Skip to main content

গান ও স্মৃতি - ২



কিছু গান ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে থাকে কথায় নয়, সুরে নয়, এমনকি গায়কীতেও নয়। চলকে ওঠা মুহূর্তে আটকে থাকে কিছু গান; কাঁচা নীল রঙে আটক পড়া ছোট্ট সবুজ পোকাটা যেমন। তেমন।
তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ। বা সিক্স। সহজে বলতে গেলে হাফপ্যান্টই তখন নিয়ম। মামাবাড়ি।
সন্ধ্যাবেলা। 
হাত পা ধুয়ে এসে বসেছি টিভির ঘরে। দাদু আনন্দবাজারের শব্দ-ছক কষছেন। দিদা ঘরে ঢুকলেন, হাতে স্টিলের ঢাউস বাটি। বাটি ভরা দুধ; তাতে মুড়ি আর আম। পাশেই ঠাকুরঘর থেকে ভেসে আসা ধূপের গন্ধ আর হিমসাগর মিলে মন ভারী করা ব্যাপার। টিভিতে তখন বাংলা সিনেমা। সাগরিকা। গানের সিকুয়েন্স। উত্তম অত্যন্ত কাঁচা ভাবে পিয়ানো বাজানোর চেষ্টা করে চলেছেন। পিয়ানোর ওপরে ফুলদানি; উত্তমের মুখে তার চেয়েও দৃষ্টিকটু ভাবে সাজানো হাসি।

“সেই রূপকথারই দেশে, যে রং আমি কুড়িয়ে পেলেম প্রাণে; সুর হয়ে তাই ঝরে আমার গানে
তাই খুশির সীমা নাই, বাতাসে সে তার মধুর ছোঁয়া পাই
জানি না আজ হৃদয় কোথায় হারাই বারে বারে 
সাত সাগরের পাড়ে আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে”।

ঠিক সেই সময়। ঠিক সেই সময়। পাশের বাড়ি থেকে স্বাতীদি এসেছিলে দিদার কাছে ছুঁচ চাইতে। ছুঁচ। ডেফিনিটলি মনে আছে। স্বাতীদি পাশের বাড়ির স্বপনমামার মেয়ে। দিল্লীতে থেকে পড়াশোনা করত। গ্র্যাজুয়েশন। সম্ভবত ইকনমিক্সে। বয়েসে কত বড়। কত ভালো। কী ভালো লাগার হাসি স্বাতীদির। স্বাতীদি সেদিন নীল স্কার্ট পরে এসেছিল। জ্বলজ্বল করছিল স্বাতীদি, হিমসাগর, ধূপের গন্ধের মিশেলের দেমাককে ঠাণ্ডা করে দিয়েছিল নিমেষে। বুকে ভুরভুর ভালো লাগা গন্ধ। সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল দুধ মুড়িতে চিনি কম পড়েছে বোধ হয়। সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল একটা পিয়ানোর বড় দরকার। 
“বাবু কত বড় হয়ে গেছিস”, বলে স্বাতীদি গাল টিপে দিয়েছিল। হিমসাগর, ভারতদর্শন ধূপে স্বাতীদির গন্ধ আছে। আজও।

“আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা”র সুরে স্বাতীদি আছে। আজও।
শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে একটা সঞ্জীবে মেজাজ আছে কী?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু