Saturday, May 29, 2021

গ্লোবট্রটার



সদর দরজাটা খুলেই থ হয়ে গেলেন লালুবাবু। 

- আসতে পারি?
- আ...আস...আসবেন? 
- আপনার আমতা আমতা ভাব দেখে আমি কিন্তু নিশ্চিত যে আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন। 
- ম....ম...মানে...। 
- অবিশ্যি যোধপুর সার্কিট হাউসের স্মৃতি অত সহজে ফিকে হয়ে যাওয়ার কথাও নয়।
- আ...আ...আমি কিন্তু পু...পুলি...। 
- পুলিশকে আমিই খবর দিয়েছি। ওই আপনার বাড়ির সামনেই যে ফার্মেসিটা, তাঁরা কল করতে দিলে। আপনার ঠিকানাই দিয়েছি। ওরা এখান থেকে আমায় পিক করে নিয়ে যাবেন।
- আপনার মতলবটা কী বলুন তো মশাই? এ কী! আপনি নিজে থেকেই ঢুকে পড়লেন দেখি।
- আপনার এই আর্মচেয়ারটা বেশ কমফর্টেবল। 
- আমি কিন্তু...!
- চায়ের কথা ভেবে ব্যস্ত হবে না কিন্তু। যে কোনও জায়গার চা আমার জিভে ঠিক রোচে না। ও ব্যাপারটা কিন্তু আমি সে'বার বানিয়ে বলিনি। আর তাছাড়া হাতে সময় কম, জরুরী আলোচনাটা আগে সেরে ফেলি। আফটার অল, হাতে সময় বেশি নেই। 
- আপনি কিন্তু রীতমত ট্রেসপাস করেছেন। ফেলুবাবুকে একটা কল করলেই...। 
- ওঁর তো এখন শুনছি টিকটিকিগিরি করে বেশ ভালোই নামডাক হয়েছে। যাক, মাই বেস্ট উইশেস। তবে আপনার অত নার্ভাস হওয়ার কিছু হয়নি মিস্টার গাঙ্গুলি। আমি শুধু আপনাকে একটা জরুরী আপডেট দিতে এসেছি। আর বললাম তো, পুলিশ তো এলো বলে। চাইলে আমার ব্যাগটা চেক করে নিতে পারেন, এতে ছুরি, কুকরি, পিস্তল বা বিছে; কোনোটাই নেই।
- যা বলার ক্যুইকলি বলে ফেলুন। 
- আহ, অত অধৈর্য হলে চলবে কেন? বসুন। 
- না মানে...। 
- বসুন!
- হুঁ? হুঁ!
- শুনুন, আমি এখন একজন চেঞ্জড ম্যান। আর ফেলুবাবুর ওপর ওই বিশ্রী অ্যাটেম্পটগুলোর জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তবে পেটের দায়ে মানুষ কী না করে।
- আপনি কি এইটা বলার জন্য বাড়ি বয়ে এলেন? 
- না না, একটা বড় খবর আছে। 
- আমি তো ভেবেছিলাম আপনি এখনও জেলে রয়েছেন।
- ভবানন্দ এখনও জেলে। আমি পাঁচ বছরের মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে পেরেছিলাম।
- যা বলার তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন মন্দারবাবু।
- জানেন মিস্টার গাঙ্গুলি, ভবানন্দের পাল্লায় পড়ে কম ভেক ধরতে হয়নি। বাবাজির চ্যালা, ফিজিসিস্ট, বিজনেস টাইকুন; কী না হয়েছি। আর ফোরটুয়েন্টি বিজনেসে থেকেও এই অভিনয়গুলোকে আমি চিরকালই সিরিয়াসলি নিয়েছি। প্রত্যেকবার রীতিমত রিসার্চ করে নিজেকে তৈরি করতে চেয়েছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উতরেও গেছি; যাকে বলে উইথ ফ্লাইং কালার্স! ইনফ্যাক্ট আমার ভেক ওয়াজ আ মেজর অ্যাসেট ফর ভবানন্দর ভোজবাজির ব্যবসা। 
- এই গল্পগুলো কি আমায় শোনাতেই হবে মন্দারবাবু?
- এ'কারণেই তো মাদ্রাজ থেকে এদ্দূর ছুটে এলাম...।
- মাদ্রাজ থেকে কলকাতা এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে?
- নাথিং বাট দ্য ট্রুথ মাই লর্ড! অবিশ্যি দিন পনেরো আগেই এসে পৌঁছেছি। যাকগে...যে'টা বলছিলাম। ভেক তো কম ধরিনি। তবে সে'বার রাজস্থানে এমন একটা ব্লান্ডার করে বসেছিলাম...যে তার জন্য বহু বছর হাত কামড়ে কেটেছে। না না, ফেলুবাবুর হাতে পরাস্ত হয়েছিলাম বলে নয়। গ্লোবট্রটারের ভূমিকায় অভিনয় করার সাধটা কিন্তু আমার বহুদিনের ছিল বুঝলেন। তার জন্য বহুদিন ধরে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। সে'বার যোধপুরে দিব্যি সুযোগও পেয়ে গেলাম। অথচ...।
- রুমালের মায়ের নাম জেনে যে আমার কী বেনেফিট হচ্ছে সে'টা আমি এখনও ঠাহর করতে পারছি না মশাই। 
- পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়েই তো আদত গল্পে পৌঁছতে হবে মিস্টার গাঙ্গুলি। 
- ব...বেশ।
- তা যে'টা বলছিলাম। অমন একটা ফার্স্টক্লাস সুযোগ পেয়েও যে এমন ব্লান্ডার করে বসব সে'টা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
- ব্লান্ডার?
- ওই যে, ফস করে বলে ফেললাম; টাঙ্গানিয়াকায় নেকড়ে শিকার করেছি। কেনিয়ার হাতির ব্যবসার ওপর অত রিসার্চ করার পরেও কেন যে খামোখা আফ্রিকায় নেকড়ের মত একটা লুজ ক্যানন মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল। সে অনুতাপে আমি বহু বছর দগ্ধ হয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে গ্লোবট্রটারের অভিনয় করতে হলে আমাকে আরও রিলিজিয়াসলি প্রিপেয়ার করতে হবে। কাজেই এ ব্যাপারে আমি আপনার কাছে সবিশেষ গ্রেটফুল।
- ইয়ে, কী যে বলব। ইউ আর ওয়েলকাম।
- জেলে বসেই আমি মনস্থ করেছিলাম বুঝলেন, একটা ফার্স্টক্লাস গ্লোবট্রটারের ভূমিকায় নিখুঁত অভিনয় না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। কাজেই জেল থেকে বেরিয়েই শুরু করলাম; প্রস্তুতি। 
- গ্লোবট্রটিং?
- ভূপর্যটন যদি করেই ফেলি, তবে আর ভূপর্যটক হিসেবে অভিনয় করার প্রশ্ন আসছে কী করে মিস্টার গাঙ্গুলি। পর্যটন আমি শুরু করেছিলাম, তবে বইয়ের পাতায়। প্রচুর পড়েছি জানেন। ভূপর্যটকদের জীবনী। ভ্রমণের বই। ইতিহাস। ভূগোল। এমন কী পলিটিকাল সায়েন্স আর সোশ্যিওলজিও বাদ দিইনি। একটা অভিনয়ের জন্য টানা চোদ্দ বছর ধরে আমি শুধু পড়াশোনা করেছি। দিনরাত শুধু একটাই স্বপ্ন আমায় ইন্সপ্যায়ার করে গেছে; একজন ভূপর্যটকের ভূমিকায় আমায় নিখুঁত করতে হবে, করতেই হবে। আমি বুঝেছিলাম মিস্টার গাঙ্গুলি, দু'চারটে বাতেলা আর বোলচাল ছুঁড়ে অল্প সময়ের জন্য ইম্প্রেস করা যায়। কিন্তু একজন ট্র্যাভেলারের চোখ অর্জন করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমি রীতিমত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে কী জানেন, পেটের দায় বড় দায়। খালি পেটে পড়াশোনা করা যায় না আর বিনি পয়সার বইও জোটানো যায়না। কাজেই সে দায়ে পড়ে কিছু কুকর্ম করতেই হয়েছে। মিথ্যে বলব না, পড়াশোনার ফাঁকে এমন একটা বড় দাঁও মেরেছি যে সে আমাউন্ট শুনলে আপনার পিলে চমকে যাবে। হে হে হে...।
- ক্রাইম?
- আনফরচুনেটলি, ইয়েস। তবে সে'টাকা আত্মসাৎ আমি করিনি। সে আশ্বাস দিতে পারি। এক মরণাপন্ন অ্যান্থ্রোপলজিস্টের কিছুদিন সেবার করেছিলাম। হাউ অ্যান্ড হোয়েন, সে'টা বলতে গেলে অন্য উপন্যাস লিখতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যে'টা হল; ওয়ান ঢিল, টু পাখিস। সে ভদ্রলোক ঘোরের মধ্যে নিজের বিভিন্ন রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা আউড়ে যেতেন, আর আমি নোটস নিতাম। সেবায় ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু ও মারা যাওয়ার পর নেহাত অভ্যাস বসে ওর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সটা আত্মসাৎ করি। সে টাকার খানিকটা খরচ করেই দিব্যি নিজেকে গড়ে পিটে নিয়েছি লালমোহনবাবু। টাঙ্গানিয়াকার নেকড়ে মার্কা বাজে গল্প আর শর্মার মুখ দিয়ে বেরোবে না, এ আপনি নিশ্চিত জানবেন।
- যোধপুরেও বলেছিলাম। বলে ঠকেছিলাম। আজ আবার বলছি। আবার ঠকব কিনা জানি না। আপনার ফের কালটিভেট করার ইচ্ছে জেগেছে মশাই।
- হা হা হা হা! বেশ তো। তা যা বলছিলাম। সে অ্যান্থ্রোপলজিস্ট ভদ্রলোকের টাকাটা পকেটস্থ করে গোটা জীবন লাটসাহেবি করে কাটিয়ে দিতে পারতাম বটে। তবে সিরিয়াস পড়াশোনা বেশ গোলমেলে জিনিস। নিজে কোনওদিন দেশের বাইরে পা না রাখলেও, আমার মনটা ততক্ষণে আকাশের মত খোলতাই হয়ে গেছে। কাজেই আমি ঠিই করলাম যে কুপথে আয় করা টাকাটা যথাস্থানে পৌঁছে দিতেই হবে। সে কারণেই আমার কলকাতায় আসা। ওই ভদ্রলোক ব্যাচেলর ছিলেন। খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম তার এক ভাগ্নি ক্যালকাটায় রয়েছে, অনলি এয়র। ব্যাস, চলে এলাম। আজ ওদের গুডবাই বলে, ওই ভারিক্কি চেকটা ওদের হাতে তুলে দিয়েই সোজা আপনার এখানে চলে এলাম। আর ওই যে বললাম, পুলিশকে জানিয়েই এসেছি। তবে আসল খবর সে'টা নয়। 
- তবে?
- আমি গ্লোবট্রটারের ভূমিকায় অভিনয় করেছি মিস্টার গাঙ্গুলি। াইনালি! উইথ ডিসটিঙ্কশন।
- কী রকম?
- এই অ্যান্থ্রোপলজিস্ট মনমোহন মিত্র একজন গ্লোবট্রটারও বটে। বছর তিরিশেক দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। ফ্যাসিনেটিং পার্সোনালিটি, বুঝলেন। নিয়মিত ডায়েরি লিখেছেন, সে'সব পড়ে তো আমি যাকে বলে সোয়েপ্ট অফ মাই ফীট। প্রথমে ভেবেছিলাম ওর টাকার চেক কেটে সোজা ওর পরিবারের হাতে তুলে দেব আর পুলিশের কাছে সারেন্ডার করব। কিন্তু তারপর মাথায় স্ট্রাইক করল সেই ইউরেকা আইডিয়া!
- কী রকম?
- মনমোহন মিত্রের ভাগ্নি অনিলা। সে নিজের হাসব্যান্ড সুধীন্দ্র বোসের সঙ্গে কলকাতাতেই থাকে। নিজের মামাকে অনিলা খুকি বয়সের পর আর দেখেনি। ঘর পালানো মনমোহনের খবর পরিবারের কেউই রাখেননি বহু বছর। ব্যাস, সেই সুযোগটাই আমি নিলাম। সে বেঁচেবর্তে আছে কিনা সে সম্বন্ধেই তাঁরা ওয়াকিবহাল নয়, তাঁর কর্মকাণ্ডের খবর অবভিয়াসলি তাদের কাছে পৌঁছয়নি।  যাক, অনিলাদের বাড়িতে সে'খানে পৌঁছে নিজেকে ইন্ট্রোডিউস করলাম অ্যাজ মনমোহন মিত্তির। বিশ্বাস করুন, সে এক্কেবারে হপ্তাখানেকের অগ্নিপরীক্ষা! অনিলা সুধীন্দ্র দু'জনেই সন্দিহান, বিভিন্নভাবে আমায় বাজিয়ে দেখছে তাঁরা। এমন কী তাদের কিছু বন্ধুবান্ধবও এসে চা-বিস্কুটের আড়াল থেকে কত রকমের ইনভেস্টিগেটিভ প্রশ্ন ফায়্যার করেছে। দিনের পর দিন । সত্যি কথা বলতে কি এক সময় আমার মনে হয়েছিল বোধ হয় ধরা পড়ে গেছি। ক'দিনের জন্য গা ঢাকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়েছে। তারা আমায় গদগদ ভাবে নিজের মামা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, প্রবল যত্নআত্তিও  করেছে। আজ সকালে তাদের থেকে বিদেয় নিয়ে এলাম, ধরিয়ে এলাম সেই চেক।
- বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে এবার আপনাকে। তবে ঘরপোড়া গরু তাই...। 
- আই ডোন্ট ব্লেম ইউ। তবে পুলিশ এসে পড়লেই সমস্ত ক্লীয়ার হয়ে যাবে। কী জানেন মিস্টার গাঙ্গুলি, মনমোহন মিত্তির আর মন্দার বোসে তেমন ফারাক নেই। দু'জনের মুখ দিয়েই একই রকম ডায়লগ ডেলিভার করেছি, দু'জনের হয়েই বলেছি যে নিজের মাতৃভাষা কেউ ভুলতে না চাইলে তিরিশ বছরেও ভোলে না আবার ভুলতে চাইলে তিন মাসই যথেষ্ট। অথচ মনমোহনের বলা কথাগুলো যেখানে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, মন্দার বোসের কথাগুলো হয়ে দাঁড়িয়েছে হাড়-জ্বালানো বাতেলা। 
- মন্দার বোস প্লাস জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ইজ ইকুয়াল টু মনমোহন মিত্তির, তাই নয় কী? 
- হেহ! সে'বার আপনার কাছে নেকড়ে নিয়ে পর্যুদস্ত হলাম। অথচ এবারে কত বাঘা বাঘা জেরার সামনে পড়েও পালটা ল্যাজে খেলিয়ে ছেড়েছি। আপনি সে'বার ইন্সপ্যায়ার করেছিলেন বলেই এ'সব সম্ভব হয়েছে লালমোহনবাবু। আর সে জন্যই, অ্যাস আ টোকেন অফ মাই অ্যাপ্রিশিয়েশন, আপনার জন্য ছোট্ট একটা উপহার নিয়ে এসেছি।
- এ'টা কী...বই? আহ এ'সবের আবার কী দরকার ছিল...।
- লেফটানেন্ট সুরেশ বিশ্বাসের জীবনী, বইটি সহজলভ্য নয়। সুরেশ বিশ্বাসের মত মানুষও অবশ্য সহজলভ্য নয়। আপনার ভাষা ধার করে বলি; হাইলি পাওয়ারফুল ভূপর্যটক! ওই, ওই কলিংবেল বাজছে। পুলিশ বোধ হয়...। 
- এহ, গল্পটা সবে জমে উঠেছিল মন্দারবাবু!
- সাম আদার টাইম দেন। দরজাটা খুলে দিন।
- ইয়ে আপনার আদত নামটা...। 
- আপাতত মন্দার বোসই থাক।  

Thursday, May 27, 2021

কলকাতাইস্টিজম




"Maajhraats are khataraak" - Lerlogg Algomi 

***

মদের নেশা শুনেছি লেবুজলে কাটানো যায়৷ কিন্তু রাত্রের বিটকেল মুহূর্তে "কলকাতা কদ্দিন যাইনা"-মাথা ঝিমঝিমের কোনও সহজ চিকিৎসা আছে বলে আমার জানা নেই৷  

প্রথমেই, প্যারামাউন্টের ডাবের শরবত আর কলেজ স্কোয়্যার ক্যান্টিনের স্টু-পাউরুটি মেলানো মেশানো যৌবন-স্মৃতি মনে ঘা দিল৷ মনকেমনের পাশাপাশি চাগাড় দিল ধারালো খিদে।

তারপর সে' স্টু-পাউরুটির সুবাস থেকে মন সোজা গিয়ে পৌঁছল বেহালা। ট্র‍্যাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে এফএমের অসহ্য বিজ্ঞাপন মুখস্থ করার ব্যাপারটাও সুখস্মৃতি বলে ঠেকল৷ মেট্রো-প্রতিশ্রুতি ঝোলানো খুড়োর কল মার্কা পিলারগুলোও বড় আপনার ঠেকল; হোক অকাজের, তবু আপন তো৷ 

এরপর মন গেল গড়িয়াহাট৷ ইলিশের দাম শুনে ব্যাজার হয়ে এসে দাস কেবিনে বসা৷ সে প্যাথোসের নাগাল পাবে এমন আধুনিক কবিতা লেখার বান্দা এখনও তৈরী হয়নি৷ 

ঢাকুরিয়া চত্ত্বরে অফিস ছিল, অফিসের মায়া কতটা টানে জানিনা৷ তবে অফিসের কয়েকজন জানালার সঙ্গে সবিশেষ আলাপ জমেছিল৷ তাদের কথা ভেবে মন সামান্য আলুথালু। আর সে জানালা বাবাজীদের মাধ্যমে আলাপ জমেছিল ঢাকুরিয়ার আকাশের সঙ্গে৷ সে আকাশ ছিল আমার বেণীমাধব শীল৷ কোন বিকেলে জিলিপি খাবো, কোন বিকেলে চপ, কোন দিন অফিস ফেরতা সুমন শুনব আর কোনদিন ইয়ারদোস্তদের ফোন করে "কী খবর রে, কদ্দিন কথা হয় না" গালগল্প জুড়ব; এ সমস্তই আগাম বাতলে দিত ঢাকুরিয়ার আকাশ৷ 

গোলমেলে সময়৷ 

ঢাকুরিয়ার আকাশ, প্যারামাউন্ট, বেহালা মেট্রোর পিলার আর গড়িয়াহাটের ইলিশ যেন ভেবে না বসে যে ওয়ার্ডেন ক'দিনের জন্য বাইরে গেছে বলে তারা সাপের সাতান্ন পা দেখবে৷

Tuesday, May 25, 2021

গ্যাংটক ও হালুয়ামোহন



গ্যাংটকে গণ্ডগোল সম্বন্ধে দু'টো মাইনর আর একটা মেজর বক্তব্য।

**
মাইনর-এক।

বাদশাহী আংটির তরুণ তুর্কী মেজাজ ছেড়ে ফেলু এখানে বেশ পোড় খাওয়া গোয়েন্দা। পকেটে রিভলভার নিয়ে ঘুরছে। অবশ্য এর মাঝে সে সে কৈলাস চৌধুরীর পাথরে কেস আর শেয়াল দেবতার রহস্য সলভ করেছে। তাছাড়া এ গল্পটার মধ্যে ট্যুইস্ট অ্যান্ড টার্নগুলো রীতিমত সিনেম্যাটিক।  গ্যাংটকের পটভূমিটাও দিব্যি এক্সপ্লোর করা হয়েছে; পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে ফেলা পাথর, মনাস্ট্রি বিষয়ক মিস্ট্রি, পাহাড়ি লোডশেডিংয়ে গা-কাঁপানো প্ল্যানচেট আর একটা 'হাইভোল্টেজস্পার্ক' ক্লাইম্যাক্স। 

**

মাইনর-দুই।

শুনেছি বিজ্ঞাপনে subliminal messaging  ব্যাপারটা প্রায় অস্ত্রের মত ব্যবহৃত হয়। আমি তেমন বুঝিটুঝি না তবে আমাদের বহু বাজারু বদ-অভ্যাস যে এই সাবলিমিনাল মেসেজিংয়ে ঘায়েল হয়ে তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।  তেমনই, ঝাঁ-চকচকে সুরসিক বাঙালি কেমন হবে তা নিয়ে সত্যজিৎবাবু ফেলুকে ব্যবহার করে আমাদের অজান্তেই আমাদের সাবকনশাসে কিছু ঘুঁটি সাজিতে গেছেন৷ একটা লাইন কোট করি যা এমনিতে তেমন নজরকাড়া কিছু নয় কিন্তু সে'সব লাইনের সামগ্রিক ইনফ্লুয়েন্স বেশ কয়েকটা প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছে;

"ফেলুদা মাঝেমধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিল; কেন সেটা বুঝতে পারলাম না। হয়তো মনের মধ্যে কোনও খটকা রয়েছে। এত ভালো মাংস খাওয়ার সময়ও তার চোখ থেকে ভ্রূকুটি যেতে চাইছে না"।

**
মেজর।

এ'বার আসি মোক্ষম ব্যাপারটায়। এ'টা অবশ্যই অন্ধকারে ঢিল। তবু বলি। এই গল্পেই বোধ হয় লালমোহন গাঙ্গুলির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিশিকান্তবাবুই সম্ভবত সত্যজিতের প্রথম চেষ্টা ফেলু-তোপসের সঙ্গে একজন মজারু আর মাইডিয়ার থার্ড হুইল জুড়ে দেওয়ার। নিশিকান্তবাবু লালমোহনের মতই আন্তরিক, বিপদে নার্ভাস হলেও ঝুলে পড়ার লোভ সামলাতে পারেন না। 
কোট করি;
"নিশিকান্তবাবু ফেলুদার মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে একটু ঘাবড়েছেন বটে, তবে ভিতরে ভিতরে মনে হল অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধটা পেয়ে তিনি বেশ একটা রোমাঞ্চ বোধ করছেন। নামচির বাজার থেকে একটা কমলালেবু কিনে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন, 'বিপদ যাই আসুক না কেন মশাই, একদিকে প্রদোষবাবু আর একদিকে জার্মান বীরেনবাবুকে নিয়ে ডরাবার কোনও কারণ দেখছি না'।" মাঝেমধ্যেই তিনি লালমোহনীয় সুরে "বেশ থ্রি- মানে থ্রিলিং লাগছে"ও বলে উঠছেন। উপন্যাসের শেষও তাঁর কথা দিয়েই; "থ্যা-মানে থ্যাঙ্কস"।

এর সঙ্গে যোগ করা যাক ওঁর অস্ত্রের প্রতি ঝোঁক, এ ক্ষেত্রে ছিল জোঁক ছাড়ানোর বিশেষ লাঠি। প্যাকেজ সম্পূর্ণ করতে ভদ্রলোককে একটা বাটারফ্লাই গোঁফও পরিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ।  সব মিলে জম্পেশ লালুবাবু মেটেরিয়াল।

 নিশিকান্ত সরকারকে নিয়ে এগোনো গেলনা কারণ তিনি দার্জিলিংয়ের মানুষ, ফেলুর বাড়ি নিয়মিত শিঙাড়া পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়পাড়ের মানুষই সুবিধেজনক।  তা'ছাড়া রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের লেখক হিসেবে লালুবাবু অনেক বেশি মশলা এনে দিয়েছেন। আর একটা বড় ব্যাপার; নিশিকান্তবাবুর টাকার লোভ রয়েছে এবং তার জন্য এথিকস ব্যাপারটাকে মাঝেমধ্যে চেপেচুপে রাখতে তাঁর তেমন আপত্তি নেই৷ কিন্তু ফেলুদার বন্ধু হতে গেলে সে ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ যে কিছুতেই চলবে না তা বলাই বাহুল্য।

Monday, May 24, 2021

প্রমথনাথের মাইকেল




ইন্টারনেট বলছে প্রমথনাথ ১৯৮৫ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন৷ ক্যালক্যাটা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন, আনন্দবাজারে কাজ করেছেন, বিধানসভার সদস্যও হয়েছিলেন৷ কিন্তু এ'সব তথ্য দিয়ে যে'টা মাপা যায়না সে'টা হল ওঁর ভাষার মিষ্টতা এবং ধার৷ ওর লেখা মাইকেল মধুসূদনের জীবনী বিবরণের দিক থেকে সংক্ষিপ্ত কিন্তু মাইকেলের চরিত্র বিশ্লেষণের দিক থেকে অন্যন্য৷ সাকুল্যে একশো কুড়ি পাতার বই অথচ রিসার্চ আর ভাষার গুণে এতটাই সমৃদ্ধ যে   মাইকেল, বাঙালির চরিত্র আর সে সময়ের বাঙলা সাহিত্যের মূল রস তুলে ধরার ব্যাপরে এ বই একটা দুর্দান্ত রিসোর্স। 

খেয়াল করে দেখেছি যে জীবনী রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটা বড় সমস্যা দেখা দেয়৷ যেমন ধরুন লেখক দুর্দান্ত রিসার্চ করলেন কিন্তু জার্নাল এন্ট্রির মত সমস্ত তথ্য সাজিয়ে দেওয়ার ফলে যে'টা তৈরি হল সে'টা পড়া প্রায় কাঠ চেবানোর মত একটা অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে জীবনীর নামে পড়ে থাকে অলীক রূপকথা, সে হেগিওগ্রাফি হজম করার চেয়ে তিন মিনিটের মধ্যে আধ-বস্তা চিনি গেলা সহজ। মাইকেলকে নিয়ে লিখতে গিয়ে সেই বাড়াবাড়ির ফাঁদ এড়িয়ে ব্যালেন্সটাকে টানাটান ভাবে ধরে রেখেছেন প্রমথনাথ। সবচেয়ে বড় কথা; বইটার পরতে পরতে রয়েছে প্রমথনাথের প্রবল রসবোধ, মেধা এবং সারকাজম (ইন্টারনেটের কলারটানা গুঁতোগুঁতি-মার্কা সারকাজম নয়)। বইটা হেগিওগ্রাফিক না হলেও  আমার রিভিউটা তাই। কাজেই প্রমথনাথের কথা ধার করেই কাজ সারব।  

গোড়াতেই প্রমথনাথ আড়াই পাতার একটা পটভূমি এঁকেছেন; মাইকেলের জীবনী কপচাতে কেন গেলেন সে সম্বন্ধে। অনেকটা নারায়ণ সান্যালের লেখা কৈফিয়ৎ স্টাইলে। এই আড়াই পাতা নিশ্চিন্তে "ডামিজ গাইড টু বায়োগ্রাফি রাইটিং" হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়। প্রমথনাথ বলছেন, "আমি মাইকেলকে দেবতা করিয়া তুলি নাই; তাঁহার দোষত্রুটি  দেখাইয়া দিয়াছি- এমনকি তাঁহাকে লইয়া ঠাট্টা বিদ্রূপও করিয়াছি; ইহাতে তাঁহার অসম্মান হইয়াছে মনে করি না - বরঞ্চ ইহা দ্বারা তাঁহাকে মানুষ মনে করিয়া সম্মান দেখানোই যেন হইয়াছে। মানুষকেই ঠাট্টা করা যায়- ভালোবাসা যায়। দেবতাকে ঠাট্টা করাও যেমন যায়না, তেমনই ভালোবাসাও যায় না। এই গ্রন্থে মধুসূদন ব্যক্তিটি কেমন ছিলেন- তাহাই প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিয়াছি।... পাঠকের কেমন লাগিবে তাহা জানি না, তবে ব্যক্তি মধুসূদন..নিশ্চয়ই উচ্চহাস্যে উল্লাস প্রকাশ করিতেন, মাঝেমাঝে হাততালি দিয়া উঠিতেন; আর লেখক চলিয়া যাইবার উপক্রম করিলে বলিতেন; "Don't go away, man; Boy, give him a peg"। 

বাঙালির গালগল্পের ধাত চিরকালীন; তিলকে তাল না করলে আমাদেত আড্ডা-সংস্কৃতি পূর্ণতা পায়না৷ অটোর লাইনের ঠেলাঠেলি থেকে গ্রেগ চ্যাপেলের কানমলা; দু'চারটে শহীদ খুঁজে উঁহু-আহা না করতে পারলে আমাদের ভাত-ঝোল হজম হয়না। ট্র‍্যাজেডির প্রতি আমাদের সুগভীর লোভ; কিন্তু সেই লোভের বশবর্তী হয়ে অত্যাধিক দৌড়ঝাঁপ আবার আমাদের ধাতে সয় না। সে'দিক থেকে মধুকবি যাকে বলে প্রবলভাবে ব্যতিক্রমী। তিনি ট্র‍্যাজেডির ব্র‍্যাডম্যান। ছেলেবেলায় মেসের এক বন্ধু বলেছিল, "ভাই রে, কবিতা লিখলেই বুঝি কবি হওয়া যায়"? আমার ধারণা মধুসূদন যদি এক লাইন কবিতাও না লিখতেন, স্রেফ ট্র‍্যাজেডি কোশেন্টেই  তিনি কবিশ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতেন। তবে মধুকবি লিখেছেন; বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সত্যিই প্যারাডাইম শিফট (অফিসের পাওয়ার পয়েন্টে লেখা গাঁজাখুরি শিফট নয়) এনেছেন। কারণ প্রতিভার দিক থেকে তিনি অতুলনীয়,  অদম্যও বটে। 

মধুসূদনের মধ্যে একটা প্রবল খ্যাপাটে জিনিয়াস ছিল, সেই জিনিয়াসের নাগাল পাওয়া সাধারণ মানুষের কাজ নয়৷ নিজের ট্যাজেডি তিনে একে একে নিজেই বুনে চলেছেন; হাহাকার করেছেন, খতরনাক আত্মবিশ্বাসে নিজেই নিজেকে বারবার ক্ষতবিক্ষত করেছেন, মানুষকে বিশ্বাস করে পথে বসেছেন আবার মানুষের সান্নিধ্যে তাঁর উত্তরণ ঘটেছে। মাইকেল মধুসূদন নামক দুর্দান্ত রোম্যান্সটি কোনও লেখকের কল্পনায় তৈরী হওয়া সম্ভব বলে মনে হয়না। কাব্যের জন্য জীবন, জাত, ধর্ম বা যা কিছু মূল্যবান; সমস্তই ভাসিয়ে দিতে মধুকবি কসুর করেননি। আবার অর্থের টানে কবিত্ব জলাঞ্জলি দিতেও তাঁর দু'বার ভাবতে হয় না। অবশ্য বাঙালি যেন ভেবে না বসেন যে মধুসূদন আখেরের স্বার্থে উপার্জনে মন দিয়েছিলেন। ভদ্রলোক হয়ে দু'হাতে টাকা না ওড়াতে পারার পাপস্খলন করতেই তার এই প্রচেষ্টা। অর্থ আর কাব্য, এই দুইই তাঁর জীবনে ফুটোনোটের মত।  আমার লেখায় ব্যাপারটা প্রলাপের মত শোনাবে এ'টাই স্বাভাবিক।  সে ধোঁয়াশা কাটাতে বইটা পড়ে ফেললেই হয়।  মধুসূদন নামক রোম্যান্সের সুবাস অল্প কথায় পাঠকের মনে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন প্রমথনাথ।  সে'খানেই এ বই সত্যিই অতুলনীয়। 

প্রমথনাথ মাইকেলের জিনিয়াসকে যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন, তেমনই সাবলীল ভাবে মস্করা করেছেন তাঁর বিনয়ের অভাব এবং সাংসারিক বুদ্ধিহীনতার। আবারও বলি, প্রমথনাথের মস্করার ভাষা ছেনিহাতুড়ি নয়, সে ভাষার তুলনা চলে শুধু শিউলি সুবাসের সঙ্গে। অবশ্য এও ঠিক যে সাবজেক্ট হিসেবে মাইকেলের মত সরেস কাউকে জোটানো মুশকিল। 

উদাহরণ  দিই। "মাইকেলের মনে পড়িল বিদ্যাসাগরের কথা৷ বিদ্যাসাগর বলিয়াছেন, "তুমি খুব করিয়াছ। কিন্তু ভারতচন্দ্রকে ছাড়াইতে পারিয়াছ বলিয়া মনে হয় না"। আঃ, কিছুতেই কৃষ্ণনগরের লোকটার সঙ্গে আঁটিয়া উঠা যায়না৷ এখনও সকলে তাকে মাইকেলের চেয়ে বড় মনে করে৷ লোকটা বাংলা সাহিত্যের কী ক্ষতিই না করিয়াছে"৷

আবার মেঘনাদ-বধ সম্বন্ধে মাইকেল নিজেই বলছেনঃ
"এই কাব্য খুব লোকপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছে। কেহ বলিতেছে ইহা মিলটনের অপেক্ষাও ভালো; তাহা সম্ভব নয়। কাহারও মতে ইহা কালিদাসকে পরাজিত করিয়াছে, ইহাতে আমার আপত্তি নাই। আমার মনে হয় ভার্জিল, কালিদাস বা টাসোর সমকক্ষ হওয়া অসম্ভব নয়- যদিও তাঁহারা মহাকবি, তবুও তাঁহারা মানুষ বই নয়। মিলটন দেবতা"। 

কাজেই মাইকেল মধুসূদন নামক রোম্যান্সের স্বাদ পেতে হলে প্রমথনাথবাবুর ভাষার দ্বারস্থ না হয়ে উপায় নেই। 


আরও একটা কথা বলে রাখি।  
এই বইতে বাঙালির চরিত্রের ওপর যে খতরনাক কমেন্ট্রি রয়েছে, তার গুরুত্ব আগামী দেড়শো বছরেও কমবে কিনা জানা নেই। এ বিষয়ে বেশি না ফেনিয়ে প্রমথনাথের আর একটা কোটেশন ব্যবহার করে লেখা শেষ করি৷ বিদ্যাসাগরের চরিত্র মাহাত্ম্য অল্প কথায় বোঝাতে গিয়ে প্রমথনাথ লিখছেনঃ

"বিদ্যাসাগর বন্ধুদের মনে রাখিতেন; তাঁহার সমবেদনা মৌলিক আর লজ্জা কেবল চাক্ষুষ ছিল না; কথা দিয়া কথা রক্ষা করিতেন; দানের প্রয়োজন বুঝিলে ঋণ করিয়া টাকা দিতেন; বন্ধুর বিপদ দেখিলে কাজের ছুতায় সরিয়া পড়িতেন না; গাছে তুলিয়া মই টানিয়া লইবার অভ্যাস তাঁহার ছিল না। এক কথায় তিনি বাঙালি ছিলেন না"। 

আর, যেহেতু আমাদের লজ্জা মূলত চাক্ষুষ,  এ বই পড়লে আত্মসম্মানবোধে ঘা লাগার বিশেষ কোনও সম্ভাবনা নেই।

ভালোবাসার



ভালোবাসায় মানুষ

১। অঙ্ক খাতায় তিব্বতি পায়েসের রেসিপি লিখে রাখে।

২। সিগারেটের বাক্সে মৌরি লজেন্স লুকিয়ে রাখে।

৩। আলুপোস্ত দিয়ে ভাত মেখে মা-মা মার্কা মনকেমন খুঁজে বেড়ায়।

৪। পোস্ট-না-করা-চিঠিকে আবোলতাবোলের বুকমার্ক করে রাখে।

৫। "কুছ পরোয়া নহি" হুঙ্কারের শাকে "যাস না ভাই"য়ের মাছ ঢেকে রাখে।

Sunday, May 23, 2021

রোব্বারের ডিমকষা



ডিমের ট্যালট্যালে ঝোলও যথেষ্ট সুস্বাদু হতে পারে৷ ভাতের মধ্যে কাঁচলঙ্কা ডলে,সে ঝোলে মেখে দিব্যি লাঞ্চ সেরে নেওয়া যায়। তবে রোব্বারের ডিমের ঝোল না কষালে মুশকিল, ঝোলের ট্যালট্যালেমো আগামী হপ্তার মেজাজকে ডায়লুট করে দিতে পারে৷ মায়ের রান্না রোব্বারের ডিম তাই ঝোল নয়, কষা। এবং রগরগে৷ 

ডিমের কষা প্রসঙ্গে বিহারের এক ছোট্ট ভাতের হোটেলের কথা মনে পড়ে গেল। কটিহার আর পূর্ণিয়া শহরের মাঝামাঝি, হাইওয়ের ওপর একটা দোকান৷ দু'হাজার দশ থেকে বারোর মধ্যে সে রাস্তা দিয়ে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল; অফিসের কাজে৷ আমার ড্রাইভার ও খাসদোস্ত ধর্মেন্দ্র মাঝেমধ্যেই সে দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে লাঞ্চ সেরে নেওয়ার জন্য৷  ঝুপড়ি বললে সে দোকানের ওজন স্পষ্ট ভাবে বোঝানো যায়৷ সে'খানে চাল মোটা। অবশ্য মোটা চালে একটা আলাদা স্বাদ থাকে, তা আমিষ ঝোলে মেখে খেতে লাগেও দিব্যি, কিন্তু ওই দোকানের সে চাল বড় বিস্বাদ ঠেকত, কিছুতেই রোচেনি৷ তাই সে'খানে নিতাম রুটি, আলুভাজা আর হাঁসের জোড়া ডিমের কষা৷ 

যে স্টিলের বাটিতে ডিমে দেওয়া হত, তার গায়ে এক ফোঁটা ঝোলও লেগে থাকত না। শুধু মাখোমাখো কালচে ভাজা পেঁয়াজ। আর থাকত রগরগে ঝাল। আবার সেই জিভ-কাঁপানো ঝালের পাশাপাশি থাকত একটা চমৎকার টক-মিষ্টি 'আন্ডারকারেন্ট'; সবমিলে সে স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়৷ আমি আর ধর্মেন্দ্র সে ডিমকষার ঝালে হাপুসহুপুস হয়েও যে কত রুটি উড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই৷ তিন চার গ্রাস রুটি-ডিম মুখে পোরার পর অল্প আলুভাজা মুখে দিতাম জিভ নিউট্রালাইজ করতে, তারপর ফের সেই হাইক্লাস কষায় ডাইভ৷ 

একবার আমরা সে দোকানের পাশ দিয়ে যখন পেরোলাম তখন বিকেল৷ কিষাণগঞ্জ থেকে দিব্যি ভরপেট ভাত খেয়ে বেরিয়েছি, আর লাঞ্চের জন্য দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না৷ দোকান ছাড়িয়ে আধমাইল মত চলেও গেছি, আচমকা বুক বেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস উঠে এসেছিল;

"ধর্মেন্দ্রজী, ওই ডিমের কষা আজ আর খাওয়া হল না"।

উত্তরে ধর্মেন্দ্র পালটা দীর্ঘশ্বাস ভাসিয়ে দিয়েছিল। তার মনও যে একই হাহাকারের নৌকায় ভাসছে তা দিব্যি বুঝতে পারলাম।

"ইউটার্ন লেকে ওয়াপস জানেমে জ্যাদা টাইম তো নহি লগেগা ধর্মেন্দ্রজী, তাই না"? জিভের লকলক ততক্ষণে বুকের ধুকুপুকে নেমে এসেছে।

"তুরন্ত পহুচ জায়েঙ্গে জী", বুঝলাম যে ধর্মেন্দ্রও যে নিশির ডাক অগ্রাহ্য করতে পারছে না।

"তবে ভাত তো খাওয়া হয়েই গেছে কিনা, তাই ভাবছিলাম..এখন কি আর রুটি খেতে ইচ্ছে করবে"?

ধর্মেন্দ্রর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল 
" লাঞ্চ তো হো গয়া৷ লেকিন শাম কা নাস্তা কর লেতে হ্যায়৷ গাড়ি মে বিরেড (পাউরুটি) হ্যায়৷ বস উয়ো অন্ডা উঠানা হ্যায়"।

তার আধঘণ্টার মাথায় পাউরুটি সহযোগে সে হাইক্লাস ডিমকষায় ফিরে গেছিলাম আমি আর ধর্মেন্দ্র৷

ইনভেস্টমেন্ট



- ইয়ে, তা এই শেয়ার মার্কেটের সিচুয়েশনটা কেমন বুঝছেন বিপিনবাবু?

- যারা ভেবেচিন্তে হিসেব কষে পা ফেলে, যাদের ডিসিপ্লিন আছে; তাদের জন্য শেয়ার মার্কেটে সবসময়ই রমরমা৷ 

- আপনার তা'হলে টুপাইস স্মুদলি আসছে বলুন৷

- আমি তো চুনোপুঁটি হে। সামান্য কয়েকটা টাকা এ শেয়ার থেকে ও শেয়ার খেলিয়ে চারাপোনার সাপ্লাইটা এনশিওর করে যাচ্ছি৷ 

- তা বিপিনবাবু, শেয়ারমার্কেটে যদি আমিও টাকা রাখতে চাই..।

- তাই বলো৷ এদ্দিন পর আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিতে আসনি৷ এসেছ ধান্দা নিয়ে৷ 

- ধান্দা শব্দটা কেমন যেন ইয়ে৷

- স্পষ্ট কথাকে হামেশাই ওই ইয়েই মনে হয়।

- সহকর্মী হিসেবে আপনাকে আমরা কতটা রেস্পেক্ট করি বিপিনবাবু..। সে জন্যেই তো আজ..।

- প্রাক্তন সহকর্মী৷

- অফিস থেকে রিট্যায়ার করেছেন বলে কি আমরা আপনাকে ভুলে গেছি ভাবছেন? ছি ছি..। 

- ক্যাপিটাল কত?

- আজ্ঞে?

- মার্কেটে কত রাখতে চাও?

- কত রাখা উচিৎ বলুন তো? ফিক্সড ডিপোজিটই বলুন বা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইন্টারেস্ট তো নোজ-ডাইভ করছে। তাই ভাবছিলাম..লাখখানক টাকার শেয়ার কিনে যদি মাস ছয়েকের মধ্যে ডবল করা যায়..।

- মাস ছয়েকে টাকা ডাবল?

- আপনার মত দুঁদে কনসালট্যান্ট থাকতে..হে হে..।

- শেয়ার মার্কেটে অ্যালকেমির লজিক চলে না৷ তবে উপায় একটা আছে..।

- অপশনস? কল? পুট? ও'সব আমি বুঝব?

- না, না৷ ও'সব মামুলি এলাকায় পড়ে থাকলে তোমার চলবে না৷ তোমায় একটু অন্য স্কেলে যেতে হবে। 

- কী'রকম? 

- লটারির টিকিট কাটো৷ আর পাশাপাশি একের পর এক মানত করে যাও৷

- ঠাট্টা করছেন বিপিনবাবু?

- সিরিয়াস ভায়া। তবে মানতের লেভেলটা ক্রমশ বাড়িয়ে যেতে হবে৷ প্রথম শনিমন্দিরে পঞ্চাশটাকার সন্দেশ মানত করবে৷ তা'তে ফল না হলে কালীঘাটে পাঁঠা৷ তারপর কামাখ্যায় বালুচরী৷ তা'তেও শিকে না ছিঁড়লে তিরুপতিতে সোনার হার৷ বলা যায় না, কোটিটাকার সুটকেস কেউ বাড়ি পৌঁছে দিতে পারে৷ 

- আপনি আমার মক করছেন বিপিনবাবু৷

- অন দ্য কন্ট্রারি৷ শেয়ার মার্কেটে দু'মাসে টাকা ডবল করার চেয়ে স্ট্যাটিস্টিকালি সেফার অপশন সাজেস্ট করছি৷ ক্রিকেট বেটিং সাজেস্ট করতাম তবে বেআইনি কাজ উইক কলজে দিয়ে হবে না।

- ধুস।

- অন আ সিরিয়াস নোট৷ টাকা শিওর শট ডবল করতে যাওয়ার কয়েকটা উপায় আছে৷ এবং সে'টার জন্য দু'মাস অপেক্ষাও করতে হবে না৷ 

- সে'গুলোও শুনেই রাখি৷

- এক নম্বর, প্রয়োজনে মানুষের পাশে আলতো করে দাঁড়াও৷ মানিব্যাগ উপুড় করে দিতে হবে না, এই সামান্য কিছু। বিপদগ্রস্ত মানুষের হাতে দু'পয়সা গুঁজে দিয়ে জাস্ট সরে পড়ো৷ পিছু ফিরে তাকিও না। দু'নম্বর৷ ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যান ছকে ফেলো। একবার সাহস করে, আখেরের চিন্তায় ঘাবড়ে না গিয়ে, বোনাসের টাকা আর একঝাঁক আর্ন্ড লীভ পাহাড়ে ঘুরে খরচ করে ফেলো৷ বুকের ভিতর হাইক্লাস ভালোবাসা জেনারেট হবে হে, আর তাতেই আখেরে মঙ্গল৷ এমন কোনও স্টক মার্কেটে নেই যা এই রিটার্ন ম্যাচ করতে পারে৷ কেমন?

Saturday, May 22, 2021

গোলকবাবুর প্ল্যানচেট



- দত্ত, আজ একটু লেট করে ফেললে দেখছি৷

- আর বলেন কেন গোলকদা৷ বাতাসে এত ইমপিউরিটি..।

- এয়ার পলিউশন কি তোমাদের মুভমেন্টকে এফেক্ট করে?

- গোলক সমাদ্দারের মত পোড় খাওয়া প্ল্যানচেটিয়ের তো সে'টা জানা উচিৎ৷ তবে পলিউশন বাদেও দেরী হওয়ার আরও একটা কারণ আছে৷ 

- সে'টা কী..।

- আপনার এই ড্রয়িংরুমে একটা বিশ্রী ভাইব্রেশন টের পাচ্ছি বুঝলেন। কাজেই মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছিল।

- মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে প্রব্লেম? দিবাকরের শরীরে ঢুকতে অসুবিধে? সে কী!

- দোষটা অবিশ্যি দিবাকরের নয়৷ মিডিয়াম হিসেবে ও সত্যিই অতুলনীয়৷

- নয়ত আর তাকে মাসমাইনে দিয়ে পুষছি কেন বলো৷ আরে আমার সেক্রেটারির দরকারটাই বা কীসে৷ তা, ওই বিশ্রী ভাইব্রেশনের কেসটা কী ভাই দত্ত? সন্ধ্যেবেলা খানিকক্ষণ ভজন শুনেছিলাম বটে৷ তা'তে রুমের পরিবেশ নষ্ট হয়নি তো?

- আহ, ও'সব সুপারস্টিশনের কোনও মানে হয়? আরে বাবা ভূতেরা ভজন দিব্যি ভালোবাসে৷ কীর্তন হলে তো তোফা৷ ওই রামনামে ভূত ভাগানোর ব্যাপারটা জাস্ট বোগাস৷

- তা'হলে অসুবিধেটা কোথায় সে'টা খুলে বলো৷ প্ল্যানচেটে বিঘ্ন মোটে ভালো কথা নয়৷ এর আগে তুমি বা তোমার ইয়ারদোস্তরা যবে যে অসুবিধের কথা বলেছ, সে'সব দূর করতে আই হ্যাভ লেফট নো স্টোন আনটার্নড৷ তাই নয় কী?

- সে জন্যেই তো আপনার মত প্ল্যানচেটিয়ের কাছে হরেকরকম আত্মা নিশ্চিন্তে সারেন্ডার করে৷ 

- অবিশ্যি, দিবাকরেরও ক্রেডিট রয়েছে৷ ওর মত হাইক্লাস মিডিয়াম ছাড়া এ'সব সম্ভব হত না৷ 

- কিন্তু প্ল্যানচেট জিনিয়াস তো আপনিই, তাই নয় কি গোলকদা?

- হে হে হে৷ তা, সবই তো জানো হে দত্ত৷ আমি একা  রিটায়ার্ড মানুষ৷ ভগবানের দয়ায় আমার যা আছে তা দিয়ে দু'বেলা দরাজ হাতে হরির লুঠ বিলোলেও জীবনটা দিব্যি কেটে যাবে৷ এই প্ল্যানচেটের শখ নিয়েই পড়ে রয়েছি৷ মাঝেমধ্যে তোমাদের ডেকে গল্পগুজব করে বাকি দিনগুলো আনন্দে কাটিয়ে দেব, এ'টুকুই আশা৷ তা এই বিশ্রী ভাইব্রেশনের কেসটা তো তলিয়ে দেখা উচিৎ৷ তোমরাই হলে গিয়ে আমার জীবনের ধ্রুবতারা, তোমাদের ল্যান্ডিংয়ে অসুবিধে হলে যে ক্যালামিটি ঘটে যাবে৷ 

- আপনার এই ঘর মিস্টিক পাওয়ারে পরিপূর্ণ ,  বুঝলেন৷

- মিস্টিক পাওয়ার। জানো দত্ত, অন্য আত্মারাও তাইই বলে কিন্তু৷ আশেপাশে খুব জোরালো যন্ত্রণা বা নির্মম দুঃখ কোথাও ভেসে বেড়ালেই নাকি তার ছোঁয়া আমার এই প্ল্যানচেট জোনে এসে পড়ে। এই গত হপ্তাতেই সান্যালের আত্মাও ঠিক এ কথাটাই বললে।

- সান্যালের আত্মা তো রীতিমতো মজবুত৷ আমাদের দুনিয়ায় সে বেশ কেউকেটা একজন।

- ও পাড়ায় যে তুমিও একজন এলিট হিসেবে সুনাম অর্জন করেছ তা আমি জানি কিন্তু৷ অবিশ্যি এটা শুনতে তোমার বিনয়ে বাধে, তা আমি বুঝি।  যাক গে, নেগেটিভ 
ভাইব্রেশনটা কীসের বলো তো?

- আজ কেন জানিনা মনে হল যেন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাহাকার ভেসে বেড়াচ্ছে যেন আপনার এই প্ল্যানচেট জোনে৷ আর সে সব হাহাকারে বাতাস ঘোলাটে হয়ে পড়ে কিনা..মিডিয়ামকে গ্রিপ করতে বড় ঝ্যামেলা হয়।

- ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাহাকার..।

- বাতাসে কেন ভাসছে বলুন তো দেখি গোলকবাবু?

- উম..।

- কেন?

- আই থিঙ্ক আই নো। 

- ব্যাপারটা কী?

- এ পাড়াতে একটা অনাথ আশ্রম আছে৷ তাদের হরদম হরেক রকমের বায়নাক্কা৷ আর মনু মিত্র হল সে আশ্রমের সেক্রেটারি,  আজকাল খুব যাতায়াত আরম্ভ করেছে ডোনেশনের জন্য। বলে ফান্ডের অভাবে নাকি ছেলেমেয়েগুলোর নিউট্রিশন মার খাচ্ছে৷ দু'পাঁচশো টাকা নয়, এক্কেবারে দশ হাজার চেয়ে বসলে৷ আরে, টাকা কি খোলামকুচি নাকি?

- নয়ই তো৷ টাকা কি গাছে ফলে? 

- আমিও তাই বললাম মনুকে। কিন্তু সে মহাত্যাঁদড়। 

- টাকা অমন ফস করে দিলেই হল নাকি৷ 

- তুমিই বলো দত্ত, কী বিশ্রী জুলুম৷

- তবে কিনা, ওই খোকাখুকুদের হাহাকার আপনার এই প্ল্যানচেট জোনের বাতাসকে এমন বিষিয়ে তুলছে..। আমাদের পক্ষে একটু ডিফিকাল্ট হয়ে পড়েছে কমিউনিকেশন..।

- আরে শোনো দত্ত, তোমরা হলে প্রায়োরিটি।  আর হাজার দশেক আর এমন কী৷ এইত্তো, গেল মাসে এক আত্মা এমনই ফাঁপরে পড়েছিল৷ তার সমস্যা দূর করতে একটা দাতব্য চিকিৎসালয়ে দিয়ে দিলাম কড়কড়ে পঁচিশ হাজার টাকা। তারপর এই ধরো মাস চারেক আগে এ'রকমই চাপে পড়ে একটা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প ফস করে স্পনসর করে ফেলেছিলাম। তুমি ওই বাতাসে ভেসে বেড়ানো খোকাখুকুদের হাহাকার নিয়ে ভেবো না। ওর একটা হিল্লে আমি কালই করে দেব৷ মনু দশ চেয়েছিল, কাল ওকে ডেকে আমি সোজা কুড়ি হাজারের চেক লিখে দেব৷ ঝ্যামেলা খতম।

- তাই বলে অতগুলো টাকা গোলকদা...।

- আরে কোয়ালিটি আত্মাদের জন্য কুড়ি হাজার আর এমন কী হে.. ও নিয়ে তুমি ভেবো না৷ 

**

- হ্যালো, মনুদা!

- হ্যাঁ, বলো দিবাকর। 

- শুনুন। আপনার কাজটা হয়ে গেছে৷ কালকেই হয়ত গোলকবাবু আপনাকে ডাকবেন চেক লিখে দিতে৷

- কী বলছ দিবাকর..গোলকবাবু অনাথ আশ্রমে ডোনেট করতে রাজী হয়েছেন?

- আমি তো বলেইছিলাম। উনি ঠিক রাজী হবেন৷ ইন ফ্যাক্ট, একটু জোরাজুরি করলে উনি দশ হাজারের অনেক বেশি টাকা অফার করবেন৷ বলে রাখলাম, কথাটা মাথায় রাখবেন। শুধু আমার ব্যাপারটা পাঁচকান করবেন না যেন।

- নিশ্চয়ই নয়৷ দিবাকর, তুমি সত্যিই জাদু জানো৷ তুমি গোলকবাবুর সেক্রেটারি হয়ে আসার পর থেকেই দেখছি অমন চশমখোর মানুষও কর্ণের মত দানধ্যান করে চলেছে। আমেজিং! 

- থিয়েটার ছেড়ে এই সেক্রেটারির খাজা চাকরী নিয়ে তো আমি এমনি এমনি পড়ে নেই মনুদা। চারদিকে এত হাহাকার, সে'সব সামাল দিতে প্রত্যেককে কিছু না কিছু তো করতেই হবে৷ তাই না?

Friday, May 21, 2021

বাদশাহী আংটি আর রেটিং






নাহ্৷ ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চার আর যাই হোক ওভাররেটেড নয়। অন্তত বাদশাহী আংটিতে ফিরে গিয়ে দিব্যি থ্রিলড হলাম৷ সাধারণত আমি যে কোনও গল্প পড়তে গিয়েই নিজের কল্পনায় গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য জুতসই চেহারা বেছে নিই৷ এ ক্ষেত্রে ফেলুদার চরিত্রে অবশ্যই মাথায় ছিলেন সৌমিত্র, তবে সোনার কেল্লার মাঝবয়েসী সৌমিত্র নয়; বাক্স বদলের সেই চনমনে গোঁফলেস সৌমিত্র। তোপসের বাবা অবশ্যই হারাধনবাবু।  বিকাশ রায়ের মুখে একটা খুব শৌখিন গোঁফ আর দামী একটা ফ্রেঞ্চকাট বসিয়ে বনবিহারীবাবু তৈরি করে ফেললাম মনে মনে৷ ইয়ে, ছোটবড় সমস্ত চরিত্রই আমি নিজের মত করে কাস্ট করে ফেলি, কাজেই ব্যাপারটা ছড়িয়ে লাভ নেই৷ শুধু বলে রাখি, এ গল্পে তোপসের চেহারাটা যে অবিকল ক্লাস নাইনে পড়া তন্ময় মুখুজ্জ্যের মত, তা আমি হলফ করে বলতে পারি৷ 

একটা ছুটকো ব্যাপার নজরে পড়ল৷ গল্পের প্রথম চুরিটা ফেলুই করে, তবে সে'টা বাদশাহী আংটি চুরি নয়৷ আংটি চুরিটাকে ঠিক চুরি বলাও চলে না, কারণ সে'খানে ফেলুর উদ্দেশ্য বদ ছিল না৷ তবে তোপসের প্লেট থেকে সান্ডিলা লাড্ডু হাপিস করার কেসটা স্রেফ রাহাজানি৷ পরে অবশ্য তোপসের মুর্গির ঠ্যাংও সরিয়েছে সে। 

ডুন এক্সপ্রেসের রাতটা বড় চমৎকার৷ এদ্দিন পর পড়েও কী ভালো যে লাগল৷ সে'যাত্রাই প্রথম ফেলু চোয়াল শক্ত করে বনবিহারীবাবুর হামবড়াই ভাবকে পর্যুদস্ত করে। 
বনবিহারী ফেলুকে ঠুকছেন - "তা'হলে তুমি বিশ্বাস করো না যে শ্রীবাস্তবের কাছেই এখনও আংটিটা আছে"?.
ফেলুদার এস্পারওস্পার কামব্যাক - " না করি না, আমার কাছে তার প্রমাণ আছে"৷ এই পয়েন্ট থেকেই ফেলু পাতি লাড্ডু-চোর-দাদার খোলস ছেড়ে; ধারালো, অবিচল আর বরফ-মাথার ফেলুদা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে৷ সেই ধারের আঁচ থেকে শুধু বনবিহারী কেন, ভবিষ্যতে মগনলালও পার পাবে না৷ 

তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নিরিখে ফেলুদার গল্পগুলো যে কোনও পাহাড়ি নদীকেও অনায়াসে টেক্কা দেবে৷ বাদশাহী আংটিও তেমনই সচল আর স্মার্ট৷ প্রতিটা চরিত্রের নুয়ান্সেসগুলো মনে দাগ কেটে যায় (বহুবার পড়ার পরেও, আলাদা করে৷ আমার বায়াস? হবে হয়ত)। ডাক্তার শ্রীবাস্তবের নড়বড়ে কনফিডেন্স, ধীরুকাকার উষ্ণতা, বনবিহারীর গা-জ্বালানো মাতব্বরি; সমস্তই প্রকাশ পায় সহজ সিধে কথাবার্তায়৷ চরিত্রদের স্পষ্ট করে তুলতে গাদা গাদা ন্যারেশনে ভরসা করার মানুষ সত্যজিৎ নয়।  সংলাপেই তাঁর কার্যসিদ্ধি। প্রত্যেকের কথাবার্তা দিব্যি ঝরঝরে প্রাণবন্ত বাংলায়; যতবার পড়ি ততবার মনে হয় আমরা ঠিক এ'ভাবেই কথা বলিনা কেন? আর কে জানে, ছেলেবেলায় এ'সব গল্পের মাধ্যমে সত্যজিৎ আমাদের কথাবার্তার স্টাইলে হয়ত বিস্তর প্রভাব ফেলেওছেন। অন্তত সে সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যায়না৷ 

ওভাররেটিং প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম৷ সে প্রসঙ্গ দিয়েই শেষ করি৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে আসছে। মানুষের কাজই হল ওভাররেট আন্ডাররেট করা, আবার মানুষেরই ধর্ম হল অন্যের ওভাররেটিং আন্ডাররেটিংয়ের ঝড়ে ভেসে না গিয়ে নিজের ভালোবাসাগুলোকে আঁকড়ে স্বস্তিতে থাকা৷ 

"ফেলুবাবুর কিন্তু কোনও জবাব নেই মশাই"।




একটা অদরকারী ট্রিভিয়া ঝেড়ে শেষ করি। লখ্নৌয়ের রাস্তায় নতুন হিন্দি ফিল্মের প্যাম্পফ্লেট ছড়ানোর উল্লেখ রয়েছে গল্পে৷ সিনেমা নাম; ডাকু মনসুর৷ ও'টা জেটবাহাদুর গোছের কাল্পনিক নাম নয় কিন্তু৷ ডাকু মনসুর নামে একটা সিনেমা সত্যিই বেরিয়েছিল ১৯৬১তে।

অপম্যানিয়া

- আসুন দাদা, আসুন৷ হাউ মে আই সার্ভ ইউ? এই পঞ্চা! স্যারকে চেয়ারটা এগিয়ে দে৷
- ভালো দেখে এক পিস অপমান দেখান দেখি৷
- অবশ্যই অবশ্যই। পঞ্চা, চট করে অপমানের নতুন স্টকটা নিয়ে আয় বাবা৷ ইয়ে স্যার, আপনার জন্য এক কাপ চা বলে দিই?
- ওকে৷ তবে ব্ল্যাক। আর ইয়ে, অপমানের কোয়ালিটিটা যেন..।
- আপনাকে দেখেই বুঝেছি স্যার; টপক্লাস সমঝদার৷ আশা করি ডিস্যাপয়েন্ট করব না৷
- কী ব্যাপার, আড়াই সেকেন্ড হয়ে গেল৷ চা আসছে না কেন?
- বাহ্৷ বাহ্ বাহ্! এই না হলে অপমানিস্ট৷ শেষ এমন তেজি কাস্টোমার পেয়েছিলাম নাইনটি সেভেনে৷ নমস্কারের সময়ে আমার হাতের অ্যাঙ্গেলে গোলমাল ছিল বলে মুষড়ে পড়েছিলেন। তা ইয়ে, আপনি কি অল্পকথায় অপমান প্রেফার করেন না কি শিবের গীত না জুড়লে আপনাকে স্যাটিসফাই করা যায়না৷
- আমি মিনিমালিস্ট৷ জবরজং আমি প্রেফার করিনা৷
- শিল্পী মানুষ মশাই আপনি।
- ব্ল্যাকটীটা ইমিডিয়েটলি না দিয়ে আপনি আমার গালে থাপ্পড় কষিয়েছেন৷
- আরও দেরী করবে পঞ্চা৷ মাইরি বলছি, ছেলেটার খুব খেটে অপমানটপমান করে৷ আমি নিশ্চিত ও ব্ল্যাকটীর বদলে গুড়ের চা নিয়ে আসবে৷ আর ওই যে চেয়ারটা আপনাকে এগিয়ে দিয়েছে বসার জন্য? সে'টা তো ছারপোকার ডিপো৷
- বাহ্। কাস্টোমার ডিলাইটের দিকে আপনাদের বেশ ফোকাস আছে দেখছি৷
- হে হে হে৷ নিজেদের মুখে আর কী করে বলি বলুন...আপনাদের মত হাতেগোনা কিছু অপমানিস্টিদের জন্যেই অপমানিজমের আর্ট ফর্মটা আজও টিকিয়ে রাখতে পেরেছি।

বাদের খাতা

- প্রতিবাদ?

- প্রতিবাদ!

- কে করবে?

- কেন? তুমি আর আমি!

- করাটা উচিৎ হবে কি?

- করাটা জরুরী।

- আসলে অম্বলটা এমন ট্রাবল দিচ্ছে৷ তাছাড়া এ'বারের মাসকাবারি বাজারটাও বাকি রয়েছে যে।

- প্রতিবাদ করবে না তা'হলে? নিজের হক বুঝে নেবে না?

- ইয়ে, ব্যাপারটা নিয়ে পুজোর পর ভাবনাচিন্তা করলে হয় না?

Monday, May 17, 2021

অদরকারী ৪


কয়েকটি অদরকারী কথা।

এক,
গুগল ফটোসের মত মায়াবী অ্যাপ আর দু'টি নেই। মাঝেমধ্যেই পিঠে ডিজিটাল টোকা মেরে ডাকে, "আহ্। এই মুহূর্তের গুমোটটাই শেষ কথা নয় হে৷ শেষ কথা নয়। তিন বছর আগে এই সময় তুমি পাহাড়ে ছিলে৷ মনে পড়েছে ভাইটি"? 

দুই,
পাহাড়ে গেলে মনকেমনের গায়ে বাড়তি জেল্লা আসে। পাহাড়ে সঞ্জীবের লাইনগুলো সঞ্জীবার হতে হতে সঞ্জীবেস্ট হয়ে পড়ে।
পাহাড়ে গেলে মনের ধান্দাবাজিগুলো খানিকক্ষণের জন্য মিইয়ে আসে।


তিন,
পাহাড়ি নদীরা তুকতাক জানে, রাণাঘাটের মানুষের মনের ভিতর তিব্বতি গোলমাল পাকাতে তাদের জুড়ি নেই।
তাদের ছুটে চলার সুরে মাথার মধ্যে ঝিম ধরে; সে ঝিমধরানো নেশা ছবি বিশ্বাস লেভেলে খেলে যায়, ওল্ডমঙ্ক সে তুলনায় আলেক্সার কেঠো সঙ্গত। 

চার,
সূর্যাস্ত মানেই কোথাও কেউ হেমন্ত শুনে বুকের হুহু সামাল দিচ্ছে। 

Sunday, May 16, 2021

মোটিভেশনাল



- কী? কী চাই?
- প্রভু, বড় সাধ। রোজ রোজ কাউকে জ্ঞান দেওয়ার৷ জ্ঞান শোনার লোক না পেয়ে মন-প্রাণ-বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি জ্ঞান দেব, লোকে শুনবে৷ যত দেব, তত শুনবে৷ সে জ্ঞান কেউ শুনতে না চাইলে যেন কলার টেনে গিলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাটুকু থাকে। বড় সাধ বাবা।
- বড়ই বিচিত্র ইচ্ছে। বিচিত্র।
- সাফিশিয়েন্টলি জ্ঞান না ঝাড়তে পারলে বড় অম্বল হয় প্রভু, সঙ্গে সামান্য বুকভার৷ মনের মধ্যে এত জ্ঞান জমে রয়েছে, সে জ্ঞান নিয়মিত ফ্লো না করলেই যে কী মুশকিল।
- কঠিন সমস্যা৷ কাজেই, সমাধানটা যে সহজ হবে না।
-একটা উপায় বাতলে দিন প্লীজ। প্লীজ! আমি যাবতীয় কাঠখড় পোড়াতে রাজী৷ হোমযজ্ঞ মাদুলি বা কোনও স্পেশাল চ্যবনপ্রাশের জন্য টু-পাইস খরচ করতেও আপত্তি নেই প্রভু৷
- উপায়? তা উপায় তো আছে৷ তবে সে পথ বড় কঠিক, দুর্গম৷
- আপনি একবার খোলসা করেই দেখুন না৷ আমি ঠিক পারব।
- পারবে? যা বলব পারবে?
- আলবাত প্রভু৷ আলবাত৷
- তুমি কর্পোরেট জগতের মোটিভেশনাল ট্রেনার হতে পারবে? পার্টিসিপ্যান্টদের আধঘণ্টা লুডো খেলিয়ে পাইকারি হারে স্টিভ জবস তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে? পারবে?

নিউ নর্মাল নববর্ষ

- হ্যালো!
- কাকা, তুমি আমার নববর্ষের প্রণাম নিও।
- তুই হাত নিয়মিত স্যানিটাইজ করছিস তো?
- আর কাকীমাকে আমার প্রণাম জানিও।
- শোন, ভীড়েটিড়ে যাস না। খবরদার!
- আরে, প্রণাম নিও।
- এই আমি বলে রাখছি। যদি শুনি মাস্ক ছাড়া বেরিয়েছিস, পিঠের ছালচামড়া তুলে নেব রে রাস্কেল।
- ইয়ে, কাকা! আশীর্বাদটা দাও!
- উম, তোর তো মনে হয় পঁয়তাল্লিশ হয়নি, তাই না?

(পয়লা বৈশাখে লেখা)

ওয়াইজক্রিম

১।
"আমার এমনিতে ওই তোদের মত খাওয়ার পর ডেজার্ট নিয়ে বসার শৌখিনতাটুকু নেই৷ আমার এই ভাজা মৌরিই ভালো। তবে, জোরাজুরি যখন করছিস, তখন দে'দেখি সামান্য৷ ওই কোকোনাট আইসক্রিমটা..হ্যাঁ ওইটা। খেতে দিব্যি৷ তাই দু'চামচ চেখে দেখব। ব্যাস! ও'টুকুই কিন্তু"!
২।
" উমমম..দু'চামচ কেমন ফুড়ুৎ করে গায়েব হয়ে যায়৷ তাই না? স্বাদটা জিভের ওপর ঠিক সেটল করতে পারে না৷ এক কাজ করা যাক৷ একটা ছোট বাটিতে বরং কিছুটা নিই..এই না না না! খবরদার! ফুল বাটি একদম নয়৷ একদমই নয়! হাফ বাটি ম্যাক্সিমাম, হাফের চেয়েও কম, প্লীজ"!
৩।
"ইয়ে, মানে ওই.....না তেমন কিছু নয়..ওই আর কী..বলছিলাম যে..আর হাফ বাটি পাওয়া যাবে কি"?
৪।
"আচ্ছা.. বলি কী..আর আছে? আছে কি?এই..দু'বাটি মত"?

মিরাকিউরল



আমাদের সময়ে হস্টেলে-টস্টেলে বা মেসবাড়িতে মেডিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেশ সরেস ছিল। রাতবিরেতে, সময়ে-অসময়ে; ফাঁপরে পড়ে ওষুধের ভাণ্ডার ঘাঁটলে পাওয়া যেত শুধু পুদিনহরার শিশি।
পেট চিনচিন? আধ ছিপি পুদিনহরা।
পেটে নিদারুণ ব্যথা? দেড় ছিপি পুদিনহরা।
বুকজ্বালা? সোয়া ছিপি পুদিনহরা।
জ্বর জ্বর ভাব? অন্যান্য ওষুধের অভাবে ধরে নেওয়া হত সে জ্বর পেট গরম থেকে হয়েছে। কাজেই; দু'চামচ পুদিনহরা।
প্রেম-ঘটিত চোট আঘাতের ক্ষেত্রে অন্য ওষুধের দরকার পড়ত বটে, তবে পকেটে ভ্যাকিউম পোষা মানুষের বহুবিধ যন্ত্রণা। পুদিনহারার শিশি থেকেই ডাইরেক্ট চুমুক দিয়ে ঘ্যানঘ্যান জুড়তে হত-
"উয়ো রাত আপুন দো'বজে তক পিয়া"।

নেতাগিরি

একদিন হয়েছি কী..
কী বলব রে ভাই...
সে এক হইহইরইরই ব্যাপার..
মাইরি..তুই জাস্ট ভাবতে পারবি না..
হয়েছিল কী জানিস?
আহা...তাড়া দিসনে..তাড়া দিসনে..
বলছি তো!
হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম..
একদিন হয়েছি কী..
সে এক মস্ত বড় ব্যাপার রে ভাই..
ভাবলে এখনও গা-হাত-পা থরথর করে..গলা শুকিয়ে আসে..
তুইও যদি শুনিস তাহলে..
উফ..এক্কেবারে মার্ভেলাস ইয়ে..
যাকগে, যা বলছিলাম..
তা, একদিন হয়েছে কী..
আরে ধেত্তেরি!
খোঁচা দিচ্ছিস কেন রে রাস্কেল?
সব গুছিয়েই তো বলছি!
মন দিয়ে শোন না কাঁচকলা..
বারবার বলার রিদমটাই ইয়ে করে দিচ্ছে..
একট ক্রিটিকাল সাবজেক্ট নিয়ে বলতে বসেছি..।
যত্তসব!
তা, কী বলছিলাম যেন?
ওই যে...হ্যাঁ...
একদিন হয়েছে কী..
সে এক ঘ্যাম ব্যাপার!
কী যে বলি ভাই..
এই দেখ..দেখ..দেখ! বলতে গিয়ে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে..
সে দিনটাই তেমন ছিল যে। রোমহর্ষক!
যাকগে৷ যা বলছিলাম...
বলি?
উম..
ইয়ে৷ তুই বড় জ্বালাচ্ছিস!
আজ বরং থাক।
পরে একদিন বলব'খন।