Skip to main content

চশমার খোঁজ

চশমাটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বড় মুশকিল হল। পড়ার টেবিল থেকে বাথরুমের তাক থেকে মাথার উপর, খুঁজতে কসুর করিনি। কিন্তু কোথাও নেই। ভুলুকে জিজ্ঞেস করলাম যদি সে চশমা কমোডের ভিতরে রেখে এসে থাকে, সে বোধ হয় ল্যাজ নেড়ে জানালে তেমন কিছু ঘটেনি।

শ্রীতমার মোবাইলে ফোন করলাম। খেইমেই করে উঠলে। বারো বছর আগে দূরে গেছে বলে এখনকার চশমার খবর রাখবে না? এ কি মনুপ্রণীত বিধান? মহামুশকিল।

সিগারেট জ্বালবার চেষ্টা করলাম। বুঝলাম চশমা চোখে না থাকলে সিগারেটের স্বাদ পালটে যায় আর ফিল্টারের মাথায় দেশলাই লাগানোর কোনও মানে হয় না।

চশমা আর কোথায় থাকতে পারে? কী মনে হওয়ায় চট করে একটু ফ্রীজের ভিতর হাতড়ে দেখে এলাম। নেই। আর ফ্রীজে মেয়োনিজের বদলে ময়শ্চারাইজিং ক্রীম রয়েছে। সেটা এক প্রকার অনভিপ্রেত ভাবে জানলাম। জিভের তো চশমা লাগে না।ফিরে এসে ড্রেসিংটেবিল থেকে ময়শ্চারাইজিং ক্রীমের ডিবেটা তুলে আবর্জনার বাক্সে ফেলে দিলাম। চিন্তা বাড়ছে। 

এখনও বিকেলের মরা আলো রয়েছে। অবশ্য ভেবে দেখলে টিউবলাইটও রয়েছে। কীসের ভাবনা? আলো কম বলেই হয়তো নজরে পড়ছে না। লাফ দিয়ে উঠে টিউবলাইটের স্যুইচ দিলাম। বনবনে ফ্যানে ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করল। ফিরে গিয়ে স্যুইচ বন্ধ করলাম। টিভিটা বন্ধ হয়ে গিয়ে একপ্রকার নিশ্চিন্দি। শুধু খুন রাহাজানি আর স্ক্যান্ড্যাল।

মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে হবে। দিনটা রিওয়াইন্ড করতে হবে। চশমাটা গেল কোথায়? দয়াল চলে আসায় সুবিধে হল। দয়ালকে বললাম চট করে এক কাপ লিকার চশমা বানিয়ে আনতে আর চা খুঁজে দেখতে। দয়ালটা আবার দিনদিন বখে যাচ্ছে বা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে বা দু'টোই। সে ইশারায় যা জানালে তার মানে হয় যে আমার চশমার নেশা বা চোখে চা কোনটাই নেই। এসবই নাকী আমার মনগড়া। বোঝ। লে হালুয়া। দয়াল "ঘরের যা অবস্থা করে রেখেছ, সাফ না করলেই নয়" বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলে কিন্তু খপাৎ করে তার আঁচল কামড়ে হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে ডাকলাম।

তক্ষুনি মাথায় এলো; দয়াল তো পাজামা আর ফতুয়া পরা মানুষ। তাঁতের আঁচল এলো কোথা থেকে?
শ্রীতমার কোঁচকানো ভুরু সহসা নরম হয়ে এলো।
"এমন ছটফট কর কেন বুড়ো? কত চিন্তা আমার তোমায় নিয়ে", শ্রীতমার গলায় শিউলির কারখানা আছে। আমার পার্সোনাল থিওরি।

আর একটা বিশেষ ব্যাপার আছে শ্রীতমার কণ্ঠস্বর আর ওর গায়ের গন্ধে। চোখের ঘোলাটে ভাবটা কেটে গেল বিলকুল। রোজ যেমন যায়। মনের শ্যাওলাও ডেটলে ফিনাইলে সাফ হয়ে যায়। দয়ালের বারো বছর আগের চলে যাওয়া স্পষ্ট মনে পড়ে। বড় ভালোবাসার মানুষ ছিল, কোলেপিঠে বড় তো ওই করেছে। শ্রীতমাকেও বড় আদরের সাথে সামাল দিয়ে রাখত। বারো বছর আগে ওর বেমক্কা চলে যাওয়া; উফ। ভাবতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, চোখ চিকচিক করে, বুক চিনচিন করে।

চট করে একবার দয়ালের ছবির সামনে গিয়ে কুঁইকুঁই করে স্বীকার করে এলাম যে চশমা হারানোর অভ্যাস আদতে তার, আমার নয়। আর লেজ নাড়ার ডিপার্টমেন্টটা আমার। এবং আমি থাকতে তার ছবির ফ্রেমের নাম ভুলু হবে কেন? সে ছবির ফ্রেমকে ভুলু বলে ডেকেছি বলে লেজ নেড়ে, ঘেউ সুরে একটা অথেনটিক "সরি"ও বলে ফেললাম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু