Skip to main content

ঢিপঢিপ

গরম। চিটচিটে গরম। জানুয়ারি বখে গেছে একদম। বইমেলা ঘুরতে এখন আর হাফ সোয়েটার গায়ে চাপাতে হয় না; দুপুরের দিকে তো নয়ই। 

অনুপ একাই এসেছিল। বইমেলা একা ঘুরলেই স্বস্তি। এ তো আর পাঁপড় ভাজা নাগরদোলা চড়ার মেলা নয় যে হইহইরইরই করে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দেওয়া। এখানে প্রত্যেকের নিজস্ব গতিতে বিচরণ করাটা জরুরী। জরুরী। প্রেমিকা, বন্ধুবান্ধবে ছিটকে না গিয়ে মেলায় তাই একা আসে অনুপ। 

রবিবারে ভিড় হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ একটু বাড়াবাড়ি রকমের ঠ্যালাঠেলি হয়েছে। মিত্র-ঘোষের স্টলও উপচে পড়ছে, দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। স্বস্তিতে নতুন বই উলটে পাল্টে দেখারও জো  নেই। বিরক্তিটা লাগামছাড়া লেভেলের দিকে পৌঁছচ্ছিল; ঠিক তখনই 
মেয়েটার দিকে চোখ গেল অনুপের।  

আলগা শ্রী ছিল একটা মেয়েটার মুখে, আর মোটা কালো ফ্রেমের চশমার প্রতি অনুপের একটা পুরনো দুর্বলতা রয়েইছে। তবে অনুপের নজর মেয়েটিতে আটকায়নি; আটকে ছিল মেয়েটার টিশার্টে। সাদা টিশার্ট, জিন্সের ওপর পরা। যেমন হয়। কিন্তু ব্যাপারটা ছিল টিশার্টের বুকে আকা স্কেচটাতে; স্কেচটা ছিল ঘনাদার। 

এই কম্বিনেশনটা বড় ভালো লাগায় চুবিয়ে দিল অনুপকে। যে মেয়ে ঘনাদাকে টিশার্টে নিয়ে ঘোরে, তাকে অবহেলা করা যায় না। যায় না। এমন মেয়ে হয়তো আরও আছে। কিন্তু অনুপ আগে দেখেনি। অনুপ অবশ্য অনেক কিছুই দেখেনি। আর এ আবিষ্কারটা অত্যন্ত ভালো। 

টিশার্টে ঘনাদা আরামকেদারায় বসেছিলেন। স্বাভাবিক। স্কেচটা বেশ ভালো হয়েছে। বেশ। মেজাজটা চলকে বেরোচ্ছে। এবং একটা কোটেশনও রয়েছে। কোটেশনটা কী সে'টা জানার আগ্রহ স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র হল। একটু এগিয়ে ফোকাস করল অনুপ। অনেক চেষ্টা করে পড়তে পারলে; "এক মাত্র গান দিয়েই তোমায় এখন বাঁচানো যায়"। 
গান গল্পটা থেকে লাইন তুলে সামান্য পাল্টে নিয়ে কোটেশনটা তৈরি হয়েছে। টিশার্ট ডিজাইনারকে বাহবা না দিয়ে পারল না অনুপ। 

তক্ষুনি মেয়েটা  সপাটে তাকালে অনুপের দিকে। ছ্যাঁত করে উঠল অনুপের বুক। সর্বনাশ! সে যে ড্যাবড্যাবে করে মেয়েটার বুকের দিকে তাকিয়ে ছিল না, তাকিয়ে ছিল ঘনাদার দিকে সেটা কী করে বোঝাবে? 
কী সাঙ্ঘাতিক!  ক্যালামিটি। 

হুট করে অন্যদিকে ঘুরে গেল অনুপ। কিন্তু বুকের ঢিপঢিপ বেড়ে গেল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, মেয়েটা কী ভাবলে। কী ভাবলে মেয়েটা? লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল অনুপের। একবার ভাবলে মেয়েটার কাছে গিয়ে ঘটনাটা বুঝিয়ে বলে আসে। তারপর ভাবলে তাতে চড় থাপ্পড় খাওয়ার চান্স বাড়বে বই কমবে না। 

মিনিট খানেক ঢিপঢিপ হজম করে হুড়মুড় করে স্টল থেকে বেরিয়ে এলে অনুপ। আর তখনই অনুপের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে এলো মেয়েটি। এবং অনুপ কে হকচকিয়ে দিয়ে সে অনুপের দিকে ঘুরে মোবাইল বের করে মেলে ধরলে। 

ছবি নিচ্ছে - স্পষ্ট হয়ে গেলে অনুপের কাছে। মেয়েটা অনুপের দিকে ক্যামেরা তাক করে ধরেছে। অনুপের কলজে ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেল; ভয়ে। পাবলিক শেমিংয়ের এই সবে শুরু। এই ফোট এখন আপলোড হবে ফেসবুকে। মেয়েটাকে দেখে মনেই হয় যে ওর ফেসবুকে সবিশেষ রোয়াব। আজ রাত্রের মধ্যেই গোটা শহর জেনে যাবে যে অনুপ একটা পারভার্ট। ছিঃ। ছিঃ। ছিঃ। মরে যেতে ইচ্ছে করছিল অনুপের। ভয়ের চোটে গলা দিয়ে একটা "এক্সকিউজ মি"ও বের করতে পারলে না অনুপ। হাতের তালু ঘামে ভিজে যাচ্ছিল, গলা শুকনো কাঠ। 

ঠিক তক্ষুনি, মেয়েটার চোখে একটা মোলায়েম ঝিলিক খেলে গেল। আর মেয়েটির ঠোঁট; কুঁচকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার তৈরি হল -পাউট। .অনুপের হাতের তালু তৎক্ষণাৎ শুকিয়ে গেল, গলা ভিজে গেল স্বস্তিতে।  মেয়েটি মোবাইলে রিয়ার ক্যামেরা অন করেনি, অনুপকে তাকও করেনি। ফ্রন্ট ক্যামেরায় নিজের সেলফি তুলছিল মাত্র। 

ঘনাদা টিশার্টে মেয়েটা দশে দশ পেয়েছিল, সেলফি পাউটে সাড়ে তিন নম্বর কেটে নিল অনুপ। সেখান থেকে সোজা রওনা দিলে দে'জের স্টলের দিকে; ও'টার পাশে বাথরুম রয়েছে।  

Comments

ghonada said…
map korben tonmoy babu, ekmot hote parlam na. Je maye ghonada-ke T shirt e niye ghore se selfie tole na.
ghonada said…
map korben tonmoy babu, ekmot hote parlam na. Je maye ghonada-ke T shirt e niye ghore se selfie tole na.
hmm , boimelay se meye selfie tultei pare na

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু