Skip to main content

Posts

Showing posts from April, 2017

মনোজবাবু ও দিদি

"অ্যাই ভাই, ওঠ"!  মনোজবাবুর দুপুরের ঘুম ভাঙল দিদি মিতুলের ধাক্কায়। জ্ঞান ফিরলও বলা যায়। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে নিশ্চিন্ত হলে ভদ্রলোক। বছর তিরিশেক সময় সত্যিই পিছিয়ে দিতে পেরেছেন সাধুবাবা। টাকের বদলে মাথার ভর্তি কোঁকড়ানো চুল, কাঁচাপাকা গোঁফের বদলে গোঁফের আলতো রেখা, ক্লাস এইটে যেমনটা তাঁর ছিল আর কী।  এ'টা তাঁদের ব্যারাকপুরের সেই পুরনো বাড়িটার দোতলার ঘর। সবুজ রঙের দেওয়াল, দক্ষিণের জানালা। মহিন্দর অমরনাথ আর দিলীপ ভেংসরকারের দেওয়াল জোড়া পোস্টার বিছানার মাথার দিকে। সেই ঘর।  আর দিদি। মনোজবাবুর চেয়ে বছর পাঁচেকের বড়। ঘর আলো করে থাকা দিদি। অঙ্ক শেখানো দিদি। ইংরেজির এস্যে লিখে দেওয়া দিদি। গরমের দুপুরে নুন লঙ্কা দিয়ে মাখা কাঁচা আম খাওয়ানো দিদি।  দিদির জন্যেই তো এত কাঠখড় পুড়িয়ে ফেরত আসা। হৃষীকেশের সাধুবাবার এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছেন, সে'টা ভাবলেই মনোজবাবুর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। চুয়াল্লিশ বছর বয়স থেকে সোজা চোদ্দয় নামিয়ে দিয়েছেন বাবাজী। অথচ সে সাধুবাবা প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেন না। মাস ছয়েক হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার পর অবশেষে ওঁর মনে গলেছিল। প্রথম দিকে খালি এক কথা "ইসমে কি

সৈন্যদল

- ক্যাপ্টেন!  - হুঁ। - শুনছেন? দামামা বেজে গেছে। ডাক এসেছে।  - হুঁ।  - কী ব্যাপার ক্যাপ্টেন? এ মুহূর্তে এমন বিষণ্ণতা আপনাকে মানায়? সবার আগে ছুটে যাবেন আপনি। আপনার দেখা পথে ঝাঁপিয়ে পড়ব আমরা সকলে।  - বিষণ্ণ নই, তবে এদ্দিন একসঙ্গে ছিলাম। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্যূহ রচনা করেছি। প্রস্তুত হয়েছি এ মুহূর্তটার জন্যেই। কিন্তু আমার সহস্র কমরেড আজ নিজেদের বিলিয়ে দেবেন, সে'টা ভেবে মন সামান্য হলেও তো কেঁপে উঠবেই।  - বিলিয়ে দেওয়া বটে, কিন্তু ভেসে যাওয়া তো নয় ক্যাপ্টেন। কত প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া আমাদের। কত স্বপ্ন, কত সবুজ।  - আমরাই সর্বনাশও বয়ে আনতে পারি কমরেড।  - পারি। কিন্তু আমাদের পুনর্জন্মও যে অবিচল সত্য ক্যাপ্টেন। সমস্ত সর্বনাশ মুছে ফেলে আমরাই আবার না হয় ফিরে আসব নজরুল হয়ে।  - আমি ক্যাপ্টেন হতে পারি, কিন্তু তুমি আমায় সেই শুরুর মুহূর্ত থেকে তুমিই আগলে রেখেছ কমরেড।  - আমি সৈনিক মাত্র ক্যাপ্টেন। অধিনায়কের পাশে থাকা, এ'টুকুই তো।  - মনে পড়ে কমরেড, সেই শুরুর দিনটা? যেদিন শুধু আমি আর তুমি মিলে বুনতে শুরু করেছিলাম এই স্বপ্নটাকে? তারপর সহস্র সঙ্গী এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালো,

অমল তালুকদারের ভাবনা ২.০

১. অমল তালুকদার ভাবার চেষ্টা করছিলেন যে তিনি আর বেঁচে নেই। দিব্যি লাগছিল তেমনটা ভেবে যেতে। খানিকটা সত্যিই লাগছিল ব্যাপারটা। ২. ডাক্তার একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিতাকে জানালেন "দেখুন ম্যাডাম, আপনি বেঁচে নেই। এই এক অদ্ভুত রোগ। দিব্যি মড়া আপনি, হঠাৎ কেন মনে হবে যে বেঁচে আছেন? এ'টা ভূতের দুনিয়া। জ্যান্ত হলে এ দুনিয়ায় আপনি থাকতে পারতেন? যত্তসব"! ৩. শনিবার রাত্রে মাছ কিনে বাড়ি ফেরার পথে, গলির অন্ধকারে অমল তালুকদার দেখতে পেলেন দত্তদের ভাঙা বাড়ির কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে একটি সাদা থান পরা ভূত। ভূত দেখে অমলবাবু বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলেন, যাক এর মাঝে নিশ্চই মরেফরে যাওয়া গেছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। তিনি আদতে ভূত বলেই এত সহজে ভূত দেখতে পারছেন। ৪. মাছের ব্যাগ হাতে ভদ্রলোকের গভীর চাউনিতে এক লহমায় প্রেম চিনে নিয়েছিলেন রিতা। অন্ধকারে ভেসে যেতে ইচ্ছে করছিল তার। একজন মানুষ তার প্রেমে পড়েছে মানে সে নিশ্চই ভূত নয়। হারামজাদা থেরাপিস্টকে পেলে তার মাথার ঘিলু চেটে খাওয়া যেত। যদিও সে ব্যাটা স্কন্ধকাটা। ৫. ঘেমেনেয়ে অস্থির বোধ করছিলেন অমলবাবু। রিতার সঙ্গে তিন মাস প্রেম করে তিনি মোক্ষম বুঝেছেন যে তিন

অমল তালুকদারের ভাবনা

১ অমল তালুকদার ভাবছিলেন। তাঁর ভাবতে ভালো লাগে। ভাবার মত ভালো ব্যাপার আর হয় না। এই কিছুক্ষণ আগেই ভাবছিলেন গলে পড়া নরম মোমে আলপিন ঠুসে দেওয়ার কথা। বেশ লাগছিল। তারপর চট করে একটু ঘাসের ডগা নাকে দিয়ে হাঁচি টেনে বের করার কথা ভেবে মাথা নাড়লেন। এরপর অল্প কিছুক্ষণ পোলাও আর আজহারউদ্দীনের কব্জি মোচড় ভেবে মৌজ করলেন। এরপর একটু আয়েসে গা এলিয়ে দেবেন,  এমন সময় একটা তাঁতের আঁচলের ঝাপটা মুখে লেগে ভাবনার সুতোটা গেল ছিঁড়ে। আঁচলের রঙটা আজ আকাশী ছিল। তা'তে ছোট ছোট কালো ফুল। ধুস। ২ - অমল তালুকদার। - রিয়েলি রিতা? তুমি ওর একটা নামও দিয়েছ? - বার বার কল্পনার মানুষ হিসেবে অ্যাড্রেস করাটা সবিশেষ সুবিধেজনক নয় ডাক্তার। - উম। আই সী। ডাস হি হেল্প? - অবশ্যই। - সে কথা বলে? তোমার সঙ্গে? - কথা? না। তার কথা বলার সময় কোথায়? সে অনবরত ভেবে চলেছে। আমি ওর ভাবনাগুলো দেখতে পাই। বড় ভালো লাগে। - আমি ঠিক বুঝতে পারছি না রিতা। - প্রথম প্রথম আমিও বুঝতে পারতাম না। তবে এখন বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছি। ওর ভাবনাগুলো আমায় ভালো রাখে। যন্ত্রণা কমায়। - ভাবনাগুলো তোমার রিতা। - না। বিশ্বাস করো ডাক্তার! ভাবনাগুলো আমার নয়। আমার ভাব

দুপুর অ্যান্ড দ্য ট্যু অফ দেম

টুকরোস অফ ভালোবাসা উইল ফ্লোট লাইক টলটলে মেঘস অন আ দুপুর অফ গরম। অল্প অল্প শ্যাডো উইল রিলীভ আস অফ আওয়ার চাকুরীসিয়ান ঘামাচিজ্। অন ওয়ান সাচ দুপুর, সাদা কল্কে ফুল অন কালো ব্লাউজ উড এনগেজ ইন অপেক্ষা। বাসন্তী শেড অফ অপেক্ষা। কলুটোলা লাইক ফ্লেভার অফ পুরনো বাড়ি এম্ব্রয়ডারড অল ওভার দ্য শাড়ি অফ তাঁত।  দ্য হাফশার্টিস্ট হাওয়াই চটিয়ান উইল ফ্লাই অন দ্য যাদুকার্পেট অফ নখচিবুনি। কলেজ স্ট্রিট অফ ছুটি উড রিমঝিমিফাই অন দ্য ছ্যাঁতছ্যাঁত অফ "আজ দেখা হবে" সোলস। অসুবিধা ইজ, স্নেহ নোস নো ধর-তক্তা-মারো-পেরেক কাইন্ড অফ সলিউশন।  দ্য হাফশয়ার্টিস্ট গেটস হোঁচটিফাইড অন দ্য গ্লিম্পস অফ বাসন্তী ফ্রম আ স্বপ্ন স্মিয়ার্ড ডিস্ট্যান্স; "আমি তো কেউ না, তাই না"? দ্য বাসন্তী ফিজেটস অন দ্য অসোয়াস্তিক্যাল পয়েন্ট অফ ঠোঁটকামড়; "আসবে না, তাই না"? দ্য মেঘস উড ফ্লোট অ্যাওয়ে টুয়ার্ডস দ্য পোস্টবাক্স দ্যাট উইল নেভার ক্যারি এনি চিঠি, এভার।

দাঙ্গা হাঙ্গামা

- গোলপার্ক। একটা। - আসুন কাকু। টিকিট নিন। - আজ বাসটা এত ফাঁকা? রাস্তাঘাটেও লোক দেখছি না। - গণ্ডগোল, তবে এ'দিকে নয়। সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে। র‍্যাফট্যাফ নেমেছে। তবে গোলমালটা ছড়াচ্ছে। এ বাসও গল্ফগ্রীন যাচ্ছে না। ঢাকুরিয়াতেই শেষ। - এতটা সিরিয়াস? অথচ সকালেও তো কোনও আভাস ছিল না..। - এ'সব কী আর পাঁজি দেখে হয় কাকু। হ্যারিসন রোডের দিকে হেবি মারপিট হয়েছে। দু'তিনটে লাশও পড়েছে শুনলাম। ভবানীপুরেও কিছু দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে খবর আসছে। রেডিওয় শুনলাম কারফু লাগতে পারে। - কারফিউ? এদ্দূর? - এ জিনিস সহজে থামবে না। - মেন ইস্যুটা কী? জানো কিছু? তোলাবাজদের খেইমেই না কী...ওই আবার মন্দির মসজিদ নিয়ে পড়লো। - মন্দির মসজিদ নিয়ে ঝ্যামেলা আপনাদের ছেলেবেলায় হত কাকু। এখন আর ও'সব ইস্যু লাগে না। মাইরি আপনি জানেন না কেসটা? - কী আর করব বাবা, গোটাদিন অফিসের রোবটগুলোকে ম্যানেজ করতে গিয়ে এমন বেহাল অবস্থা হয় যে খবরের দিকে চোখ রাখার সুযোগ পর্যন্ত হয় না। কী হয়েছে বলো দেখি? - নতুন কিছু নয়। যা নিয়ে ইলেকশন তোলপাড় হল, সেই ব্যাপারই। এগরোলে সস্ পড়বে কি পড়বে না। এই ঝগড়ায় দেশটা রগড়ে গেল। -

টলটলে

টলটলে এক জোড়া চোখ। আর জুঁই। জুঁইয়ের সুবাস বাতাসে। কলকাতার বাতাসে। বড়রাস্তার হইহইরইরই এই গলির মধ্যে নরম কিচিরমিচির হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি একটা দুপুর। আর অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয় এমন টলটলে এক জোড়া চোখ। মাথার ঝিমঝিমটা কীসের সে'টা কিছুতেই ঠাহর হয় না দীপক চ্যাটার্জীর। "চোখ বন্ধ"। চোখ বন্ধ অন্ধকারে একটা মুক্তোদানা ভেসে উঠলো, দানাটা দলা পাকাতে পাকাতে বড় হতে লাগলো। একসময় সেই ড্যালাটা একটা মনমাতানো বিস্ফোরনে ঝিরঝিরি হয়ে পড়ল ছড়িয়ে। সেই স্ফটিক গুঁড়ো দিয়ে কলকাতা আঁকলে যেন কেউ। দীপক চোখ বন্ধ করেও দিব্যি অনুভব করল চোখজোড়ার টলটল। "এ'বার হাত পাত"। জুঁই। নরম। চলে যাওয়ার মত নরম। আর চিঠি না লেখার মত নরম। কলকাতাকে ইরেজারে মুছে দেওয়ার মত নরম। জুঁই। "এই ভালো বাবু, জুঁইয়ে বানান ভুল থাকে না"। তারপর সে কী হাসি। চোখ বন্ধের অন্ধকারে ততক্ষণে দীপক টের পেতে শুরু করেছে যে কলকাতা মুছে যাচ্ছে। আবছা হতে হতে শেষে পড়ে রইল একটা মুক্তোদানা। সে হাসি টপকে চোখের টলটল দীপকের বুক বেয়ে নামতে শুরু করেছিল। "কী রে, এবার চোখ খোল! দ্যাখ"। দীপক মনে মনে ভাবছিল "পর রুচি চোখ ব

বিপিনবাবুর মামলেট

- সাড়া দাও। - ....। - সাড়া দাও, সাড়া দাও। - ...।  - সাড়া দাও...সাড়া দাও...সাড়া দাও। - ...। - উদাসীন থেকো না, সাড়া দাও। - ...। - ডিমা ফাটা লিয়া। পেঁয়াজ কুচো লিয়া। চাটু মে তেল ডাল দিয়া। ফ্রীজে লঙ্কার পাত্রটা খুঁজে পাচ্ছি না। এস ও এস। উদাসীন থেকো না ভাইটি, সাড়া দাও। কিধর হ্যায় মির্চি? কুচিকুচি করনেকা। এই এক রোগ বিপিনবাবুর। মাঝরাতে ওমলেটের নেশা।আর ভদ্রলোক রান্নাঘরে ঢোকা মানেই রাত মাত করা শোরগোল। অবিশ্যি সুতপার সাড়া ইদানীং পাওয়াই যায় না। আসলে বিপিনবাবুর এই বিটকেল স্বভাব কোনওদিনই সুতপার বরদাস্ত হয় না। ফটোফ্রেমের এ'পাশে এসেও রাতের বেলা শান্তি নেই সুতপার। বিপিনবাবুর মাঝরাতের মামলেটকে ভূতজ্ঞানে ভয় পেয়ে কাঁপতে থাকেন সুতপা। এ গা কাঁপানো ভয় তাঁর ফ্রেমে সেঁধিয়েও কাটেনি। ও'দিকে তৃপ্তি সহকারে মামলেট চেবানোর সময় রোজই বিপিনবাবুর মনে হয়; সুতপার ছবির ফ্রেমটা কি আজ একটু বেশি বেঁকে রয়েছে?

অমুক তমুক আর ক টু ঙ

আধুনিক অনলাইন তর্কক্ষেত্র বিপদসংকুল। চারদিকে ছড়িয়ে ল্যান্ডমাইন। এ'দিক ও'দিক পড়ে ক্ষতবিক্ষত লাশ, ভাঙাচোরা বাড়িঘরদোর। ক লিখলেন অমুক চিন্তা মন্দ। তমুক ভালো। খ তর্ক জুড়লেন। অমুককে খণ্ডন করে নয়। তমুকের হয়ে যুক্তি সাজিয়ে নয়। ক'কে হারামজাদা বলে। গ ঝাঁপিয়ে পড়লেন ক'য়ের হয়ে লড়তে। ক'কে অকারণে "হারামজাদা" খিস্তি শুনতে হয়েছে। ব্যাপারটা মোটেও সমীচীন নয়। গ কী করলেন? খ' হারামজাদা বলে গায়ের ঝাল মেটালেন? না। গ বললেন খ'য়ের বাপ হারামজাদা। স্কেল-আপ না করলে টক্কর দেওয়া যায় না। এ'বারে ক ফিরে এলেন তর্কে। খ'কে কোণঠাসা করা গেছে গ'য়ের আগুনে। তিনি এসে ঘোষণা করলেন যে অমুক চিন্তার সকল মানুষের বাবা হারামজাদা। স্যাট করে মাঠে ঘ ঢুকে পড়ে জানালেন যে গোটা তর্কটাই ইনসেনসিটিভ। অমুকও শয়তানি। তমুকও ঢ্যামনামি। ক, খ, গ মিলে ঘ'কে খিস্তোলেন। ঘ'য়ের হয়ে ঙ এসে ক'কে মেনিমুখো বলে খোঁটা দিলেন। গ সুট করে খবর বের করলেন যে ঙ ১৯৯৬ সালের অমাবস্যায় পাঁচটা ঢেঁকুর তুলেছিলেন ঠাকুরঘরের কুড়ি ফুটের মধ্যে, তাঁর প্রমাণ ফলাও করে সোশ্যাল মিডিয়াময় ছড়িয়ে পড়ল। এ'দিকে জানা গেল খ সি

খুড়োর চা

১ - খুড়ো, চা ফুটতে ফুটতে একটা গান ধরো দেখি। - রামপ্রসাদি ধরি? - ধরো। গানের মাঝে ফুট কাটব না, আগে থেকে বলে রাখি প্রজাপতি বিস্কুট দিয়ো চায়ের সঙ্গে। একটা। ২ খুড়োর দোকান থেকে বেরিয়ে একটা বিড়ি ধরালেন দিবাকর। খুড়োর গানের সুরের একটা মস্ত গুণ হল যে সে সুর মাথায় ঘুরপাক খেয়ে চলে ক্রমাগত। ৩ দিবাকর বেরিয়ে যেতেই দোকানের ঝাঁপ নামালেন খুড়ো। এই রাতে আর বড় কেউ আসবে না। ও'বেলার বাটিচচ্চড়ি পড়ে আছে। এ'বার হাফ কৌটো চাল চাপিয়ে  দিলেই ঝামেলা মিটে যায়।  বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে চালের ড্রামের দিকে এগিয়ে গেলেন। ৪ বাটিচচ্চড়িটা বেশ ঝাল হয়েছিল। চার গেলাস জল খেয়ে দিবাকরের পেট আইঢাই হল কিন্তুর মুখের জ্বালা গেল না। ৫ - এক কাপ চা দিও খুড়ো। - এই দিই। - তোমার দোকান যে আজকাল ফাঁকাই থাকে খুড়ো। - তা মন্দা যাচ্ছে বইকি। গান শুনতেও আর লোকে আসে না খুব একটা। - একটা কথা বলি খুড়ো? রাগ করবে না? - না না, বলো না। - তোমার নাকি মাথার ব্যমো হয়েছে? নিজের মনেই একটানা বিড়বিড় করে চলো? দিবাকর খুড়ো পাগল এ হাওয়া বাজারে রটেছে। একটু সামলে চলো দিবাকর খুড়ো। নইলে আমাদের মত জনা দুয়েক কাস্টোমারও আর আসতে সাহস পাবে না। - কী যে বলো দ

মায়াবন বিহারিণী

চার বছরের বেগুসরাই মানিব্যাগে রাখা লোকনাথবাবার ছবির মত রয়ে গেছে।  বিহারের কারুর সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করি "কোন জেলা?"। সে'খানে কাজের সূত্রে ঘোরাঘুরি কম হত না। সহরসা, লক্ষ্মীসরাই, পটনা, জমুই, সুপল, পূর্ণিয়া, কটিহার, কিষণগঞ্জ,  বেতিয়া, মুজফফরপুর, ভাগলপুর; এই নামগুলো বাতাসে ওড়ে। কত পুরনো মুখ। আড্ডা। জ্বর কপালে হাত। প্রত্যেকের স্মৃতির ঘরে একটা অরাজনৈতিক আলমারি থাকে। সে'খানে পুরনো রুমাল থেকে খামের গায়ে চায়ের কাপের ছোপ; সমস্ত অপ্রয়োজনীয় স্নেহস্মৃতি গুছিয়ে রাখা থাকে। সে আলমারির ন্যাপথালিনে থিনঅ্যারারুটের গন্ধ। আমার স্মৃতিঘরের সে আলমারির লকারে বেগুসরাইয়ের সরগরম সযত্নে রাখা। কত মুখ ব্রাউনিয়ান মেজাজে এখনও দিব্যি মনে ঘোরাঘুরি করে। অফিস গেস্টহাউসের রাজীবজীর নিজের হাতে কষানো দেশী মুর্গীর ঝোলের স্বাদ ভোলবার নয়। রাজীবজীর গল্পের আন্তরিকতা অবশ্য আরও বেশি সুস্বাদু। ধর্মেন্দ্রর গাড়ি চালানো আর গার্জেনগিরি। নির্মলির কাছে মাঝরাতে একবার প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ি আটকে। চারদিকে আধজঙ্গল, কাছেই কোশী নদী। চোরডাকাতের ভয় আর জন্তুজানোয়ার সাপখোপের আশঙ্কা মনের মধ্যে দিব্যি দাবা খেলছিল। সে খেলা ভেস

চাটুতে খুন্তি

-  না। হয়নি। - হয়নি মানে? - পরোটাটা ঠিক ভাজা হয়নি। আরও হাফ মিনিটে চাটুতে খুন্তি চেপে ভাজতে হত। - কেলিয়ে লাট করে দেব। আগের এগরোলটা নাকি বেশি মুচমুচে হয়ে গেছিল। দিলাম আরেক পিস কম ভাজা রোল আনিয়ে। এখন বলছিস ভাজা হয়নি? শুয়ার! - শুয়োরে খেলেও তাই বলবে। কামড় দিয়ে দেখুন না স্যার। - চোপ! হারামজাদা! শোন। তোকে কিডন্যাপ করে রাখা হয়েছে। হনিমুনে আসিসনি। বাসি রুটি দিলে তাই খাবি। - তাই দিন। আপত্তি করব না। সঙ্গে অল্প আচার। প্রেফারেবলি আমের। ঝাল ঝাল। অল্প নুন। আর এক ফালি পেঁয়াজ। অমন হাফ ডজন বাসি রুটি জাস্ট উড়িয়ে দেব। প্রমিস। কিন্তু রোল এনেছেন যখন সঠিক ভাবে ভাজিয়ে আনুন। আরে মশাই আপনি কিডন্যাপার, ভ্যান্ড্যাল তো নন। মহাভারতে ভীষ্ম টু কৃষ্ণ সবাই কিডন্যাপট্যাপ করেছে। রিল্যাক্স। যান, ছেলে পাঠান! ভাজিয়ে আনবে নতুন করে। - ধুত্তোর। থাক তুই না খেয়ে, ব্যাটা ঢ্যামনা। - ক্ষতি কি? ডিফেক্টিভ এগরোলের চেয়ে খালি পেটে গান গাওয়া অনেক ভালো। জানেন, আমার মা বড় ভালো গাইত। যত দুঃখ,  তত সুর। আমি এই রোলের মত নেতানো হতে পারি, তবে সুরের কাঙাল। খালি পেটে দিব্যি মায়ের কথা ভাবব আর গাইব; "কী মায়া দেয় বুলায়ে,  দিল সব কাজ ভুলা

স্নেহ ও ঘুম

পুরুষ নারীর দৈহিক মিলন অতি অবৈজ্ঞানিক। প্রবল অবিজ্ঞানে সভ্যতা, সাহিত্য ও সঙ্গীত এগিয়ে চলেছে এত বছর ধরে। মিলনোত্তর নারী হৃদয় ভেবে চলে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা, সোনা গলানো উষ্ণতার কথা, পূর্ণেন্দু পত্রীর কথা, তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমারে সুচিত্রার কোলে উত্তমের মাথার কথা, সবুজ ঘাসে ছড়ানো শিউলির কথা, মোমের মত গলে পড়া টুপটাপ স্নেহর কথা, অপার্থিব সমস্ত অনুভূতির কথা। ভালোবাসার কথা। মিলনোত্তর পুরুষ মগজ শুধু বোঝে ফ্যানের রেগুলেটরটা এক ঘাট বাড়িয়ে দিলে আর মুখের ওপর থেকে চুলফুল সরিয়ে নিলে ঘুমটা ভালো হত।