Skip to main content

অমলবাবু ও দোলযাত্রা

- অমলবাবু, দোল কবে?
- তেইশ। সম্ভবত।
- তেইশ?
- নয়? চব্বিশ কি?
- চব্বিশ?
- পঁচিশ হলে অবাক কাণ্ড হবে।
- পঁচিশ? 
- মার্চের তেইশ চব্বিশ পঁচিশের মধ্যে যেটা বুধ হবে সে'টায় দোল। সে শুক্কুরে আবার গুড ফ্রাইডে। বিস্যুদে সিএল নিয়ে টানা পুরী লেভেল ছুটি।
- ধুর। ফাল্গুনের কতোয় পড়েছে?
- ফা...হোয়াট? ফাল্গুন?
- তিথি দেখতে হবে না?
- সকালে রঙ। দুপুরে ভাঙ। এর আর তিথি কী?
- ধুস। পূর্ণিমা কখন লাগছে?
- ইয়ে। অফিস হলিডে লিস্ট ছাড়া তিথিনক্ষত্র ঠিক চিনি না।

**

- এটা কী অমলবাবু?
- রেসিগনেশন।
- সেটা আমি পড়তে পেরেছি। বাট হোয়াই?
- ভূতের ভয়।
- ভূত?
- ভূত।
- অফিসে?
- অফিসে।
- মানে?
- মানে ওই আকাশকুমার মল্লিক।
- আকাশ কী করেছে?
- সেদিন তারিখ জানতে চাইলেন।
- ভূতেরা তারিখ জানতে চায়?
- আজ্ঞে না। আই মিন, উনি দোল কবে সে'টা জানতে চাইলেন। মার্চের কত তারিখে নয়। ফাল্গুনের কত তারিখে।
- দ্য ফা...। ফাল্গুন। দ্যাটস অড। তা বলে আকাশকুমার ভূত হতে যাবে কেন? দিব্যি সংসারী ছোকরা মানুষ। হপ্তায় দু'টো করে সিনেমা দেখে। গোল্ডফ্লেক খায়। বার্গম্যান নিয়ে কথা বলে।
- আজ্ঞে। ইয়ে। না মানে...।
- বলুন।
- না মানে...ওর গায়ের গন্ধটা...।
- গায়ের গন্ধ? আঁশটে?
- আজ্ঞে না। ধুনো), শাঁকালু আর সন্দেশ মেশানো। মন ভালো করা সে গন্ধটা আগে ছিল না। সেদিন থেকেই আছে।
- মানে?
- মানে ও গন্ধটা আমার দিদার গায়ের। ধার্মিক বোমা ছিলেন স্যার, মনের মধ্যে ভক্তির বারুদ ঠেসে ভরা ছিল। এগজ্যাক্ট সে গন্ধ দিদার গা থেকে অনবরত বেরোত। মন ভরে যেত। স্নেহ লেভেলের ব্যাপার-স্যাপার। দিদাও পৌষ পড়লেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করতেন, কতই ফাল্গুন দোল? কতই ফাল্গুন দোল? পূর্ণিমা কখন লাগছে? বাড়িতে রাধাকৃষ্ণর পুজো হত কিনা।
- সো?
- তো আমার দিদা ফিরে এসেছেন। এসে আকাশকুমারের ঘাড়ে চেপেছেন। মরার আগের বছর যখন এক সন্ধ্যেবেলা বুড়ি দোল কবে দোল কবে বলে ঘ্যানরপ্যানর শুরু করেছিল তখন সবে আনন্দবাজারের ক্রসওয়ার্ডে ফোকাসটা তৈরি হচ্ছিল। বেণীমাধব শীলের এক কপি ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলাম নিজে দেখে নাও। সে ইনসাল্ট বুড়ি ভোলেনি।আকাশকুমারকে পাকড়াও করেছে তাই।
- হুম। রেসিগনেশন তোলা থাক। ক'দিন ছুটি নিয়ে ভাবুন। পারলে একটু চিকিৎসা করান। মগজের।

***

অফিস থেকে বেরিয়ে ভারী নিশ্চিন্ত বোধ করছিলেন অমলবাবু। দিদার স্নেহ মায়া সব ভালো, তাই বলে দিদার ভূত? আকাশকুমারের জন্য একটু মন কেমন করছিল বটে। তবে আপনি বাঁচলে বাপের নাম। টাকা আজ নেই কাল হবে।

আজ আর বাস নয়। চার টাকার আদা লজেন্সের প্যাকেট কিনে সোজা একটা ট্যাক্সিতে চড়ে বসলেন অমলবাবু।

"ঢাকুরিয়া চলিয়ে" বলে লজেন্সের প্যাকেট ছিঁড়ে এক সাথে চারটে লজেন্স মুখে দিয়ে প্যাকেটটা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেললেন তিনি। 

"আপনি জিনিষপত্র বড় ছুঁড়েটুড়ে ফেলেন স্যার। কার কখন কীভাবে চোট লাগবে কিছু বলা যায়?", ট্যাক্সি ড্রাইভারের মিনমিনে কণ্ঠে চমকে সামনের দিকে তাকালেন অমলবাবু। সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভিতরটা হিম হয়ে চোখের সামনেটা গোলাপি আবছায়ায় ভরে গেল।

ড্রাইভারের বিমর্ষ মুখখানা অবিকল বেণীমাধব শীলে মত।

"এবারের দোলটা কবে?", শুকনো গলা বেয়ে প্রশ্নটা কী ভাবে বেরিয়ে এসেছিল তা আজও ঠাহর করতে পারেন না অমলবাবু। 

অজ্ঞান হওয়ার আগে বুক ঠাণ্ডা করে দেওয়া গলায় স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলেন "নাহ! ফাল্গুনটা বৃথা গেল। এবার চৈত্রে। নয় তারিখ বোধ হয়"।

**
জ্ঞান ফিরেছিল তিন দিন পর। পরিবারের লোকজন ছাড়াও হসপিটাল বেড আলো করে দাঁড়য়ে ছিলেন বড়বাবু ও আকাশকুমার। তারাই জানালে কী ভাবে ট্যাক্সি ড্রাইভারের তৎপরতায় এ যাত্রা রক্ষে পেয়েছেন তিনি। আকাশকুমারই জানালে যে এহেন শরীরের দশার নিরিখে তার জন্য স্পেশ্যাল লিভ মকুব করা হয়েছে দোল পর্যন্ত অর্থাৎ আপ টু ট্যুয়েন্টি থার্ড মার্চ।

অমলবাবু টের পেলেন যে আকাশকুমারের গা থেকে দিদার মিঠে গন্ধটা বেমালুম হাওয়া। গোল্ডফ্লেকের বোঁটকা গন্ধে অনাবিল স্বস্তি নেমে এলো অমল চ্যাটার্জীর বুকে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু