Skip to main content

শিঙ্গাড়া পায়েস

রাতের গঙ্গার একটা থমথমে ভূতভূত ব্যাপার আছে। স্ট্র্যান্ড ঘাটে অন্ধকার স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। রাস্তার বাতিগুলো নিভে গেছে। 

রাস্তা, ফুটপাথ, ঘাটের বেঞ্চিগুলো কালোয় মিশে গেছে। গঙ্গার রং ম্যাটম্যাটে কালো। খান তিনেক নৌকা ঘাটে লাগানো, তার একটার বুকে হ্যারিকেন; অন্ধকারের মেজাজে সামান্য আবছা হলুদ মিশিয়ে দিচ্ছে। 

ঠাণ্ডায় কামড় রয়েছে। জানুয়ারির রাত বলে কথা। সোয়েটারের ওপরের কান মাথা মোড়ানো শাল। অন্ধকার হাতড়ে একটা বেঞ্চি খুঁজে বসলে অর্ধেন্দু। শিশিরে ভেজা বেঞ্চির কাঠ। ছ্যাঁত লাগে। একটা সিগারেট ধরিয়ে মিহি সুরে গান ধরতে হল। 

" দিন ঢল যায়ে হায়, রাত না যায়ে; তু তো না আয়ে তেরি ইয়াদ সতায়ে"।

দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে যাবে এমন সময় কাঁধে হাতের চাপ টের পেলে অর্ধেন্দু। পৃথা এসেছে। 

- এত দেরী হল? 
- কোথায় দেরী! দেড়টায় আসার কথা ছিল তো। এখন সবে একটা তেত্রিশ।
- বস।
- হাত ধরে টানাটানি করবি না। 
- কবে করেছি?
- আজ যদি করিস?
- আজ কেন করব?
-  এত রাত। আমি একা মেয়ে। 
- ধুস। বস। 
- এনেছিস?
- ইয়ে লো। তুই এনেছিস?
- ইয়ে লো।

মুচুর মুচুর খানিকক্ষণ খাওয়াদাওয়া চলল। অর্ধেন্দু হাপুস হুপুস করে গুড়ের পায়েস খেলে। পৃথা খেলে নিউ মোদক স্যুইট্‌সের ফুলকপির শিঙ্গাড়া। 

- এত রাত্রে শিঙাড়া খেলি। অ্যাসিড করবে। 
- থাম। জ্ঞান দিস না। 
- কাল আবার তোর ভোরে ওঠা। দই চিড়ে ফিড়ে খেতে হবে।
- তোর বাবার কী?
- নিউ মোদকের শিঙ্গাড়ায় কী এমন চিজ আছে?
- টালিগঞ্জে কোথাও পাব বল?
- বাবু। 
- হুঁ। 
- ওপারে জগদ্দল। 
- তো? 
- জগদ্দলে জুট মিল। 
- তো?
- তুই না গ্র্যাজুয়েট? চাকরী জুটিয়ে নিতে পারবি না?
- তারপর?
- সেখানের দেহাতি বস্তিতে আমরা থাকব। 
- তারপর?
- সব কথায় তারপর আনিস কেন। অখাদ্য তুই। 
- মিল বন্ধ আছে না?
- সব কথায় লজিক আনিস কেন?
- লজিক আনব না?
- আনবি না। ঐ নৌকাটাকে কুড়িটা টাকা দিলে আমাদের ওপারে ছেড়ে আসবে। 
- এত রাত্রে গঙ্গা পেরোব রে?
- সাধে বলি ন্যাকা ভূত। এত রাত্রে ঘাটের ধারে আসতে ভয় লাগল না। সেই ফটোকগোরা থেকে দুমদাম চলে এলি। সে বেলা ভয় লাগল না?
- ওপারে গিয়ে করবটা কী?
- ওই যে। তুই জুট মিলে চাকরী নিবি। দেহাতি পাড়ায় একটা টিনের চালার ঘর নেব আমরা। 
- আমি হ্যাঁ বললে যেন তুই আমার সাথে পালাতিস? তুই পিএইচ ডি। আমি গ্র্যাজুয়েশন প্লাস টিউশানি থেকে টু পাইস। 
- তুই অখাদ্য। তোর যেন কোনদিন মেয়ে না জোটে। 
- যাস না রে।
- ধরে রাখ। ওপারে চ। জুট মিলে চাকরী নে। 
- যাস না। 
- ওপারে চ। 
- ধুস। 
- তুই একটা অখাদ্য। বললাম না হাত ধরবি না। এক চড় মারব। 
- হুঁ। 
- বাবু। তুই কাঁদছিস? এই তুই বীরপুরুষ!
- সরি। 
- অখাদ্য। 
- হুঁ। 
- এবারে যেতে হবে।
- যাবি?
- হুঁ। 
- শোন। আমি কিন্তু তোর হাত ধরতে পারি। 
- নাহ! পারিস না। 
- পারি। 
- জোর করলে থাপ্পড় খাবি বাবু। 
- ইন ফ্যাক্ট। তুই থাপ্পড়ও মারতে পারবি। 
- কী সব বলছিস বাবু। 
- ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাব। পা না পাওয়ার গভীরে যেতে দেরী লাগবে না। কিন্তু বুকের ভিতরটা ফেটে অজ্ঞান হওয়ার আগে নিচে তোর সঙ্গে ধাক্কা লাগবে। এই, তখন সোয়া দু'টো হবে!  ততক্ষণে তুই অবিশ্যি এক্কেবারে কাদা। 
- বাবু!
- লজিক। ডিডাকশন। কত কিছু মিলিয়ে দেয়। তাই না?
- চুমু খাবি বাবু? 
- খইয়ের স্বাদ মেয়ানো লাগলে? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু