Skip to main content

সমুর দাদু

দামোদর পাড়ে ছপাত ছপাত করে ভাঙছিলে।
পাড়ের নরমে নরমে ক্ষয়ে যাওয়া টের পাওয়া যায় না।
ওদিকে রাত সবে জমাট বাঁধতে শুরু করেছিল। বাতাসে শেষ শীতের কুঁইকুঁই।
পাড়ের ঘাস বালি পাথরের নরম ভিজেভাব খালি পায়ে মন্দ লাগছিল না সুমনের। সিগারেটের প্যাকেট প্যান্টের পকেটে রয়ে গেছে বলে সামান্য উশখুশ। ধরাবস্ত্র পরার সময় খেয়াল ছিল না। খানিক আগেই ডুব দিয়ে উঠে এসেছে সে। গা ভালো করে মোছা হয়নি, শিরশিরানি গা জুড়ে। ভিড় বাঁচিয়ে একটু সরে আসতেই হত।
সমু খেয়াল করেছে তার সরে আসা। পিছুপিছু চলে এসেছে।
- বাবা!
- কী রে সমু! অন্ধকারে একা এলি?
- তুমিও তো এলে।
- আমি বড়।
- দাদু বলেছিল দাদু মারা গেলে আমি বড় হয়ে যাব।
- বটে? তাহলে আজ থেকে তুই অ্যাডাল্ট।
- তোমার কষ্ট হচ্ছে বাবা?
- হচ্ছে। তোর আম্মারও আজ বড় কষ্ট রে।
- আমারও কষ্ট হচ্ছে। দাদু আর মর্নিং ওয়াকে বেরোবে না।
- আমার সাথে বেরোস মর্নিং ওয়াকে।
- দাদু গল্প বলত। গ্রীসের। রোমের। পারস্যের। মাচ্চুপিচুর।
- বলিস কী!
- হুঁ।
- আমি পড়াশোনা করে নেব। তোর সাথে মর্নিং ওয়াকের আগে।
- বাবা, চলো। সবাই ওদিকে।
- তুই তো বড় হয়ে গেছিস আজ থেকে। তুই একা ফিরে যা।
- তুমি অন্ধকারে একা যেতে পারবে বাবা?
- আমিও বড় তো। একা যেতে অসুবিধে হবে না।
- তুমি এখনও বড়?
- মানে? বড় হলে রিভার্স গিয়ার নেই।
- না মানে, দাদু বলত...।
- কী বলত?
- দাদু বলত দাদু মারা গেলে আমি বড় হয়ে যাব আর তুমি বুড়ো হয়ে যাবে। বাচ্চা আর বুড়োদের তো একা থাকতে নেই। তুমি আমার সাথে চলো।
- এরপর আর কথা হয় না। চলো সমু সর্দার।
বাপ-ছেলে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে দামোদরের স্রোত ঘন হয়ে রাতকে গভীরে টেনে নিয়ে গেল।

Comments

Anonymous said…
Simply superb.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু