কবে কোন কালে, ফুলিয়ায়, হাইওয়ে ঘেঁষা একটা জরাজীর্ণ হোটেলে বসে এই চাউমিন খেয়েছিলাম। যদ্দূর মনে পড়ে লাঞ্চ করা হয়নি সময়মত, পেটে আগুন খিদে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এই এগ-চাউমিন মুখে দিয়ে যে কী অপার তৃপ্তি পেয়েছিলাম। আমার নাকে সে চাউমিনের গন্ধ এখনও লেগে আছে। মাঝরাতে বম্বের এই ফ্ল্যাটে বসে, এদ্দিন পরেও দিব্যি সে বিকেলের স্বস্তি অনুভব করতে পারছি।
পুরনো ছবিগুলো দেখি আর এ'রকম কত পুরনো গন্ধ নাকে এসে ঠেকে (আমি বোধ অলফ্যাক্টরি গোত্রের মানুষ)। বাড়ি ফেরার ইচ্ছে হয়। পলিটিক্স ছাড়া সত্যিই বোধ হয় কিছু হয় না। "আমি এপলিটিকাল" সে কথার মধ্যেও মারাত্মক রাজনীতি লুকিয়ে আছে। তবু কেন জানি না ভাবতে ইচ্ছে করে যে বাড়ি ফিরতে চাওয়ার মধ্যে পলিটিক্স নেই।
বাড়ি ফেরা কী? তার উত্তর জানা থাকলে বর্তে যেতাম। মাঝেমধ্যে হাজার ঝড়ঝাপটার মধ্যে অফিসে নিজের চেনা (এবং অগোছালো) কিউবিকেলটাও স্বস্তি দেয়। সে'টার মধ্যে কি সামান্য বাড়িত্বও নেই? নির্ঘাৎ আছে। ইয়ারদোস্ত বললে "দেখা কর রে রাস্কেল", তার মধ্যেও বাড়ির গন্ধ। ভালো বই। প্রিয় গান। ছবির অ্যালবাম। বেশ খানিকটা কলকাতা। কতরকমের গন্ধ, কত রকমের টান।
একজন মানুষ প্রাণপণে বাড়ি ফিরতে চাইছে, প্রতিটা মুহূর্ত সে ফন্দি এঁটে চলেছে, ছক কষে চলেছে। প্রতিদিন বেশ কয়েকবার মন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলছে "এইত্তো বাড়ি", আবার তারপরই হাজারবার মনে হচ্ছে "ফেরাটেরা আর হচ্ছে না ওস্তাদ"। বহুবছর আগের সে এক ফুলিয়ার ধাবার প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিলে বসে চাউমিন খেতে খেতে দেখেছিলাম সন্ধে হচ্ছে। আজ সে ছবি দেখছি আর ভাবছি "ফেরাটেরা হচ্ছে না ওস্তাদ, হচ্ছে না"। কী অদ্ভুত, কী বিশ্রী, কী সুন্দর।
No comments:
Post a Comment