Skip to main content

Posts

Showing posts from January, 2017

মেজদার ডিডাকশন্

- শার্লক এমনি এমনি গুলে খাইনি রে। - হঠাৎ এ কথা কেন মেজদা? - হিন্ট পড়তে শিখেছি। ডিডাকশনে সিদ্ধহস্ত হয়েছি। - এখন কোনও হিন্ট পড়তে পারলে বুঝি? - তুই জিমে ভর্তি হয়েছিস বলিসনি তো? - জিমে? কই না তো। - লজ্জা পাওয়ার কী আছে? শারীরিক কসরত তো ভালো জিনিস।  তোর ভুঁড়ি কমেছে, বাইসেপ শেপে এসেছে। থলথলে থেকে নাদুসনুদুসে নেমে এসেছিস। এক মাসের মধ্যে এমন ট্রান্সফর্মেশন ভাবাই যায় না। - দুরন্ত। আরও কিছু অবজার্ভ করলেন নাকি শার্লকদা? - জিম ভালো জিনিস। গাঁজা নয়। - গাঁজা? - অমন সরল মুখ সমস্ত ক্রিমিনালের থাকে বাবু। রিসেন্টলি যখনই দেখছি তোর চোখ লাল। হাঁটার স্টাইল সন্দেহজনক ভাবে দ্রুত। অখাদ্য সব সুর গুনগুন করে চলেছিস। কন্সট্যান্ট একটা ঢুলুঢুলু ভাব। - এবার একটা পাইপ কেনো মেজদা। - এলেম আছে বলছিস? - এলেম থেকে এ'টা বাদ দিতে হবে। - হোয়াই? - গত মাসে খোকার বয়স ছ'মাস পেরিতে সাতে পড়লো। আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছে রাতে ঘুম পাড়ানোর। আট কিলো ওজন কোলে নিয়ে জগিং, জাগলিং আর পায়চারী রিদ্মিটিক্যালি কম্বাইন করে ঘুম পাড়াতে হয়। রামচিল্লানি থামাতে প্রথম পনেরো মিনিট জগঝম্প,  চোখে ঘুম ইনডিউস করতে সুইঙিং পায়চারী পরের কুড়ি

মেনিমুখো

আকাশ ঝকঝকে নীল তখন। কাঠফাটা রোদ্দুর। ঘাসগুলো সব শুকিয়ে হদ্দ। এমনই নিষ্প্রাণ একটা দুপুর যে তানসেনের মেঘমল্লার মুখ থুবড়ে পড়লে শুকনো কুয়োর মধ্যে। খিদে মরে গেছিল ভদ্রলোকের। বারান্দায় পাতা তক্তপোষে গা এলিয়ে কপালের ঘাম মুছতেই দেখতে পেলেন আকাশের এক কোণে আচমকা এক ফোঁটা কালোর ছোপ, বাতাসের তাপ অল্প নুয়ে পড়লো বোধ হয়।  টুকরো মেঘটা দেখতে অবিকল একটা বেড়ালের মাথার মত, দু'জোড়া কান সহ। ** মায়ের কথা মনে পড়লেই মেঘ কেটে যায়। সঞ্জীববাবু ভূতে বিশ্বাসি না হলেও মায়ের গন্ধ টের পান সহজেই। আশেপাশে। এই লেখাটায় তিনি ফিরে আসেন শুধু মেঘ জমলে। মায়ের জন্য লেখা কিনা। মায়ের কথা। ঝাপসা আকাশ, ঝাপসা চোখ আর কলমের খসখস। ক্রমশ লেখা ফুরিয়ে আসে। কয়েক টুকরো মেঘ আর মায়ের সুবাস গায়েব হয়ে যায়। ঠিক যেমন আজ এক চিলতে আকাশের কালো মুছে নীল বেরিয়ে এলো। সে নীলটুকু যেন অবিকল মেনির মুখ।

বেগুনপোড়া

বেগুনপোড়া। সর্ষের তেল, নুন, কাঁচালঙ্কা (যথেষ্ট পরিমাণে) আর কুচো পেঁয়াজ দিয়ে মেখে। গরম ভাতে সেই বেগুনপোড়া চটকে নিয়ে। মুখে প্রথম দলায় গায়ে জুড়বে কবিগন্ধ। দ্বিতীয় দলায় ঘাড়ের কাছে সদ্য গজিয়ে ওঠা ডানার ফরফর। তৃতীয় দলায় পায়ের তলায় মেঘমেঘ তুল তুল। আর চতুর্থ দলা চিবুনোর সময় বুকের ভিতর শতরঞ্চি পেতে জাঁকিয়ে বসবেন জগজিৎ সিং, তার হারমোনিয়ামে "দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ"। পঞ্চম দলায় ছাতের নিভু নিভু আলোয়। পার্ট ওয়ানে ব্যাক পাওয়া প্রেমিকের জামা ধরে টান দেবে উচ্চমাধ্যমিকি হাত। "কিচ্ছু ভেবো না, ঠেলেঠুলে দু'জনে পাশ করলেই বিয়ে। এক জোড়া পাথরকুচির মত খুচরো দু'টো চাকরী। সপ্তাহে তিন দিন বেগুন পোড়ার গন্ধে মাত করে দেবো বাড়ি। আমি খুব ভালো করে মাখতে পারি, দিদার কাছ থেকে শেখা। রেস্টুরেন্টের মুর্গ ভর্তাকে ফেল করিয়ে দেওয়া সে বেগুন পোড়া। তুমি শুধু চিন্তা কোরো না, কেমন? আমি সামলে নেব ঠিক"।

অরোরা বোরিয়ালিস

- খবর কী? - শুভেন্দু! তুই? - অবাক হয়েছিস? - হাহ্! হব না? কদ্দিন পর বল তো? অবাক হব না? - আমি ভেবেছিলাম তুই অরোরা বোরিয়ালিস দেখে চমকেছিস। - কী? - দ্যাখ। আকাশে...। - আরিব্বাস। কিন্তু..কিন্তু...কলকাতায়...। - সবুজ আলো রে। সবুজ। কালোর মধ্যে ছেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। দেখ। - তা বলে কলকাতায়...। - শিউলিদির জিওগ্রাফি ক্লাস। মনে পড়ে? একটা গোটা ক্লাস জুরে অরোরা বোরিয়ালিসের গল্প। - জ'গ্রাফি। - মনে পড়ে? - শুভেন্দু, তুই এখন কোথায়? - ক্লাস ফাইভে ট্রেকার কেনার প্ল্যান হয়েছিল মনে আছে? আমি ড্রাইভার, তুই খালাসী। - ড্রাইভার খালাসী হলে মদ খেতে হবে, সে চিন্তায় একটু পিছিয়ে এসেছিলাম। - সে অসুবিধে এখন তো আর নেই খোকা। - ট্রু। বীরভূমের গ্রাম টু গ্রাম। দিনে ছ'টা ট্রিপ। বারো ঘণ্টা। - করক্ট। দেহাতি গান শেখার কথা ছিল। ঢোল কেনার কথা ছিল। - তুই কেমন আছিস শুভেন্দু? - সন্তুদাকে মনে পড়ে? - ডিউসে খেলতে গিয়ে মুখ ফেটে গেছিল। - মাসখানেক আগে একটা ট্রাক এসে মুখ ফাটিয়ে দেয়। এবার আর ষোলোটা স্টিচে কাজ হয়নি। - কী বলছিস? - সন্তুদা পিকনিকে চিকেন কষা রাঁধত, সে স্বাদ মনে আছে? "অমৃত,অমৃত" করে আমরা

ফতুয়া

১ মোহনবাবু রোজকার অভ্যাস মতই দিব্যি পায়চারি করছিলেন বাড়ির সামনের অন্ধকার গলিটায়। রাতে খাওয়ার পর একটু হাঁটাহাঁটি করলে ডাইজেশন ত্বরান্বিত হয়। এর মাঝে হঠাৎ কেন যে  পকেট থেকে সিগারেটের বাক্সটা বের করে একটা গোল্ডফ্লেক ঠোঁটে ঝোলাতে গেলেন। ২ ঠোঁটের ঝুলন্ত সিগারেটের ডগা তো আর ফস্‌ করে আপনা থেকে জ্বলে যাবে না। দেশলাই চাই। কিন্তু পকেটে দেশলাই নেই। অবশ্য পকেটে দেশলাই নেই বলে চিন্তা হচ্ছে না। মোহনবাবুর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ অন্য কারণে। সিগারেটের প্যাকেট তাঁর পকেটে এলো কী করে? সিগারেটের ধোঁয়া যে তাঁর অসহ্য লাগে। ৩ সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর তিন দিন ধরে থেকে অচেনা রুমাল, বোরোলিনের টিউব, নস্যির ডিবে; এমন অসংখ্য খুচরো জিনিসপত্র মোহনবাবুর ফতুয়ার বাঁ পকেটে এসে জমা হওয়া শুরু হল। আচ্ছা ফ্যাসাদ। মোহনবাবুর বুকে সর্বক্ষণ ঢিপঢিপ, এই বুঝি ফের উটকো কিছু তাঁর পকেটে এসে উদয় হলো। ৪ মোহনবাবু ফতুয়া পরা ছেড়েই দিলেন। বলা বাহুল্য, যে ছাড়তে বাধ্য হলেন। দু'টো দশটাকার নোট, ক্যারমের স্ট্রাইকার, হোমিওপাতির শিশি পর্যন্ত ঠিক ছিল। সেদিন দুপুরে ছাতে পায়চারি করার সময় আচমকা ফতুয়ার বাঁ পকেট থেকে বেরোলো একটা পো

প্রফেসর চট্টরাজের ক্লাসরুম

বৃদ্ধ ব্ল্যাকবোর্ড মুছতে গিয়েও আজকাল ক্লান্ত হয়ে পড়েন। নিঃশ্বাস দ্রুত হয় ওঠে, বুকের ভিতর অল্পেই ধড়ফড়ানি শুরু হয়। একটানা কথা বলে যেতে রীতিমত কষ্ট হয় বিরানব্বুই বছর বয়সের প্রফেসর চট্টরাজের। সেই কবেকার কথা, আজ থেকে ঠিক বত্রিশ বছর আগের ঘটনা। বত্রিশ বছর, ভাবলেও কেমন লাগে। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর কলেজে এসেছিলেন কিছু পুরনো পাওনাগণ্ডা বুঝে নিতে। ঠিক বত্রিশ বছর আগে। ক্যাশিয়ার সামন্ত বেশ কাটখোট্টা ভাবেই বলেছিল যে বকেয়া টাকা আদায়ের আবেদনপত্র শেষ হয়ে গেছে, নতুনভাবে ছাপতে করতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। তখন খানিকটা সময় কাটানোর তাগিদেই একটা খালি ক্লাসরুম দেখে ঢুকে পড়েছিলেন প্রফেসর চট্টরাজ। সে'দিন ক্লাসরুমে ঢুকে যে কী হয়ে গেছিল মাথার মধ্যে...। সেই যে ঢুকেছিলেন , হাজার চেষ্টাতেও সে ক্লাস রুমের বাইরে টেনে আনা যায়নি তাঁকে। কত অনুরোধ, উপরোধ, গলাবাজি জলে গেছে, প্রফেসর চট্টরাজকে ক্লাসরুম থেকে বের করা যায়নি এই বত্রিশ বছরেও। বছর খানেকের মাথায় অবশ্য অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক রকম হাল ছেড়ে দিয়েই সে ক্লাসরুমের নাম দিয়েছিলেন চট্টরাজের ক্লাসঘর। সেখানেই মজুত তাঁর জীবন ধারণের সমস্ত সরঞ্জাম। তাঁর অতিথি বলতে শুধু ছ

সুবিমলবাবু ও সারকাজম

সুবিমলবাবুর ঘেমেনেয়ে একাকার। আড়াই ঘণ্টা ধরে কম্পিউটর স্ক্রিনে চোখ রেখে বসে আছেন। হাতের আঙুলগুলো কীবোর্ডে জুড়ে খলবল করে চলেছে অথচ  ফেসবুকের স্টেটাস মেসেজের বাক্সটা খাঁখাঁ করছে। আড়াই ঘণ্টা ধরে। কালো কফি যথেষ্ট তেতো মনে না হওয়ার প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিসের মলাটের কোণটা খানিক চিবিয়ে নিলেন। তাতেও বিশেষ লাভ হল না। অ্যাশট্রে থেকে সিগারেটের পোড়া ফিল্টার তুলে অল্প চুষেও কোনও হেলদোল টের পাওয়া গেলনা। মাথার চুল ছিঁড়েও কিছুতেই একটা অ্যাসিড মাখানো লাইন মাথা থেকে বের করে ফেসবুকে ঠুসে দিতে পারছিলেন না সুবিমল সান্যাল। কোয়াড্রেটিক ইকুয়েশনে তার ছোটবেলা থেকেই বিরক্তি। কিন্তু খটমট কয়েকটা ইকুয়েশন মনে করেও পর্যাপ্ত ভাবে মেজাজটাকে খিঁচড়ে দিতে না পেরে রীতিমত হাঁফিয়ে উঠলেন সুবিমলবাবু। যে কোন বিষয়ে একটা সারকাস্টিক কিছু টাইপ করতে পারলেই এই অম্বল আর গলাবুক জ্বালাটা পাশ কাটিয়ে দেওয়া যেত। উপায় না দেখে "ডিপ্রেসিং নিউজ টুডে" বলে গুগল সার্চ করে মিনিট দশেক কাটালেন। জ্বালাময়ী কিছু তবুও গলা বেয়ে উঠে এলো না, এ এক আচ্ছা জ্বালা হয়েছে। তারপর ড্রয়ার থেকে খিস্তি অভিধান বের করে কয়েক মিনিট চোখ বুলোলেন। একটু উত্তেজন

ভানুপ্রসাদ

- বাবুজী। - ভানুপ্রসাদ? এসেছো? - জী। - এত দেরী হল? - অন্ধেরার ইন্তেজার করছিলাম বাবুজী। - খবর সব...? - বেফিকর থাকুন বাবুজী। - দু'জনকেই...? - জী। - লাশ? - উয়ো চিন্তা আপকা নহি। - দু'জনকেই শেষ পর্যন্ত..। - ভানুপ্রসাদ যব তক হ্যায়, ইস হভেলি কে ইজ্জৎ পর কোই আঁচ আসবে না বাবুজি। - ভানু...। - তবিয়ৎ ঠিক হ্যায় বাবুজী? ছোটেলালকে বলব বড়িমা কে বুলাওয়া দিতে? - না..না..না। আর কেউ নয়। শুধু তুমি থাকো ভানুপ্রসাদ। - জী বাবুজী। - ছোটকুমার..ছোটকুমার বড় নরম মনের ছিল। - জী বাবুজী। আপনার আঁখো কা তারা। - ভানু, খুব যন্ত্রণা পেতে হয়েছিল ওকে? ছোট খুব ছটফট করেছিল? আর যন্ত্রণা? প্রচণ্ড? - হভেলি কা ইজ্জৎ সবসে আগে বাবুজী। - তাই তো। তাই তো। ইজ্জৎ। হভেলির ইজ্জৎ। রায়চৌধুরী বংশের ইজ্জৎ। আচ্ছা ভানুপ্রসাদ, ওদের বিয়ে হয়ে গেছিল, তাই না? - আজ সে তিন দিন পহলে। - মেয়েটা...। - হভেলি বাবুজী। হভেলি কি ইজ্জৎ। - তুমি..তুমি কেমন আছ ভানু? - ম্যায় নৌকর আদমি বাবুজী। - ভানু? - ছোটকুমার আমার গোদিতে খেলেছে বাবুজী। আমার থেকে তলোয়ার চলানা শিখেছে। বন্দুক চলানা। বাবুজী, ছোটকুমার ছোটলোকের লেড়কিকে শাদি করিয়ে গলত

রাজীবের বিপদ

১ - অনিন্দ্য! - কী ব্যাপার..এত রাত্রে? - ফোনটা একরকম বাধ্য হয়ে করলাম। একটা গোলমাল...বেশ বড় একটা গোলমাল...বুঝলি...। - হয়েছেটা কী? - এই ধর, গত আধঘণ্টা ধরে...একটা শব্দ...একটানা...। - শব্দ? - একটানা। ধুকপুক ধুকপুক। একটানা। - রাজীব,  ভালো করে ভেবে বল। শব্দটা কি বুকের কাছ থেকে আসছে? - এগজ্যাক্টলি। তুই কী করে জানলি? - আমি তোর বাড়ি আসছি। দশ মিনিটে। ২ - অনিন্দ্য। দিস ইজ রিডিকুলাস। - জানি। কিন্তু আনফরচুনেটলি...ইট ইজ ট্র‍্যু। - আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। - জানি। - কতক্ষণ থাকবে এমনটা? - আমার ক্ষেত্রে আধ ঘণ্টা লাস্ট করেছিল। তখনই জেনেছিলাম ব্যাপারটা। কারুর ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা। কারুর কয়েক দিন বা কয়েক মাস। এক্সট্রিম কেসে...। - এক্সট্রিম? - যাবজ্জীবন। - মাই গুডনেস। গোটা জীবন জুড়ে হার্ট বীট থাকবে? - মাঝেমধ্যে মানুষ হয়ে পড়তে হয় রাজীব। আমাদের প্রত্যেককে। - অনিন্দ্য। - হুঁ? - যদ্দিন না এই ধুকপুক যাচ্ছে তদ্দিন...। - তদ্দিন টিভি খবরের কাগজ বাদ। দশের দুঃখে মানুষ মানুষ ভাবটা চাগাড় দেয়। - চাগাড় দিলে? - চাগাড় দিলে আর খবরের কাগজ পড়ে নিশ্চিন্তে সোফায় গা এলিয়ে দিতে পারবে না। বুকে অস্বস্তি

যুক্তি তর্ক বাতেলা

তর্ক মন্দ নয়। তর্কের তবলা পিটুনিতে মগজ সজাগ থাকে, অপ্রয়োজনীয় বন্ধু ছাঁটাই হয়, উপযুক্ত শত্রুর সাহচর্য জোটে। সমাজে ডিবেট জরুরী। কিন্তু সব জরুরীর মাঝে কিছু কাঁকড় গড়িয়ে পড়বেই, আর থাকবে পোকা খাওয়া যুক্তিদাঁতে অনভিপ্রেত ফোঁকর। সেই কাঁকড় ছেঁটে নিতে পারলে অবশ্য ডিবেটের শ্রীবৃদ্ধি হয় এবং সে তর্কের মুনাফা ভাগ হয় যুযুধান দু'পক্ষের মধ্যেই। দু'টো পাথরকুচি তর্কের বাঁশকাঠি চালে মিশে যায় অনবরত। এই কাঁকড় নিজে চিবিয়ে কেঁপে উঠেছি বলেই নয়, অন্যের যুক্তির পোলাওতে তা পরিকল্পিত ভাবে মিশিয়ে অপরাধও করেছি যথেষ্ট। পাথরকুচি ১ - কোনও কিছুকে স্টিরিওটাইপ বলে নস্যাৎ করে সোয়্যাগ অর্জনের যে স্টিরিওটিপকাল প্রসেস্‌, সে প্রসেসে নিজের জান কবুল করা। কেউ কেউ নিশ্চই রয়েছেন যারা ধবধবে সাদা দেয়ালের সামগ্রিক সৌন্দর্যের মধ্যেও দেওয়ালের কোণে লেগে থাকা কালো কালির ছিটেটুকু দেখে নিতে পারেন। সে'টা নিশ্চই সবিশেষ স্কিল। কিন্তু দেশের দশজন লোক সে সাদায় বিহ্বল ব্যাকুল হয়েছে বলেই যদি তা ঘৃণার যোগ্য হয়; তাহলে সবিশেষ অসুবিধে। ডেটা বা ইনফরমেশনের পরিধিতে যতক্ষণ ক্রিটিসিজিম রয়েছে, ততক্ষণ তার তল পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে যে

মৃগাঙ্কবাবুর ভবিষ্যতবাণী

জ্যোতিষী হয়ে এই এক সমস্যা হয়েছে। নিজের মৃত্যুটাও স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। মৃগাঙ্কবাবুর অবশ্য আর পাঁচটা সাধারণ জ্যোতিষীর সঙ্গে তুলনা চলে না। তিনি নিজের মুখে বলতে চান না তবে এ যুগের নস্ট্রাডামুস লেবেলটা তাঁর ওপর নিশ্চিন্তেই সেঁটে দেওয়া যায়। রাম শ্যাম যদু থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন; কারুর ব্যাপারে মৃগাঙ্কবাবুর করা কোনও ভবিষ্যৎবাণীই আজ পর্যন্ত বিফল হয়নি। শুধু একটাই দুঃখ নিয়ে যাবেন মৃগাঙ্কবাবু, তাঁর এই অদ্ভুত ক্ষমতার কথা কেউ জানল না, কদর করল না। সাউথ ইস্টার্ন রেলের কেরানী হয়েই জীবনটা কেটে গেল তাঁর। অথচ জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠ হতে গিয়ে বিয়েথাও করা হয়ে উঠল না। যাক্ গে, কেউ না জানুক। মৃগাঙ্কবাবু নিজে অন্তত এ'টা জেনে মরবেন যে তার কোনও ভবিষ্যতবাণী এক চুলও এদিকওদিক হয়নি কোনওদিন। রোজ সকালে উঠে নিজের হাত দেখে দিনটা বুঝে নেন মৃগাঙ্ক হালদার। সকালের দুধ মুড়ি খেয়ে আজও বসেছিলেন বারান্দায়, শীতের রোদে ডান হাতের তালু মেলে। বাড়ির কাজের ছেলে রাজু বেরিয়েছে বাজার করতে, সে ফিরলে এক কাপ চা খেয়ে তারপর অফিসের জন্য রওনা দেবেন। রাজু ব্যাটা বড্ড ফাঁকিবাজ,  চোখে চোখে রাখতে হয়। সে যাক,

অজিত সেনগুপ্তর খুন

- আচ্ছা বটুবাবু, এমন ম্যাদা মেরে আছেন কেন বলুন তো? কেসটা ফাঁপরে ফেলেছে বেশ? - ইন্সপেক্টর সাহেব, কেস সলভ করা আপনার দায়। সে নিয়ে দুশ্চিন্তাও আপনার। তবে আমার মন মেজাজ সত্যিই তেমন ভালো নেই। বাহাত্তর নম্বর ফুচকাতেই ঢেঁকুর উঠে গেল আজ বিকেলে। বয়স হচ্ছে বোধ হয়, লোহা হজম করা পেট অল্পেই কেঁপে উঠছে। - তবে যাই বলুন। সেনগুপ্তার মার্ডারটা ভোগাবে মনে হচ্ছে। - অবিশ্যি ফুচকা সেশনের আগে এক প্লেট ফিশ ফিঙ্গার খেয়েছিলাম বটে। তবে তাই বলে ফুচকায় হান্ড্রেড হিট করব না, এ'টা বরদাস্ত করা যায়? - বটুবাবু, সেনগুপ্তার মার্ডার। কেসটা বড় জটিল। একটু ফোকাস করুন প্লীজ। এ বছর খুব এক্সপেক্ট করছিলাম প্রমোশনটা। - নাকি ডিফেক্ট ফুচকাতেই ছিল? টকটা অপ্টিমাইজ করতে পারেনি বলেই কি এই বিপত্তি? - সামনের সিজনে জুড়ে প্রতি হপ্তায় অন্তত তিন দিন আপনার বাড়িতে এক কিলোর বেশি সাইজের ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। - ফার্ন রোডের সেনগুপ্ত পরিবার। বিজনেস টাইকুন। প্রবল প্রতিপত্তি। সে'খানে খুন। - এইত্তো। আসুন, গোল্ডফ্লেক্। - নাহ্। আমার নস্যিই ভালো। যা বলছিলাম। ফার্ন রোডের সেনগুপ্ত পরিবার। চারটে কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি। তিনটে কলকাতায়,