Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2021

গ্লোবট্রটার

সদর দরজাটা খুলেই থ হয়ে গেলেন লালুবাবু।  - আসতে পারি? - আ...আস...আসবেন?  - আপনার আমতা আমতা ভাব দেখে আমি কিন্তু নিশ্চিত যে আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন।  - ম....ম...মানে...।  - অবিশ্যি যোধপুর সার্কিট হাউসের স্মৃতি অত সহজে ফিকে হয়ে যাওয়ার কথাও নয়। - আ...আ...আমি কিন্তু পু...পুলি...।  - পুলিশকে আমিই খবর দিয়েছি। ওই আপনার বাড়ির সামনেই যে ফার্মেসিটা, তাঁরা কল করতে দিলে। আপনার ঠিকানাই দিয়েছি। ওরা এখান থেকে আমায় পিক করে নিয়ে যাবেন। - আপনার মতলবটা কী বলুন তো মশাই? এ কী! আপনি নিজে থেকেই ঢুকে পড়লেন দেখি। - আপনার এই আর্মচেয়ারটা বেশ কমফর্টেবল।  - আমি কিন্তু...! - চায়ের কথা ভেবে ব্যস্ত হবে না কিন্তু। যে কোনও জায়গার চা আমার জিভে ঠিক রোচে না। ও ব্যাপারটা কিন্তু আমি সে'বার বানিয়ে বলিনি। আর তাছাড়া হাতে সময় কম, জরুরী আলোচনাটা আগে সেরে ফেলি। আফটার অল, হাতে সময় বেশি নেই।  - আপনি কিন্তু রীতমত ট্রেসপাস করেছেন। ফেলুবাবুকে একটা কল করলেই...।  - ওঁর তো এখন শুনছি টিকটিকিগিরি করে বেশ ভালোই নামডাক হয়েছে। যাক, মাই বেস্ট উইশেস। তবে আপনার অত নার্ভাস হওয়ার কিছু হয়নি মিস্টার গাঙ্গুলি। আমি শুধু আপনাকে একটা জরুরী আপডেট দিতে

কলকাতাইস্টিজম

"Maajhraats are khataraak" - Lerlogg Algomi  *** মদের নেশা শুনেছি লেবুজলে কাটানো যায়৷ কিন্তু রাত্রের বিটকেল মুহূর্তে "কলকাতা কদ্দিন যাইনা"-মাথা ঝিমঝিমের কোনও সহজ চিকিৎসা আছে বলে আমার জানা নেই৷   প্রথমেই, প্যারামাউন্টের ডাবের শরবত আর কলেজ স্কোয়্যার ক্যান্টিনের স্টু-পাউরুটি মেলানো মেশানো যৌবন-স্মৃতি মনে ঘা দিল৷ মনকেমনের পাশাপাশি চাগাড় দিল ধারালো খিদে। তারপর সে' স্টু-পাউরুটির সুবাস থেকে মন সোজা গিয়ে পৌঁছল বেহালা। ট্র‍্যাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে এফএমের অসহ্য বিজ্ঞাপন মুখস্থ করার ব্যাপারটাও সুখস্মৃতি বলে ঠেকল৷ মেট্রো-প্রতিশ্রুতি ঝোলানো খুড়োর কল মার্কা পিলারগুলোও বড় আপনার ঠেকল; হোক অকাজের, তবু আপন তো৷  এরপর মন গেল গড়িয়াহাট৷ ইলিশের দাম শুনে ব্যাজার হয়ে এসে দাস কেবিনে বসা৷ সে প্যাথোসের নাগাল পাবে এমন আধুনিক কবিতা লেখার বান্দা এখনও তৈরী হয়নি৷  ঢাকুরিয়া চত্ত্বরে অফিস ছিল, অফিসের মায়া কতটা টানে জানিনা৷ তবে অফিসের কয়েকজন জানালার সঙ্গে সবিশেষ আলাপ জমেছিল৷ তাদের কথা ভেবে মন সামান্য আলুথালু। আর সে জানালা বাবাজীদের মাধ্যমে আলাপ জমেছিল ঢাকুরিয়ার আকাশের সঙ্গে৷ সে আকাশ ছিল আমার বেণীমাধব

গ্যাংটক ও হালুয়ামোহন

গ্যাংটকে গণ্ডগোল সম্বন্ধে দু'টো মাইনর আর একটা মেজর বক্তব্য। ** মাইনর-এক। বাদশাহী আংটির তরুণ তুর্কী মেজাজ ছেড়ে ফেলু এখানে বেশ পোড় খাওয়া গোয়েন্দা। পকেটে রিভলভার নিয়ে ঘুরছে। অবশ্য এর মাঝে সে সে কৈলাস চৌধুরীর পাথরে কেস আর শেয়াল দেবতার রহস্য সলভ করেছে। তাছাড়া এ গল্পটার মধ্যে ট্যুইস্ট অ্যান্ড টার্নগুলো রীতিমত সিনেম্যাটিক।  গ্যাংটকের পটভূমিটাও দিব্যি এক্সপ্লোর করা হয়েছে; পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে ফেলা পাথর, মনাস্ট্রি বিষয়ক মিস্ট্রি, পাহাড়ি লোডশেডিংয়ে গা-কাঁপানো প্ল্যানচেট আর একটা 'হাইভোল্টেজস্পার্ক' ক্লাইম্যাক্স।  ** মাইনর-দুই। শুনেছি বিজ্ঞাপনে subliminal messaging  ব্যাপারটা প্রায় অস্ত্রের মত ব্যবহৃত হয়। আমি তেমন বুঝিটুঝি না তবে আমাদের বহু বাজারু বদ-অভ্যাস যে এই সাবলিমিনাল মেসেজিংয়ে ঘায়েল হয়ে তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।  তেমনই, ঝাঁ-চকচকে সুরসিক বাঙালি কেমন হবে তা নিয়ে সত্যজিৎবাবু ফেলুকে ব্যবহার করে আমাদের অজান্তেই আমাদের সাবকনশাসে কিছু ঘুঁটি সাজিতে গেছেন৷ একটা লাইন কোট করি যা এমনিতে তেমন নজরকাড়া কিছু নয় কিন্তু সে'সব লাইনের সামগ্রিক ইনফ্লুয়েন্স বেশ কয়েকটা প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছ

প্রমথনাথের মাইকেল

ইন্টারনেট বলছে প্রমথনাথ ১৯৮৫ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন৷ ক্যালক্যাটা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিলেন, আনন্দবাজারে কাজ করেছেন, বিধানসভার সদস্যও হয়েছিলেন৷ কিন্তু এ'সব তথ্য দিয়ে যে'টা মাপা যায়না সে'টা হল ওঁর ভাষার মিষ্টতা এবং ধার৷ ওর লেখা মাইকেল মধুসূদনের জীবনী বিবরণের দিক থেকে সংক্ষিপ্ত কিন্তু মাইকেলের চরিত্র বিশ্লেষণের দিক থেকে অন্যন্য৷ সাকুল্যে একশো কুড়ি পাতার বই অথচ রিসার্চ আর ভাষার গুণে এতটাই সমৃদ্ধ যে   মাইকেল, বাঙালির চরিত্র আর সে সময়ের বাঙলা সাহিত্যের মূল রস তুলে ধরার ব্যাপরে এ বই একটা দুর্দান্ত রিসোর্স।  খেয়াল করে দেখেছি যে জীবনী রচনার ক্ষেত্রে কয়েকটা বড় সমস্যা দেখা দেয়৷ যেমন ধরুন লেখক দুর্দান্ত রিসার্চ করলেন কিন্তু জার্নাল এন্ট্রির মত সমস্ত তথ্য সাজিয়ে দেওয়ার ফলে যে'টা তৈরি হল সে'টা পড়া প্রায় কাঠ চেবানোর মত একটা অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে জীবনীর নামে পড়ে থাকে অলীক রূপকথা, সে হেগিওগ্রাফি হজম করার চেয়ে তিন মিনিটের মধ্যে আধ-বস্তা চিনি গেলা সহজ। মাইকেলকে নিয়ে লিখতে গিয়ে সেই বাড়াবাড়ির ফাঁদ এড়িয়ে ব্যালেন্সটাকে টানাটান ভাবে ধরে রেখেছেন প্রমথনাথ। সবচেয়ে বড় কথা; বইট

ভালোবাসার

ভালোবাসায় মানুষ ১। অঙ্ক খাতায় তিব্বতি পায়েসের রেসিপি লিখে রাখে। ২। সিগারেটের বাক্সে মৌরি লজেন্স লুকিয়ে রাখে। ৩। আলুপোস্ত দিয়ে ভাত মেখে মা-মা মার্কা মনকেমন খুঁজে বেড়ায়। ৪। পোস্ট-না-করা-চিঠিকে আবোলতাবোলের বুকমার্ক করে রাখে। ৫। "কুছ পরোয়া নহি" হুঙ্কারের শাকে "যাস না ভাই"য়ের মাছ ঢেকে রাখে।

রোব্বারের ডিমকষা

ডিমের ট্যালট্যালে ঝোলও যথেষ্ট সুস্বাদু হতে পারে৷ ভাতের মধ্যে কাঁচলঙ্কা ডলে,সে ঝোলে মেখে দিব্যি লাঞ্চ সেরে নেওয়া যায়। তবে রোব্বারের ডিমের ঝোল না কষালে মুশকিল, ঝোলের ট্যালট্যালেমো আগামী হপ্তার মেজাজকে ডায়লুট করে দিতে পারে৷ মায়ের রান্না রোব্বারের ডিম তাই ঝোল নয়, কষা। এবং রগরগে৷  ডিমের কষা প্রসঙ্গে বিহারের এক ছোট্ট ভাতের হোটেলের কথা মনে পড়ে গেল। কটিহার আর পূর্ণিয়া শহরের মাঝামাঝি, হাইওয়ের ওপর একটা দোকান৷ দু'হাজার দশ থেকে বারোর মধ্যে সে রাস্তা দিয়ে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল; অফিসের কাজে৷ আমার ড্রাইভার ও খাসদোস্ত ধর্মেন্দ্র মাঝেমধ্যেই সে দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে লাঞ্চ সেরে নেওয়ার জন্য৷  ঝুপড়ি বললে সে দোকানের ওজন স্পষ্ট ভাবে বোঝানো যায়৷ সে'খানে চাল মোটা। অবশ্য মোটা চালে একটা আলাদা স্বাদ থাকে, তা আমিষ ঝোলে মেখে খেতে লাগেও দিব্যি, কিন্তু ওই দোকানের সে চাল বড় বিস্বাদ ঠেকত, কিছুতেই রোচেনি৷ তাই সে'খানে নিতাম রুটি, আলুভাজা আর হাঁসের জোড়া ডিমের কষা৷  যে স্টিলের বাটিতে ডিমে দেওয়া হত, তার গায়ে এক ফোঁটা ঝোলও লেগে থাকত না। শুধু মাখোমাখো কালচে ভাজা পেঁয়াজ। আর থাকত রগরগে ঝাল। আবার সেই জিভ-

ইনভেস্টমেন্ট

- ইয়ে, তা এই শেয়ার মার্কেটের সিচুয়েশনটা কেমন বুঝছেন বিপিনবাবু? - যারা ভেবেচিন্তে হিসেব কষে পা ফেলে, যাদের ডিসিপ্লিন আছে; তাদের জন্য শেয়ার মার্কেটে সবসময়ই রমরমা৷  - আপনার তা'হলে টুপাইস স্মুদলি আসছে বলুন৷ - আমি তো চুনোপুঁটি হে। সামান্য কয়েকটা টাকা এ শেয়ার থেকে ও শেয়ার খেলিয়ে চারাপোনার সাপ্লাইটা এনশিওর করে যাচ্ছি৷  - তা বিপিনবাবু, শেয়ারমার্কেটে যদি আমিও টাকা রাখতে চাই..। - তাই বলো৷ এদ্দিন পর আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিতে আসনি৷ এসেছ ধান্দা নিয়ে৷  - ধান্দা শব্দটা কেমন যেন ইয়ে৷ - স্পষ্ট কথাকে হামেশাই ওই ইয়েই মনে হয়। - সহকর্মী হিসেবে আপনাকে আমরা কতটা রেস্পেক্ট করি বিপিনবাবু..। সে জন্যেই তো আজ..। - প্রাক্তন সহকর্মী৷ - অফিস থেকে রিট্যায়ার করেছেন বলে কি আমরা আপনাকে ভুলে গেছি ভাবছেন? ছি ছি..।  - ক্যাপিটাল কত? - আজ্ঞে? - মার্কেটে কত রাখতে চাও? - কত রাখা উচিৎ বলুন তো? ফিক্সড ডিপোজিটই বলুন বা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইন্টারেস্ট তো নোজ-ডাইভ করছে। তাই ভাবছিলাম..লাখখানক টাকার শেয়ার কিনে যদি মাস ছয়েকের মধ্যে ডবল করা যায়..। - মাস ছয়েকে টাকা ডাবল? - আপনার মত দুঁদে কনসালট্যান্ট থাকতে..হে হে..। - শেয়ার মার্কে

গোলকবাবুর প্ল্যানচেট

- দত্ত, আজ একটু লেট করে ফেললে দেখছি৷ - আর বলেন কেন গোলকদা৷ বাতাসে এত ইমপিউরিটি..। - এয়ার পলিউশন কি তোমাদের মুভমেন্টকে এফেক্ট করে? - গোলক সমাদ্দারের মত পোড় খাওয়া প্ল্যানচেটিয়ের তো সে'টা জানা উচিৎ৷ তবে পলিউশন বাদেও দেরী হওয়ার আরও একটা কারণ আছে৷  - সে'টা কী..। - আপনার এই ড্রয়িংরুমে একটা বিশ্রী ভাইব্রেশন টের পাচ্ছি বুঝলেন। কাজেই মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছিল। - মিডিয়ামে ল্যান্ড করতে প্রব্লেম? দিবাকরের শরীরে ঢুকতে অসুবিধে? সে কী! - দোষটা অবিশ্যি দিবাকরের নয়৷ মিডিয়াম হিসেবে ও সত্যিই অতুলনীয়৷ - নয়ত আর তাকে মাসমাইনে দিয়ে পুষছি কেন বলো৷ আরে আমার সেক্রেটারির দরকারটাই বা কীসে৷ তা, ওই বিশ্রী ভাইব্রেশনের কেসটা কী ভাই দত্ত? সন্ধ্যেবেলা খানিকক্ষণ ভজন শুনেছিলাম বটে৷ তা'তে রুমের পরিবেশ নষ্ট হয়নি তো? - আহ, ও'সব সুপারস্টিশনের কোনও মানে হয়? আরে বাবা ভূতেরা ভজন দিব্যি ভালোবাসে৷ কীর্তন হলে তো তোফা৷ ওই রামনামে ভূত ভাগানোর ব্যাপারটা জাস্ট বোগাস৷ - তা'হলে অসুবিধেটা কোথায় সে'টা খুলে বলো৷ প্ল্যানচেটে বিঘ্ন মোটে ভালো কথা নয়৷ এর আগে তুমি বা তোমার ইয়ারদোস্তরা যবে যে অসুবিধের ক

বাদশাহী আংটি আর রেটিং

নাহ্৷ ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চার আর যাই হোক ওভাররেটেড নয়। অন্তত বাদশাহী আংটিতে ফিরে গিয়ে দিব্যি থ্রিলড হলাম৷ সাধারণত আমি যে কোনও গল্প পড়তে গিয়েই নিজের কল্পনায় গল্পের চরিত্রগুলোর জন্য জুতসই চেহারা বেছে নিই৷ এ ক্ষেত্রে ফেলুদার চরিত্রে অবশ্যই মাথায় ছিলেন সৌমিত্র, তবে সোনার কেল্লার মাঝবয়েসী সৌমিত্র নয়; বাক্স বদলের সেই চনমনে গোঁফলেস সৌমিত্র। তোপসের বাবা অবশ্যই হারাধনবাবু।  বিকাশ রায়ের মুখে একটা খুব শৌখিন গোঁফ আর দামী একটা ফ্রেঞ্চকাট বসিয়ে বনবিহারীবাবু তৈরি করে ফেললাম মনে মনে৷ ইয়ে, ছোটবড় সমস্ত চরিত্রই আমি নিজের মত করে কাস্ট করে ফেলি, কাজেই ব্যাপারটা ছড়িয়ে লাভ নেই৷ শুধু বলে রাখি, এ গল্পে তোপসের চেহারাটা যে অবিকল ক্লাস নাইনে পড়া তন্ময় মুখুজ্জ্যের মত, তা আমি হলফ করে বলতে পারি৷  একটা ছুটকো ব্যাপার নজরে পড়ল৷ গল্পের প্রথম চুরিটা ফেলুই করে, তবে সে'টা বাদশাহী আংটি চুরি নয়৷ আংটি চুরিটাকে ঠিক চুরি বলাও চলে না, কারণ সে'খানে ফেলুর উদ্দেশ্য বদ ছিল না৷ তবে তোপসের প্লেট থেকে সান্ডিলা লাড্ডু হাপিস করার কেসটা স্রেফ রাহাজানি৷ পরে অবশ্য তোপসের মুর্গির ঠ্যাংও সরিয়েছে সে।  ডুন এক্সপ্রেসের রাতটা বড় চমৎকার৷ এদ্দ

অপম্যানিয়া

- আসুন দাদা, আসুন৷ হাউ মে আই সার্ভ ইউ? এই পঞ্চা! স্যারকে চেয়ারটা এগিয়ে দে৷ - ভালো দেখে এক পিস অপমান দেখান দেখি৷ - অবশ্যই অবশ্যই। পঞ্চা, চট করে অপমানের নতুন স্টকটা নিয়ে আয় বাবা৷ ইয়ে স্যার, আপনার জন্য এক কাপ চা বলে দিই? - ওকে৷ তবে ব্ল্যাক। আর ইয়ে, অপমানের কোয়ালিটিটা যেন..। - আপনাকে দেখেই বুঝেছি স্যার; টপক্লাস সমঝদার৷ আশা করি ডিস্যাপয়েন্ট করব না৷ - কী ব্যাপার, আড়াই সেকেন্ড হয়ে গেল৷ চা আসছে না কেন? - বাহ্৷ বাহ্ বাহ্! এই না হলে অপমানিস্ট৷ শেষ এমন তেজি কাস্টোমার পেয়েছিলাম নাইনটি সেভেনে৷ নমস্কারের সময়ে আমার হাতের অ্যাঙ্গেলে গোলমাল ছিল বলে মুষড়ে পড়েছিলেন। তা ইয়ে, আপনি কি অল্পকথায় অপমান প্রেফার করেন না কি শিবের গীত না জুড়লে আপনাকে স্যাটিসফাই করা যায়না৷ - আমি মিনিমালিস্ট৷ জবরজং আমি প্রেফার করিনা৷ - শিল্পী মানুষ মশাই আপনি। - ব্ল্যাকটীটা ইমিডিয়েটলি না দিয়ে আপনি আমার গালে থাপ্পড় কষিয়েছেন৷ - আরও দেরী করবে পঞ্চা৷ মাইরি বলছি, ছেলেটার খুব খেটে অপমানটপমান করে৷ আমি নিশ্চিত ও ব্ল্যাকটীর বদলে গুড়ের চা নিয়ে আসবে৷ আর ওই যে চেয়ারটা আপনাকে এগিয়ে দিয়েছে বসার জন্য? সে'টা তো ছারপোকার ডিপো৷ - বাহ্। কাস্টোমার ড

বাদের খাতা

- প্রতিবাদ? - প্রতিবাদ! - কে করবে? - কেন? তুমি আর আমি! - করাটা উচিৎ হবে কি? - করাটা জরুরী। - আসলে অম্বলটা এমন ট্রাবল দিচ্ছে৷ তাছাড়া এ'বারের মাসকাবারি বাজারটাও বাকি রয়েছে যে। - প্রতিবাদ করবে না তা'হলে? নিজের হক বুঝে নেবে না? - ইয়ে, ব্যাপারটা নিয়ে পুজোর পর ভাবনাচিন্তা করলে হয় না?

অদরকারী ৪

কয়েকটি অদরকারী কথা। এক, গুগল ফটোসের মত মায়াবী অ্যাপ আর দু'টি নেই। মাঝেমধ্যেই পিঠে ডিজিটাল টোকা মেরে ডাকে, "আহ্। এই মুহূর্তের গুমোটটাই শেষ কথা নয় হে৷ শেষ কথা নয়। তিন বছর আগে এই সময় তুমি পাহাড়ে ছিলে৷ মনে পড়েছে ভাইটি"?  দুই, পাহাড়ে গেলে মনকেমনের গায়ে বাড়তি জেল্লা আসে। পাহাড়ে সঞ্জীবের লাইনগুলো সঞ্জীবার হতে হতে সঞ্জীবেস্ট হয়ে পড়ে। পাহাড়ে গেলে মনের ধান্দাবাজিগুলো খানিকক্ষণের জন্য মিইয়ে আসে। তিন, পাহাড়ি নদীরা তুকতাক জানে, রাণাঘাটের মানুষের মনের ভিতর তিব্বতি গোলমাল পাকাতে তাদের জুড়ি নেই। তাদের ছুটে চলার সুরে মাথার মধ্যে ঝিম ধরে; সে ঝিমধরানো নেশা ছবি বিশ্বাস লেভেলে খেলে যায়, ওল্ডমঙ্ক সে তুলনায় আলেক্সার কেঠো সঙ্গত।  চার, সূর্যাস্ত মানেই কোথাও কেউ হেমন্ত শুনে বুকের হুহু সামাল দিচ্ছে। 

মোটিভেশনাল

- কী? কী চাই? - প্রভু, বড় সাধ। রোজ রোজ কাউকে জ্ঞান দেওয়ার৷ জ্ঞান শোনার লোক না পেয়ে মন-প্রাণ-বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি জ্ঞান দেব, লোকে শুনবে৷ যত দেব, তত শুনবে৷ সে জ্ঞান কেউ শুনতে না চাইলে যেন কলার টেনে গিলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাটুকু থাকে। বড় সাধ বাবা। - বড়ই বিচিত্র ইচ্ছে। বিচিত্র। - সাফিশিয়েন্টলি জ্ঞান না ঝাড়তে পারলে বড় অম্বল হয় প্রভু, সঙ্গে সামান্য বুকভার৷ মনের মধ্যে এত জ্ঞান জমে রয়েছে, সে জ্ঞান নিয়মিত ফ্লো না করলেই যে কী মুশকিল। - কঠিন সমস্যা৷ কাজেই, সমাধানটা যে সহজ হবে না। -একটা উপায় বাতলে দিন প্লীজ। প্লীজ! আমি যাবতীয় কাঠখড় পোড়াতে রাজী৷ হোমযজ্ঞ মাদুলি বা কোনও স্পেশাল চ্যবনপ্রাশের জন্য টু-পাইস খরচ করতেও আপত্তি নেই প্রভু৷ - উপায়? তা উপায় তো আছে৷ তবে সে পথ বড় কঠিক, দুর্গম৷ - আপনি একবার খোলসা করেই দেখুন না৷ আমি ঠিক পারব। - পারবে? যা বলব পারবে? - আলবাত প্রভু৷ আলবাত৷ - তুমি কর্পোরেট জগতের মোটিভেশনাল ট্রেনার হতে পারবে? পার্টিসিপ্যান্টদের আধঘণ্টা লুডো খেলিয়ে পাইকারি হারে স্টিভ জবস তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে? পারবে?

নিউ নর্মাল নববর্ষ

- হ্যালো! - কাকা, তুমি আমার নববর্ষের প্রণাম নিও। - তুই হাত নিয়মিত স্যানিটাইজ করছিস তো? - আর কাকীমাকে আমার প্রণাম জানিও। - শোন, ভীড়েটিড়ে যাস না। খবরদার! - আরে, প্রণাম নিও। - এই আমি বলে রাখছি। যদি শুনি মাস্ক ছাড়া বেরিয়েছিস, পিঠের ছালচামড়া তুলে নেব রে রাস্কেল। - ইয়ে, কাকা! আশীর্বাদটা দাও! - উম, তোর তো মনে হয় পঁয়তাল্লিশ হয়নি, তাই না? (পয়লা বৈশাখে লেখা)

ওয়াইজক্রিম

১। "আমার এমনিতে ওই তোদের মত খাওয়ার পর ডেজার্ট নিয়ে বসার শৌখিনতাটুকু নেই৷ আমার এই ভাজা মৌরিই ভালো। তবে, জোরাজুরি যখন করছিস, তখন দে'দেখি সামান্য৷ ওই কোকোনাট আইসক্রিমটা..হ্যাঁ ওইটা। খেতে দিব্যি৷ তাই দু'চামচ চেখে দেখব। ব্যাস! ও'টুকুই কিন্তু"! ২। " উমমম..দু'চামচ কেমন ফুড়ুৎ করে গায়েব হয়ে যায়৷ তাই না? স্বাদটা জিভের ওপর ঠিক সেটল করতে পারে না৷ এক কাজ করা যাক৷ একটা ছোট বাটিতে বরং কিছুটা নিই..এই না না না! খবরদার! ফুল বাটি একদম নয়৷ একদমই নয়! হাফ বাটি ম্যাক্সিমাম, হাফের চেয়েও কম, প্লীজ"! ৩। "ইয়ে, মানে ওই.....না তেমন কিছু নয়..ওই আর কী..বলছিলাম যে..আর হাফ বাটি পাওয়া যাবে কি"? ৪। "আচ্ছা.. বলি কী..আর আছে? আছে কি?এই..দু'বাটি মত"?

মিরাকিউরল

আমাদের সময়ে হস্টেলে-টস্টেলে বা মেসবাড়িতে মেডিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেশ সরেস ছিল। রাতবিরেতে, সময়ে-অসময়ে; ফাঁপরে পড়ে ওষুধের ভাণ্ডার ঘাঁটলে পাওয়া যেত শুধু পুদিনহরার শিশি। পেট চিনচিন? আধ ছিপি পুদিনহরা। পেটে নিদারুণ ব্যথা? দেড় ছিপি পুদিনহরা। বুকজ্বালা? সোয়া ছিপি পুদিনহরা। জ্বর জ্বর ভাব? অন্যান্য ওষুধের অভাবে ধরে নেওয়া হত সে জ্বর পেট গরম থেকে হয়েছে। কাজেই; দু'চামচ পুদিনহরা। প্রেম-ঘটিত চোট আঘাতের ক্ষেত্রে অন্য ওষুধের দরকার পড়ত বটে, তবে পকেটে ভ্যাকিউম পোষা মানুষের বহুবিধ যন্ত্রণা। পুদিনহারার শিশি থেকেই ডাইরেক্ট চুমুক দিয়ে ঘ্যানঘ্যান জুড়তে হত- "উয়ো রাত আপুন দো'বজে তক পিয়া"।

নেতাগিরি

একদিন হয়েছি কী.. কী বলব রে ভাই... সে এক হইহইরইরই ব্যাপার.. মাইরি..তুই জাস্ট ভাবতে পারবি না.. হয়েছিল কী জানিস? আহা...তাড়া দিসনে..তাড়া দিসনে.. বলছি তো! হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম.. একদিন হয়েছি কী.. সে এক মস্ত বড় ব্যাপার রে ভাই.. ভাবলে এখনও গা-হাত-পা থরথর করে..গলা শুকিয়ে আসে.. তুইও যদি শুনিস তাহলে.. উফ..এক্কেবারে মার্ভেলাস ইয়ে.. যাকগে, যা বলছিলাম.. তা, একদিন হয়েছে কী.. আরে ধেত্তেরি! খোঁচা দিচ্ছিস কেন রে রাস্কেল? সব গুছিয়েই তো বলছি! মন দিয়ে শোন না কাঁচকলা.. বারবার বলার রিদমটাই ইয়ে করে দিচ্ছে.. একট ক্রিটিকাল সাবজেক্ট নিয়ে বলতে বসেছি..। যত্তসব! তা, কী বলছিলাম যেন? ওই যে...হ্যাঁ... একদিন হয়েছে কী.. সে এক ঘ্যাম ব্যাপার! কী যে বলি ভাই.. এই দেখ..দেখ..দেখ! বলতে গিয়ে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে.. সে দিনটাই তেমন ছিল যে। রোমহর্ষক! যাকগে৷ যা বলছিলাম... বলি? উম.. ইয়ে৷ তুই বড় জ্বালাচ্ছিস! আজ বরং থাক। পরে একদিন বলব'খন।