Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2017

কাগজের টুকরো

অন্তত পনেরো বছর পর বাপ্পাদার সঙ্গে দেখা। দক্ষিণ পাড়ার সর্বকালের সেরা অফ স্পিনার বাপ্পাদা। বিনি পয়সায় পাড়ার কুচেকাঁচাদের অঙ্ক আর আঁকা শেখানো বাপ্পাদা। বুল্টিদির এক ধমকে চেনস্মোকার থেকে চুইংগাম সর্বস্ব বাপ্পাদা। পুজোয় ধুনুচি নাচ, ভোগ বিতরণ আর লক্ষ্মী পুজোয় আলপনা স্পেশালিস্ট বাপ্পাদা। ছোটদের থিয়াটারের ডিরেক্টর বাপ্পাদা। সব ঠিকঠাক ছিল। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে একটা চাকরী পেয়েছিল, বুল্টিদির সঙ্গে বিয়ে ঠিক। সাজানো গোছানো ছিমছাম। রঙ ওঠা ফ্যাকাসে গোলাপি বালিশের ওয়াড়ের মত ভালোলাগা চারদিকে।  আমরা মাঝেমধ্যেই বাপ্পাদার কাছে বৌভাতের মেনুর খোঁজখবর নিচ্ছি আর ওর থেকে "ডেঁপো ছেলের দল" মার্কা এন্তার কানমলা খাচ্ছি। ইন্টার-পাড়া ক্রিকেটে বাপ্পাদা উইকেট নিলেই বুল্টিদির ফর্সা কান দুটো টকটকে লাল হয়ে উঠছে। আমরা সবাই বাপ্পাদা হতে চাইতাম। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখতাম আমাদের লেখা কবিতার চিরকুট বুল্টিদির মত কারুর কেমিস্ট্রির বইয়ের বুকমার্ক হবে। বাপ্পাদা-বুল্টিদির বিয়ে জানুয়ারিতে হবে বলে ঠিক ছিল। নভেম্বরের শেষের দিকে বাপ্পাদার বাবা স্বদেশ জ্যেঠু মারা গেলেন। সেরিব্রাল। আমরা বাপ্পাদাকে কাঁদতে দেখিনি; আগেও

মুখোমুখি বসিবার

- এক্সকিউজ মী! - আমায়? আমায় বলছেন কিছু? - আরে ক'টা লোক আছে এখন মেট্রোতে? - অদ্ভুত। তাই তো। এই মাত্র ভিড় ছিল। এখন শুধু আপনি আর আমি।  স্ট্রেঞ্জ।  - খবরের কাগজে মুখ গুঁজে থাকলে ওই হবে। ভিড়  আচমকা গায়েব। কামরায় শুধু আমরা দু'জনে। আর সমস্যাটা সে'খানেই...।  - ওহ মাই গড!  - যাক, ধরতে পেরেছেন তা'হলে! - অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়!  - নয়ত আপনাকে ডাকলাম কেন বলুন!।  - আপনি...আপনি অবিকল আমার মত। - অথবা আপনি অবিকল আমার মত।  - আমার দু'জনেই...।  - সেম টু সেম।  - ভাবা যায়? - দশ মিনিট আগেও ভাবতে পারতাম না । কিন্তু এখন স্পষ্ট দেখতে পারছি।  - অবিকল এক চেহারা। শুধু তাই নয়। একই পোশাক। একই চশমার ফ্রেম। আপনার গাল দেখে মনে হচ্ছে দাড়ি দু'দিন আগে কামিয়েছেন।  - পরশু সকালে। করেক্ট। আটটা নাগাদ।  - একদম তাই। গত পরশু সকাল আটটা নাগাদ। ভুল রেজার চালানোয় থুতনির কাছের কাটা দাগটা এখনও টাটকা আমার চিবুকে।  - আমারই মত। আর আপনার বুকপকেটে ডালের ছিটে।  - আপনার বুকপকেটের মতই । তাড়াহুড়োয় লাঞ্চ করতে গিয়ে...।  - এগজ্যাক্টলি। তা'হলে কী বুঝছেন? - দাঁড়ান। একটু ভেবে উঠতে দি

গামছা

- শুনুন! - কী চাই? - অমন ধমকে কী চাই বলছেন কেন স্যর? - আমায় স্যর বলার কী আছে? একে পাখি তায় আবার ফিঙে। কী চাই? - যদি অভয় দেন তো বলি! - ওরে আমার ন্যাকা রে। ক্যুইক। টেলিগ্রাফের তারে বসে আমার ন্যাকামি বরদাস্ত হয় না। ক্যুইক। - বলছিলাম যে আপনার ল্যাজটা কি ফাঁকা আছে? গামছা মেলার ছিল। ভেজা। - আমার ল্যাজে ভেজা গামছা? - ভরসা বলতে তো ও'টুকুই। ** খোকা রোজ দেখে বাবা অফিস থেকে ফিরে ভিজে গামছায় গা মুছছে। মিনিট দশেক লাগে সে গামছা চৌবাচ্চার জলে ভিজিয়ে রাখতে, মিনিট পাঁচেক গা মুছতে। সবুজ লাল চেক গামছা। দেখেই মনে হয় কী মোলায়েম, কী আদুরে। কিন্তু গা মোছার পর বাবা গামছাটা যে কোথায় মেলেন সে'টা কিছুতেই ঠাহর করতে পারে না খোকা। বাবাকে বেশ ম্যাজিশিয়ান মনে হয়। ভেজা গামছা গায়েব, শুকনো গামছা ওয়াপস। রোজ। বাবা মাঝেমধ্যেই বলেন; "যারা ভিজে গামছা বরদাস্ত করতে পারে না, তাঁদের কিছুতেই ভরসা করবি না। সে ব্যাটারা দিব্যি মানুষ খুন করে গজল গাইতে পারে"।

ছুঁচ

মেজমামা থাকলে বলতেন "ইট ইজ আ বিউটিফুল মর্নিং"। আরও দু'একটা মন ভালো করা কঠিন ইংরেজি শব্দও থাকত বোধ হয়। শুভেন্দুরও ঠিক তেমনটাই মনে হচ্ছিল। হাওয়ায় তিরতিরে শীত। কফির মনোরম উষ্ণতায় সেঁকে নেওয়া হাতের তালু। আকাশের নীলে রোদের সেলোফেন। নিখুঁত; ঠিক যেমনটা হওয়া উচিৎ। এফএমে কোন চ্যানেল যেন 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে' চালিয়েছে। দীপার কপালে এলোমেলো চুল, চোখে অল্প ঘুমের রেশ তখনও লেগে রয়েছে। ভালো লাগার গ্যাস বেলুনে ঝুলে ভেসে যেতে ইচ্ছে করছিল শুভেন্দুর। 'আহা' না বলে 'অহো' বলতে ইচ্ছে করছিল। ঠিক তখনই। বেলুনে ফুস শব্দে ঢুলে গেল ছুঁচ আর কফিতে পড়ল চোনা। আকাশের মন কেমনের নীল কেউ যেন বাথরুম-ফ্লোর-ক্লীনার ঢেলে ফ্যাকাশে করে দিল। ছুঁচ কাম চোনা কাম ফ্লোর ক্লীনার মার্কা প্রশ্নটা ছিল দীপার। - আচ্ছা শুভেন্দু, আমি কি ইরিপ্লেসেবল? - উঁ? - আমি কি ইরিপ্লেসেবল? - আমায় জিজ্ঞেস করছ গো? - এখানে আর কে আছে বসে? - আই সী। আমায় জিজ্ঞেস করছ। - আমি কি ইরেপ্লেসেবল? আমার অভাব কি তোমার অপূরণীয় মনে হবে? - অফ কোর্স। অবশ্যই। ডেফিনিটলি। নিঃসন্দেহে। - রিয়েলি? - আলবাত। তাছাড়া একজন মানুষ কখ

জালিম খাঁ

কয়েক হাজার বছর আগের কথা। ভাগ্যিস নিউমোদক স্যুইটসের ফুলকপি-শিঙাড়ার তেলে ল্যাপ্টানো আঙুলে হিস্ট্রি বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে সেই গোপন চ্যাপ্টারটার পৌঁছনো গেছিল। ভাগ্যিস। নয়ত কুমার জালিম খাঁর খবরাখবর পাওয়া হত না। চারদিকে রক্তারক্তি অবস্থা। দুশমনিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রুপুরের এন্তার খুনোখুনি চলছে দেড়শো বছর জুড়ে।   যুদ্ধের ইন্ট্রারভ্যালে কুমার জালিম খাঁ এক বাটি চানাচুর নিয়ে বসেছিলেন  যুদ্ধক্ষেত্রের এক নিরিবিলি কোণে। বাতাসে বারুদ, বালি আর লেবুপাতা ঘষা সুবাস। জালিম খাঁ মনে মনে সুরে ধরেছিলেন; "মহব্বত মে নহি হ্যায় ফর্ক জিনে অউর মরনে কা, উসি কো দেখকে জিতে হ্যায় জিস কাফির মে দম নিকলে, হজারো খোয়াইশে অ্যাইসি কি হর খোয়াইশ মে দম নিকলে"। গানের কথা তো আর তলোয়ার নয় আর সুরও বল্লম নয় যে জালিম খাঁর হুকুমে তাদের নড়নচড়ন। চানাচুর মুখে বেশ নাস্তানাবুদ হচ্ছিলেন ভদ্রলোক। ঠিক তখনই ভসভসে স্টোভ জ্বালানোর গন্ধে খাঁ সাহেবের গান থামল। ডিমের মুণ্ডুপাত করে যে যেন চাটুতে ঢেলেছে।  কুচো পেঁয়াজের অভাবেই স্পষ্ট; শত্রুপুরের খুনে দৃষ্টির থেকে এত সহজে রেহাই মিলবে না। স্যান্ডো গেঞ্জির বর্মেও ভয় ঠেকাতে পারল

ক্রিফ্যাবাবুর গল্প

- আরে ক্রিফ্যাবাবু যে! - চিনতে পেরেছেন স্যার? - না চিনে আর উপায় কী বলুন। বিষমে বিষমে বেঁধে রেখেছিলেন যে এদ্দিন। তা ক্রিফ্যাবাবু, একটা কথা বলুন। বছর দশেক আগে যখন দেখেছিলাম তখন তো দিব্যি নাদুসনুদুস ছিলেন, এখন এমন হাড়গিলের মত চেহারা হল কী করে? - ক্রিফ্যা তো আমি এক পিস নই স্যার। একপিস আমি হাড়গিলে হলে কী এসে গেল! - এমন বিমর্ষ হাবভাব আপনাকে মানায় না ক্রিফ্যাবাবু। সে'বার কী ফুর্তি দেখেছিলাম আপনার মধ্যে। - সেই অদ্দিন আগে? তখন আমার ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটরা সবাই ছিলেন, আমিও ভুঁড়ি বাগিয়ে সুখে ছিলাম। শেষ পুষ্টির সোর্স আপনি পড়েছিলেন, সে জন্যেই এ দেহ নিয়ে কোনওক্রমে পড়েছিলাম...। এ'বার ইউথ্যানেসিয়া। - ও কী কথা ক্রিফ্যাবাবু! আপনারাই তো সব, আমরা সবাই একে একে যাবই, যেতেই হবে। কিন্তু আপনাদের থাকতে হবে যে। - বললাম যে স্যার, এক এক ক্রিফ্যার এক এক জাতের খাদ্য। আমাদের ব্যাচের পাতের পাশে প্লাস্টিক বাটিতে গরম জল আর কাগজের সাবান সার্ভ হয়ে গেছে। আপনি এদ্দিন ছিলেন, তাই পরের ব্যাচের হল্লা শুনেও চেয়ার ছাড়িনি...। - কিন্তু এ'বার যে আমাকেও যেতে হবে ক্রিফ্যাবাবু। - ক্রিকেটারদেরই শুধু রিটায়

পঞ্চার এন্ট্রান্স পরীক্ষা

- কী রে পঞ্চা, নার্ভাস? - না..ইয়ে..মানে বলাইদা, এত বড় এন্ট্রান্স...। - এগজামিনেশনেই এত ভয়? এরপর গ্রুপ ডিসকাশন, ভাইবা। তখন তা'হলে কী করবি?  রিল্যাক্স। - খুব খেটেছি বলাইদা, তুমিই তো কোচিং করালে। জানোই তো। - সে জন্যেই বলছি। তোর প্রিপারেশন চমৎকার হয়েছে। স্পট-হিউমরের অব্জেক্টিভ টাইপ কোশ্চেনগুলো একটু মাথা ঠাণ্ডা রেখে হ্যান্ডেল করিস। কেমন? - প্রচুর ক্যান্ডিডেট, তাই না বলাইদা? - প্রতি বছর মড়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মেডিকাল সায়েন্সের প্রগ্রেসেও মহামারী যুদ্ধ আটকাচ্ছে না। আর মড়াদের ইন্টেলিজেন্সও বাড়ছে। আমার কোচিং সেন্টারেই দেখ না, পাঁচ বছর আগে দেড়শো মড়া নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন হাজার দুই, তিরিশটা ব্যাচ। - একবার যদি লাগিয়ে দিতে পারি...। - তাহলে একটা হিল্লে হলো আর কী! এস-ও-বি এন্ট্রান্স ক্লীয়ার করা ! এর মানে স্ট্রেট অফ ফেমে চলে যাওয়া। প্রতি বছর কয়েক লাখ ভূত এই পরীক্ষার জন্য মেহেনত করে। কোয়ালিফাই করে জনা দশেক। এস-ও কোয়ালিফায়েড ভূত চাঁদু, শুধু ভূতেরা নয়; মানুষও তেনাদের হিংসে করে। - বলাইদা এস-ও কোয়ালিফাইড ভূতেরা নাকি রবি ঘোষের ডায়লগের মত? নতুন ছুরির মত ধারাল অথচ গুপ্তিপাড়ার মাখা সন্দেশের মত