Skip to main content

রজনীর শনির দশা -৩

হাই জাম্পে মনুমেন্টের মাথা ছুঁয়ে নেমে এলেন রজনীকান্ত। ধুন্ধুমার ব্যাপার। হাততালি কলরবে কান পাতা দায়।
কিন্তু রজনীর মনে একটু খুঁত ধরল যখন দেখলেন যে যাবতীয় উল্লাসের মাঝে এক রোগা কালো লম্বাটে এক ভদ্রলোক বিশ্রী বাঁকা হাসি মেলে দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোকের চেহারায় একটা টানটান ব্যাপার ছিল। কিছুটা আগ্রহ বোধ করায় ভদ্রলোকের দিকে নিজেই এগিয়ে গেলেন রজনী।
- জাম্পটা দেখলেন কী?
- বেশ ভালো। টেকনিকে নিয়ারলি পার্ফেক্ট।
- নিয়ারলি পার্ফেক্ট?
- প্রায়।
- এর চেয়ে বেটার টেকনিক আবার হয় নাকি? মনুমেন্টের ডগা ছুঁয়ে এসেছি।
- তাই তো বলছি। মন্দ না।
- মন্দ না! এর চেয়ে ভালো জাম্প আপনি দেখেছেন?
- নিজের লাফ নিজে দেখেছি বললে ভুল হবে।
- আপনি এর চেয়ে উঁচু লাফ দিতে পারবেন?
- এর উত্তর দেওয়ার কোন মানে হয় না।
- বেশ তো। আমি ডুয়েলে চ্যালেঞ্জ করছি। লাফ দিয়ে দেখান না। এস্পার ওস্পার হয়ে যাক।
- অকারণ উত্তেজনা স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের সাথে খাপ খায় না রজনীবাবু।
- লাফ দিতে ভয়?
- ভয়? হেহ। ভয়ই বটে। তবে শুনুন। স্পেসস্যুট ছাড়া হাইজাম্প দিতে আমার ভয়ই লাগে। আর তাছাড়া আজকাল স্যাটেলাইটগুলো এত নিচুতে অরবিট করে, অন্তত বারোখানা দেশের সরকারকে অ্যালার্ট না করে হাই জাম্প দেওয়ার দুঃসাহস বা বিলাসিতা ; সত্যিই আমার সাজে না। যাকগে, সে'সব বাদ দিন। এ নিন আপনার সিগারেটের প্যাকেট, লাফ দেওয়ার সময় পকেট থেকে পড়ে গেছিল। প্রাণায়ামটা ঠিকঠাক গ্রিপ করতে পারলে আপনার লাফানোর টেকনিক ইম্প্রুভ করত, টপাটপ পকেট থেকে জিনিস পড়ে যেত না।আর হ্যাঁ, খান চারেক সিগারেট কম রয়েছে বাক্সে। ধার রইল। কেমন?
রজনী বেশ টের পাচ্ছিলন যে তার স্যান্ডো গেঞ্জিটা জ্যানুয়ারির ময়দানি বিকেলেও ঘামে ভিজে সপসপ করছে।

Comments

aritra sanyal said…
এই হল গিয়ে ন্যারেটিভ, তা ভদ্রলোকটি কে ডমরু, টেনি না ফেলু? সিগারেট থেকে মারাত্মক দিকে টার্ণ নেওয়া যায়।
এটা সন্দেহের কোন জায়গা নেই। ভদ্রলোকের পিছু পিছু গেলে বাহাত্তর নম্বর...
আমার তো ঘনাদা মনে হলো

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু