন্তু আউটপুট ব্যাপারটা সুকুমার সমগ্রর মত জম্পেশ; সহজসরল অথচ ম্যাজিকে টইটুম্বুর একটা ব্যাপার। বিরিয়ানি ছাড়া খানাপিনা ভাবতে হলে আপনাকে ঝোল বাছতে হবে, রুটি বা ভাতের রকমফের দেখতে হবে, তার পাশাপাশি এ'টি এবং ও'টি৷ বিরিয়ানি ব্যাপারটা তুমুল; মাংস-ভাত, ঝোলে ল্যাপ্টালেপ্টি নেই কিন্তু শুকনো দলা হয়ে গলাতেও আটকে যাবে না৷ আর সেই অনাড়াম্বরের জন্য হয়ত খানিকটা খরচেরও সাশ্রয় ঘটে; ওই তিনচারটে পদের দরকার স্রেফ বিরিয়ানিতে মিটে যাওয়ায় (এই ছবিতে বিরিয়ানির পাশাপাশি যে মুর্গির রগরগে ঝোল আছে, সে'টা নেহাতই উত্তমকুমার পাশে আমার মত গাম্বাটের হ্যা-হ্যা করে দাঁতিয়ে দাঁড়ানোর মত অদরকারী)। 

বিরিয়ানি চিনামাটির প্লেটেও চলে, রূপোলী থালাও আলো করে থাকে আবার  সস্তা সাদা কাগজের বাক্সেও একই রকম জমজমাট এবং উপভোগ্য৷ এর ফলে ব্যাপারটার মধ্যে রয়েছে দুর্দান্ত 'ইজি অ্যাকসেস'। সে'ভরসাতেই শেয়ালদা স্টেশনের কাছে জীর্ণ ঠেলার হাঁড়ির বিরিয়ানি খাওয়ার থ্রিল য কোনও কুলীন রেস্তোরাঁয় বসে দাঁত চিবিয়ে বিরিয়ানি বিষয়ে সিঙ্গলমল্টিও বিশ্লেষণ করার সমান৷ 

আর এই ভালোবাসাটা মোটামুটি রোববার ভালোলাগার মত, অথবা ট্রেনের জানালায় বসে মিঠে হাওয়া মুখে লাগানোর তৃপ্তির মত।  ব্যাপারটা এতই মোটা জাতের যে এ প্রসঙ্গ উঠলেই বিরিয়ানি-ভালোবাসা মানুষজনের ইমোশন পিলপিলিয়ে হ্যামিলিনের ইঁদুর-দলের মত বেরিয়ে আসে৷ আলোচনায় খোঁচাখুঁচিও থাকে, থাকে ব্যান্টার; অমুক জায়গা ওভাররেটেড, তমুক জায়গার বিরিয়ানি ডালডা চোবানো, ইত্যাদি৷ তবে গোটাটাই পান্নালালের "যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি"র জায়গায় থেকে৷ বিরিয়ানি যুদ্ধ বলে কিছু হয়না, পুরোটাই কবিগানের রসালো লড়াই।

যা বলতে এতটা ধানাইপানাই, সে'টা বলি৷ এত বিরিয়ানি-বিরিয়ানি আদেখলাপনার মূলে একটাই কারণ; বিরিয়ানি-কমরেডদের সেলাম জানানো৷ আর ইয়ে (ফিসফিসিয়ে, অপরাধবোধ খানিকটা চেপে রেখে) একটা মোক্ষম কথা জানিয়ে রাখা দরকার। হ্যাংওভার কাটানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র লেবুজল নয় কিন্তু, বিরিয়ানির কার্ব আর সুবাসই আপনার শ্রেষ্ঠ ভরসা৷ চিয়ার্স!

Friday, June 18, 2021

নিউনর্মাল বিরিয়ানি



- লাঞ্চে বাসি বিরিয়ানির জবাব নেই ভায়া৷

- ট্রু৷ তবে ইয়ে, থার্ড ওয়েভ ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না৷

- মাংস হয়ত পাতে সামান্য কম রয়েছে, কিন্তু ওভারনাইট রেফ্রিজারেশনের ফলে ফ্লেভারে একটা অন্য ঘ্যাম চলে আসে, তাই নয় কী?

- একদম৷ ইয়ে, এইমাত্র একটা গা-কাঁপানো আর্টিকল পড়লাম। বম্বেতে ইতিমধ্যেই নাকি তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে৷ অবশ্য ঠেকানোটা ওয়াজ নেভার অ্যান অপশন, শুধু ইম্প্যাক্টটাকে যদি একটু মিনিমাইজ করা যেত৷ আসল অস্ত্র হল পাইকারি ভ্যাক্সিনেশন৷ খোলামকুচির মত ছুঁচ গেঁথে যেতে হবে৷ 

- ডিম সেদ্ধটা অবভিয়াসলি টাটকা৷ বাসি বিরিয়ানির আলু আর তাজা ডিমসেদ্ধর কম্বিনেশনটা কিন্তু আউটস্ট্যান্ডিং। 

- একদম তাই৷ আচ্ছা, মাস দেড়েক আগের সেকেন্ড ওয়েভের সেই ডিসাস্টার যেন গত জন্মের কাহিনী মনে হচ্ছে৷ তাই না? অথচ  দু'দণ্ড মন দিয়ে সে'সব কথা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। মেজপিসেমশাই চলে গেলেন৷ পাড়ার মন্টু মাত্র তিনদিন ভুগে...। অফিসেই তো অন্তত জনা চারেক..। অথচ আজ দেখো, সে'সব যেন অন্য জগতের ঘটনা মনে হচ্ছে৷ 

- আমার একটা পার্সোনাল থিওরি আছে জানো৷ টাটকা বিরিয়ানির স্কেলে সিরাজ সামান্য এগিয়ে৷ কিন্তু বাসিতে আরসালাম ফটোফিনিশে বেরিয়ে যাবে৷ 

- হুম৷ পরের ফেজে শুনছি ছোট ছেলেমেয়েদেরও বিস্তর ভুগতে হতে পারে। খোকার সেফটির কথা ভেবেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠছে৷ নট টু মেনশন; বাপ-মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই৷

- আসলে কী জানো, বিরিয়ানি বাসি হলে তার গায়ে মায়া লাগে।

- নাহ্, লাইফটাকে কচুকাটা না করে এ প্যান্ডেমিক সরবে না।

- দু'দিন বইতো নয় ভায়া৷ রাত্রে গুরুপাক না রেখে সামান্য চাপ আর রুমালি রুটি জোম্যাটো করা যাক৷ কী বলো?

- তাই হোক৷ আর ইয়ে, অক্সিমিটারটা ট্রাবল দিচ্ছে৷ ব্যাটারি চেঞ্জ করেও লাভ হল না৷ আর একটা কিনতেই হবে৷ অর্ডার দিয়েই ফেলি৷ এ'সব ব্যাপারে দেরী করে লাভ নেই৷

**

খেতে বসে নিজের সঙ্গে গল্প না জুড়ে উপায় থাকছে না৷ খেলোয়াড়দের দেখেছি হাইভোল্টেজ মুহূর্তে নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে৷ শেষ বলে জিততে হলে চার রান দরকার, বোলার রানআপের গোডায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছেন "কাম অন, কাম অন। বোল ইট ওয়াইড আউটসাইড দ্য অফ স্টাম্প । স্কেলে মাপা বল; কাম অন! ইউ ক্যান ডু ইট"। পাড়াতুতো এক জ্যেঠুকে দেখেছি শেষ বয়সে এসে অনবরত নিজের সঙ্গে গল্প জুড়ছেন; নিজেই গোলমেলে প্রশ্ন করছেন, নিজেই লাগসই উত্তর দিয়ে কেল্লা ফতে করছেন৷ আমার এক বন্ধুকে দেখতাম জটিল অঙ্ক কষার সময় মশগুল হয়ে চাপা সুরে অঙ্কের স্টেপগুলো আউড়ে যেত; কোনও জব্বর কঠিন কোনও প্রব্লেমকে জব্দ করতে পারলে নিজেই নিজেকে সাবাশ বলে উঠত। 

নিজের সঙ্গে নিজের বিড়বিড়গুলো বোধ হয় এক ধরণের মেডিটেশন৷ ধরা যাক ধুন্ধুমার যুদ্ধ চলছে, সাতাশ ঘণ্টা অনবরত শত্রুপক্ষের বুলেট এড়িয়ে হয়ত কোনও সৈনিক নিজের বাঙ্কারে এসে পৌঁছেছে৷ ঘামরক্তভেজা জামাকাপড় ছেড়ে কফির মগ হাতে দু'দণ্ড গা এলিয়ে দিয়ে প্রিয় গানের সুর গুনগুন করতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই গানের সুরে আর কফির গন্ধে ভেসে গেলে তো তার চলবে না৷ মনের মধ্যে একটা বেসুর বেজেই চলবে "ঘণ্টাখানেক পরেই যুদ্ধ ব্রাদার! যুদ্ধ। গুলি। বুঝেছ? ব্লাডি ওয়ার! মুহূর্তের অসাবধানতায় স্নাইপারে সাফ হয়ে যাওয়া বা ল্যান্ডমাইন ফেটে উড়ে যাওয়া"। কফি শেষ হয়, গান থামে; কিন্তু স্নায়ু গা এলাবার তাল করলেই চিমটি৷ 

এই নিউ নর্মালে নিজেদের নির্ভেজাল ভালোলাগাগুলোকেও আর নিশ্চিন্তে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না৷ পছন্দের খাবার, ভালো লাগা বই, মনভালো করা আড্ডা; এ'সমস্ত কিছুর মধ্যেই নিজের সঙ্গে জরুরী আলোচনাগুলো চালিয়ে যেতে হচ্ছে৷ এ যুদ্ধ সহজে শেষ হওয়ার নয়৷ সমস্ত ভালোলাগাগুলোকে মুলতুবি রাখার উপায় নেই, আবার সহজে ভেসে যাওয়ারও উপায় নেই। 

নিজের মধ্যে বাস করা বিরিয়ানি ভালোবাসা আলাভোলা মানুষটার আস্তিন মাঝেমধ্যেই টেনে ধরছে যে ভদ্রলোক, সেও ভুরু কুঁচকে আমার মধ্যেই গ্যাঁট হয়ে বসে রয়েছে৷

Thursday, June 17, 2021

বোধদয়



স্যাঁতসেঁতে একটা ঘর৷  একটা দেওয়ালে পাশাপাশি দু'টো ক্যালেন্ডার, একটা বাংলা আর একটা ইংরেজি৷ মা তারা হার্ডওয়্যার স্টোর্সের বাংলা ক্যালেন্ডারটা চার বছর পুরনো, গ্রীনপ্লাইয়ের ইংরেজিটা বছর দুই আগের৷ টিউবের আলোতেও ঘরের ঘোলাটে ভাব কাটছে না। হলুদ দেওয়ালগুলো বেশ বিবর্ণ৷ যে দেওয়ালে ক্যালেন্ডার-জোড়া ঝুলছে, তার উলটো দিকের দেওয়ালে একটা অজন্তার দেওয়াল ঘড়ি৷ ঘড়িটা বন্ধ৷ তবে সময়টা সন্ধ্যের পরেই হবে। 

সে ঘড়ির নীচেই ঘরের একমাত্র জানালা, সে'টা বন্ধ৷ জানালা ঘেঁষে রাখা একখানা টেবিল যার বয়স অন্তত আশি হওয়ার কথা৷ সে টেবিলের ওপর বইয়ের স্তুপ। আর একটা কলমদানি। আর একটা টেলিফোন। ঘরের আসবাব বলতে একটা চৌকি, আর দু'টো আলমারি৷ একটা আলমারি স্টিলের, অন্যটা কাঠের৷ কাঠের আলমারিটাও বইয়ে বোঝাই৷ 

 সেই স্টাডি টেবিলের সামনে একটা চেয়ার৷ সে চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক৷ মাথায় যে ক'গাছা চুল পড়ে রয়েছে তার অর্ধেকের বেশিই পাকা কিন্তু মুখ দেখলে মালুম হয় যে বয়স নিশ্চয়ই বাহান্নর বেশি নয়৷ পরণে হাফ শার্ট আর পাজামা৷ 

আচমকা৷ 
ঘরের দরজাটা ঘটাং শব্দে খুলে গেল আর ভদ্রলোকের ঝিমুনি গেল চটকে। ঘরে ঢুকল এক ছোকরা গোছের ছেলে, বয়স বাইশ চব্বিশের বেশি হবে না৷ হালকা গোঁফ, বাহারি টেরি আর তার কালো টিশার্টে একটা হলুদ বেড়ালের ছবি৷ ছোকরার হাতে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট। 

চেয়ারে বসা ভদ্রলোক খেঁকিয়ে উঠলেন।

- ঘরে ঢোকার আগে নক করতে হয় রে রাস্কেল!

- আরে মামা! তুমি এখন সে'সব ছেঁদো এটিকেটের থেকে অনেক দূরে চলে গেছ। রিল্যাক্স।

- ফের শুরু হল যত অলুক্ষুণে কথাবার্তা৷

- ট্রুথ ইস নট অলুক্ষুণে মামা৷

- যত আগডুমবাগডুম৷ কতবার বলেছি আমায় জ্বালাতে আসিস না।

- না এসে উপায় কী? তুমি এ ঘর ছেড়ে না বেরোলে আমাদের লাইটইয়ার্স ক্লাবের ঘর হিসেবে এ'টাকে ব্যবহার করব কী করে বলো। 

মামা এ'বার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন৷ 

- এ ঘরে আমি আঠাশ বছর ধরে আছি৷ এ ঘর  আমি ছাড়তে যাব কোন দুঃখে রে হারামজাদা?

- ল্যাঙ্গুয়েজ মামা। প্লীজ। ল্যাঙ্গুয়েজ।

- দ্যাখ পটা, তোর এই বদমায়েশি আমি অনেকদিন ধরে সহ্য করছি৷ প্র‍্যাক্টিকাল জোক খানিকক্ষণ ভালো লাগে তবে এ'টা জাস্ট সমস্ত লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷

- আচ্ছা ঝামেলা তো। নিজে মরে ভূত হয়ে এ ঘর আটকে বসে আছ!অথচ সে'টা বললেই দোষ?

- দিব্যি বই পড়ছি, পোয়েট্রি লিখছি৷ আর তুই ব্যাটা এ ওবেলা এসে এ'সব রিউমর ছড়িয়ে যাচ্ছিস৷ আমি তোকে পুলিশে দেব।

- ছ'মাস আগেই পটল প্লাক করে ফেলেছ মামা৷ এমন ঢ্যাঁটামোর কোনও মানে হয়? 

- মহাঝ্যামেলা। দিব্যি বেঁচেবর্তে আছি৷ এই দ্যাখ, পিঠে ঘামাচিও বেরোচ্ছে।

- ও'সব তোমার মনের ভুল৷ হাবুল তান্ত্রিক এসে বারবার তোমায় রিয়ালিটিটা জানিয়ে যাচ্ছে অথচ তোমার সুবুদ্ধি উদয় হচ্ছে না৷ 

- হাবুলটা একটা ফোর টুয়েন্টি৷ ফ্রড৷ তুই জানিস এককালে সে লোক ঠকিয়ে এক জালি কোম্পানির ইন্স্যুরেন্স গছাতো মানুষকে?

- এখন হাবুলদা রিফর্মড মানুষ মামা৷ কেবল-টিভিতে বসে প্রতি অমাবস্যার রাত্রে লোককে কনসাল্ট করে৷ মেজমাসী বলে ধন্বন্তরি।  

- বুল্টিটা একটা গবেট৷ 

- মামা, আবারও বলছি। ছ'মাস হল৷ সেরিব্রাল। ম্যাসিভ৷ এ'বার এ ঘরটাকে হন্টেড করে না রেখে মানে মানে সরে পরো দেখি৷ লাইটইয়ার্স ক্লাবের ফিউচার নষ্ট করছ তুমি৷ এই ঘরটা বাগাতে পারলে আমি ক্লাবের সেক্রেটারি হব, সেটিং করা আছে।

- আরে মহামুশকিল। নিজের আখেরের জন্য জ্যান্ত মানুষকে মড়া বলবি?

- ইউ আর অনলি অ্যান আত্মা।

- দ্যাখ, ফের যদি তুই হাবুলকে এনেছিস..।

- না মামা। আমি হাবুলের চেয়েও এফেক্টিভ প্রমাণ এনেছি৷ 

- প্রমাণ? আমি মারা গেছি তার প্রমাণ? 

- অকাট্য।

লায়েক ছোকরাটি প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে একটা সাদা কাগজের বাক্স বের করে সে'টা মামার সামনে টেবিলের ওপর রাখে৷

- এ'টা কী রে?

- এ'টাই প্রমাণ। যে তুমি মৃত।

- ইয়ার্কি হচ্ছে?

- আগে বলো, সর্দি হয়েছে তোমার?

- না৷ ন্যাসাল প্যাসেজ ক্লীন৷ 

- মনের মধ্যে আচমকা ফুর্তি টের পাচ্ছ?

- নট অ্যাট অল। এ'সব কী রকমের হেঁয়ালি?

ভাগ্নে চোখ গোলগোল করে এগিয়ে এলো মামার দিকে। 

- কোনও সুবাস পাচ্ছ না মামা?

- নাথিং৷ তা'তে কী?

পি সি সরকারের মত বরফ গলানো হাসি ভাসিয়ে পটা ফের জিজ্ঞেস করলে;

- কোনও গন্ধই কি পাচ্ছ না? মনে কি কোনও আনচানই নেই?

- নেই! আরে খুলে বল না কাঁচকলা!

উত্তর না দিয়ে পটা এগিয়ে এসে সে কাগজের বাক্সের ঢাকনাটা খুলে দিল। 

বাক্সের ভিতরে তাকিয়ে থমকে গেলেন মামা। গলার স্বর বুজে এলো৷ চোখ ছলছলিয়ে উঠল৷ কাঁপতে কাঁপতে সে বাক্সের ওপর ঝুঁকে পড়লেন তিনি৷ কয়েক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গড়িয়েও ম্যাজিকের মত গায়েব হয়ে গেল। উদ্ভ্রান্তের মত মাথা নাড়তে লাগলেন তিনি। 

আর পটা বিকট ভঙ্গিতে নাচতে শুরু করলে, যেন সে ঠাকুর বিসর্জনে চলেছে আর মাইকে লারেলাপ্পা গান বাজছে৷ 

খানিক পর মামাই অস্ফুটে বলে উঠলেন;

- আ...আমি..আমি বিরিয়ানির সুবাস পেলাম না?

- দ্যাট ট্যু মামা, আরসালানের বিরিয়ানি। প্যাক করিয়ে ডাইরেক্টলি নিয়ে আসছি।

- আমি বিরিয়ানির সুবাস পেলাম না!

- বিলকুল পেলে না।

- বিরিয়ানির সুবাস পেলাম না৷ মনটা আনচান করে উঠল না। বুকের মধ্যেও নো-মোচড়!

- পেলে না৷ উঠল না। মোচড়ালো না।

- আমি সত্যিই মরে গেলাম রে পটা৷ এমন এলেবেলে ভাবে? জাস্ট মরে গেলাম?

- জাস্ট মরে গেলে মামা।

- ক্লাবঘর করবি কর। বইগুলোর অযত্ন করিস না। কেমন? 

- যো হুকুম মামা৷ এ'বার এসো দেখি৷ দুগ্গা দুগ্গা!

মামার চেহারাটা আবছা হয়ে আসছিল৷ আর ও'দিকে পটা ততক্ষণে 'বলো হরি হরি বোল' ডিস্কো সুরে গাইতে গাইতে বিকট নাচ শুরু করেছে।

Tuesday, October 13, 2020

মামা ও বিরিয়ানি রহস্য


- কী হল মামা! বিরিয়ানিতে কবজি না ডুবিয়ে অমন গুম মেরে বসে রইলে যে?

- ক্যালামিটি!

- সে কী।

- ক্যাটাক্লিজম।

- আরে হয়েছেটা কী?

- রাহাজানি। 

- উফ! বিরিয়ানির খুশবুতে গড়বড়? 

- না। পার্ফেক্ট সৌরভ নাকে বুকে কভারড্রাইভ চালাচ্ছে৷ সমস্যা অন্য জায়গায়৷ 

- কোথায়?

- আমি নিজে দু'প্লেট বিরিয়ানি প্যাক করিয়ে এনেছি ভাগ্নে। নিজের হাতে করে বয়ে এনেছি সেই দু'প্যাকেট।

- তবে?

- তোর প্লেটে পরিমাণ ঠিক আছে৷ কিন্তু আমার প্লেটে..।

- কম? 

- কম।

- কিন্তু আমার চোখে তো..।

- শুধু চোখ দিয়ে বিরিয়ানির তল পাবি নাকি রে রাস্কেল?

- স্পষ্ট দেখছি তো, সেম কোয়ান্টিটি। 

- কাঁচকলা। আমার প্লেটে কম।

- কতটা কম?

- এককণা চাল কম। 

- তুমি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছ মামা?

- ডেড সিরিয়াস। বিরিয়ানি নিয়ে ফচকেমো আমি বরদাস্ত করতে পারিনা।  

- তোমার সামনেই তো প্যাকেট থেকে প্লেটে ঢাললাম। এই দেখো বাক্স। এক কণাও চাল এখানে পড়ে আছে কি? নেই। শেষ কণাটুকু  প্যাকেট থেকে থালায় ট্রান্সফার করেছি। আর টেবিলেও ভালো করে দেখো। এক কণাও কোথাও পড়ে নেই। উফ, আমি এই আজগুবি অভিযোগের উত্তরই বা কেন দিচ্ছি কে জানে।

- একসময় পৃথিবীর রোটেশন আর রিভোলউশন ব্যাপারটাও মানুষ আজগুবি বলে মনে করত। যাকগে। নাহ্, বিরিয়ানি ঢালতে গিয়ে তুই কোনও রকম অযত্ন করিসনি। কিন্তু তবু, একদানা অমৃত চাল যে কোথায় গায়েব হল রে ভাগ্নে...।

- যত্তসব পাগলামো। এক কণা চাল নাকি পাতে কম পড়েছে। তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে মাম,  মামী ঠিকই বলে। তুমি বিরিয়ানির প্লেট থেকে হারিয়ে যাওয়া এককণা হারানো চাল নিয়ে শোকসভা বসাওগে যাও৷ আমি বরং  খাওয়া শুরু করছি।

- হাই-ক্লাস বিরিয়ানির থালা থেকে হাপিস হওয়া এক কণা চালের দাম বোঝার বয়স তোর হয়নি ভাগ্নে। হয়নি। 


*****

- এই যে কেষ্টা! পাঞ্চালী কতক্ষণ ধরে টেলিপ্যাথেটিকালি তোমায় ডেকে ডেকে হন্য হচ্ছে৷ আর এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল?

- যুধিদা। তোমার সবেতেই টেনশন। কেসটা কী?

- আরে ফরেস্ট ক্যাম্পের লাঞ্চমেনুতে আজ খিচুরি মামলেট ছিল। খেয়েদেয়ে আয়েস করে সবে লম্বা হওয়ার তাল করছি- এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাত। দুর্বাসা স্যার হাজির। এক্কেবারে সদলবলে।

- এই সেরেছে। খিটখিট বুড়ো আবার এই ভরদুপুরে জঙ্গলে কেন? দু'দিন আগেই তো তাঁকে দুর্যোধনের বাড়িতে ফুর্তি করতে দেখলাম। 

- ওই রাস্কেল দুর্যোরই কারসাজি এ'টা। খেপচুরিয়াস দুর্বাসাকে অসময়ে এ'খানে লাঞ্চে করতে পাঠিয়েছে যাতে আমরা খাওয়াতে না পেরে অপদস্থ হই। আর তারপর একটা অভিশাপ-টভিশাপ দিলেই চিত্তির। 

- তা দুর্বাসা আর তাঁর দলবল এখন কই?

- নদীতে নাইতে গেছে। তবে ফিরে এলো বলে। এ'দিকে হেঁসেল খালি। পাঞ্চালী গোঁ ধরে বসে আছে - কিছুতেই সে এই অসময়ে গেস্টদেরর জন্য নতুন করে রান্না চাপাতে পারবে না। 

- কেসটা সিরিয়াস। তবে চাপ নিওনা যুধিদা। ম্যায় হুঁ না। খিচুড়ির হাঁড়িটা আমার কাছে  নিয়ে এসো দেখি।

- তা'তে কী হবে? সে হাঁড়ি খালি পড়ে আছে।

- ও একদানা চাল পড়ে থাকলেও হবে।

- ভীম ওই হাঁড়ি থেকে ডাইরেক্টলি খায় কেষ্টা। এককণাও পড়ে থাকার চান্স নেই। হাঁড়িখানা পড়ে আছে তাই বাপের ভাগ্যি।

- আরে আনো না হাঁড়িটা। আমি না হয় মন্ত্রবলে এক কণা চাল সে'খানে নিয়ে আসব'খন। যে সে চালের কণা নয়- এক্কেবারে সুপার ইস্পেশ্যাল ভাতের কণা। সেই এক দানা চাল আমি নিজের মুখে চালান করলেই জগৎসংসারের খিদে গায়েব হবে। দুর্বাসা আর তাঁর চ্যালাচামুণ্ডারাও ঢেঁকুর তুলতে তুলতে কেটে পড়বে, পাতপেড়ে খাওয়ার সাহস আর তাঁদের থাকবে না।

- বাহ্। তুকতাক ভালোই শিখেছ কিন্তু কেষ্টা। তা, এই ইস্পেশাল ভাতের কণাটা আসবে কোথা থেকে?

- বিরিয়ানি নামের একটি পদ থেকে তুলে আনতে হবে যুধিদা। স্ট্রেট ফ্রম দ্য ভবিষ্যৎ। যাও, এ'বার ফাঁকা হাড়িটা নিয়ে এসো দেখি।

Thursday, July 30, 2020

কবীরিয়ানি


- পুরস্কারটা পেয়ে কেমন লাগছে অপূর্ববাবু?

- কী বলব। এত বড় একটা সম্মান৷ সে'টাও মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমার হাতে তুলে দিলেন। ভাবলেই এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

- মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আপনার নোবেল পাওয়া উচিৎ। আফটার অল, একটা গোটা রাজ্যের ভাগ্যপরিবর্তন ঘটেছে আপনার এই আবিষ্কারের হাত ধরে।

- আজ্ঞে..ইচ্ছেটা আমার মনেও যে ছিল না তা নয়। সুইটেবল ক্যাটেগরির অভাবে অ্যাপ্লিকেশনটা ফাইল করা গেলনা। যাকগে, বাংলার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি৷ সে'টাই অনেক।

- শুনেছি গত সাতমাস ধরে ট্রায়াল চালিয়েছেন?

- প্যান্ডেমিকের বাজারে পাবলিক হেলথ নিয়ে তো আর ছেলেখেলা চলেনা। এই আবিষ্কার নিয়ে সাতটি স্তরে হিউম্যান ট্রায়্যাল চালিয়েছি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাকসেস রেট। একশোয় একশো।

- কবীরয়ানি নামটার পিছনে কোনও ইন্সপিরেশন? 

- ‘‘মায়ায় অন্ধ বসুন্ধরায় কেউ চেনেনা আমাকে। বাতাসও নই মাটিও নই, আমি শুধুই জ্ঞান। সবার ঊর্ধ্বে আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা’’। শুনেছেন তো?

- কবীরের দোঁহে?

- রাইট। তবে সামান্য ট্যুইস্ট করে চালাই৷ কবীর বলেছিলেন 'আমি শুধুই শব্দের এক ফেরিওয়ালা'। আমি বলি 'আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা'। কখন কোন ম্যাজিকে কাজ হয় তা কে বলতে পারে। কবীরে শব্দে কেল্লা ফতে করেছিলেন। আমি ফোকাস করেছি সুবাসে।

- আর সেই সুবাসে সমস্ত বাঙালি নিজের অসাবধানতা ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠল। বাজার করে নিকেশ হয়ে যাবে; এই বিশ্রী বদনাম উড়িয়ে দিয়ে এখন বাঙালি গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। পরিসংখ্যানও তাই বলছে, করোনার দাপট বেশ কমে এসেছে আপনার আবিষ্কৃত বিরিয়ানি ফ্লেভারের হ্যান্ডস্যানিটাইজার বাজারে আসার পর।

- কবীরিয়ানি তো শুধু সুগন্ধ নয়৷ এক্কেবারে আদত ফ্লেভার৷ কবীরিয়ানিতে হাত কচলে মুলোশাক মাখা ভাত খেলেও যে কারুর মগজ আচ্ছন্ন থাকবে খাঁটি কলকাতা বিরিয়ানি মার্কা ভালোবাসায়। আর সেখানেই মানুষ কনভিন্সড হয়েছেন, বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন কবীরিয়ানিকে। রোজ রোজ গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে, ঠেলাঠেলি করে ভালোমন্দ বাজার করার হ্যাপা নেই। টোটাল নিশ্চিন্দি। আমার এই হ্যান্ডস্যানিটাইজার হাত ডলে ভাতেভাত খেতে বসেও সবাই 'বহুত খুব, নাজুক' বলে টেবিল চাপড়াচ্ছেন। বাজারের ভীড় কমে যাওয়ার গোটা রাজ্যে এখন প্রবল ডিসিপ্লিন, তাই না?

- একদম। তাছাড়া, থ্যাঙ্কস টু ইওর আবিষ্কার, কারণে অকারণে অফিসে, রাস্তায়, বাড়ির সোফায়;  সবাই এখন মাঝেমধ্যেই কবীরিয়ানি বের করে হাত কয়েক ফোঁটা ঢেলে নিচ্ছে। এ'টাই মনভালো করার সবচেয়ে সহজ ফর্মুলা। অনেকে বলছেন যে মনে ফুরফুর আনতে আপনার এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নাকি সিঙ্গল মল্টের চেয়েও বেশি এফেক্টিভ।

- হেহ্। হেহ্।

- ইফ আই মে আস্ক, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী নিজেও নাকি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন৷ 

- নিজের মুখে আর কী বলব বলুন। আমি পাতি মানুষ, সবার ভালোবাসায় এক্কেবারে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন৷ নিরামিষ খাইয়েদের জন্য একটা নতুন স্যানিটাইজারের কথা ভেবেছি; ধোকলাইজার। অবিশ্যি সে'টার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে এখনও দেরী আছে। তবে করোনায় কাবু এই অন্ধকার সময়ে; গোটা দেশে যদি ডিসিপ্লিন, স্বাস্থ্য সচেতনতা আর পরিতৃপ্তির একটা ঢেউ ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ক্ষতি কী বলুন?

Tuesday, May 19, 2020

বংঈটসের বিরিয়ানি রান্না প্রসঙ্গে

এই অসময়ে মনখারাপ হলেই সর্বকালের অন্যতম সেরা (এবং জরুরী) ভিডিও অর্থাৎ  বংঈটসের কলকাতা বিরিয়ানির রেসিপিটা লূপে চালিয়ে দিয়ে একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকছি আর "মার্তণ্ড মার্তণ্ড মার্তণ্ড" রিদমে "বিরিয়ানি বিরিয়ানি বিরিয়ানি" বিড়বিড় করছি।

এই রেসিপি ভিডিও সম্বন্ধে কয়েকটা মনের কথা না বললেই নয়। 

১। ভিডিওর গোড়াতে বিরিয়ানির হলদে আলু নরম সুরে ভাজা হচ্ছে, তারপর পেঁয়াজের 'বিরিস্তা'। মনে তখন শ্যামল মিত্তিরে ফুরফুর। 

২। তারপর বিরিয়ানি মশলা তৈরি। সে কী থ্রিল!  আর্কিমিডিস চৌবাচ্চা-স্নান যেন নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছি। সামান্য তুকতাকে যে কী ঘ্যামগোত্রের বিগব্যাং ঘটতে পারে..আহা।

৩। এরপর পাঁয়তারা পক্ষের শেষ, অ্যাকশন পক্ষের শুরু। মাংসের ম্যারিনেশন। দই,মশলাপাতি দিয়ে মাংসমাখা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল এইবেলা গভর্নমেন্টের উচিৎ আইন করা; যাতে নজরুলগীতি বা বাউল না গেয়ে কেউ যেন ম্যারিনেশনের মাংস না মাখে। 

৪। সরু লম্বা চালের ভাত দেখলে এমনিতেই মনে হয় পৃথিবীতে আজও কতটা গভীর রোম্যান্স জমে আছে। আর যে চাল বিরিয়ানিতে গিয়ে ঠেকবে, তা সেদ্ধ হতে দেখা তো মেডিটেশনের ঠাকুরদা। ভিডিওর এ জায়গায় আমি বুকে পাশবালিশ টেনে নিই।

৫। যথাযথ ম্যারিনেশন শেষে কষা হয় মাংস, বুকে নামেন কবীর সুমন আর উথাল-পাতাল প্লাস ভাবনা নেশায় চিন্তামাতাল। 

৬। বিরিয়ানি দমে বসানোর আগে মশলাপাতি, আতর, কেওড়ার জল, গোলাপজল, কেশর, ঘি মাখন, খোয়া ইত্যাদি নিয়ে যে জটিল অ্যালকেমিটা ঘটে, তা দেখে ভরসা পাই। নাহ্, রক্তচোষা শয়তানি বা নিরেট ধান্দাবাজিটুকুই মানুষের শেষ পরিচয় হয়ে থাকবে না। যারা বিরিয়ানি বানাতে পারে, তারা নেহাৎ ফেলনা নয়; ভালোবাসা তাদের মজ্জায়। 

৭। জাদুকর দর্শকের চোখের সামনে পর্দা টানবেনই৷ অথবা হয়ত কাউকে পুরে ফেলবেন একটা ঢাউস আলমারিতে। সেই আড়ালটাই ম্যাজিকের আত্মা৷ ঢাকা পাত্রের আড়ালে ভাত মাংসের অঙ্কমাপা মিলনে জেগে উঠবেন মহানায়ক। সবার অগোচরে বিরিয়ানি-অরিন্দম বলে উঠবেন "আই উইল গো টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ"! 

ভিডিওটা দেখে মনের মধ্যে থেকে স্পর্ধা গেছে, বিনয় এসেছে। মাংস ভাত মিলিয়েমিশিয়ে যা নয় তাই পোলাও গোছের কিছু করে আর বলার চেষ্টা করব না " আজ বাড়িতে বিরিয়ানি বানিয়েছি"। 
সাধনায় শর্টকাট আর কবিতায় গাইডবই; চলে না৷ 

মনখারাপ যতই জমাট হোক, এ ভিডিও একটানা বার দশেক দেখলেই মনে হয় কোনও পাহাড়ি গ্রামের ঝকঝকে রাত্রির আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছি। 

সাবাশ বংঈটস। 

আরসালানে সিরাজে বা আমিনিয়ায় যারা মেগাস্কেলে নিয়মিত এ ম্যাজিক হাঁকাচ্ছেন; তাঁদের সেলাম।

***

ভিডিওটা নতুন নয়। প্রায় বেশিরভাগ মানুষই আশা করি বহুবার দেখেছেন।  তবু লিঙ্কটা দিয়ে রাখলামঃ

https://youtu.be/SbWGXcZTYzg

Sunday, November 17, 2019

পোয়েট

- কী মেলাই না বসিয়েছিলে চার্নক সাহেব। তোফা..। তোফা..।

- টুমার পসন্দ হইয়াছিল? ব্রাদার?

- এসেছিলাম দায়ে পড়ে। দেখলাম পাড়া মন্দ নয়। 

- টুমার এই ভারান্ডাটিও মন্ড নহে।

- ভূত হওয়ার তো এ'টাই সুবিধে; পছন্দসই ছাত পেলেই তা পার্সোনাল বারান্দা। হাত পা ছড়িয়ে গান ধরলেই হল। তাই ডাকলাম তোমায় সাহেব।

- ট্রু পোয়েট টুমি ওয়াজিদ। আ ট্রু পোয়েট।

- বিরিয়ানির ওই আলু; পোয়েট্রি ছাড়া পেতে কি?

Thursday, January 24, 2019

ভাঙা প্রেম


প্রত্যেক ভাঙা প্রেমের শেষ দৃশ্যে এক থালা বিরিয়ানি থাকলে ভালো হয়৷ থালার একপাশে হেরো প্রেমিক, অন্যপাশে পর্যুদস্ত প্রেমিকা।

বিরিয়ানি সুবাসের পাশাপাশি ইতিউতি "খাচ্ছ না কেন?" ভেসে বেড়াবে বাতাসে। আর সরু চালচাপা-নরম আলুর মত ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবে "আর দেখা হবে না, না?"র ধান্দাবাজ প্রশ্ন।

বিরিয়ানি আর ভাঙা প্রেমে তাড়াহুড়ো চলে না, সে'টাই বাঁচোয়া।

Sunday, June 3, 2018

রায়তা

- সঙ্গে রায়তা দেবে তো রে?
- কেন?
- বাহ্, বিরিয়ানি বললাম। সঙ্গে রায়তা দেবে না?
- ওহ্, দেবে।
- যাক।
- তবে ইয়ে।
- আবার কি? রায়তাটা অতটা ভালো নয়? বিরিয়ানির সঙ্গে আবার আমার কোয়ালিটি রায়তা ছাড়া চলে না।
- রায়তা দেয় বইকি। গেলাস ভরে রায়তা দেবে। আমি বলে দিয়েছি।
- গেলাসে দেবে? রায়তা?
- এ'টা একটু অন্য রকমের রায়তা ভাই। কালো রঙের, ঝাঁঝালো।
- কালো? ঝাঁঝালো?  রায়তা?
- আমরা এ'দিকে থামস আপ বলি। রিয়েল বিরিয়ানি পাশে সেমি-ঘোলটোল থাকলে কেমন ঘোলাটে লাগে।

Wednesday, May 4, 2016

ফ্লাইং কার্পেট

- মামা!
- হুম।
- দেখেছো কাণ্ড!
- কী আর এমন ব্যাপার।
- ফ্লাইং কার্পেট! এমন কিছু ব্যাপার নয়?
- সায়েন্স কী বলে?
- ইম্পসিবল।
- ভুল। পসিবল।
- ফ্লাইং কার্পেটে আামাদের এমন ভাবে উড়ে চলাটা সায়েন্টিফিক।
- অনুভূতিটাটা সায়েন্টিফিক।
- মানে?
- মানে। এটা নিশ্চই স্বপ্ন।
- স্বপ্ন? হতে পারে।
- আকাশের রংটা দেখেছিস?
- ভ্যানিলা আইস্ক্রিমের মত মনে হচ্ছে।
- রাইট। ডেফিনিটলি স্বপ্ন।
- কিন্তু স্বপ্নটা কার মামা?
- তাই তো। আমার না তোর?
- নো ক্লু।
- মহামুশকিল। লাস্ট মেমরি কী আছে?
- ব্ল্যাঙ্ক। রিসেন্ট কোন অ্যাক্টিভিটি মনে পড়ছে না।
- ঝাঁপ দিয়ে দেখবি?
- না মানে...বাই চান্স যদি স্বপ্ন না হয়?
- ধের। আইপিএল দেখে দেখে আইকিউটা কমিয়ে ফেললি। যাক, আমি ঝাঁপ দিচ্ছি। স্বপ্নটার এস্পার ওস্পার হওয়া দরকার।

**
- পিলু।
- হুঁ।
- অ্যাই পিলু।
- হুঁ।
- ওঠ! টেবিল পাওয়া গেছে।
- হুঁ মামা?
- টেবিল পাওয়া গেছে।
- ও। ওহ। এটা তো আরসালান। ওয়েটিং।  বিরয়ানির সুবাস ইনডিউসড ঘুম। এহ হে। মনে পড়ছে। মনে পড়ছে।
- জলদি। টেবল ফর টু। মিল গয়া। জলদি।
- না মানে আমি স্বপ্নে দেখলাম...। স্বপ্নটা মানে...এত খাজা। শুনলে হাসবে..।
- বাজে কথা বাদ দে।ভেতরে চ। বিরিয়ানি চাপ শেষ করেই একবার হসপিটালে ছুটতে হবে।
- হসপিটাল? কেন?
- কনুইটা ছড়েছে। হাঁটু টনটন। ফার্স্ট এড। এক্স রে বললে এক্স রে।
- কী করে?
- ফ্লাইং কার্পেট থেকে কেউ ঝাঁপ দেয়?

Sunday, February 14, 2016

১৪ই দুই

১।

মহামুশকিল। মহামুশকিল।

দীপিকার কোন এক বান্ধবীকে তার বন্ধু রক্তে সই করা চিঠি পাঠিয়েছে।  তাই বলে অনীককেও তাই করতে হবে? এর কোন মানে হয়? অসহ্য আদেখলামো। অসহ্য।

কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ডে-ফে বড় চাপের ব্যাপার। দুমদাম না বলা যায় না।

গোলাপি কাগজের ওগো হ্যাঁগো চিঠিতে রক্তে চোবানো আঙুলের ডগা দিয়ে সই করার সময় গা কাঁপছিল অনীকের।

কোনরকমে সইটা দিয়ে চটপট বেসিনে হাত ধুয়ে নিলে অনীক। কাতলাটা বোধ হয় চালানি ছিল, বিটকেল গন্ধ।

২।

- ওয়েটিং আছে। নাম লিখিয়ে নিন।
- কতক্ষণ লাগবে মনে হচ্ছে?
- অনেক লম্বা লাইন স্যার। ভ্যালেন্টাইনস ডে, বুঝতেই পারছেন। ডাবল বিরিয়ানি অর্ডারে টুয়েন্টি পারসেন্ট ডিসকাউন্ট অফারের জন্য আবার ভিড় ডবল হয়েছে। মিনিমাম এক ঘণ্টা।
- ম্যাক্সিমাম?
- দেড়। নাম লিখি?
- আরসালান যখন একটাই, তখন নাম না লিখিয়ে উপায় কী বলুন! লিখুন। এ চ্যাটার্জী।
- টেবিল ফর হাউ মেনি স্যার?
- ফর ওয়ান।
- ক'জনের জন্য বুক করব স্যার?
- বললাম যে, একজন।
- না মানে...আপনি একা? সাথে কেউ নেই?
- ইয়েস। একা। টেবিল ফর ওয়ান। তবে ডে অফ লাভ কে মার্ডার করব না। আই উইল অর্ডার ফর টু; ডাবল বিরিয়ানি।
- অহ।
- কই লিখুন। এ চ্যাটার্জি।

Tuesday, January 19, 2016

অ্যালিটারেশন

- বৌমা।
- হ্যাঁ মা।
- কিছু মনে করো না...একটা কথা ছিল।
- বলুন না।
-  আমরা তো তোমার কোনও কাজেই বাধা দিই না, তবে...।
- তবে?
- বলছিলাম যে...বিধবা মেয়েমানুষের অত বিরিয়ানি বিরিয়ানি করলে সংসারে অমঙ্গল আসে।
- আসে?
- আসে বৈকি মা।
- যদিও মাছ খাওয়াও ঠিক নয়। সে না হয় তবু মেনে নিলাম। তবে অমন ভাবে বিরিয়ানি খাওয়াটা...।
- ওহ। পাপ হচ্ছে?
- রীতিমত।
- আপনার ছেলে কী বলত জানেন? ও বলত অ্যালিটারেশন গরুর ইউরিনের মত।
- কী রেশন?
- অ্যালিটারেশন। এই যেমন কানাইয়ের কাঁথা। শাশুড়ির শাসানি। সব শব্দের শুরুতে একই অক্ষর।
- ও।
- তাই বলছিলাম বিধবার বিরিয়ানিও চোনা। সমস্ত পাপ ধুইয়ে দেওয়া অ্যালিটারেশন। ক্ষতি নেই। বরং অ্যালিটারেশন ক্ষুণ্ণ করলে সে স্বর্গে বসেও কষ্ট পাবে।
- ও। আমি আসি বরং। সন্ধ্যে দেওয়ার সময় হল।
- আসুন। সন্ধ্যে হল। সন্ধ্যে হল।

Friday, December 25, 2015

বড়দিনের মোলাকাত

দেবভূমি আর্সালান। বড়দিন।

চার চেয়ারের এক চেয়ার আলো করে বসে দেবতা, তার সামনে অর্ঘ্যপাত্রে পাঁঠা বিরিয়ানি। তাতে বাড়তি ডিম ও বড়দিনের খোশবু।

উলটো দিকে চেয়ারে ঝকঝকে দেবী; একবাটি মুর্গীর চাপ আর খান দুই রুমালি আঁকড়ে। দেবীর পাশে দেবশিশু চুমুকুমার, ফির্নির বাটিতে ডুবে যার চুমুল্যাতপ্যাতে শ্রীমুখ।  

বিরিয়ানিতে সোয়াদ নেই, চাপে চাপ। স্বাদ থাকবে কী করে? হাওয়ায় রিটার্ন টিকিটের বদগন্ধ, গলায় থার্মোকলের ড্যালা, মুখের কথা এ দেওয়াল ও দেওয়ালে বেমক্কা গোঁত্তা খেয়ে ফেরে। স্টেনলেস স্টিলের থালায় পাথরকুচি গড়িয়ে দেওয়ার শব্দে ইতিউতি "ভালো থাকিস"রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে।

পরকীয়াতে ছোটবেলা থাকে না, বিরিয়ানির বিস্বাদ থাকে না।
"তুই খাচ্ছিস কেন বাবু?" থাকে না।
"অমন করে না" থাকে না।
পুত্রস্নেহ থাকে না। ফির্নি মাখা শিশুমুখের ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।

***

- বিরিয়ানি খাবি না বাবু?
- স্বাদ নেই।
- কথা বলবি না?
- কথা নেই।
- আমার ছেলে বড় হলে, দেখা করবি আবার ওর সাথে?
- এমন বলিস কেন?
- করবি দেখা? ওর সাথে?  যখন ও কথা বলতে পারবে? কথা বলবি না ওর সাথে তখন? দ্যাখ। তুইও বাবু। এও বাবু। দুই বাবু গপ্প করিস, আমি শুনব।
- তোর ছেলে বড় ভালো। বড় মায়া।
- আমি?
- তুই বড় ভালো। বড় মায়া।
- তুই?
- আমি বড় গবেট। বড় গাধা।
- তুই কার গবেট? কার গাধা?
- যাস না। আই অ্যাম ফার টু হেল্পলেস।
- আমিও বাবু। আমিও।
- যাস না।
- যাওয়া তো থাকে বাবু। না যাওয়াটুকু বুঝবি না?
- তুই বড় ধান্দাবাজ মেয়ে। বড় সেয়ানা।
- তুই বড় ভালো বাবু। বড় মায়া।

Monday, July 27, 2015

প্রেসক্রিপশন

-   কিন্তু আপনি এই সমস্যাটা নিয়ে আমার কাছে এলেন কেন মলয়বাবু?

-   বলে রাখি, আপনি আমার সাইকিয়াট্রিস্ট বলে আপনার কাছে এসেছি; তেমনটি ভাববেন না ডাক্তার সেন। আমি এসেছি কারণ আপনি স্মার্ট, ইন্টেলিজেন্ট, প্র্যাক্টিক্যাল। আমায় অনেকদিন ধরে চেনেন। অনেক কাছ থেকে চেনেন। আপনি জানেন যে আমি আপনার কাছে আসি মাথার ব্যারাম নিয়ে নয়, সমস্যা নিয়ে। আপনার কাউন্সেলিংয়ের ওপর আমার ভরসা আছে।

-   আমার কখনও মনে হয় না আপনার মাথার ব্যামো আছো।

-   সেটাই আমায় নিশ্চিন্ত করে। তাই এবারের সমস্যাটাও আপনাকে এসে বলেই ফেললাম।
-   টেকনিক্যালি। এটা সমস্যা নয়। একটা প্রসেস নিয়ে কন্‌সাল্ট করতে এসেছেন মাত্র।তাই তো মলয়বাবু?

-   তা ঠিকই বলেছেন। আই জাস্ট নিড আ ডিফারেন্ট অ্যান্ড গ্র্যাজুয়াল প্রসেস।

-   কিন্তু এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা যে আমার একদমই নেই মলয়বাবু। আফটার অল আমি কোনদিন নিজে এর আগে সুইসাইড অ্যাটেম্পট্‌ করিনি। কিছু সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি বয়ে বেড়ানো মানুষের সাথে আগে কথা হয়েছে সেটা ঠিক। কিন্তু সুইসাইড করার সহজ ও গ্র্যাজুয়াল প্রসেস; এ ব্যাপারে কী আমি পারব আপনাকে গাইড করতে?

-   আপনি পারবেন। আপনার মত শার্প লোক না পারলে আর কে পারবে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস সুইসাইড করার দিকে মন দিলে আপনি একটা ক্ল্যাসিকাল আত্মহত্যার ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। আমায় প্লীজ রিফিউজ করবেন না ডাক্তার সেন। আই নিড ইওর হেল্প।

-   হুম। ব্যাপারটা গুরুতর।

-   বটেই তো।

-   মনস্থির করেই ফেলেছেন ? সুইসাইডের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি সিওর তো?

-   হান্ড্রেড পারসেন্ট ডাক্তার। আমি তৈরি। উইল-টুইল রেডি রেখেছি। আমার আর জীবনে কোনও ইন্টারেস্ট নেই। সেভেন্টি ট্যু ইস রাইপ্‌ এনাফ।

-   আবার এদিকে ঝটকায় মরতেও চাইছেন না, তাই তো? সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে আত্মহত্যাটা ঘটবে, তেমনটাই ইচ্ছে?

-   প্রিসাইস্‌লি। একটা গ্র্যান্ড প্রসেস্‌ হওয়া দরকার। সবাই জানবে যে আমি সুইসাইড করে চলেছি; কয়েক মাস ধরে চললে তো অউর ভি অচ্ছা। প্রেস কনফারেন্স-টনফারেন্স করত হতে পারে আমায়। লঙ্গেস্ট সুইসাইডাল অ্যাটেম্পটের গিনিস রেকর্ড-টেকর্ড চেক করতে হবে এই বেলা।

-   স্লো পয়জন?

-   বিষ ব্যাপারটাও ভারী অর্থডক্স ডাক্তার। বড়খোকা সাজেস্ট করেছিল। ওর ভায়রা ভাই বড় কেমিস্ট; নানান সব মারণ সলিউশন তার নখ দর্পণে। কিন্তু আমি ওই থোড় বড়ি খাড়া প্রসেসে যেতে চাইছি না। গায়ে আগুন, দশতলা থেকে ঝাঁপ; এসব বড্ড এক ঘেয়ে। ইউ ক্যান্‌ নট হিট আনন্দবাজার ফ্রন্ট পেজ উইথ দ্যাট।

-   তা ঠিক।

-   আর তাছাড়া প্রসেসটা বাড়াবাড়ি রকমের পেইনফুল না হওয়াটাই কাম্য। বুঝতেই পারছেন, কষ্টের বয়স আর নেই। একসময় অনেক কষ্ট করেছি; ট্রেন ধরে বারুইপুর থেকে শেয়ালদা, সেখান থেকে বাস ধরে ডালহৌসি। দৈনিক আসতে আড়াই ঘণ্টার অফিস যাতায়াত। এখন টু পাইস ব্যাঙ্কে আছে। ছেলেরা দাঁড়িয়েছে; কষ্ট করে মরতে চাই না। লেট ইট বি স্লো অ্যান্ড পেইনলেস্‌।

-   বুঝলাম। আমি আপনাকে সঠিক উপায় বলে দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না।

-   থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর সেন। আমি গ্রেটফুল থাকব আপনার কাছে।

-   প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছি প্রসেস্‌টা, কেমন? তবে ইয়ে, কাউকে এই প্রেসক্রিপশনটা দেখাবেন না প্লীজ মলয়বাবু। সুইসাইডের পন্থা বাতলানোর কাজটা ভালোই তবে আমাদের সমাজ ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখবে না। আমার প্র্যাক্টিস করে খেতে হয় যে।

-   আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ও জিনিষ আমার কাছেই থাকবে। কোন ব্যাটা জানতে পারবে না।

-   এই নিন। লিখে দিয়েছি। ওষুধের দরকার নেই। স্পেশ্যাল ডায়েট লিখে দিয়েছি। সুইসাইডাল ডায়েট।তাতেই হবে। ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যে কাজ হাসিল হয়ে যাবে।

-   রিয়েলি? থ্যাঙ্ক ইউ। আপনি ছিলেন বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম ডাক্তার সেন।  এবার সুইসাইডটা ভালোয় ভালোয় মিটলে শান্তি পাই।

-   ইউ আর ওয়েলকাম। ইয়ে, আমার ফিজটা গতকাল থেকে বেড়ে দেড় হাজার হয়েছে মলয়বাবু।

**

-   বাবা, এটা কী হচ্ছে?

-   কী ব্যাপার ছোটখোকা?সকাল সকাল চিৎকার করছিস কেন?

-   তুমি পঞ্চুর মাকে বলেছ তোমার জন্য জলখাবারে, দুপুরে আর রাতে নিরামিষ বিরিয়ানি বানাতে? তাও সপ্তাহে সাত দিন ধরে?

-   শুধু সাত দিন না, গোটা মাস, গোটা বছর আমি তাই খাব।

-   সে কী? কিন্তু কেন?

-   ডাক্তার বলেছে।

-   ডাক্তার সেন এটা বলেছেন? কেন?

-   একটা বিশেষ পারপাস আছে। সে পারপাস শুধু ভেজ বিরিয়ানি খেলেই হাসিল হতে পারে। তুই শুধু দেখে যা; ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যেই কেল্লা ফতে। আর তদ্দিনে তোদের বাপ একজন সেলিব্রেটি।