Skip to main content

নিরুপমবাবুর সাতাশ

সন্ধেবেলার এল-দু'শো আটত্রিশ।

হয় সাড়ে ছ'টার। নয়ত সাতটার। অফিস ফেরতা, বড়বাজার থেকে; যখন যে'টা জোটে। 
আজ অল্পের জন্য সাড়ে ছ'টারটা বাসটা মিস করতে হল নিরুপমবাবুকে। যেমন মাঝে মাঝেই হয়। সাতটার বাসটায় ভিড় আরও বেশি হয়। ফুটবোর্ডে পা রাখাই দায়। নিরুপমবাবু অবিশ্যি হাফ ঝুলন্ত অবস্থায় কড়ে আঙুল দিয়ে কানও চুলকে নিতে পারেন। অভ্যাসের গদ্য, অনুগত কেরানীর যন্ত্রণা আর  সংসারের নিরুপায় কুঁইকুঁই মানুষকে দিয়ে অসাধ্য সাধন করাতে পারবে। 

ঘোর সংসারী বলে নিরুপম সমাজপতির সুনাম আছে। অল্প মাইনের চাকরীতে ছেলের কলেজ থেকে, লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে গিন্নীর হাইপ্রেশারের ওষুধ থেকে বছরে একবার তারাপীঠ আর দু'বছরে একবার পুরী; কিছুই বাদ যায় না। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে নিরুপম রহিস নন, তবে মজবুত আশ্বাস জমতে শুরু করেছে। বিয়ে মুখেভাতের নেমন্তন্ন, পুজোর বাজার, লৌকিকতার মিষ্টির বাক্স ; খরচের হারিকেন তাকে শশব্যস্ত করলেও হাতে হ্যারিকেন ধরাতে পারেনি। 

নিরুপমবাবু জানেন যে না-থাকাগুলো জিভ বের করে ভেঙিয়ে যাবেই জিন্দেগী ভর। দামী গাড়ির চাবি দামীর রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়ানো স্যালুট মারা বেয়ারার হাতে সঁপে দেওয়া হবে না ভ্যালে পার্কিঙের জন্য।  মা তারা বস্ত্রালয় থেকে সাউথসিটি মলের দামী দোকানে আপগ্রেড করা যাবে না। গোয়ায় কমলা রঙের জামা আর হলদে বার্মুডা পরে ল্যালল্যাল করে বিয়ারের বোতল হাতে ঘুরে বেড়ানো যাবে না। দেওয়াল জোড়া পেল্লায় টিভিতে সাবটাইটেল ছাড়া ইংরেজি সিনেমা দেখে মাথা নাড়া হবে না। 

তবু সমস্ত না-থাকা সাইডে রেখে যেটা আছে সেটা হচ্ছে বাড়ির চেনা বারান্দার নরম গন্ধ, গিন্নীর ছলছলে হাসি আর ছেলের খেটে পাওয়া পরীক্ষার নম্বরগুলো। 
আর থেকে গেছে স্থির লক্ষ্য। আগুন লাগুক, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না রিলিজ হোক, কাম্পুচিয়ায় নেতাজীকে খুঁজে পাওয়া যাক, উত্তমকুমারের লিপস্টিক অকশন হোক, লক্ষ্য থেকে চোখ সরে না। সরার কথাই নয়।  

সাতাশ লাখ। সাতাশ লাখ ব্যাঙ্কে জমলেই চাকরী ছাড়বেন নিরুপমবাবু।  সপসপে ঘামে ভেজা হাফ শার্ট আর এল-দু'শো আটত্রিশের পিষে ফেলা ভিড়ের দমবন্ধ করা গন্ধে আজকাল যন্ত্রণা হয়।  নিয়মিত যন্ত্রণা হয়।
তবে যন্ত্রণা যে লক্ষ্মী তা নিরুপমবাবু বিলক্ষণ বুঝেছেন। ডর কে আগে জিততে শেখায় বিজ্ঞাপন। নিরুপমবাবু জানেন চোয়াল শক্তের ওপারে রয়েছে সাতাশ লাখ। রয়েছে মুক্তি। ছুটি। ছুটি, ছুটি।  

বাস আসতে সময় ছিল খানিকক্ষণ। একটা সিগারেট ধরিয়ে মানিব্যাগটা বের করলেন নিরুপমবাবু। মানিব্যাগে রাখা লোকনাথবাবার ছবিটা সেই ছিয়ানব্বুইয়ে পালটেছিলেন তিনি। পেপারকাটিংয়ে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে সিগারেটে মোক্ষম একটা টান দিলেন তিনি। 

মানিব্যাগ পকেটে ফেরত রাখতে রাখতে লক্ষ্যটাকে ঝালিয়ে নিলেন নিরুপমবাবু। সাতাশ। সাতাশ। সাতাশ। এল-দু'শো আটত্রিশ'কে মনে মনে ডারবান বলে ডাকেন তিনি।

(গুগল সার্চ করে ছবিটা পাওয়া)

Comments

Anonymous said…
rahul dravid 27* out of total team score 66 in kingsmead, durban 1996-97.....mohakabyo
Anonymous said…
Bhalo laglo khub

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু