Sunday, January 26, 2014

শুভ ২৬ জানুয়ারি

                       প্রথম ও শেষ দৃশ্য
  
-   দাদা,  আমার পিছনে টিকটিকি তুই লাগিয়েছিস ?

-   সে জবাব কি আমি তোকে দিতে যাব ?

-   আমার পিছনে টিকটিকি লাগাবি তুই, আর জবাব দেবে কি আমাদের বাবা ?

-   নিজেকে আর নিজের সংসারকে বাঁচানো তো আমারই দায়িত্ব পিকু। তুই নিজে বখে ক্ষান্ত হলি না, এখন আমার সর্বনাশ করতে চাস ?

-   তোকে কাঠি করতে আমার বয়ে গেছে। উত্তরপাড়ার জমিটা আমায় লিখে দে, ল্যাঠা চুকে যাক।

-   বাবার উইল’য়ে যে হিসেব স্পষ্ট আছে, তা নিয়ে আমায় উত্ত্যক্ত করার কি মানে পিকু ?

Tuesday, January 21, 2014

খোসা ছাড়ানোর গল্প


টকটকে লাল সূর্য। ভোরের। লালচে কালো সমুদ্র। সূর্যের গালে আঁচিলের মত একটা পাখির মেলা ডানা। দেশলাই বাক্সের ওপর এমন হলমার্ক মার্কা ছবি খুবই কম দেখা যায়।

তবে সেই টকেটকে সূর্যোদয়ের ছবি হার মানিয়ে যা চোখ টেনে নেয় তা হচ্ছে সেই মেয়েটির চোখ যার হাতে দেশলাইটা ধরা আছে। সপাট তাকিয়ে মেয়েটি। বুকের মধ্যে ছ্যাঁত যেটা লাগে সেটা দেশলাইয়ের বারুদের নয়; অন্য কিছুর।  

ল্যাম্পপোস্টের কোমর আঁকড়ে ছিল দেশলাই বিজ্ঞাপনের পোস্টারটি আর পোস্টারের সেই খুনে দৃষ্টির মেয়েটা। দু একটা যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের প্যাম্পফ্লেটের দাপটে দেশলাই মডেলটির পেটের দিকটা রহস্যময় ভাবে বাদ পড়েছে।

ল্যাম্পপোস্টটা যে বেশ পুরনো তা  ফটোটা খুঁটিয়ে দেখেই মালুম হবে।  এসপ্ল্যানেডে তোলা।  ফটোগ্রাফার ধীমান দত্ত। নিউ আই ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মোমবাতির মত জ্বলজ্বল করছিল ছবিটা। 

নিউ আই ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিনের কভার দিয়ে ঝালমুড়ির ঠোঙা ? ভাবা যায় ? ভদ্রলোক মুড়ি চিবোতে চিবোতে হয়তো উদাস হয়ে এটাই ভাবছিলেন।

আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় এমন মুড়ি চিবুনো ভুঁড়ি-ওয়ালা মধ্যবিত্তের ছবি সচরাচর দেখা যায় না। আজকের কাগজেও থাকার কথা ছিল না। নেহাত “মরা টেস্টে নায়ক ইডেনের গ্যালারি” শিরোনামের ছবিতে, ইডেন গ্যালারির একটি পরিস্ফুট বিন্দু হয়ে আনন্দবাজারে উদয় হয়েছেন তিনি।

Friday, January 17, 2014

অবিচুয়ারি নয়

-      কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে আপনি হ্যাঁ বলাতে চাইছেন ?
-      ঠিক তাই।
-      বেশ। আমি রাজি।
-      রিয়েলি ?
-      সিরিয়াসলি বলছি। শুধু একটা প্রশ্ন সুখদেও বাবু। এত পোষা গুণ্ডা থাকতে, আপনি আমার মত পাতি গোয়েন্দাকে দিয়ে এই খুনটা কেন করাতে চাইছেন ?
-      কারণ, নিয়মিত ওনার কাছে যাওয়ার সুযোগ আপনার রয়েছে অনিন্দ্যবাবু।
-      ও, সে খবরও রাখেন দেখছি।
-      আলবাত। আমি জানি যে সুনেত্রা-দেবী আমার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে খবর আদায় করতে গোয়েন্দা লাগিয়েছেন। আর এমন গোয়েন্দা লাগিয়েছেন যার সাথে অন্য কোনও ফিল্ম অ্যাক্টর বা সেলিব্রেটির বিন্দু মাত্র যোগাযোগ নেই। পুলিশ যাকে পাত্তা দেয় না। আমরা এও জানি যে উনি আর ওনার মেয়ে ছাড়া আপনার এই নতুন তদন্তের খবর কেউ জানে না। তাই আমি ঠিক করেছি, যে ওনার ফেউ গোয়েন্দা দিয়েই ওনাকে খুন করাবো।

Wednesday, January 15, 2014

অন্য

বালিগঞ্জ ফাঁড়ির মুখে ছুটে ট্রামে উঠতে গিয়ে গড়বড় করলেন আশুতোষ। পা ফসকে পপাত চ। সন্ধ্যের ভিড়, বাস-ট্যাক্সিতে মাখা-মাখি রাস্তা, সাই সাই করে অটোরিকশা ছুটছে; পা ফসকে ট্রামের চাকার তলায় যাবেন না মিনিবাসের টায়ার জুটবে এসব ভাবতে ভাবতেই ধপাৎ করে পড়লেন কাঠের মেঝেতে!

কি মুস্কিল। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির পিচের রাস্তা হয়ে গেল হলদে কাঠের মেঝে ? আশেপাশে তাকিয়ে আশুতোষ দেখলেন ঘন চাপ চাপ অন্ধকার। কিছুই তেমন দেখা যায় না। এ যে ভোজবাজি। ছিলেন কলকাতায় আর এলেন এ কোথায় ? তবে কি তিনি মারা গেছেন ? পেছন থেকে বাস এসে তার মাথা চটকে দিয়ে গেছে ? কি চাপ। বেয়াল্লিশে মারা গেলে তেমন ক্ষতি ছিল না, কিন্তু এল-আই-সি’টা আগামী মাসে ম্যাচিওর করছিল। গিন্নী সব কিছু ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে পারলে হয়। 

টের পেলেন কোমরে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। মরে গেলে কি ব্যথা-ট্যাথা হওয়া উচিৎ ছিল ? মহা-মুশকিল।   গায়ে  রক্ত-টক্ত লেগে নেই, আত্মার গায়ে রক্ত লাগা উচিৎও নয়। কিন্তু আশুতোষবাবু অবাক হলেন এই ভেবে যে পরলোকের চেহারা এত ম্যাড়ম্যাড়ে কেন ? স্বর্গ-সুলভ জেল্লা নেই, নরক-গোছের হ্যঁচড়-প্যাঁচর নেই।   শুধু এই হলদে কাঠের মেঝে।

অন্ধকারে চোখ একটু থিতু হতে আশুতোষ টের পেলেন যে মেঝে জুড়ে রকমারি জিনিষপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চিরুনি, মানিব্যাগ, বর্শা, সিনেমার টিকিট, কলম, হামানদিস্তা; কি নেই সেখানে। প্রবল ঘাবড়ে গেলেন আশুতোষ। তবে কি স্বপ্ন  ? নিজেকে চিমটি কাটলেন। ছেলেবেলায় ভদ্রেস্বরের বেণুমামার থেকে রাম-চিমটি কাটা শিখেছিলেন। ব্যথায় ককিয়ে উঠলেন তিনি। লে হালুয়া।

Saturday, January 11, 2014

সে

প্রথম পর্ব

সিদ্ধার্থ জানলা খুলে অবাক হয়ে গেলেন। আচমকা এত মেঘ এলো কোথা থেকে ? পাহাড়ি এলাকায় অবিশ্যি এটাই মজা। রিসেপশনে ফোন করে আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিতেই হল।

দ্বিতীয় পর্ব

-   সিদ্ধার্থর লাশটা অন্তত...
-   না মানসবাবু, পাওয়া গেল না...গোটা সিকিম প্রায় চষে ফেলা হল।
-   ইন্সপেক্টর দাসগুপ্ত, ব্যাপারটা তো নাও ঘটে থাকতে পারে ?
-   সুইসাইড নোট এর আগে বহু কেসে ফাঁপা বেরিয়েছে। সেটা বিশেষ অ্যানন্যাচুরাল নয়। ইনফ্যাক্ট, আপনি সিদ্ধার্থবাবুর দাদা হিসেবে ওর চারিত্রিক ব্যাপারগুলো হয়তো বেশি আঁচ করতে পারবেন।তবে মাস খানেকেও যখন কোনও খবর পাননি...
-   ও আর যাই হোক, সুইসাইডের দিকে ঝুঁকবে এটা বিশ্বাস হয় না। এনিওয়ে, আপনি যা করলেন, আপনার প্রতি এই মিত্র পরিবার চিরকৃতজ্ঞ থাকবে ইন্সপেক্টর দাসগুপ্ত।
-   কিছু আর করতে পারলাম কই মানসবাবু।
-   সিক্রেটটা যেন...

Friday, January 10, 2014

মিতার মৃত্যু

(oKolkata থেকে cross-posted)

শনিবার, সন্ধ্যে ৮ বেজে ৩০ মিনিট

পরমা ফেনায় ভেসে যাচ্ছিল। বাথ টাবটাকে একটা সুরাপাত্র মনে হচ্ছিল। অবাক লাগে ভাবতে। কোথায় তার ছোটবেলার স্যাঁতস্যাঁতে কসবার বাড়ির অন্ধকার বাথরুমের এলুমিনিয়ামের মগ আর শ্যাওলা মাখা চৌবাচ্চা। আর কোথায় অর্ণবের এই তিন হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের পেল্লায় বাথরুম এবং সেই বাথরুমের কোনে সুসজ্জিত বাথ টাবের পাশে রাখা ওয়াইন গ্লাসে তার চুমুকের লিপস্টিক।    


আরও পাঁচ মিনিট আগে

দীপক কিছু বুঝে উঠবার আগেই মিতা বন্দুকের নলটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলে। মিতা যে সোফায় বসেছিল তার পিছনের দেওয়ালে রক্ত আর ঘিলুর ছিটে লেগে একাকার।

বিলু, বাবা ও মা

(হ-য-ব-র-ল থেকে Cross Posted)

বাবাঃ বিলু ব্যাটা দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছে। যখন দেখি, তখনই ক্রিকেট ব্যাট হাতে ধেই ধেই করছে। তাও যদি বুঝতাম দ্রাবিড়ের মতো টেকনিক ডেভেলপ করছে। পাঁড় আনাড়ির মতো ক্রস ব্যাটে খেলে। এদিকে পড়াশোনাও জলাঞ্জলি। ক্লাস সেভেনের অঙ্কে আর ফিজিক্সে ভদ্রলোকে ফেল করে? ব্যাটাকে এ্যারেস্ট করা উচিত। 

মাঃ কত করে বললাম, অঙ্কে একটা টিউশানিতে হবে না। বিপিনদার ছেলের তিনটে অঙ্ক মাস্টার ঘরে পড়িয়ে যান। একজন জ্যামিতি, একজন বীজগণিত, একজন পাটিগণিত। আমার কথা শুনলে না। বললে ছেলের ব্রেনে প্রেশার পড়বে। এখন সামলাও ঠ্যালা। দিদির ছেলে অঙ্কে মিনিমাম নব্বই পায় প্রত্যেকবার। আর আমার ছেলে... ছিঃ! লজ্জা! 

বাবাঃ ঠিক বলেছ। ব্যাটার পাড়ার পুজোয় নাটক করা আমি ঘুচোচ্ছি। এইসা প্যাঁদানি দেবো না...

নব্য বঙ্গ প্রেম

(ওমনিস্কোপ থেকে cross-posted)
রাত পৌনে এগারোটা বাজতেই বেবুলদা বৌদিকে ঘরে টেনে নিয়ে দরজায় খিল।

- “একটা সারপ্রাইজ আছে সোনা”

বৌদি তো অবাক, “এই রাত্রে আবার কিসের সারপ্রাইজ ?”

বেবুলদা মিউ মিউ করে কইলে, “ একটা, মস্ত ব্যাপার বয়ে এনেছি”

- “কী গো? লিলুয়া থেকে মেজপিসি বড়ি পাঠিয়েছে নাকি গো?”, বৌদি উত্‍সুক।

- “দ্যুত, একটা রোমান্টিক ইয়ে তৈরি করছি, আর কোথা থেকে নিয়ে এলে লিলুয়া আর বড়ি

পৃথিবী সৃষ্টির মুলকথা ও বাঙালি

  • একদিন। থুড়ি। সে সময় দিন ছিল না। সংখ্যা ছিল না। সমস্ত বলতে এত্তটুকু কনা; পরমাণুর চেয়েও ছোট; মামুলি একটা ব্যাপার।
    সেই মামুলি ব্যাপারের মধ্যে ছিল আজকের যাবতীয় সমস্ত কিছু, আজকের যতটুকু শক্তি তার সমস্তটুকু।  গ্যালাক্সিদের দল, তারা’দের ঘুর পাক, ডায়ণোসর, পিরামিড, মহেঞ্জদাড়ো, আপনার মর্নিং ওয়াক, মিনিবাসের ঘ্যাংর-ঘোর, বসের চেল্লানি, গিন্নির শপিং, কংগ্রেস-বিজেপি, উৎপাত-তবলা; সমস্ত।
    ওই এত্তটূকু দানার মধ্যে ছিলো অধুনা জিন্দগির যাবতীয় উৎপাত। তার বাইরে কিস্যুটি না, স্থান-কাল-পাত্র-বাপ্পি লাহিড়ী; কিস্যুটি না। ওই দানার পেটে রইলে সমস্ত সম্ভাবনা।  সহজ ভাষায় সর্ষে বাটা ইলিশের হাতছানি বুকে নিয়ে রয়েছিলো সেই দানাটি।

পাবলিক, কবি ও কবিতা

( okolkata থেকে cross-posted)
পাবলিক :
কি ? কবিতার বই কিনবো ? সে কি ? কিনলেই হলো নাকি? পড়বো কি করে ? গাইড বই কই ?ভূষণবাবুর টীকা-আলোচনা কই ? সুনীল-শ্রীজাত ব্লাফ মেরে গছিয়ে দেবেন তারপর কি সে সব মাল সাজিয়ে রাখবো? এই সেদিন ড্রয়িঙ রুমের শো-কেস’টাও দিলাম বেচে, আসলে বিপিন ভালো একটা অফার দিলে,এমনিতেই ঘুণ পড়বে মনে হচ্ছিলো ;দিলাম চালান করে আর কি। কাজেই ওই কাব্যির কেতাব যে সাজিয়ে রাখবো তারও উপায় নেই।
আরে মশাই, ছেলেবেলা থেকে দেখছি মাস্টার মশাই কবিতা পড়ে যান, শিরোনামের মানে খোলসা করে দেন,ভাব বুঝিয়ে দেন, বিশেষ লাইনগুলো আন্ডারলাইন করতে বলেন; এত কিছু করে তবে গিয়ে কবিতা’তে কি কাগের ঠ্যাং-বগের ঠ্যাং গপ্প আছে তা মালুম চলে। এরপরেও ছিলো সহায়িকা। এভাবেই তো কবিতা পড়তে শিখেছি, আউড়াতে শিখেছি। এ বয়সে এসে যদি বলেন এসব পদ্য পড়লেই বুঝে ফেলবো’ উঈদাউট মানবেন্দ্রবাবু বা দীপেনবাবু’স ক্লাস, তো আপনি খেপেছেন। আনন্দলোক দিন চলবে; চেতন ভগতের বাংলা অনুবাদ দিন চলবে, এমনকি সুনীল-শীর্ষেন্দুর প্রেমের গপ্প-গদ্যও চলবে, কিন্তু কবিতায় ইনভেষ্ট করতে বলবেন না প্লিজ।

Coolকাতা'র কলকাতা

(mmm dot tv থেকে cross-posted)



এপার ওপার

তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র কোনও এক কাজ নিয়ে ঢাকুরিয়া মোড়ে কাজের দিনে ভর দুপুরে রাস্তা পার হওয়া চাট্টিখানি বাত নয় রাস্তার ওপর দিয়ে অবিশ্যি ফুট-ব্রিজ চলে গিয়েছে কিন্তু ফুটপাথ ফুট-ব্রিজ ; বাঙ্গালির মত চমকিলা জাতির জন্যে নয় একটু ছিঁচকে এডভেঞ্চার না থাকলে লাইফ যে একাদশী
দেড় মিনিট দাঁড়ালে অবিশ্যি ট্র্যাফিক সিগন্যাল পালটে যাবে; জেব্রা ক্রসিং ধরে দিব্যি হেঁটে যাওয়া যাবেকিন্তু দেড় মিনিট কি মাগনায় আসে ? উসেইন বোল্ট ওইটুকু সময়ে গোটা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা পায়চারি করে আসতে পারেন 
মাদুলি ছুঁয়ে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম একটা মিনিবাসকে ফাঁকি দিয়ে টুক করে রাস্তার মাঝ খান পর্যন্ত এসে পড়েছি কিন্তু তার পরেও রইলাম ফেঁসে  অটো-রিক্সা আর মিনিবাসের খপ্পরে আটকে রইলাম রাস্তার মধ্যিখানে শুধু আমি আর গাড়ির সমুদ্দুর বাস-ট্যাক্সি-অটোর ভিড়ে ফোঁকর খুঁজতে খুঁজতে হয়রান এমন সময় কে যেন হঠ করে আমার ডান হাত ধরে ফেললে দেখলাম এক বছর পঞ্চাশের ট্র্যাফিক পুলিশ
ঘাবড়ে গেলাম আমার আবার পুলিশ দেখলেই মুখ থেকে হিন্দি বেরিয়ে আসে
-           “ কেয়া করতা স্যার ? জলদি থা,ইস লিয়ে সিগন্যাল গ্রিন কে আগেই আমি ক্রস করতা থা...”
-           “ চিন্তার কিছু নেই দাদু, আমি আপনাকে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছিবলে পুলিশ-দাদা সত্যি সত্যি আমার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলেন
কিন্তু আমি তো বম্কে গেলাম আধবুড়ো পুলিশ; আমার মত ইয়াংম্যানকে বলে দাদু ? পুলিশ বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি ? আমি সরোষে জানতে চাইলাম,     “ এটা কি হল কাকু ? হাত ধরলেন, সেটা না হয় ইগ্নোর করলাম কিন্তু তাই বলে আমায় আপনি দাদু বলেন কোন সাহসে?”
পুলিস-কাকা গা জ্বলিয়ে দেওয়া মিচকি হাসি হেসে কানের কাছে মুখ এনে বিশ্রী ভঙ্গিমায় বললেন - “ আরে ছিঃ ছিঃ দাদু, আপনি আমায় কাকু বলে লজ্জা দেবেন না আপনার বয়স সত্তর আশি তো হবেইতাই তো আপনি ফুট ব্রিজের সিঁড়ি ভাঙতে পারেন না তাছাড়া আপনার চোখে ছানি; তাই লাল সিগন্যালটাও দেখতে পারেননি খামোখা গাড়িঘোড়া মাঝে এই বৃদ্ধ বয়সে একটা বিশ্রী দুর্ঘটনা ঘটাবেন তাই ভাবলাম আপনাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিই পুলিশদের মনে কি ইয়ে থাকতে নেই দাদু ?”
-“ ইয়ে মানে সরি কাকু, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে ফেললাম
- “ভাগ ব্যাটা, এই তোদের মত আহাম্মকদের জন্যেই ক্যালকাটার এমন ন্যাজ-কাটা অবস্থা




বাস-মতি 

আমার মিনিবাস ভারি পছন্দের। একটা ছিমছাম ব্যাপার। সরকারি বাসের মত আলখাল্লা নয়, প্রাইভেট বাসের মত বেঢপ নয়, বাতানুকূল বাসের মত বুর্জোয়া নয়। রাস্তা দিয়ে এমন চনমনে মেজাজে চলা ফেরা করে যে হালকা ভালো না বেসে লাভ নেই। চেহারাতে একটা বেশ ইস্টবেঙ্গল গোছের ব্যাপার আছে।
সব চেয়ে মায়াবী হন এই মিনিবাসগুলির কন্ডাক্টর দাদারা। বাস-স্ট্যান্ড দাঁড়িয়ে থাকলে এরা এমন শ্বশুর আদরে ডেকে নেন যে মাঝে মাঝে মনে হয় যে দরকার থাকলেও যাব না বেহালা; অমন মিষ্টি ডাকে সাড়া দিয়ে বরং চলে যাই হাওড়া বা নাগেরবাজার। বাসে একবার উঠে পড়লে অবিশ্যি জামাই-আদরে সামান্য ভাঁটা পড়ে। একবার এক কন্ডাক্টর দাদাকে বললাম দাদা, তারাতলা এলে একটু হাঁক মেরে দেবেন; চোখ লেগে আসছে কি নাকন্ডাক্টর দাদার সপাট উত্তর, “ চোখ বুজবেন কেন ? এটা কি বাস না ক্যাঁওড়াতলা ?”
গত সন্ধ্যেয় গরিয়াহাটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছি যাদবপুরের দিকে যাব বলে।  হেলতে-দুলতে একটি মিনিবাস সহাস্য মুখে হাজির। কন্ডাক্টর-দাদা হাফ-বাদুড় হয়ে ফুট-বোর্ডে খাবি খাচ্ছেন আর নির্ভীক কণ্ঠে গেয়ে চলেছেন ঢাকুরিয়া, সেলিমপুর, যাদবপুর- খালি বাস খালি বাস; উঠে পড়ুন, উঠে পড়ুন। এই ঢাকুরিয়া, সেলিমপুর, যাদবপুর...এই খালি বাস
জিজ্ঞেস করতেই হল ভায়া এ তো ভিড়ের ঠেলায় তোমারই দেখছি বাসে দাঁড়াবার  জায়গা নেই; বাস খালি বলছ কোন সাহসে ?”
কন্ডাক্টর ফিক্‌ করে হেসে আওয়াজ ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন, “ আরে দাদা সেক্স আর ভক্তির মত মিনিবাসের ভেতরের জায়গাও মনের ব্যাপার। মনে সন্দেহ থাকলে মনে হবে ভিড়- এই যেমন আপনার মনে হচ্ছে। আবার অন্যদিকে আপনার মন চাইলেই দেখবেন যে বাসের ভেতর এতো জায়গা যে ওয়ান বেডরুম  ফ্ল্যাট বাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে। উঠে পড়ুন, উঠে পড়ুন...এই ঢাকুরিয়া, সেলিমপুর, যাদবপুর...ফাঁকা বাস...ফাঁকা বাস...উঠে পড়ুন...উঠে পড়ুন 

বিগ বস্‌ ও কলকাতা 

ধরুন। কোলকাতা শহর যদি বিগ্‌বস’য়ের ঘর হত। ঘরের সদস্যরা হতেন এই শহরেরই ছোট-বড় রকমারি টুকরো গুলো।  বিগ্‌ বসের কণ্ঠস্বর হিসেবে চার্‌ণকের ভুত বা মহাকাল’কে প্রক্সি দিতে হত অবিশ্যি। গোটা খেল চলত হাজার দুই বছর জুড়ে।
বহু সদস্য নিয়ে শুরু হত বিগবসের খেল। শ্রীযুক্ত সুতনুটি, শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বর, মিস্‌ ভিক্টোরিয়ার মত তাবড় খেলোয়াড়দের সাথে রইতেন শ্রীমান দিলখুশা রেস্টুরেন্ট বা কচি মল’য়ের মত খুচরো খিলাড়িরা। যুক্তি-তক্ক-যুদ্ধ-বদমায়েশিতে জমাট খেল।
একদিকে মিস্টার হাওড়া ব্রিজ দেমাক দেখায় তো অন্যদিকে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি নিয়ে ঢুকে শো মাতান বিদ্যাসাগর-ব্রিজ’বাবু।  কখন কখন আধুনিক সেলিব্রিটীর সাথে ঝগড়া লাগে পোড় খাওয়া মিনসেদের; এই যেমন ঝক্‌ঝকে নবীনা মিস সি.সি.ডি.’য়ের সঙ্গে ঠিক কফি-হাউজ-কুমার পেরে উঠছেন না। মেট্রো সাহেবের ধাক্কায় ট্রাম-মহাশয় প্রায় এলিমিনেট হয়ে যেতে বসেছেন।
তবে “এলিমিনেট” হয়ে যাওয়া এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। অমন খুচ্‌খাচ ব্যাপার ঘটেই থাকে। ফ্লাইওভারের খপ্পরে রাস্তা, প্রমোটারের মুঠোয় পুকুর, পিত্‌জার কবলে ডুবো তেলের পরোটা, কার্বাইডের চক্করে আদত মিষ্টি আম- কত কি এলিমিনেট হয়ে গেল। বিপ্লবের হাতছানিতে একদল চমৎকার ছেলে-মেয়ের দল এ শহর থেকে এলিমিনেট হয়ে গেলেন। কলেজ রাজনীতির চক্করে  কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুন-মান এলিমিনেট হয়ে গেল। “এলিমিনেশন্‌” মহাজাগতিক বিগ্‌বস’য়ের জরুরি অঙ্গ বিশেষ।
তবে সমস্ত “এলিমিনেশন” বাদ দিয়ে যারা রয়ে গেলেন, তাদের নিয়েই এই বিগ্‌বসিয় কোলকাতা। সমস্ত নামতা পড়া শেষে হাতে পড়ে থাকা পেন্সিলের মতই কলেজ স্ট্রিট, রাজারহাট, কে সি দাসের স্পঞ্জ রসগোল্লা, আমিনিয়ার চিকেন চাপ্‌ সহ কোলকাতা সহজেই টিকে থাকবে।
তবে খেলার নিয়মেই সকলকে এলিমিনেট হতেই হবে। নিয়ম ইজ্‌ নিয়ম। একসময় হয়তবা গোটা হুগলী নদীটাই এলিমিনেট হয়ে যাবে। কোলকাতা শহরটাই  বেমালুম মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ভিক্টোরিয়ার বুকে বইবে জংলি নদী, পার্ক স্ট্রিটের বুকে খেলবে ভাল্লুকের দল। এখন যেখানের রাইটার্স, সেখানে জঙ্গল হবে সব চেয়ে ঘন; জঙ্গল কেটে যে জমি বেরিয়ে কোলকাতা সেজেছিল- জঙ্গল তাকে ফের আপন করে নেবে। বাইপাস্‌ জুড়ে হয়ত রইবে টিলাদের সারি।
হয়ত সেদিন বাংলার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তাই কলকাতার নটে গাছ মুড়িয়েছেসেদিনের কলকাতার জংগলে রইবে শুধু পুরনো চারটি প্রাণ পড়ে রইবেন। থুড়ি। প্রাণ নয়, ভুত।
চারটি ভুত। ওই ভবিষ্যতের কলিকাতার জঙ্গলে। চারণ্‌ক চু-কিত্‌-কিত্‌ খেলে চলবেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে; সত্যজিৎ মন দিয়ে ‘স্কোর’ টুকে রাখবেন। রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে বিরক্তির সাথে বলে উঠবেন “ তোরা গোলমাল করা বন্ধ কর রে বাপ্‌রা।  কিছুক্ষণ যে মনের সুখে খোনা গলায় জীবনমুখী গাইব, তোদের পাল্লায় পড়ে সে উপায়ও আমার নেই” । 

কলকাতার ফুটপাথ

পৃথিবীতে কেউ যদি অন্নপূর্ণা হয়ে থাকেন, তবে তিনি হলেন কলকাতার ফুটপাথ। কি নেই তাঁর বুকে ? গৃহস্থালি, উনুন, আড্ডা, দোকান-বাজার যাবতীয় সমস্ত কিছু।

বালিগঞ্জ থেকে ঢাকুরিয়ার তিন মাইল হাঁটলেই বোঝা যাবে  যে কত বান্দা কে বুকে টেনে নিচ্ছেন ফুটপাথ দেবী; প্রত্যেকের চাওয়া-পাওয়ার দিকে কি স্নেহময় নজর তাঁর।
বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছের ফুটপাথের ওপরে ট্যাক্সিদের বিশ্রামখানা। রাস্তায় নো-পার্কিং হতে পারে, ফুটপাথের ব্যাপারে তো আর কেউ দিব্যি দেয়নি।

আর একটু এগিয়ে গেলে, নামজাদা কোয়ালিটি রেস্টুরেন্টয়ের ঝকঝকে আদরের পাশ ঘেঁষে-  দড়মা, পলিথিন, একটি কড়াই, দুটি বাটি, একটি উনুন, একটা মৃত তোশক, তিনটি বাচ্চা ও দুইজন অকাল বৃদ্ধ সমৃদ্ধ সংসার। ফুটপাথের বুকেই- ল্যাম্পপোস্টের গার্জেন-গিরিতে। কোয়ালিটি থেকে বেরিয়ে এসে নাক কুঁচকে এদের টপকে রাস্তায় ঝাঁপ দেওয়া।

এখান থেকে খানিক হাঁটলে গরিয়াহাট মোড়। এখানের ফুটপাথে সাউথ সিটি মলয়ের চেয়েও বেশি সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে। হকার-স্বর্গ। পাপোষ টূ ফুলদানি টু চোরাই ডিভিডি টু  এগরোল টু বাঘের লেজে বোলতা কামড়ালে উপশমের মলম; সমস্ত রয়েছে এখানে। কলকাতা শপ্‌স এট গরিয়াহাট। কাহেকা ফুটপাথ ? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ওপেন এয়ার শপিং কমপ্লেক্স।

আড্ডা, ক্যারম, দাবা, চা, মদ, খিস্তি, ক্যালানি, ঘেমো গা, ফিনফিনে শাড়ি সমস্ত মুড়ে রেখেছে শহরের সমস্ত ফুটপাথগুলো। কোনও কোনও জায়গায় ফুটপাথ ঘেঁষা কর্পোরেশনের কলের জলে সাবান ফেনার ফিনকি ছুটিয়ে জনস্নান চলে।  পানের পিক্‌ থেকে ছোট বাথরুম, কলকাতার হয়ে তাঁর ফুটপাথগুলো হজম করে নিচ্ছে আমাদের ফালতু-বেফালতু যত যা কিছু আছে।

এই যাবতীয় ব্যাস্ততার মাঝে ফুটপাথ-দেবী একটা মামুলি কাজই ঠিক সামাল দিয়ে উঠতে পারেন না; পথ চলতি মানুষকে নিশ্চিন্তে পথ হাঁটার জায়গাটুকু দেওয়া হয়ে ওঠেনা। কলকাতা ফুটপাথের পাথটুকু বোধ হয় আর এ জন্মে ফুট-যোগ্য হবে না।

ফুচকা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি না জানিনা। তবে কলকাতার ফুচকা অন্য কোথাও সহজে জুটবে না সেটা নিশ্চিত। গন্ধরাজ লেবুর রস ছড়িয়ে পৃথিবীর অন্য কোথাও ফুচকা পরিবেশন হয় না বলেই আমার বিশ্বাস।   নুন,কাঁচা লংকা বাটা, সেদ্ধ ছোলা, অল্প তেঁতুল জল, অল্প কুচোনো পেঁয়াজ দিয়ে দরদ দিয়ে মাখা আলু সেদ্ধ। চুরমুরের বুক চিরে তাঁর গলা পর্যন্ত আলু মাখা ভরে, তেঁতুল জলে টইটুম্বুর করে;  শাল পাতার ভাঁজে ছেড়ে দেওয়া। ফুচকা থাকতে পি সি সরকারকেই বাংলার সেরা ম্যাজিশিয়ান বলার কোন মানে হয় না।

ফুচকা অতি রেওয়াজি ব্যাপার। ওইসব দই-ফুচকা বা মিষ্টি ফুচকা হচ্ছে বে-ফালতু ন্যাকামো মাত্র। আস্‌লি ফুচকা হবে টকে, ঝালে , নুনে পরিপূর্ণ এটম বোমা। চার নম্বর ফুচকা মুখের ভিতর চালান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝালের দাপটে যদি নাকের জল চোখের জল মিশে খতরনাক হালত না হয় তো আপনার ফুচকা খাওয়া বৃথা।

আদত ফুচকা খাইয়ে মাত্রই হবেন শুচিবাইগ্রস্ত।
আহা:, নুন সামান্য বেশিছোলা বেশি ঢেলেছ বাবা রামলোচনফুচকার জল ঠিক করে ভরছনা কেন হে ?”আলু মাখাটা ঠিক স্মুদ্‌ হয়নিএমন গোছের অভিমান, অনুযোগ,আবদার একটানা চলবে; এইটেই হচ্ছে ফুচকা খাওয়ার রীতি। এবং ফুচকা ভক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উপাদেয় অংশটি হচ্ছে শেষের ফাউ ফুচকাটি; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সপাট মেজাজে চেয়ে নেওয়া এইবার একটা ফাউ ফুচকা দিজিয়ে। উইদাঊট তেঁতুল জল। আউর বেশি করকে বিট নুন ছড়িয়ে দেনা। কেমন ?”

ফুচকা ঘটিত সেন্টিমেন্টের তীব্রতম নিদর্শন আমার কলেজ বন্ধু দীপক। কলেজের প্রথম হপ্তায় যখন আমরা মেয়েদের দিকে আড় চোখে তাকাতে গিয়েও ভির্মি খাচ্ছি, স্মার্ট চ্যাপ দীপক দুম করে একটি প্রেমিকা জোগাড় করে ফেললে। কিন্তু আমাদের ঈর্ষা দানা বাঁধার আগেই, দু দিনের মাথায় দীপক জানালে যে প্রেম খতম। আমার অবাক।
-      প্রেম ভেঙ্গে গেল ? কেন ? ঈশানী লেঙ্গি মারলে ?” , আমরা জানতে চাইলাম।
-      এমন সোনার টুকরো ছেলেকে লেঙ্গি মারবে ? পাগল না কি ? আমি কেটে পড়লাম। মান থাকতে সরে পড়লাম আর কি
-      কেন ? কেন ?”
-        আরে এই ঈশানী মেয়েটা ভারি গোলমেলে
-      গোলমেলে কেন ?”
-      কাল কলেজ স্কোয়ারে গপ্প-গুজব করে বেরবার মুখে বললাম চল ফুচকা খাই। ঈশানী বললে সে ফুচকা খায় না, মেদবৃদ্ধি ও অম্বলের ভয়ে। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে আমি চুক্কি দিয়ে কেটে পড়লাম। আর জীবনে আমি ইশানি-মুখো হচ্ছি না। ফুচকা না খাওয়া প্রেমিকা থাকা আর পিকনিক করতে ধাপার মাঠে যাওয়া একই ব্যাপার

কলকাতা Goodies

গুডিজ্‌’য়ের যুগ। আই-পি-এল গুডিজ্‌ অর্থাৎ আই-পি-ছাপ্পা মারা টিশার্ট, রিস্ট ব্যান্ড, তাবিজ, ছাতা এমন কত কিছু। তেমনি ফুটবল ক্লাবের গুডিজ্‌, পুজো গুডিজ্‌, অমুন সিনেমার গুডিজ্‌ , এমন কি রাজনৈতিক দলেরও গুডিজ্‌ বিলি করার চল হয়েছে। বিপণনের ভারি ধারালো অস্ত্র, পাবলিক নাকি বেশ খায় এমন সব গুডিজ্‌ মোয়া।
তা কোলকাতা কে যদি রে রে শব্দে ‘মার্কেট’ করতে হয়, তবে গুডিজ্‌ হিসেবে কোন কোন বস্তু কে রাখা যায় ? এই ব্লগারের পছন্দের সেরা দশ খানা কোলকাতা গুডিজ্‌ সাজিয়ে দেয়া হল –
১০। রবীন্দ্রনাথের কোটেশন লেখা চা খাওয়ার মাটির ভাঁড় । চা, ফুলুরি আর ওজনদার রবীন্দ্রসঙ্গীতের মেলবন্ধনে একটা বেশ ইয়েময় ইয়ে আছে।
  ৯। হাওড়া ব্রিজের স্কেচ্‌ আঁকা গামছা। গ্রীষ্মের সন্ধ্যেয় অফিস ফেরত; এ গামছা ভিজিয়ে গা মুছলে মনে হবে  যে গায়ে হুগলী নদীর হাওয়া কুলকুল খেলা করা যাচ্ছে।
  ৮। “আমাদের দাবি মানতে হবে” লেখা ছেলেদের হাফ পাঞ্জাবি অথবা মেয়েদের কুর্তা। পলিটিকাল হুমকি ছাড়া কোলকাতা ? তাজমহল ছাড়া শাহজাহান ? ধুর।   
  ৭। “ অফ-সাইড ছাড়া আমাদের কোন ভগবান নেই” লেখা ক্রিকেট ব্যাট। দাদা; দুলালের তাল মিছরির পর এ বাংলার সব চেয়ে বড় ব্র্যান্ড।   
  ৬। মিছিলে হাঁকার স্লোগান-ডিকশনারি; অন্তত সতেরটি ভাষায়। ফর বেটার ব্লাড সার্কুলেশন অ্যান্ড স্ট্রঙ্গার মেজাজ।   
  ৫ভিক্টোরিয়ার ছবি আঁকা শাল পাতার থালা। সাহেবি আর দিশি মেজাজ মিলে গেলে তবেই না ক্যালকাটা স্যার।  
  ৪। রাবিন্দ্রিক ফল্‌স নাইলনের দাড়ি, কচিকাঁচাদের অনুপ্রেরণার জন্যে। ছেলেবেলা থেকেই যদি ডেঁপো কবিতা না লিখতে পারে, তবে বড় হয়ে ট্যাগোর বলে চালাকি করবে কি করে।
  ৩। “ আমি কলকাতার রসগোল্লা” লেখা নামাবলী। কারণ রসগোল্লাই আমদের আদত জীবন মন্ত্র।
  ২। “ করব লড়ব জিতব” লেখা মাঙ্কি টুপি। মাঙ্কি টুপির ম্যাসকুলিন এপিলটা বাঙালি প্রোজেক্ট না করলে কে করবে ?  
  ১।  ইলিশ মাছের আঁকারের ও চেহারার বালিশ। ঢেঁকুরে ও ঘুমে; এই দুয়ে মিলে তবেই না কোলকাতা।        



ছোটমাম্যাক্সিমাম

ছোটমামাঃ   ক্যালক্যাটা ক্রমশ ক্যাডাভ্যারাস হয়ে যাচ্ছে পচা।
আমিঃ       তুমি বলছ না হুইস্কি বলছে ?
ছোটমামাঃ   জয়েন্ট ওপিনিয়ন।
আমিঃ       খুলে বলা হোক জাহাঁপনা।
ছোটমামাঃ   অনাদির মোগলাই খোলতাই হচ্ছে না। ক্যাম্পারির রোল আহামরি হচ্ছে না। বেদুইন কে আর কুইন অফ স্ন্যাক্স বলে চালানো চলে না। ছেলে-মেয়েরা রুমালি-চিকেন চাপয়ের বদলে স্যান্ডউইচ গিলছে। আমরা গোল্লায় যাচ্ছি পচা। জেনুইন কান্না পায় মাঝে মাঝে।
আমিঃ       এ তোমার পেসিমিজ্‌ম মামা। দেলখোসার কবিরাজি এখনও অপূর্ব। সেদিন যে দাস কেবিনে কাটলেট খাওয়ালে, পিওর বিউটি। আর তুমি তো জানোই, তোমার চ্যালারা, অর্থাৎ আমরা এখনও সাউথ পোলকে প্রেফার করি; সিসিডি নয়।
ছোটমামাঃ   বাট ফর হাউ লঙ? হাতি বাগানের বাঙালি হোটেলের মুর্গি কষা আর কতদিন পার্ক স্ট্রিটের চিকেন হনলুলুর সঙ্গে ফাইট করবে বাওয়া ? সবই যুগের হাওয়া। কালচার কি আর বাঙালির মত হাভাতে জাতি মেইন্টেন করতে পারে ? দুপুর বেলা খালি ঘুমায়েগা আর ভুঁড়ি বানায়েগা। আমার মত লোকের ভুল সময়ে জন্ম হয়েছে রে। প্রি-ইন্ডিপেন্ডেন্স পিরিয়ডে জন্মালে তাও  সুভাষ বোস কে হেল্প করতে পারতাম। আর এখন কি করছি ? ফাইল নিয়ে কালোয়াতি।
আমিঃ       অর্থাৎ তুমি বলছ কোলকাতা পড়তির দিকে ?
ছোটমামাঃ   পড়তি নয় ? প্রেম করবি কর চিলেকোঠায়, তা নয়- সিনেমা হলের কর্নার সিট। আঁতলামো করবি কর রবিন্দ্রসদনে, তা নয় ফেসবুকে লেকচার ঝাড়া। কোথায় সপ্তপদী কোথায় লে হালুয়া গোছের সিনেমা। কলেজ স্ট্রিট নাকি নট রিয়েলি কুল লাইক ফ্লিপকার্টএমনকি খিস্তিও বাঙালি আমেরিকা থেকে ধার করছে। এটা অধঃপতন নয় ?
আমিঃ              উপায় কি ?
ছোটমামাঃ   উপায় আছে।
আমিঃ       ব্যক্ত করুন গুরুদেব, আপনার পবিত্র সলিউশন।
ছোটমামাঃ   আমাদের বিধানসভা শিফট করে করে কফি হাউসে নিয়ে এলেই ল্যাঠা চুকে যায়। আর তার পাশাপাশি রাইটার্সের যাবতীয় কাজকর্ম চলুক নলবনে; ওপেন এয়ারে। মন্ত্রী ভায়াদের ব্রেনে  চাট্টি হাওয়া খেলবে, বুকে লাগবে আলোর সুড়সুড়ি। দেখবি রিফর্মসয়ের বন্যা বয়ে যাবে। ভুলে যাস না, চারনক্‌ গাছ তলায় বসে রাজ্যপাট চালিয়ে ক্যালক্যাটা পত্তন করেছিলেন।  কনভেন্‌সন্‌স না ভাঙলে কলকাতার কোন ফিউচার নেই রে।  
আমিঃ       তুমি গত জন্মে নেপোলিয়ন ছিলে বোধ হয় মামা।
ছোটমামাঃ   ঠ্যাং পুল করছিস ব্যাটা ইয়ং আহাম্মক ? যা ভাগ, তোদের মত রাস্কেলদের সঙ্গে গপ্প জুড়তে যাওয়া মানেই ওয়েস্ট অফ টাইম।  

কলকাতাইয়া ভালোবাসা

কালীঘাট থেকে কালীঘাটা। কালীঘাটা থেকে কলিকাতা। তারপর ক্যালিকাটের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কলিকাতা থেকে ক্যালক্যাটা। গপ্প বটে। ইতিহাস আছে, অ্যাকশন আছে , বাতেলা আছে, সাহেব-সুবোর রোয়াব আছে। বড়বাজারের ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলেন বরদাচরণ।
থাক না পলিউশন, তবু তো লেক মার্কেটে ফুলের গন্ধ আর গড়িয়াহাটে কাতলার গন্ধ মিলে পরিবেশ ম-ম হয়ে আছে। যতই লোকে আলসে শহর বলে গাল পারুক, বাইরে থেকে লাখ লাখ মানুষ এসে রুজি-রুটি কামিয়ে তো যাচ্ছে। যতই লোকে ট্রাম নিয়ে ঠাট্টা করুন, ট্র্যাডিশনে এ শহরের ধারে কাছে কেউ লাগতে পারে ? কেষ্ট ঠাকুরের বৃন্দাবন ছিল বটে, কিন্তু আধুনিক কেষ্টদের আদত লীলাক্ষেত্র যে এ শহরেরই নলবনে রয়েছে।  এ সব ভাবতে ভাবতে বরদাচরণ মিষ্টি-মধুর সুরে আনমনা হয়ে জান। ফিসফিসিয়ে গেয়ে ওঠেন “ এমন শহর কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল সিটি’র রানী ডিয়ার কোলকাতাকে চুমি”। বড়বাজারের ভিড় মাঝে মাঝে বরদাচরণ কে ধাক্কা দিয়ে যায়, বরদা পরোয়া করেন না। মাতালের মত সুখে দুলে দুলে হাঁটতে থাকেন তিনি, তবে এ মাতলামি মদের নয়, এ শহরের।

গড়িয়াহাটের ট্রাম দেখে লাফিয়ে উঠে পড়লেন বরদা। কন্ডাক্টটার ভাড়া চাইতে পকেট হাতড়ে টের পেলেন মানিব্যাগ হাওয়া – বড়বাজারের কোনও ব্যাটাচ্ছেলে পকেট মেরে দিয়েছে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ’য়ের মোরে ট্রাম থেকে নেমে যেতে হল বরদাচরনকে। ট্রাম থেকে নামার সময় তাঁর মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো; “ হারামজাদা শহর শালা” ।

উৎসবের শহর

কোলকাতা উৎসবের শহর।
পুজোর উৎসব। ইদের উৎসব। পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসব।  
ফিল্মের উৎসব। বইয়ের উৎসব।
ক্রিকেটের মাতাল হয়ে যাওয়া।
ভোটে জেতার তাসা পার্টি।
নলবনে, ভিক্টোরিয়ায় দৈনিক প্রেম-উৎসব।
ফুটবল গ্যালারিতে খিস্তি উৎসব বা ক্ষণিকের ইট ছোড়াছুড়ি উৎসব।

সিটি অফ জয়। জয় গোস্বামীর উৎসব। সুনীল, শক্তি, শঙ্খ’র উৎসব।

সমস্ত উৎসব ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায় যখন ইসমাইল ও মন্টু ভোরের বাবুঘাটে ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে গঙ্গায়। আট-নয় বছরের উলঙ্গ শরীরের দাপাদাপিতে পবিত্র হয় গঙ্গা। ওদের হাসিতে রোদ জেল্লা পায়। ওদের সাঁতার শেখা বোধ হয় মায়ের পেটে থাকতে। ওরা বিভিন্ন স্ট্রোকের কেতাবি নাম জানে না, শুধু দুই বন্ধু মনের সুখে গঙ্গার বুক চিরে চলে হই হই শব্দে। কালো শরীর দুটো সপাট হাসির ঝলকানি তে ঝলসে ওঠে। ওদের ভাষা বাংলা, কিন্তু সে বাংলা স্কুলে শেখা ভদ্রলোকের বাংলা নয়। কিন্তু কোন স্কুল কবে পবিত্রতা ছাত্রদের গলায় গুঁজে দিতে পেরেছে ?
কোলকাতার উৎসবের জলসায় বিসমিল্লা এই ইসমাইল-মন্টুর গঙ্গা স্নান’ই। এই মুহূর্তগুলোই কোলকাতাকে ভালো রাখে, স্নেহে রাখে, আদরে রাখে।