Skip to main content

মদন মিহির

বিড়িটা নিভিয়ে পকেটে রাখলেন মদন। আরও দু'টান দেওয়া যাবে। তবে এখন সময় নেই।
মিহির দত্ত পান চিবুতে চিবুতে বেরোলেন এইমাত্র; রাতের খাওয়ার শেষে হাঁটতে বেরোনোর অভ্যেস তার পুরোনো।
আজ এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করা যাবে না মিহিরবাবুকে। মধু মল্লিক লেন পেরিয়ে সর্দার স্ট্রিটের অন্য প্রান্তে বিনোদের পানের দোকান। সেখান থেকে একটা গোল্ডফ্লেক নিয়ে বিনোদের সাথে সামান্য গুলতানি চলে তার। তারপর হেঁটে ফেরা। মদনের মুখস্ত।
বিনোদের দোকান থেকে বেরিয়ে ধিমে গতিতে ফিরতি হাঁটা শুরু করেন মিহির দত্ত। রোজকার মত। পিছু পিছু মদন, বেড়ালের মত।
মিহিরবাবু অনুভব করতে পারেন; সময় হয়ে এসেছে। সে এসেছে। নাড়ির টান। যাবে কোথায়?
**
সুমিতার চিন্তা কমে না। স্বামী মিহিরবাবুকে যমের মত ভয় পান তিনি, তাকে প্রশ্নটা করা যায় না। আবার অন্য কাউকে শুধোলেও কী না কী ভেবে বসবে। অথচ সুমিতা নিশ্চিত। একদম নিশ্চিত। মিহিরবাবু গোপনে মন্ত্রপূত বিড়ি খান। আগেই সন্দেহ হত, কিন্তু এখন নিশ্চিত। গোল্ডফ্লেক সিগারেট খাওয়া মিহিরবাবুর বহুদিনের অভ্যেস। অথচ প্রত্যেক ছ'সাত হপ্তা অন্তর তার পকেট থেকে আধ খাওয়া বিড়ির টুকরো আবিষ্কার করেন সুমিতা। গত ছয় সাত বছর ধরে এমনটাই চলছে। আর এ বিড়ি যে মন্ত্রপূত তা বেশ জানেন সুমিতা, এ বিড়ি যেদিন ফোঁকেন সেদিন থেকেই মিহিরবাবুর বারো চোদ্দ বছর পুরোনো বাতের ব্যথাটা গায়েব হয়ে যায়। কিছু হপ্তা পর অবিশ্যি সে ব্যথা ফেরতও আসে, থাকে আরও কিছু হপ্তা। তবে মন্ত্রপূত বিড়ি হয়তো সহজে মেলে না, তাই আবার কিছুদিন সে ব্যথা সহ্যও করতে হয় মিহিরবাবুকে।
সুমিতা এ'সব আন্দাজ করেন মাত্র। তবে মিহিরবাবুকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস তার নেই। যা বিটকেল মেজাজ।
**
তখন থেকে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। ব্যাটা হাঁটতে বেরোতে আজ এত দেরি করছে কেন? যত্তসব। এদিকে বাতের ব্যথাটা না থাকলে নিজের নামটাও গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ব্যাটা বসতে পেয়ে এখন শুতে চায়। একরাশ বিরক্তি গোল্ডফ্লেকের ধুঁয়োর উড়িয়ে দিলেন মিহির দত্ত।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু