Skip to main content

Posts

Showing posts from March, 2020

তাই বন্দুক নিলে হাতে

- ডক্টর চ্যাটার্জী, এমন জরুরী তলব! কী ব্যাপার বলুন দেখি। তাও এমন বিটকেল একটা চেম্বারে। ঢুকেই মনে হয় একটা কোয়্যারান্টাইন কামরা। তবে, বেশ একটা হলিউডি গা ছমছম আছে কিন্তু।   - এ জায়গাটা ভিড়ভাট্টা থেকে বেশ খানিকটা দূরেই বটে। - এখানে নতুন চেম্বারটেম্বার ফেঁদে বসার তাল করছেন নাকি? ডুবতে হবে, এই বলে রাখলাম। লোকালয় থেকে এত দূরে লোকজন আসবে ভেবেছেন? - এ চেম্বারটা ঠিক নতুন নয় অনিলবাবু৷ ইনফ্যাক্ট আমার ট্রীটমেন্টের মূলপর্বটা এখানকার জন্যই তোলা থাকে। - মানে শহরের চেম্বারটা স্রেফ দেখনাই ডক্টর? এই  পাণ্ডববর্জিত অঞ্চলের আস্তানাটাই মূল? - না না, তা কেন। ডায়াগনোসিসটা আপনার শহরে বসেই ভালোভাবে হয় বটে। আর এই নিরবিলি চেম্বারে হয় ট্রীটমেন্ট; আদত চিকিৎসা।   - বেশ হেঁয়ালির মেজাজে রয়েছেন দেখছি। - সমস্ত খোলসা করতেই তো আপনাকে ডাকা। - তা আপনার ডায়াগনোসিস কী বলছে। আমার মূল সমস্যা কোথায় বলুন তো।  - ডায়াগোনিস স্পষ্ট। যে সমস্যায় এ শহরের সমস্ত মানুষ জেরবার; আপনার সমস্যাও তাঁদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। সমস্যা একটাই; বেঁচে থাকা। আপনার সমস্যা আপনি বেঁচে আছেন। - এই শুরু হল, হেঁয়ালি থেকে ফিলোসফিতে।  - হেঁয়ালি নয়। ফিলো

লুচিম্যান

১। দুর্যোধন - ধনসম্পত্তি তো সবই খোয়ালেন দাদাভাই। এখন পরের দান খেলবেন কী বাজি রেখে? ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (লুচি বেগুনভাজা মুখে দিয়ে) - তাই তো হে। এ তো মহাসমস্যায় পড়া গেল। বাজি রাখতে না পারলে তো আবার পাশার টেস্টম্যাচ ছেড়ে ছেড়ে টুয়েন্টি-নাইনের টিটুয়েন্টি খেলতে হবে। রোব্বার সক্কাল সক্কাল টুয়েন্টি নাইন ঠিক জমবে না। কী যে বাজি রাখি...। দুর্যোধন (এক চামচ দুধ-কর্নফ্লেক্স মুখে চালান করে) - আপনার পাতে অতগুলো লুচি বেগুনভাজা পড়ে। ও'গুলোই না হয়ে দাঁওতে রাখুন...। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির - মুখ সামলে রে রাস্কেল। নিজের পাতের লুচি দিয়ে জুয়ো খেলব? তার চেয়ে বরং...তার চে'বরং...আমার এই ভাইগুলোকে এক এক করে বাজি রাখি...। ২। কুন্তী (দরজা খোলার আগেই) - পাঁচ ভাই ভিক্ষেতে যা পেয়েছ তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিও। যুধিষ্ঠির - এক মিনিট। আজ আমি ভিক্ষেতে লুচি মোহনভোগ পেয়েছি৷ এর ভাগ চাইলে আমি কালই কৌরবদের কোম্পানিতে ক্লার্ক হিসেবে জয়েন করব। এই বলে রাখলাম।  ৩। কৃষ্ণ - দ্রোণকে না আটকালে সমূহ বিপদ। যুধিষ্ঠির - হোক গে বিপদ। তাই বলে ধর্মপুত্র হয়ে মিছে কথা বলব? অস

অন্য বেয়াল্লিশ

- গুরু, খৈনি হবে? - মাইরি ডগলাস, তোমার মত ফচকে ছোকরা আর দুটো দেখিনি। আমি কি তোমার পাড়ার মোড়ের বেঞ্চিতে বসে আড্ডা দেওয়ার ইয়ারদোস্ত? ব্রহ্মাণ্ড চালাতে হয় আমায়। তোমার মত ছিচকে ভূত নই। - আরে অত ঘ্যাম নিয়ে কী হবে গুরু। বেশ তো চুনে খৈনিতে ডলছিলে৷ দাও দেখি এক চিমটে। - সাহেবসুবো মানুষ তুমি। এ'সব বিশ্রী নেশা তোমায় মানায় না। - ঈশ্বর হয়ে মুখ টোপলা করে দিনরাত বসে আছ গুরু। আমি কৌনসি খেত কা মুলি৷ দাও গুরু। এক চিমটে দাও। - এসো।  - আহা, অমৃত। আচ্ছা গুরু, এত জটিল হিসেবকিতেব সামাল দাও কী করে বলো দেখি। যখনই দেখি খৈনি ডলে যাচ্ছ; ঈশ্বর হয়ে দুনিয়া সামাল দাও কখন? - আমি ক্লার্ক নই ভায়া ডগলাস যে মুখ গুঁজে ফাইল ঘঁষটে যাব। সিস্টেম নিজের মত চলছে, আমি শুধু মাঝে মধ্যে "নাজুক নাজুক" বলে চলকে উঠি বা "তৌবা তৌবা" বলে চুকচুক করি। - সিস্টেম। নাকি? - এক্কেবারে ট্রায়েড অ্যান্ড টেস্টেড। - সিস্টেমটা একটু খোলসা করো না গুরু৷ তোমারও কাজ নেই, মড়া হয়ে আমিও ফ্যা-ফ্যা করে টহল দিচ্ছি। একটু না হয় ভালো ভালো কথা শুনি। - এ যে সব প্রশ্নের সেরা প্রশ্ন ভাই ডগলাস। - উত

ফার্স্ট পার্সন

ঋতুপর্ণবাবুর মুখে ও কলমে বাংলাভাষা জ্বলজ্বল করে ওঠে। আমি ভাষার দুরূহ টেকনিকালিটি তেমন বুঝি না, কিন্তু আর পাঁচটা ধান্দাবাজ মানুষের মত নিজের আত্মার আরামটুকু দিব্যি টের পাই। ঋতুপর্ণবাবুর কথায় ও ভাষায় সাজানো ওঁর ভাবনাচিন্তা আর গল্পগুলো মনের মধ্যে সত্যিই আরাম বয়ে আনে। অগাধ পড়াশোনার মধ্যে বহুমানুষই থাকেন, ইন্টেলেক্টের ব্যাপারেও যে ঋতুপর্ণ শেষ কথা; সে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই। তবে সিনেমাটিনেমা যদি বাদও দিই, কথাবার্তায় ওর সততা, সারল্য, যুক্তিনিষ্ঠা এবং সর্বোপরি ওর ভাষার যে ' সুমিষ্ট স্মার্টনেস'; সে'সব মিলে আধুনিক বাঙালি ঋতুপর্ণর ভক্ত না হয়ে যাবে কোথায়? (এটা অতিশয়োক্তি হল কিনা জানিনা, তবে আমি নিজে যেহেতু ঋতুপর্ণর "ভক্ত্", সে'সব নিয়ে "কেয়ার" করা আমার সাজে না)। তবে এই সততা, সারল্য, যুক্তিনিষ্ঠা আর ভাষার স্মার্টনেসের বাইরে গিয়ে দু'টো ব্যাপার ঋতুপর্ণকে অনন্য করে তোলে; এক, ওঁর "এমপ্যাথি"।     দুই, যে মধ্যবিত্ত আটপৌরে প্রিজমের মধ্যে দিয়ে ভদ্রলোক পৃথিবীর ইয়াব্বড় ব্যাপারস্যাপারগুলো দেখতে ও অনুভব করতে পারতেন৷ দে'

বাঘবন্দীর খেলা

- অভ্র, শুনলাম তুই মিছিলে যোগ দিবিনা বলেছিস..। - ঠিকই শুনেছ। - লাইটার আছে? আমারটা কে যে ঝেড়ে দিলো। - এই যে। - একটা সিগারেট না ধরালেই নয়..থ্যাঙ্কস।  - মনোজদা, ও মিছিলে আমি বেরোব না। - ভেবে বলছিস তো? - তুমি তো জানো, আমি চিরকালই এক কথার মানুষ। - তোর এই ট্রেটটা আমার বরাবরই ভালো লাগে। তুই ইউনিভার্সিটিতে থাকতেই তোকে মার্ক করেছিলাম কি সাধে? তোর মধ্যে একটা ডিসাইসিভ ব্যাপার আছে, তোর ফোকাস আছে,জেদ আছে, অধ্যাবসায় আছে৷ পলিটিক্সে এই ব্যাপারগুলো খুবই জরুরী৷  - এ'টা মিছিল নয় মনোজদা...পরিকল্পিত হামলা৷  - তুই লম্বা রেসের ঘোড়া৷ পার্টিতে তোর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে৷ হাইকম্যান্ড তোর এনার্জি আর ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট সমীহ করে। কিন্তু এখন তোকে যদি সহজপাঠ ধরে পড়াতে হয়....দ্যাট ইজ আনফরচুনেট। দ্যাখ অভ্র, প্রতিটা মিছিলই পরিকল্পিত আক্রমণ৷ সে আক্রমণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, পচাগলা সিস্টেমের বিরুদ্ধে।  - কিন্তু তোমাদের আজকের এই পরিকল্পিত আক্রমণ অন্যায় বা পচা সিস্টেমের বিরুদ্ধে তো নয়।  - আমাদের? এ পার্টি তোর নয়?  - কিছু অসহায় মানুষকে মারধোর করে, তাদের দোকানপাট জ্বালিয়ে তোমর

ট্রাম্পদার মগজে

- হেইয্যো...ট্রাম্পদা...হেইয্যো...।  - হু আর ইউ? - ওহ হো, ইংরেজিতে কথা বলতে হবে তো। আজ্ঞে, আই অ্যাম তাপস সাহা।  - ট্যাপাস? - স্যাহা। যেয়াজ্ঞে।  - হ্যাভ ইউ কিডন্যাপড মি? - সে কী কথা! নো নো স্যার। হাউ ডু আই কিডন্যাপ? ইউ নাউ ইন ডীপ ঘুম...যাকে বলে ইজ ন্যাপিং লাইক আ কিড । আই অ্যাম অ্যাকসেসিং ইওর ব্রেন থ্রু তন্ত্র।  - ইউ আর অ্যাকসেসিং হোয়াট? - ইওর ব্রেন স্যার। লোকেট করা ওয়াজ ভেরি টাফ। বাট ফাইনালি আই কুড এস্টাবলিশ কনেকশন। তিন দিন ধরে সিগনাল পাঠাচ্ছি আর সিগনাল গোঁত্তা খেয়ে ওয়াপস আসছে। গেটিং নাগাল অফ ইওর ব্রেন ইজ ভেরি ভেরি টাফ। বাট ফাইনালি...। - অ্যান্ড ইউ আর অ্যাকসেসিং মাই ব্রেন থ্রু...? - আজ্ঞে, তন্ত্রযোগে। - ট্যান্ট্রা ইয়োগা? - ওই হল। - ইজ দ্যাট সাম কাইন্ড অফ হোকাস পোকাস? - হোকাস পোকাস ফর ইউ ডিয়ার পোটাস। টোটাল সাধনা ফর মি। ফাইভ ইয়ার্স স্পেন্ট অ্যাট তারাপীঠ শ্মশান স্যার। সাবসিকুয়েন্টলি থ্রি ইয়ার্স অ্যাট দ্য জঙ্গল ইনসাইড নেপাল। ভেরি ডীপ সাধনা; ইয়ে...ইংরেজিতে...স্যাঢ্যানা বোধ হয়...ইউ নো...।  - ইউ আর আ ক্রেজি ফেলো...।  - টু প্র্যাক্টিস তন্ত্র,

কৈলাসের পিসেমশাই

(নীচের ছবি সম্বন্ধে সূত্রঃ শুকতারা শারদ সংখ্যা ১৯৯১,  মূল কবিতার নামঃ "কৈলাসপতির কলকাতা দর্শন", কবিঃ ভবানীপ্রসাদ মজুমদার) *** - নন্দে, ফটোশপ ব্যাপারটা কী রে? - সে জিনিসে আপনার আবার কী দরকার গুরু? - আরে বল না।  - ও'সব মর্ত্যলোকের জিনিস। তা দিয়ে হবেটা কী। - আরে ধ্যার রে বাবা খালি ফালতু কথা। প্রশ্ন করলে মাথা নুইয়ে উত্তর দিবি, অত চ্যাটাংচ্যাটাং পাল্টা প্রশ্ন আবার কেন রে নন্দে? ফটোশপ কী তা আদৌ জানিস কি? - জানি না আবার। কাতুদা তো ওই দিয়েই নিজের গোঁফে অমন জেল্লা জুড়ে মর্ত্যে নিজের ইমেজ বানিয়েছে। এমনিতে তো দিনে বাইশবার দাড়ি কামিয়েও গোঁফ পুরুষ্টু হল না। - বটে? - আজ্ঞে। চুঁচড়োয় সে'বার দেখলেন না, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে কাতুদার ইয়াব্বড় পাকানো গোঁফ। - ছেলেটা এখনও জ্যামিতিটা ভালো করে শিখলনা অথচ বাহারে মেজাজ রপ্ত করেছে সাড়ে ষোলআনা। যাকগে, ওই ফটোশপ ব্যাপারটা একটু হাত কর দেখি নন্দে। - কিন্তু ফটোশপে আমাদের কাজ কী? - সিক্স প্যাক না জুড়লে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না রে। এই দ্যাখ না সে'দিন, আমার এক পুরনো ভক্তকে স্বপ্ন দিয়ে বললাম পাড়ার

আ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই

জনি বেয়ারস্টোর বায়োগ্রাফিতে আর যাই থাক, ওয়ার্নের জীবনীতে বর্ণিত সেই ক্রিকেটীয় থ্রিল নেই৷ কিন্তু এ বই পড়ার জন্য সে অর্থে ক্রিকেট ভক্ত না হলেও চলে। কালপুরুষ ছবির শেষে সমুদ্র ঘেঁষে পিতা-পুত্রের হেঁটে যাওয়া যারা দেখেছেন, নিশ্চিত ভাবেই সেই সিনেমার ভবঘুরে বাঁশিওয়ালার সুর ভোলেননি। আমি ভুলিনি। আর গোটা বই জুড়ে সেই সুর ঘুরে ফিরে আসে। স্পয়লার নয় (জীবন থেকে তুলে আনা এমন তরতাজা গল্পের স্পয়লার হয় না), শুধু বইয়ের পটভূমিটা দু'লাইনে বলা যায়৷ জনির বয়স যখন সাত তখন ওর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তা র কিছুদিনের মাথায় জনির বাবা ডেভিড বেয়ারস্টো (যিনি নিজেও একজন ক্রিকেটার, ইয়র্কশায়ারের এক প্রাক্তন মহারথী বলা চলে) আত্মহত্যা করেন। সে'খান থেকে জনি যে হারিয়ে যাননি তার প্রমাণ তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। বলাই বাহুল্য যে সেই উত্থান নিয়ে একটা রূপকথার মত গল্প বলা যেতেই পারে। কিন্তু এ বইয়ে ঠিক রূপকথার মেজাজ নেই।  এক খোকা পথ হাঁটছে আর অনবরত নিজের বাবার না-থাকা-টুকুকে পেরিয়ে আবছা কিছু স্মৃতি আঁকড়ে নিজের বাপের গন্ধ খুঁজে নিচ্ছে৷ সিনিয়র বেয়ারস্টোও উইকেট কীপার ছিলেন, তাঁর দুম

জেটবাহাদুর মশাবাহিনী

গুডনাইট অলআউট এইসব বিশ্রী বিষাক্ত যন্ত্রপাতির যুগে হাইকোয়ালিটি মশাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আগের চেয়ে বেশ খানিকটা কম। ব্যায়াম করা চাবুক চেহারার মশাদের দল আজকাল আর অত সহজে দেখাও যায়না; অন্তত ঘরে বা অফিসে তো নয়ই। কলেজে পড়ার সময় যে ভাগ্যবান বন্ধুরা নন্দন চত্ত্বরে বসে প্রেম করেছে, তাদের মুখে শুনেছি পালোয়ান মশাদের জেটবাহাদুর গল্প; চুমুর চক-চকাম নাকি সহজেই ঢাকা পড়ে যেত সেই মশাশ্রেষ্ঠদের মঁ-মঁ-মঁ-মঁ গুঞ্জনে।  আজকাল যে'সব মশা নজরে পড়ে তাদের আর যাই হোক; সুগঠিত সুঠাম সুদৃঢ় বলা চলেনা। বেশির  ভাগই কুচিকুচি সাইজের; তাদের কামড়ে ধার নেই। বাকিরা বেঢপ থ্যাবড়া, তাদের বেয়াল্লিশ মাসে বছর; গায়ে বসে সামান্য এক কামড় দিয়েই আর নড়তেচড়তে পারেনা। তাদের থাবড়ে মারতেও মায়া হয়; আলতো ফুঃ দিয়ে "সোনা বাবা" করে উড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। মোদ্দা কথা হল এই অস্থির সময়ে মশা ম্যানেজমেন্টের চ্যালেঞ্জটাই নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে।  সামগ্রিকভাবে মেট্রো মশাদের ফিজিকাল ফিটনেস আর প্রত্যুতপন্নমতিত্ব তলানিতে এসে ঠেকেছে। আগে তারা দলবদ্ধ হয়ে ডাকাতে মেজাজে হা-রে-রে-রে সুরে আক্রমণ করত; এখ

ফ্যাসিজমঃ আ ওয়ার্নিং

ফ্যাসিবাদ শব্দটা নিয়ে এখন চারদিকে বেশ কফিহাউস লেভেলে কপচানি চলছে। এটাও মেনে নিতে অসুবিধে নেই যে মতের অমিল হলেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গায়ে ফ্যাসিস্টের তকমা এঁটে দেওয়ার মধ্যে পপকর্ন-মুচমুচ থাকলেও, ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে।  আর পাঁচটা নেটিজেনের মতই আমার ধৈর্য কম। দুম করে ওপিনিওন ঝেড়ে দিয়ে আমি তৃপ্তিলাভ করি আর রাজনৈতিক তর্কে নির্বিচারে 'ফ্যাসিস্ট" গোছের শব্দ জুড়ে দিয়ে আমি টেবিল চাপড়ে থাকি। সস্তা থ্রিল আমার মন্দ লাগে এমন কথা বললে বেশ   অন্যায়ই হবে বটে। তবে ইদানীং মনে হচ্ছিল এই ফ্যাসিজম সম্বন্ধে সামান্য পড়াশোনা করলে নেহাত মন্দ হয়না৷ একদিকে বেশ ভজকট ব্যাপারে জানার ইচ্ছে আর অন্যদিকে শখের-প্রাণ-গড়েরমাঠ সিন্ড্রোম; কঠিন কন্সেপ্ট বুঝতে চাওয়া সহজ গল্প শোনার স্টাইলে। কাঠখোট্টা পাথুরে ভাষায় আরসালান বিরিয়ানির রিভিউ পড়লেও তা বাসি-পাউরুটি-মার্কা নিরস ঠেকতে পারে। সবচেয়ে ভালো হত যদি ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে সঞ্জীব বা পূর্ণেন্দু পত্রী কোনও প্রামাণ্য বই লিখতেন; তা নিশ্চিত ভাবেই আমার মত "কিশোর সমগ্র"-প্রাণ মানুষের জন্য স

দ্য বুক থীফ

প্রতি বছর বইমেলার আগে মনে হয় এইবারে অন্তত নার্ভ ধরে রাখতে পারব। মনে হয় এবারে অন্তত বাৎসরিক হুজুগের পাল্লায় পড়ে তাকের না পড়া বইয়ের বোঝা আরও খানিকটা বাড়িয়ে ফেলব না। এবারেও তেমনই একটা কিছু ভেবে রেখেছিলাম, কিন্তু শেষে ওই যা হওয়ার তাই হল। পাঠকের চেয়ে কনজিউমারের মেজাজে ধার বেশি; কাজেই শেষে পর্যন্ত পিঠের ব্যাগ বোঝাই করে বাড়ি ফেরা। নিশ্চিত জানি যে এই নতুন বইগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বই হয়ত আগামী একবছরেও পড়া হবে না এবং পরের বইমেলার সময় এই বইগুলোর দিকে তাকিয়ে বারবার শিউরে উঠত ে হবে।  এবারের বইমেলার দিন কয়েক আগে শেষ করেছি মার্কাস জুসাকের “দ্য বুক থীফ”। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানী আর সেই সময়ের নিবিড় অন্ধকার হাতড়ে বেড়ানো কিছু মানুষের গল্প বলেছেন লেখক। কাহিনীর মূলে রয়েছে লিজেল মেমিঙ্গার নামের এক কিশোরী। হিটলারের জার্মানির আর সেই বিষিয়ে যাওয়া সময়ে আটকে থাকা মানুষের অপরিসীম যন্ত্রণা নিয়ে আলোচনা আগেও হয়েছে আর ভবিষ্যতেও হবে। সেই যন্ত্রণাকেই প্রায় সহজবোধ্য কবিতার ভাষায় এ বইতে তুলে ধরেছেন লেখক।  গল্পের মূলে রয়েছে বইচোর লিজেল; পাঠক লিজেল। বই পড়বার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা

রোজ ডে-র লেখা

রোজ ডে।  এ দিনে মান্নাবাবুর কথা মনে পড়বে সে’টাই স্বাভাবিক।  গোলাপের উল্লেখ মান্নাবাবুর বেশ কিছু গানে রয়েছে। এই যেমন “ভালোবাসার রাজপ্রাসাদ” গানটায় রাজার ভূত স্মৃতি হাতড়ে বলছেন “ইন্ দ্য গুড ওল্ড ডেজ, প্রেমিকাকে তাক করে ইরানি গোলাপ ছুঁড়ে মারতাম”।  অথবা উত্তমবাবুর দেওয়া লিপের সেই গান   “মানুষ খুন করলে পরে, মানুষই তার বিচার করে, নেই তো খুনির মাফ, তবে কেন পায় না বিচার নিহত গোলাপ”। এমন এক্সট্রিম-ভেগান প্রেমের গান শুধু বাংলায় কেন, পৃথিবীর সঙ্গীত ইতিহাসে বিরল।   তবে মান্নাবাবুর গোলাপের রেফারেন্সওলা গানগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠটি হল; “লাল মেহেন্দির নক্সা হাতে,   তুললে যখন গোলাপ কুঁড়ি ই ই ই ই ই ই,   বেশ মিষ্টি একটা আওয়াজ হল মিষ্টি একটা আওয়াজ হল... বাজল ক’টা কাচের চুড়ি   বলো না   তোমার নামটা কী গো... বলো সখী... তোমার নামটা কী গো... বলো না... তোমার নামটা কী গো...।   খানিক ভেবে দেখেছি, গায়ক নিশ্চয়ই মিষ্টি আওয়াজ বলতে গোলাপ ছেঁড়ার কথা বলছেন না, আওয়াজটা হল কাচের চুড়ির। তবে এতবার “নামটা কী গো...বলো না...বলো সখী” বলে ঘ্যানরঘ্যানর করা চাট্টিখানি

এয়ারপোর্টের সামোসা

এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষা করতে করতে ভদ্রলোকের চোখে পড়ল একটা সাজানো-গোছানো খাবারদাবারের দোকান। বার্গারটার্গার, প্যাটিসট্যাটিসের পাশাপাশি রয়েছে মরা সামোসা। ভদ্রলোক কাচের শোকেসের কাছে গিয়ে মন দিয়ে দেখলেন; সামোসাই, শিঙাড়ার লাবণ্য সেগুলির মধ্যে আদৌ নেই। অনেকক্ষণ ধরে পেটের মধ্যে একটা বিশ্রী খিদে খলবল করে বেড়াচ্ছিল বটে। কিন্তু বেঢপ সামোসার ঠাণ্ডা লাশ চিবুতেও তেমন প্রবৃত্তি হচ্ছিল না। শেষে খিদে যখন পেটের মধ্যে সিঁদ কাটতে শুরু করলে তখন বাধ্য হয়ে সেই কাচের শোকেসের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে  দাঁড়ালেন ভদ্রলোক।  - কী চাই স্যর? - সমস্যা, থুড়ি, সমোসা। হেহ হেহ। পিজে।  - ক'পিস দেব? - ওই একটি ম্যানেজ করতে পারলেই পদ্মশ্রী।  - হান্ড্রেড অ্যান্ড ফিফটি রুপিজ।  - পার পিস? - হ্যাঁ স্যর।  - মিনিমান তিনশো হওয়া উচিৎ। পার পিস! - এক্সকিউজ মি স্যর? - চলুন আড়াইশোয় রফা করছি। কিন্তু তার কম এক পয়সাও নয়।  - আমি ঠিক বুঝতে পারছি না স্যর। - উফ আপনি বড় হার্ড বার্গেন করেন মশাই৷ বেশ, সোয়া'দুশোই সই। আর টানাহ্যাঁচড়া করবেন না প্লীজ। - কিন্তু এর দাম তো দেড়শো টাকা।  - স্