Skip to main content

রজনীর শনির দশা

১। 

রজনীকান্ত সে'বার মঙ্গল গ্রহে আলুর চাষ করলেন। বিস্তর বাহবা কুড়োলেন। নোবেল-টোবেল পেলেন।
একটা বাড়তি ক্যাটেগরি তৈরি করে অস্কার-টস্কারও দেওয়া হল তাকে। আফটার অল মঙ্গলে আলু; রীতিমত সিনেমা মাফিক ব্যাপার। 
মঙ্গলে আলু ফলানোকে সাহিত্যের একটা অঙ্গ বলে ঘোষনা করে পুলিৎজার-ঠুলিৎজারও খান কয়েক গছিয়ে দেওয়া হল তাকে।

শুধু বঙ্গভূষণের শিকেটা সে'বারও তার ভাগ্যে ছিঁড়ল না। মঙ্গলে আলুর চাষ করতে যাওয়ার সময় বুদ্ধি করে যদি এক ডিবে পোস্ত নিয়ে যেতেন তিনি, তাহলে এ নিদারুণ শাস্তি তাকে পেতে হত না।

২। 

এই কিছুদিনে আগের ঘটনা। কী বলব আর।
রজনীকান্ত অরিগ্যামি করে মুর্গী তৈরি করছিলেন। যে সে মুর্গি নয়; জ্যান্ত মুর্গি। টপাটপ কাগজ মুড়ে, কাঁচি দিয়ে কেটে;একের পর এক কাগুজে মুর্গি বানিয়ে রজনী তাদের হাওয়ায় ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন;- আর অমনি সেই কাগুজে মুর্গির মধ্যে কোকর কোকর শব্দে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছিল। আলটিমেট ভেলকি। অদ্ভুত, অনাবিল, অবিশ্বাস্য। চোখের সামনে সেই আজব ঘটনা ঘটছিল।
জার্মান বৈজ্ঞানিক দাঁড়িয়ে স্যালুট করলেন রজনীকে। জাপানি বৈজ্ঞানিক মশায় সোজা হাচিমাচিকাগাবাচি বলতে বলতে রজনীর পা জড়িয়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেলেন। আমেরিকানবাবুর চোখ বেয়ে অঝর ধারায় জল; "র‍্যাজ্যানি ইজ ক্রিয়েটিং লাইফ আউট অফ পেপার"।
শুধু বাঙালি বৈজ্ঞানিকই ব্যাজার মুখে বসে বাকিদের আদেখলামো বরদাস্ত করছিলেন। তবুও সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু চীনা বৈজ্ঞানিক যখন নিজের শার্ট খুলে মাটিতে শুয়ে রজনীকে বললেন তার বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না বাঙালি বৈজ্ঞানিক অঘোর মিত্র।
চিৎকার করে উঠলেন অঘোরঃ "রজনীবাবু, ভ্যানতারা তো অনেক হল। তখন থেকে শুধু কাগজ মুড়ে ব্রয়লার ছেড়ে যাচ্ছেন। ও খেতে তো রবার মশাই। বলি দম থাকে তো দেশি মুর্গি বানিয়ে দু'এক পিস ছাড়ুন। তাহলে বুঝবে আপনার কেরামতিতে রসবোধ আছে"।
স্তম্ভিত রজনীকান্তকে ল্যাবরেটরিতে ফেলে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন অঘোর মিত্র।


৩।
রজনীকান্ত ৫৩২টা ভাষায় বানান ভুল করেন না।
তবে সেবার কেত মেরে মোহনদাসকে বাংলায় অটোগ্রাফ দিতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। সবে লিখেছেন "স্নেহের গান্ধীকে" অমনি আনন্দবাজারি সাংবাদিক এসে খপাৎ করে রজনীর হাত ধরে সে কী খিস্তি করলে। লজ্জার মাথা কাটা যাওয়ার জোগাড়।
গান্ধী যে বাংলায় আদতে গাঁধি, তা জানার পর থেকেই বাংলাকে "এক্সকিউজ মি" বলে এড়িয়ে চলেন রজনীকান্ত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু