Skip to main content

না যাওয়ার গল্প

অরিন্দমের অফিস ফেরতা বাড়ির কলিংবেল বাজানোর একটা সিগনেচার স্টাইল আছে; একটা স্পষ্ট চাপ, তার পরেই ঘনঘন দু'বার এবং শেষে স্পষ্টভাবে আরেকবার।

রীতা সে'টা জানে। চেনে। রীতা জানে যে সেই স্টাইলটা অপাইও জানে।
অপাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ঠিক সেই ঢঙেই কলিং বেলটা বাজালো রীতা; একটা স্পষ্ট চাপ, তার পরেই ঘনঘন দু'বার এবং শেষে স্পষ্টভাবে আরেকবার।

- বাবা এসেছে!
- বাবা এসেছে কী রে ব্যাটা? আমি তো তোর সঙ্গে বসে।
- ওই যে বেল বাজলো তোমার মত করে। টুং টুটুং টুং।
- কিন্তু আমি যখন তোর সঙ্গে বসে ট্রাম্প কার্ড খেলছি, তাহলে সেটা নিশ্চই আমি না।
- মা এসেছে? কিন্তু মার তো কালকে আসার কথা।
- হয়ত সারপ্রাইজ দিতে এসেছে। আর ডেফিনিটলি ভাবতে পারেনি যে আমি এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে যাব। মা প্ল্যান করেই টুং টুটুং টুং বেল দিয়েছে। যাতে তুই ভাবিস যে আমি এসেছি। আর দরজা খুলেই...?
- সারপ্রাইজ!
- আর ক্যাডবেরি।
- আর এয়ারগান।
- হাই ফাইভ।
- হাই ফাইভ।


***

- অপাই তোমায় খুব মিস করে। কী আনন্দ দেখছ ওর?
- জানি।
- জানো যখন, তখন মাঝে মাঝেই আসনা কেন? সেই মাসে একবার তো একবার।
- অপাইকে আমার ওখানে পাঠিয়ে দাও না কেন মাঝে মাঝে।
- কোর্টের বারণ।
- খুব আইন মানতে শিখেছ, তাই না?
- না মানে। কোর্টে পইপই করে বলে দিয়েছে।
- কী বলেছে? যে ছেলে মায়ের কাছে গিয়ে মাঝেমাঝে থাকলে বখে যাবে?
- তা ঠিক নয়। তবে আইনকানুনের ব্যাপার তো।
- তুমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছ কেন?
- কাল অপাইয়ের জ্বর ছিল। রাতের দিকে। ওই এক মত। আজকে ফাইন।
- হোয়াই ক্যান নট ইউ সেন্ড অপাই টু মি অরিন্দম?
- হোয়াই ক্যান নট ইউ কাম ব্যাক রীতা?
- এত কিছুর পরে এই প্রশ্নটা শুনলে জাস্ট গা জ্বালা করে।
- অপাই মিস করে তোমায়। আমিও।
- অসহ্য। কোর্টে দাঁড়িয়ে পজেশন ব্যাটেলের সময় খাজা মিথ্যেগুলো না বললে চলছিল না? এখন মিস করার কথা বলছ।
- তখন রেগে ছিলাম। তাছাড়া মৃণালকে সহ্য করতে পারতাম না।
- এখন পার?
- রাগ গেছে। দুঃখ এসেছে।
- গ্রো আপ।
- কাম ব্যাক। ইউ উইল গ্রো ওল্ড। আই উইল গ্রো আপ উইথ অপাই।
- আজ চলি। মৃণাল নিড্‌স দ্য কার।
- উই নিড ইউ।
- এটা কলেজ ক্যান্টিন নয় অরিন্দম।
- কলিং বেলটা এখনও পাল্টাইনি। আওয়ার লাস্ট পারচেজ টুগেদার।
- ডিভোর্সের খরচটাও ডাচ করেছিলাম। টেকনিক্যালি আওয়ার লাস্ট পারচেজ টুগেদার।
- মৃণালের মত ভালো ইয়ে হয় না।
- তোমার বয়স হয়েছে। এসব মানায় না এখন।
- লাল তোমায় এখনও মানায়। ক্যাটক্যাটে লাল।
- মদে লাল হয়ে থাকে। চোখ। প্রত্যেকদিন রাত দশটার পরে। অপাই এখানেই ভালো আছে। চলি।
- অপাই ছাড়বে না এখন তোমায়।
- ছাড়ার এক্সপার্ট তো তুমি।
- তখন বয়স কম ছিল। রাগ ছিল। মৃণালের ওপর। তোমার ওপর।
- মৃণালের অনেক ঋণ আমার ওপর। আমার এই কেরিয়ার, সমস্ত কিছু। প্লাস হি হ্যাস বিন সেলফলেস। কেয়ারিং।
- ও তোমায় কেরিয়ার দিয়েছে। আমি তোমায় মোড়া দেব। ইউ অন মোড়া। আমি মেঝেয়। তোমার পায়ের কাছে। আটার ডেডিকেশনে। আমি আর অপাই।
- আই হ্যাভ টু গো।

***

সন্ধ্যা নরম হয়ে এলে অপাই অফিস থেকে ফেরে। টুং টুটুং টুং রিদ্‌মে কলিং বেল বাজায়। বাবা দরজা খুলে দেন। পাজামা, গেঞ্জি মাখানো বাবা। বাবার জবাব নেই। মুড়ি মাখা টু ফুলুরি ভাজা, বাবার হাতে মাখন রয়েছে।

হাত মুখ ধুয়ে মুড়ির বাটি হাতে অপাই ব্যালকনিতে এসে বসে। ব্যালকনির মোড়ায় বাবা, বাবার পায়ের কাছে মেঝেয় অপাই। আটার ডেডিকেশন। কারুর কোত্থাও যাওয়ার থাকে না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু