Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2016

আলু, পাঁঠা, লাউ

১ "অ্যালকেমি না জানলে আলুকে আলুপোস্তয় কনভার্ট করা সম্ভব নয়"। ২ - পাঁঠা আর মাটন এক নয়। - হুঁ? ওহ। পাঁঠা জ্যান্ত! মাটন নয়। - প্রিসাইস হল না। - তবে? - মাটন উড়ন্ত। পাঁঠা নয়। ৩ - তরকারিতে লাউ? এহ্ হে। লাউসি। - লাউ? আচ্ছা বউ, তুমি লাউ আলাউ করো না জেনেও আমি লাউ দেব রান্নায়? - লাউ আছে। লাউড অ্যান্ড ক্লীয়ার। পোলাউয়ের সাথে লাউ। এহ্। ম্যাগোহ্। - বিশ্বাস করো, এ তরকারি তে লাউ নেই। তবে আই লাউ ইউ। - কেলাউন কোথাকার। মিথ্যে কথা বলছ। - মিথ্যে? আমি? দরকার হলে লাউ ডিটেক্টর টেস্টে বসতে আমি রাজি।

নেতা ও জমিদার

- নেতা, কথায় কথায় কীসের এত প্রতিবাদ তোমাদের? - জমিদারমশাই, প্রতিবাদ কি আর সাধে করি? ক্ষেতে জল নেই, পেটে দানা নেই। আমাদের দরকার খালের। আপনার দাদুর মূর্তি আপনি যে টাকায় বানাবেন, তা'তে অন্তত দশটা খাল খুঁড়ে ফেলা যাবে। - তোমরা বড় পেছন পাকা। ফেসবুক পেয়ে সাপের পাঁচ পা দেখেছে। নিজের মাথাও গেছে, আর পাঁচটা লোকের মাথাও চিবিয়ে মরলে। - দেখুন, খালি পেট কার্বাইডের ডিপো। পিছন না পেকে উপায় নেই। - আমার দাদু, ঈশ্বর রায়বাহাদুর শিবরাম হালদারের পত্তন করা এই গ্রাম। তার একটা আড়াই মানুষি মূর্তি বানানো নিয়ে তোমরা এত কেচ্ছা করবে? দূর দূর থেকে মানুষ এসে সে মূর্তি দেখে যাবে। গাঁয়ের সুনাম করবে। তা সহ্য হচ্ছে না? তখন থেকে খালি খাল খাল করে খাল খিঁচে নিলে। উফ। - জমিদারবাবু। করের টাকা দিয়ে ও মূর্তি গড়া পাপ হবে।  খাল না হয়ে পরে হবে'খন। ও টাকা আপনি জমিদারির কাজে খরচ করুন। মানুষের দরকারে খরচ করুন। মূর্তি গড়লে প্রতিবাদ হবেই। - জ্বালিয়ে মারলে। ঠিক আছে। মূর্তি হবে না। ও টাকা প্রজা স্বার্থেই ব্যয় হবে। - কথা দিচ্ছেন? - যদুনাথ হালদার কথার খেলাপ করে না। এ টাকা আমি প্রজাদের পিছনেই ঢালব। খাওয়ার চেয়েও দরকারি কী জানো

অসোয়াস্তি

- ভাই পলাশ। - কী ব্যাপার দাদা? - শরীরটা কেমন করছে। - সে কী দাদা, কাজের প্রেশার? - ফাইলের স্তুপ তো দেখতেই পাচ্ছ ভাই। তবে তার জন্য নয়। - জ্বর জ্বর? - না। বুকে চিনচিন। - হার্ট? - অ্যাটাক ফ্যাটাক না। - বদহজম? - খানিকটা। - ইনো দেবো? আমার ড্রয়ারে আছে বোধ হয়। - ওতে হবে না ভাই। এ বুকজ্বালার নেচার অন্য। - কীরকম? - মোবাইলে ইন্টারনেট প্যাকটা শেষ হয়ে গেছে। - তার জন্য বুক চিনচিন? - আসলে অনেকক্ষণ ধরে অনেকটা ক্রিটিসিজম জমে দলা পাকিয়ে আছে বুকের কাছটায়। এদিকে অফিস পিসিতেও ফেসবুক ব্লক করা। - সে কী! - তোমার তো জিওর সিম। খোলামকুচি। টিথারিংয়ে ছড়িয়ে দাও। আমি একটু লগ ইন করি। নয়তো হাল দেখেছো তো, ডিসেম্বরেও ঘামছি।

ষোলোর শেষে

- শেষ। - শেষ। - স্যাট্ করে এলো...। - আর ফ্যাট্  করে চলে গেল। - মাইরি। - রিজোলিউশন? - ভুঁড়ি কে এক্সেপ্ট করতে শিখব। - এটা রিজোলিউশন? - দায়সারা মেনে নেওয়া নয়। ভালোবাসব। পরিচর্যা করব। - ভুঁড়ির? - মাইরি। যেটুকু আছে, সেটুকুর সঙ্গে সেন্স অফ অ্যচিভমেন্ট মিশিয়ে দিতে না পারলে আর করলামটা কী। - তা অবিশ্যি ঠিক। আমিও ভাবছি প্রমোশন না পাওয়াটা সেলিব্রেট করব। - প্রমোশন পেয়ে কেউ ইতিহাস বইতে ঢুকতে পেরেছে? কখনও পড়েছিস যে দু'হাজার বত্রিশ বিসিতে কেউ ডাবল প্রমোশন পেয়ে ব্রাঞ্চ হেড হয়েছে? - এগজ্যাক্টলি। প্রমোশন রিজেক্ট করলে স্কচ খাব। - প্রেমটেমের ব্যাপারে কিছু ভেবেছিস? - সতেরোয়? প্রীতুর আশা এ বছর ত্যাগ করব। - জিন্তা? - ওহ। তুই তো আবার সারনেম জুড়ে ডাকিস। - নতুন কেউ? এবারেও কি মুম্বই? - নাহ। অদ্বিতীয়া দাসগুপ্ত। অফিসে নতুন এসেছে। - তোর কলজে আছে? - কলেজে থাকতে ছিল। তবে দেখি। সতেরোয় কিন্তু বেশ একটা ফীলগুড ওয়েদারের আভাস পাচ্ছি। - ষোলোর শুরুতেও তাই বলেছিলি ভাই। - এক বছর আগের আমি তো শিশু রে। ও বয়সে জাজমেন্টে স্ট্রেন্থ থাকে না। - হ্যাঁ রে...। - হুঁ? - কিছুতেই কিছু না, না? - ছাদ ব্যাপারটাক

চিঠি

একবার হয়েছে কী, এক বদখত চিঠি একের পর এক মানুষকে দলা পাকিয়ে ওয়েস্টমানুষ বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলছিল। দিব্যি চলছিল। দলা পাকাও আর ছুঁড়ে ফেলো। দলা পাকাও আর ছুঁড়ে ফেলো। গোটা ঘর লাশে পরিপূর্ণ। এমন সময় চিঠির নজরে এলো এক ভদ্রলোক। তিনি কাকভেজা হয়ে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে। কাঁধে অফিস ফেরতা ব্যাগ, মুখে "মা কই, মা কই" বিহ্বলতা। চিঠি তাকে সযত্নে ভাঁজ করে সুকুমার সমগ্রের মাঝে রেখে দিলে।

ক্লিওপেট্রা

- এইয্যো। শুনুন। - আমায় ডাকলেন ম্যাডাম? - আপনার পিছনে আছে বলতে ওই গোবেচারি ল্যাম্পোস্ট। আপনিও যে গোবেচারি নন তা অবশ্য বলছি না, তবে ল্যাম্পপোস্ট আদৌ নন। - কোনও দরকার আছে? ম্যাডাম? - সে কী! দরকার আমার? - মা...মানে? - অমন ঘুরঘুর করছেন। পিছন পিছন। সেই কবে থেকে। আর দরকার নাকি আমার! বোঝো! - আমি কিছুই বুঝছি না। - সতেরো নম্বর বাস। - আসলে...। - শৈলেনবাবুর কাছে রেওয়াজ করতে যাই। বুধ, শুক্রু, রবি; সেখানে। - হয়েছে কী...। - মঞ্জুলাদের বাড়ির সামনের ফুটপাথে দাঁড়ালে আমাদের রিহার্সাল স্পষ্ট দেখা যায়, তাই না? - বিশ্বাস করুন...। - জানেন, আমি মেজদাকে জানালে ও আপনাকে জুতোপেটা করবে? - কিন্তু আমি তো...। - আপনি তো কী? - আমি না...। - আপনি ঘুরঘুর করেন না? - ন...না। - বেশ। তাহলে আমি জুতোপেটা করব। - কী? - ঘুরঘুরিয়া হলে মেজদা জুতোপেটা করবে। না হলে আমি। বেছে নিন। - মেজদা..গোঁফটা বাদ দিলে বেশ অমায়িক। অতঃপর নায়ক জুতোপেটা ফ্লেভারের মেঘে ভাসতে ভাসতে ল্যাম্পপোস্টের ডগার ওপারে গ্র‍্যাভিটির মায়া কাটিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন। এদিকে মেজদার ডাইরেক্ট করা নাটক থেকে অচানক বাদ পড়লেন নায়িকা। নায়িকাকে আচমকা ফি

বাপ্

- বাবা। - কী হল? - এই। ফেসবুকে বাবাদের ব্যাপারে কিছু মুভিং কোটস পড়ছি। - যেমন? - যেমন। বাবা কে? যে নিজে ছেঁড়া জামা পরে থেকেও সন্তানের জন্য প্লে-স্টেশন কিনে আনে। - বলছিস? - লাইক অ্যান আইডিয়াল ফাদার। বা এই দেখো। বাবা কে? যে নিজে পটলের ঝোল খেয়ে ছেলেকে দামী রেস্তোরাঁয় খাওয়ার টাকা দেয়। - রিয়েলি? - রিয়েলি। এই হচ্ছে আইডিয়াল প্যারেন্টিং। বুঝলে বাবা? - আই সি। - তোমার কোর্স করেকশন প্রয়োজন। এই একটা কোটেশনও তোমার ক্ষেত্রে খাটছে না। এই কিছুক্ষণ আগেই আমায় দিয়ে চা করালে আর নিজে সোফায় পা নাচিয়ে শ্যামল মিত্তির শুনে গেলে। - ধৃতরাষ্ট্র নিজে যাবতীয় খিস্তি হজম করে ছেলেকে জুয়া খেলার লাইসেন্স দিয়েছিল রে। তার চেয়ে ছেলের ঠ্যাঙ নিজেই কুপিয়ে দিলে দুর্যো বেচারির হিউমিলিয়েশন কম হত। - কী রিডিকুলাস এগজ্যাম্পেল। - শোন, ছেলেবেলায় গোটা দুনিয়া যখন তোকে অবন ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোরের বেবিস্টেপে ভুলিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তখন আমি নিজের পরশুরাম সমগ্র পেজমার্কে স্থগিত রেখে তোকে স্বপনকুমার পড়ে শুনিয়েছি। বাজপাখি সিরিজ। রক্তে কেরোসিন দেশলাই দেওয়া উত্তেজনা। ক'টা বাপ তেমনভাবে স্টেপ আউট করে রে? - পয়েন্ট। বাবা কে? যে নিজের

মনোজ মাহাতোর ডায়েরি

১ পুরনো ডায়েরি। ১৯৭২ সালের। মাছের বাজারে কী'ভাবে এলো তা ঈশ্বরই জানেন। শোল মাছ দর করার সময় পায়ের কাছে নজরে এসেছিল। আশেপাশে কারুর নয়। এদিকে ডায়েরির প্রতি আমার একটা বিশেষ টান আছেই। তুলে সামান্য উলটো পালটে দেখলাম যে সে ডায়েরিতে ধোপার হিসেব নয়, বরং রীতিমত রোজনামচা লেখা রয়েছে। বাংলা হাতের লেখাটা মুক্তোর মত। শোল মাছের বদলে ডায়েরি আর হাফ ডজন হাঁসের ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়িতে একা মানুষ, খবরের কাগজের বাইরে নতুন কিছু পড়ার পেলে অবজ্ঞা করি না কখনও। ২. নাহ্। গাঁজাখুরির একটা সীমা আছে। ডায়েরিটা মনোজ  মাহাতোর। মনোজবাবু ১৯৭২ সাল জুড়ে এই ডায়েরি লিখেছিলেন। ঝরঝরে নির্ভুল ভাষা। চমৎকার ভাবে গতিশীল। বেশ তরতর করে পড়ে যাওয়া যায়। সে'সবে সমস্যা নেই। সমস্যা হল মনোজবাবু নিজেকে মাছ বলে মনে করেন। না, গল্প লেখার চেষ্টা নয়। সিরিয়াস আত্মজীবনী। আমতলা গ্রামের হরিহর দাসের পুকুরের  বেড়ে ওঠা বাইশ কিলোর রুই মাছের জীবনচরিত। আপত্তির মূল জায়গা অন্য। আমতলাতেই আমাদের দেশের বাড়ি। হরিহর দাস আমার পিতামহ। এ'টা কি কারুর বেআক্কেলে ঠাট্টা? কিন্তু তিনকুলে কেউ আর বেঁচে নেই। আমতলা, হরিহর দাসের খবর কেউ পাবে কী করে? তাছাড়

এক্সমাস ২০১৬

রাত গভীর। ক্রিসমাসবাবু দিব্যি ঘাটে থেবড়ে বসে ছিলেন। এগরোল শেষ হয়েছে খানিক আগে। হাতে এখন লেবু সরবতের গেলাস। মনে ফুরফুর। মুখে নদীর শীত মাখানো হাওয়ার ঝাপটা। গলায় থেকে থেকে সুর খেলে যাচ্ছিল; "আমার মন চলে আগে আগে, আমি পড়ে রই রে বন্ধু..."। চিন্তায় কচাত করে কাঁচি পড়লো পিঠে আলতো চাপড়ে। ঘুরে তাকাতেই হলো। - কী রে, ক্রিসমাস! চিনতে পারছিস? - চেনা চেনা লাগছে...। - নামটা ভুলে গেছিস, তাই তো? সেই আগের মতই রয়ে গেছিস ভাই। - একদম ভুলে গেছি। সরি। - আমি দত্ত। সোমবার দত্ত। থার্ড ডিগ্রী। এ'বার মনে পড়েছে?

সব ভালো যার

সব ভালো যার শেষ ভালো। ** মনোজ বটব্যাল মাসের শেষে খুঁজে পান ব্ল্যাকহোলিও গোপন পকেটে রেখে ভুলে যাওয়া তিনটে কড়কড়ে একশো টাকার নোট। ** ধানবাদে পোস্টিং পাওয়া সমর দত্ত। ভদ্রেশ্বর থেকে আসা ইনল্যান্ড লেটারে খোকার স্কুল টিউশনির খবরের ফিরিস্তি শুনে হন্যে হতে হতে, চিঠির শেষ প্রান্তে এসে ভদ্রলোক খুঁজে পান লিপস্টিকের দাগ। টকটকে ছ্যাঁতছ্যাঁতে লাল। ** বছরের শেষে এসে জিমে ভর্তি হয়ে হাঁফ ছাড়েন জিকো হালদার।  ডিসেম্বরের শেষ তিন সপ্তাহে তেত্রিশ গ্রাম হাওয়া। জাস্ট হাওয়া। বত্রিশ বছরে ভুঁড়ি ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার কথা।  ** আলোয় আলোর শেষে কোলাহল থেমে যায়। হুল্লোড় ঝিমিয়ে আসে। সে আলোয় অনিন্দ্য সুলেখার হাত টেনে নেন। - শাদি করেগা মুঝসে? - করেগা নয়। করোগি। - ধ্যাত্তেরি। উইল ইউ ম্যারি মি? - বাঙলায় বলো না ভাইটি। - বাঙালি প্রপোজ করে না। চিঠি লেখে, পোস্ট করে না। - ন্যাকা। - উইল ইউ? - আর ক'বার করব? - এক বার ইয়েস বোলকে দেখো। আর বাঙালি বিয়ে করব না। - দেন? - বাইকে চেপে আসব। হারলে। - জিতলে? - ধ্যেত্তের। ডেভিডসন। থুঁতনিতে বেল্ট আঁটা টোপর। - রিয়েলি? ছেলেবেলায় তোমায় হারকিউলিস সাইকেলে দেখেছি। - তুমি

মিহিরবাবুর সন্ধ্যে

অন্ধকার নেমে এলেই দেরাজ খুলে বোতল আর গেলাস বের করে জমিয়ে বসেন মিহিরবাবু। মাদুর। সস্তা মদ। পাশে চানাচুরের বাটি। আর রেডিওর মিনমিনে ক্রিরিরিরি। চার নম্বর গেলাসের মাথায় মৃণ্ময়ীর ভূত এসে পাশে বসে। ঘাসের গন্ধ পায়ের আলতায় মিশে ছ্যাঁতছ্যাঁত তৈরি করে, সে'টা টের পান মিহিরবাবু। দু'টো ভালো কথা বলে ঘন হয়ে বসে মৃণ্ময়ী। পুরনো দুপুর টেনে কথা বলে, মাসকাবারির লিস্ট সাজাতে বসে। ভূত, তবু। মৃণ্ময়ী বই তো নয়। শাড়ির খসখসে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যান মিহিরবাবু। ছ'নম্বর গেলাসের শেষে মাদুরে এলিয়ে পড়েন মিহির গুপ্ত। রোজকার মত। আর রোজকার মত মৃণ্ময়ী সে বোতোলে কুঁজোর জল আর ছাতিমের সুবাস পুরে দেরাজে তুলে রাখে। প্রতিদিন। ভূতেরা কী না পারে, আর মাতাল কী সহজে না ভাসে। এক মুঠো হাসিতে রোজ ভোর রাতের বাতাসে মিলিয়ে যায় মৃণ্ময়ী।

নরহরির দুঃখ

ব্রজলাল সরবতের গেলাসটা টুলের ওপর রেখে ইজিচেয়ারের মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। নরহরি মল্লিক গা এলিয়ে শুয়ে ছিলেন; কপালে চশমা, বুকে ভাঁজ করা বই। - দাদাবাবু। - সরবত এনেছিস? - আজ্ঞে। - বস। - আজ্ঞে। একটা কথা ছিল দা'বাবু। - ছুটি? - আজ্ঞে। - ক'দিনের? - আর ফিরব না। - ছেড়ে যাবি? - আর কদ্দিন দাদাবাবু। আমারও বয়স হলো। শ্যামলীর মা রয়েছে, দুলাল রয়েছে। আপনার যত্নের ত্রুটি হবে না। - সেবাশুশ্রূষার লোকের অভাব নরহরি মল্লিকের হবে না। কিন্তু হ্যাঁ রে ব্রজ, তুই কি শুধু আমার কাজের লোক? - না, তা কেন? - পুরনো রাগ এখনও পুষে রেখেছিস ব্রজ? - না গো দা'বাবু। কিন্তু...। - কিন্তু কী? - শ্যামলীর মা আর দুলাল। - ওরা কিছু বলেছে? - না। বলেনি। তবে, ওরা আমায় দু'চক্ষে দেখতে পারে না। - আসলে তুই আমার এতটাই কাছের...যাক। তোর মন যখন চেয়েছে, তখন আর জোর করে আটকে রাখব না। কবে যাবি? - আজকের দিনটা থাকি। কাল সন্ধ্যের দিকে...। - যাওয়ার আগে একটা কথা মন থেকে বলে যা ব্রজ, অদ্দিন আগেকার রাগ পুষে রাখিসনি তো? - কবেকার কথা, সে'সব বাদ দিন দাদাবাবু। তারপর থেকে কত ভালোই না বাসলেন এ চাকরবাকর মানুষটাকে। - ক

সুচরিতা

- গুড মর্নিং জগা। - বিট্টা। তুই চুমু খেয়েছিস? কোনওদিন? - হঠাৎ এ প্রশ্ন? - না মানে, কাল রাত্রে। বুঝলি কিনা, স্পষ্ট দেখলাম। সে..। - সে? - সে আমায় জড়িয়ে চুমু খেলে। অন গড। - সে? কে সে? - সুচরিতা। - দত্ত? ইকনমিক্সের? - স্বপ্নে। দিব্যি এসে। স্মুচ। বুঝলি কি না। তাই তোকে জিজ্ঞেস করছিলাম। তুই রিয়েল লাইফে কোনওদিন...। - রোম্যান্টিক চুমু? - হুঁ। - প্রেমিক টু প্রেমিকা চুমু? - হ্যাঁ। সুমির সাথে মাস খানেক ঘুরেছিলিস তো। - এক মাস বাইশ দিন। - খেয়েছিস? - হুঁ। - অ্যাফার্মেটিভ? সুমি? - খেয়েছি রে জগা। তবে সুমি নয়। - অন্যকেউ? ই...ইলিসিট? - অলমোস্ট। - কে...কে রে?  - সুচরিতা। - দ...দত্ত? ইকনমিক্স? মাইরি? ও..ও তো... ও তো অপ্সরা! - জানি। - গুল মারছিস। - না। - গা ছুঁয়ে বল। - এই তোর গা ছুঁয়ে বলছি। আমি সুচরিতাকে চুমু খেয়েছি। - মাথা ঝিমঝিম করছে। তুই শিওর? - জড়িয়ে। বুকে টেনে এনে। জাপটে ধরে। জিভের স্বাদ এখনও জিভে জ্বলন্ত।  - মা...মা...মাইরি বিট্টা..। - মাইরি। অধর থেকে ওষ্ঠে, ভিজে, মাখামাখি। শুধু আচমকা উইথড্র করতে হল। - উইথড্র? কেন? কেন কেন? - গোঁফ।

মোহর

এক পিস্‌ জয়নগরের মোয়া হাতে বারান্দার ইজিচেয়ারটায় বসেছিলেন বিপ্লববাবু। মরশুমের প্রথম। অফিসের আশুতোষ সমাজপতি অফার করেছিলেন লাঞ্চে। রাত্রে বাতাসে ঠাণ্ডা বাড়বে, তখন মোয়ায় কামড় বেশি আরামদায়ক। তাই লাঞ্চ টেবিলে তৎক্ষণাৎ মুখে না দিয়ে, মোয়াখানা টিফিন বাক্সে ঢুকিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন বিপ্লববাবু। ডাল, পেঁয়াজকলি ভাজা আর ডিমের অমলেট দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। হাতে টিফিন বাক্স থেকে বের করে আনা মোয়া। মোয়াটার দিকে অনেকক্ষণ একমনে তাকিয়ে ছিলেন বিপ্লববাবু। কেমন একটা ভালোলাগা ভর করছিল যেন তাঁর মনে। যেমন নিটোল চেহারা মোয়াটার, তেমনই সুবাস। আহা। কামড় বসাতে মন বসলো না বিপ্লববাবুর। কামড় বড় জান্তব একটা ব্যাপার। উগ্র। ঝাপটাঝাপটি। রাতের ফুরফুরে হাওয়ায় পৌষের ধার রয়েছে বেশ। আহা। এই তো সময় মোয়ায় স্বাদে ভেসে যাওয়ার। মরশুমের প্রথম মোয়া। আহা। এ জয়নগরের মোয়াটি বড় নরম। বড় কমনীয়। আদুরে। চুমুর আশ্রয়ে নিলেন আশুতোষ, আগ্রাসন বলতে শুধু আলতো জিভের ডগা। *** পরের দিন অফিসে কিছুতেই মন বসছিল না বিপ্লববাবুর। মোয়াটা খাওয়া হয়নি গতকাল। আর হয়ত খেতে পারবেনও না। মোয়াটা আর পাঁচটা ম

বালিশবাবুর অফিসে - ৩

- তাহলে আপনি ভগবান।   - সে কথা আমি নিজের মুখে বললেই বা কী , না বললেই বা কী।   - সত্যিটা কী ? - এভারেস্ট আড়াই মিটার বাড়িয়ে দিচ্ছি। পরের বছরই।   - ভগবান ? - পেঙ্গুইনদের কিছু জেনেটিক অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার। যা গরম পড়ছে আজকাল। শ ' দেড়েক বছরের মধ্যেই কিছু একটা করে ফেলতে পারি।   - তাহলে আপনিই।   - আমিই। আনফরচুনেটলি।   - আনফরচুনেটলি কেন ? - থ্যাঙ্কলেস জব! তা ছাড়া , ম্যাসিভ ভল্যুম। ম্যাসিভ। কিছুতেই গ্রিপে আনা সম্ভব নয়।   - ভগবান মানুষের মত দেখতে ? - না। মানুষ ভগবানের মত দেখতে।   - মানুষ শ্রেষ্ঠ বলে ? - আপনি জানেন আমি কী সাংঘাতিক ধরণের ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগি ? - রিয়েলি ? - মানসিক অবসাদ। সিজোফ্রেনিয়া। অম্বল গলা জ্বালা। কী নেই ? ঘেন্না হয় নিজেকে। আমার মেজাজ সর্বক্ষণই খারাপ থাকে। কিন্তু সে ' বার যখন সুইসাইডাল হয়ে কয়েক দিন কাটিয়েছিলাম , তখনই মানুষ সৃষ্টি করেছিলাম। নিজের মত করে। সুইসাইডাল।   - আপনি আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন ? - অনবরত। এখনও মাঝে মাঝেই মনে হয়...মনে হয় নিজেকে কোতল করি। কিন্তু। ওই। আনফরচুনেট। আমি ভগবান। ও ' টা আমার দ্বারা পসিবল না। এত অস

অপূর্ববাবুর ফোনকল

- হ্যালো । - হ্যালো । কে বলছেন ? - অপূর্ব ঘোষাল । মধ্যমগ্রাম থেকে । - ও । আচ্ছা । তবে আমি কোনও অপূর্ব ঘোষালকে চিনি না । - স্বাভাবিক । আমিও আপনাকে চিনি না । - তবে ফোন করেছেন কেন ? তাও এই মাঝরাতে । - এ ' টাই আমার সবচেয়ে লম্বা ইন্টার‍্যাকশন হল গালাগাল না খেয়ে । - মানে ? - মানে গত চার দিন ধরে অন্তত তিনশো র ‍ ্যান্ডম ফোন নম্বর ডায়াল করেছি । সকলের ধৈর্য আপনার চেয়ে অনেক কম । - ও । কিন্তু কেন ? - সে অনেক কথা । আচ্ছা , আপনার নাম ? - রোহণ দত্ত । উত্তরপাড়া । - রোহণবাবু , একটা জরুরী কথা ছিল । - আমি কথা না বললে জরুরী কথাটা জানাতেন কী করে ? - অন্য নাম্বারে কল করতাম । আপনার ফোন নম্বরের শেষ চারটে সংখ্যা ফাইভ টু সেভেন এইট । এর পরেরটা হয়ত ফাইভ টু এইট সেভেনে ডায়াল করতাম । - ও । এই ভাবে গত চার দিনে ধরে কল করে যাচ্ছেন ? - তিনশোরও বেশি কল । সবাই রিফিউজ করেছে পত্রপাঠ । দু ' একজন পুলিশের ধমকি দিয়েছে । - তবু আপনি দমে যাননি অপূর্ববা