Skip to main content

ঝলমল

সেবার একটা মজার ব্যাপার হল।

সূর্যবাবু সকাল সকাল খুব খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ঘুম ভেঙে উঠলেন। উঠেই তাঁর নজর পড়ল একদল রোদ্দুরের ওপর; সে বেচারিরা নিজেদের মনে ছাদে ঘুরঘুর করছিল।
-   “এইয়ো, তুম লোগ উধার বেওকুফ কা মাফিক সময় নষ্ট কিউ করতা? ইধার আও”।
তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে রোদ্দুরের দল সূর্য্যবাবুর সামনে এসে “হজুর” বলে সেলাম ঠুকলে।
-   “সকাল সকাল শোরগোল। বেয়াদবের দল”, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে হুমকি ঝাড়লেন সূর্য, “অভি নিকলো, তুরন্ত। তুরন্ত। আমার জন্য ঝলমল নিয়ে এসো”।
“জো হুকুম”, বলেই রোদ্দুরের দল সক্কাল ক্কাল বেরিয়ে পড়লে ঝলমলের খোঁজে।

তারা হাওয়ায় ছুটতে ছুটতে গান ধরলে;
“ঝলমল চাই ঝলমল
সূর্য্যির বাই; জোরে চল ভাই
ঝলমল কই ঝলমল!”

এমন সময়। এমন সময়। হল কী;
সে দলে যে সবার চেয়ে ছোট রোদ্দুর সে গানের মাঝে ঝপাৎ করে একটা বেমক্কা প্রশ্ন করে বসলে।
“কেয়া হ্যায় ইয়ে ঝলমল”?

তখন গান থামিয়ে ধেড়ে রোদ্দুরেদের সে কী হাসি; “এ ব্যাটা ঝলমল মানে জানে না, ওদিকে সুয্যিকাকাকে জো হুজুর কয়ে এসেছে, এ ব্যাটা আহাম্মক”।

“শোর কম”, নেতা রোদ্দুরের ধমকে হাসির দমক থামল শেষে। কচিরোদ কে নেতা রোদ বুঝিয়ে বললে,
-   “খোকা, ঝলমল থাকে রোদ্দুরের বুকে”।
-   “আমাদের বুকে?”
-   “হ্যাঁ”।
-   “আমার বুকেও?”
-   “হ্যাঁ, বিলকুল”।
-   “তাহলে ঝলমল খুঁজতে বেরোনোর বেওকুফি কেন?”
-   “জাদুস্পর্শের জন্য”।
-   “জাদু স্পর্শ?” খোকা রোদ অবাক হয়।
-   “তিলিস্মি স্পর্শ। যে ছোঁয়ায় রোদের অন্তরের ঝলমল দিন মন আলো করে বেরিয়ে আসে, ছড়িয়ে পড়ে”।
-   “ঝলমল বেরিয়ে আসে?”
-   “বিলকুল খোকা। মিঠে নরম ভালোবাসার মত ঝলমল ছড়িয়ে পরে”।
-   “তিলিস্মি স্পর্শ কোথায়? কী?”
খোকা রোদের হাত ধরে হাওয়ায় গা ভাসিয়ে ছুট দিলেন নেতারোদ।
রোদের দল শিরশির করে নেমে এলে হাওয়া বেয়ে।
“উয়ো দেখো খোকা, জাদু নরম, ওখানে ছুঁলেই আমরা ঝলমলিয়ে উঠব”।
কচি রোদ অবাক হয়ে দেখলে স্বপ্ন ভালোবাসার মত দাঁড়িয়ে। কালো কামিজ,  দোলানো কাশের মত হাসি, স্নেহের তুলতুলের গাল। কচি রোদ রিনরিনে হাসি হেসে গিয়ে গোত্তা খেলে সেই স্নেহের তুলতলে। অমনি তিলিস্মি স্পর্শে ঝলমল হয়ে সকাল ময় ছড়িয়ে পড়লে ঝলমলে নরম রোদ।

*********

-   বাবু, কথা বলছিস না কেন?
-   হুঁ।
-   কথা বলছিস না কেন?
-   হুঁ?
-   তুম বাত কিউ নহি করতা?
-   হম দেখতা হ্যায়।
-   কেয়া দেখতা?
-   তোর গালের আলোয় রোদ ঝলমলিয়ে উঠছে।
-   তুমি বেওকুফ।
-   তুমহারা বেওকুফ।
-   মেরা বেওকুফ।

Comments

Anonymous said…
এই বিরল লেখা উপহার দেওয়ার জন্য কোন মন্তব্যই যথেষ্ট নয়। হাজার সেলাম।
Anonymous said…
"ঝলমল" শুধু ঝলমল করছে না- আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আবার পড়লাম আবার মন্তব্য করতে বাধ্য হলাম।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু