Tuesday, February 14, 2012

নব যুধিষ্ঠীর-উবাচ

পটভূমি : পাণ্ডবদের বনবাসের এক দিন

তৃষ্ণার্ত যুধিষ্ঠির-দ্রৌপদীর জন্যে জল আনতে গিয়ে একে একে সহদেব, নকুল, অর্জুন ও ভীম নিকেশ হলেন পুকুর-মালিক এক যক্ষয়ের হাতে

“দ্রৌপদীর সঙ্গে মন দিয়ে দুটি কথা কইবো তার উপায় নেই, চার চারটে ব্রাদার হাপিস সামান্য জল আনতে গিয়ে। ধুত্তুরী বিরত্ব” রাগে গজ গজ করতে করতে বাধ্য হয়ে যুধিষ্ঠিরবাবু চললেন ভাইদের খোঁজে এবং অবশেষে এসে পৌছোলেন যক্ষের পুকুরের কাছেপুকুরের কাছে গিয়েই যুধিষ্ঠিরবাবুর চক্ষু ছানাবড়া পাশাপাশি ভীম, অর্জুন, নকুল সহদেবের লাশ পড়ে আছেএ কী কেলো! ভীম-অর্জুন না থাকলে দুর্যোধন ঠেঙ্গিয়ে রাজ্য ওয়াপস আনবে কে? নকুল-সহদেব না থাকলে ফাইফরমাশ খাটবে কোন গাধায়?এ তো মহা-কেসতবে পিপাসা ভীষণ পেয়েছিলোযুধিষ্ঠির বাবু ভাবলেন চাপ নেওয়ার আগে জল-টল খেয়ে একটু ঠান্ডা হওয়া যাকএই ভেবে যেইনা পুকুরের দিকে পা বাড়িয়েছেন যুধিষ্ঠিরবাবু, অমনি বিকট পলিটিক্যাল গুণ্ডার মত চেহারা নিয়ে যক্ষ হাজির- “  এইয়ো, রোককে, পিছে হঠ! মাগনায় জল খাবি নাকি?”

-“কে ? কে?, থতমত হয়ে পড়লেন যুধিষ্ঠিরবাবু, “ কে মশায় আপনি?”
-“ পুকুরের মালিক আমি, এ পুকুরের জল খেতে হলে, আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে হবে, না পারলে জল খেতে পাবেনিকো, জোর-জুলুম করলে পাঁচ নম্বর লাশ ফেলে দেব”
-“আরে স্যার চটছেন কেনো? জল-টল না হয় পরে খেলেও চলবেঅফ কোর্স আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো। তবে তারপর যদি দু ঢোক খেতে এলাউ করেন, মানে এই  বোশেখ মাসের গরমে সকাল থেকে হেঁটে চলেছি কি না...”
-“বেশ তবে প্রশ্নের উত্তর দাও, Rapid Fire ফরমাটে খেলেতে হবে, রাজি?”

Wednesday, February 8, 2012

পর্ণ-গেট ও স্বর্গ-দুয়ার


দুরু দুরু পায়ে গোমূত বাবু লাল গালিচা মারিয়ে হেঁটে এলেন। চারিদিকে কুয়াশা মাখা ক্লাসি ব্যাপার। কুয়াশা চিরে শুধু এই লাল গালিচার পথ গিয়ে ঠেকেছে একটা বেঢপ সেগুন কাঠের বার্নিশ করা দরজায়। আর কিস্যু নেই কোথাও। আকাশ-মাটি কিছু না। শুধু কুয়াশা, লাল গালিচা আর সেগুন কাঠের দরজা।
মরবার পর থেকে তেরোশো বছর ধরে ড্যাঙস-পিটুনি খেয়ে আসছেন গোমূত-বাবু। পোলিটিকাল কেরিয়ারের মাশুল । পরলোকে যে এমন ফ্যাসিবাদ চলছে তা জানলে কী আর এত সহজে মারা যেতেন? আরে বাবা স্ট্রেট পিটুনি, লোয়ার কোর্ট-হায়ার কোর্ট বলে কোনও বাফার নেইরাসকালা!অবশ্য আরও সাতশো বছর ডান্ডা-পেটা হওয়ার কথা ছিল গোমূত-বাবুর, তার অন্য সমস্ত রাজনৈতিক সঙ্গীদের মত । কিন্তু হটাত্‍ কোথা থেকে এক হুকুম-নামা এলো, যে নরক-ঠ্যাঙ্গানির মাঝে একটা ছোট্ট এক মাসের স্বর্গ-বিরাম তিনি পাবেন। অন্য কারুর কপালে এমন জ্যাকপট জোটেনিকিন্তু গোমূত-বাবুর বরাত এমন দরাজ হলো কেনো গোমূতবাবু শত ভেবেও কুল-কিনারা করতে পারছেন না

ওই বার্নিশ করা দরজার ওপারে রয়েছে স্বর্গরাজ্য। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে পৌছলেন গোমূতবাবু এবং নক করলেনস্যটাক করে খুলে গ্যালো দরজাখুললেন একজন সুদর্শন পুরুষ, ধুতি-মালা-মুকুট পরা, ঠিক যেন বি-আর-চোপড়ার সেট থেকে সদ্য উঠে আসা।

_ “ আপনিই ইন্দ্রদেব নাকি স্যার?” ভক্তি ভরে প্রণাম ঠুকলেন গোমূত-বাবু।

Tuesday, February 7, 2012

বারুদের গন্ধ

পোড়া বারুদের গন্ধ লিওনের ভারী প্রিয়যখনই মেশিন গানের গুমম-গুমম-গুমম শব্দ ভেসে আসে, লিওন ছুটে চলে যায় তাদের এক-কামরার এসবেস্টসের ঘরের কোণের এক মাত্র বন্ধ জানলার কোনের ছোটো ফুটোটার কাছে এবং মন ভোরে বারুদের গন্ধ শুষে নেয়। মা বলে এ গন্ধে নাকি বমি আসে, কে জানে বাবা, যখন থেকে লিওন গন্ধ চিনতে শিখেছে, তখন থেকেই বারুদের সুবাস চেনে লিওন

গত অক্টোবর মাসে যখন কিছুদিনের জন্য শহরে যুদ্ধ বন্ধ ছিল, সে ছিল ভারী আনন্দের সময়। সাত বছরের লিওন সেই প্রথম এক টানা সাত দিন বার্লি বা সেনাবাহিনীর বিলি করা শক্ত পাউরুটি না খেয়ে রোজ ভাত খেয়েছিলো। কিন্তু ওই সাত দিনের মধ্যে একটা ব্যাপারেই লিওনের একটু কেমন কেমন লেগেছিলো। কোনও বারুদের গন্ধ ওই কয়দিন নাকে লিওনের নাকে আসেনিদেশলাই-কাঠির পোড়া আগায় নাক ঠেকিয়ে দেখেছিলো লিওন, সে বারুদের গন্ধ অন্যরকমদিনে যখন দু ঘন্টার জন্যে কারফিউ ওঠে, তখন লিওন ওদের বাড়ির সামনের অপরিষ্কার ফুটপাথে ঘুর-ঘুর করে আসে-পাশের ঝুপড়ির কিছু সম-বয়েসির সঙ্গে। রাস্তায় যে কামানের ঘষটানির দাগ থাকে, তার থেকে গন্ধ আসে মেটে-তেলেররাস্তায় চলমান সৈন্যদের ভীড় থেকে ভারী হয়ে আসে ঘামের গন্ধসৈন্যরা কিন্তু সবাই বেশ মানুষমাঝে মাঝেই তার দাঁড়িয়ে ছোটো ছেলেমেয়েদের চুলে বিলি কেটে দেয়, জানতে চায় ওরা কেমন আছেছোটোরা কথা স্পষ্ট বলতে পারে না, কিন্তু  ওরা জানে সৈন্য দেখলেই চিত্‍কার করে বলতে হবে “স্বৈরতান্ত্রী শয়তানরা নিপাত যাক”

Monday, February 6, 2012

100. And A Brief History of Bong Pen


হনুমানের পাহাড় খুবলে কতটা মস্তি হয়েছিলো? যুধিষ্ঠীরের অশ্বমেধ যজ্ঞ করে কতটা ফুর্তি হয়েছিলো? হেক্টরের ট্রয় থেকে হেলেন ঝেড়ে কতটা ছাতি ফুলেছিলো? ওডেসিয়াসের রাজকার্য চুলোয় দিয়ে বিশ্বময় টই-টই করে বেড়াতে কেমন লেগেছিলো?
সহজ উত্তর হচ্ছে: ব্যাপক!
আমি হনুমান, যুধিষ্ঠির, হেক্টর, ওডেসিয়াস কোনটাই নই, তাই বলে আমার কোনও ‘Epic’ কিছুর ওপর কোনও অধিকার থাকবে না, তা কী করে হয়! না হয় সেটা পাতি-লেভেলেই হল, কিন্তু একটু নিজের পিঠে চাপড় মারবো না সেটা কী ভাল দ্যাখায়?
এত ভণিতা যে করলুম তার মূল কারণ হলো, Bong Pen’এর ৯৯ পোস্ট পেরিয়ে এবার ১০০তম পোস্টের সময়। এই সুযোগে দেদার ভাবে নিজের ঢোল পিটিয়ে নেওয়া উচিত। তা বলে নিজের পিঠ নিজে চুলকোবো? ধরলাম মাকুকে (ওরফে সুহেল ব্যানার্জী)Bong Pen’য়ের মূল আইডিয়া এই সুহেলেরইএবং BongPen শুরুর সময়ই ঠিক ছিলো যে ১০০তম পোস্ট লিখবে সুহেলই। ছোটবেলার বন্ধু হিসেবে, আমি শুধু কিছু গোপন ইনফরমেসন ভিত্তি করে সুহেল কে ব্ল্যাকমেল করে রেখেছিলাম যাতে বংপেনের বিষয়ে কথা ছাড়াও আমার  ব্যাপারেও যেন বেশ গাল-ভারী ভালো ভালো কথা ওর এই পোস্টে থাকে। অত:কিম - ১০০তম পোস্ট, বংপেনে;


Like most of us Bongpen too was conceived in the middle of the night. A warm and sultry night in May '07. Tanmay & I were on the phone, discussing India's recently completed disastrous stint at the World Cup in the Caribbean. He was at the fag end of his MBA (yes, Bong Pen is an MBA, surprising, isn't it?) and had some time on his hands before starting with his new job. I was working with an Internet firm, getting more fascinated by the day of this still-new medium and its reach and power. We were friends since high school, and I was well aware of Tanmay's  command over Bangla, captivating story telling powers and "cockroach dipped in ink crawling over white paper" handwriting skills. In what seems like 'the moment of truth' in hindsight, we decided to start a web journal to chronicle his writing. 

Friday, February 3, 2012

ইন্টারনেট গুবলেট

বস্তুত, প্রযুক্তি হিসেবে বাঙালি জাতির কাছে ইন্টারনেট প্রবল ভাবে ব্যর্থইন্টারনেট নামক জন্তুটি যে সহজ সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে, সেটি হলো যে বাঙালি জাতির 'পরিবর্তন' কোনও সার্ভারয়ের হাতে নয়, রয়েছে ব্যালটে ও ইসবগুলের স্বাদেইন্টারনেটের স্বপক্ষে যাবতীয় যুক্তি, আদপে বাঙালির মূল জাতিগত স্বার্থগুলোতে বারংবার প্রবল আঘাত হেনেছেতলিয়ে দেখলে, ইন্টারনেট আসলে বাঙালির থেকে বাঙালিয়ানা কেড়ে নেওয়ার একটি নির্মম মহাজাগতিক প্রচেষ্টা মাত্র।

হে গুগল-লেহনকারী বঙ্গসন্তান, শান্ত চিত্তে ভেবে বলুন তো এই আন্তর্জালিক মক্কেলটি আপনার কোন ইন্দ্রিয়ে সুড়সুড়ি দিয়েছে যে আপনি এর কেন গোলাম হয়ে থাকবেন? ভাতঘুম বেঁচে থাক, এই প্রযুক্তির নেশা কাটিয়ে উঠুক বাঙালি, নয়তো অচিরেই তার অস্তিত্ব সাফ হয়ে যেতে পারে।

ইন্টারনেটের উপকারিতা কোথায়? বিশ্ব-ব্যপি যোগাযোগয়ের সুবিধে? বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ রেখে আমরা কী করব? ঘরের কোনে আলতো পেছণ ঠেকিয়ে ভ্রমণ কাহিনী পড়বো, মুড়ি চানাচুর খেতে খেতে কাফকা পড়বো, এর বেশি বিশ্বযোগয়ে আমাদের কী কাজ? যোগাযোগের নামে বাঙালীকে বাংলা ছাড়া করবার এক নিকৃষ্ট অজুহাত যুগিয়েছে ইন্টারনেট।সাবধান বন্ধুরা।