Skip to main content

...ভূত তো নয়

এত ওপর থেকে বাইনোকুলারে চোখ রেখেও কেঁপে উঠতে হয়।

ওই যে। এক্কেবারে নিচে। দৈত্যটা একটা মাদুর পেতে শুয়ে। এতটা নিচে যে তাকাতেই পেটের ভিতরটা কেমন গুলিয়ে আসে। কিন্তু উপায় নেই। দৈত্যটার কাছে পৌঁছতেই হবে।

এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে মনটাকে গুছিয়ে নিলাম। ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া গতি নেই। সাবধানে নামতে হবে দৈত্যটার পাশে। এমন ভাবে নামতে হবে যাতে খুব একটা চোট না লাগে। এত উপর থেকে ঝাঁপানো, চাট্টিখানি কথা?

এমনটা তো নয় যে আমার পিঠে প্যারাশুট বাঁধা, ঝাঁপ দেবো আর টপাৎ করে তা খুলে যাবে আমি পালকের মত ভাসতে ভাসতে নেমে আসব। এ এক্কেবারে ডাইরেক্ট ঝাঁপ, শোঁশোঁ করে নেমে আসা আর তারপর দুম ধপাৎ।
কিন্তু উপায় নেই। নেই উপায়।

জয় মা বলে দিলাম ঝাঁপ।

আহহ। ছড়েছে অল্পবিস্তর। পিঠে কিছুটা মোচড়। তবে আহামরি নয়। টিকে যাব। সোজা গিয়ে ঠেলা দিলাম দৈত্যটাকে।

- "ভায়া শুনছেন?", নরম করে ডাকলাম।
- "আ...আ...", অমন দশাসই চেহারা নিয়ে কেউ অমন করে ঘাবড়ে যাবে ভাবিনি।
- "আ আ কী করছেন"।
- "বই...বই..."।
- "আহ! বইই তো। ভূত তো নয়", অভয় দিতেই হল।
- "বই কথা..কথা বলছে..."।
- "বই বই আবার কী? আমার একটা নাম আছে তো। শিব্রাম সমগ্র। শিবসম বলেও ডাকতে পারেন। যে জন্য
এত ঝামেলা করে আসা। বলি গত বই মেলায় দিব্যি আমায় নিয়ে বাড়ি এসে সেই যে ওপরের তাকে চালান করলেন, তারপর তো একবারের জন্যও উলটে দেখলেন না। আমার আত্মায় যে জং ধরছে। ভিতরটা শুকিয়ে আসছে। আবার আর এক পিস বই মেলা এসে গেছে। আরও দেখনাই কেতা মেরে বেওয়ারিশ কেতাব খরিদ করে তাক বোঝাই করবেন আর পড়বেন না, সে'টি হচ্ছে না। হয় আমায় পড়ুন, নয়তো ছাড়ছি না। ও মশাই, অজ্ঞান হলেন নাকি? ও মশাই?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু