Skip to main content

ট্রেন অফ থটস

ঘাসের ডগায় তুলতুল করছে শিশিরের ফোঁটাটা। উবু হয়ে বসে দেখছিলাম। ফোঁটাটা ভারে নুয়ে আসছিল।
ভেঙে পড়ার আগে টের পেলাম আর প্যাডেল করার প্রয়োজন নেই; কালভার্ট পেরিয়ে গেছে। এখন হাফ কিলোমিটার ঢালু। ব্রেক না ব্যবহার করলে সাইকেল শোঁ শোঁ ছুটবে। শোঁ শোঁ শোঁ।
ধাক্কা লাগে।  সিঁড়ির বাঁকের মুখে। নীল স্কার্ট, কাঁধ পর্যন্ত চুল। বোকামোর হাসিতে আরও অপ্রস্তুত হই।
দাদু হাত টেনে ধরে। গতি নিঃস্পন্দ হয়ে আসে দাদুর বুকে। "আলেক্সান্ডার সেলকার্কের কথা মনে পড়ে?"।
টান পড়ে চিন্তায়। বড় হলে ঘটর ঘটর ফ্যানের শব্দে কান চৌচির হয়ে আসে। ইন্টারভিউ রুমটার চোয়াল নড়া স্পষ্ট দেখতে পাই।

**
- নাহ। নাহ। এগুলো মিথ্যে। ডিসেপশন।
- কোনটাই ঘটেনি?
- নাহ।
- নীল স্কার্ট? অন্তত?
- আমার বান্ধবী। স্কুলের।
- বান্ধবী?
- স্কুল প্রেম।
- স্কুল প্রেম?
- প্রেম।
- দাদু?
- এগেইন। আমার। ম্যাটারনাল।
- রাস্তাটা? ঢালু?
- ফিগমেন্ট অফ মাই ইম্যাজিনেশন।
- সো রিয়াল।
- নীল স্কার্টের চেয়েও বেশি?
- ভিভিড। অস্বস্তিকর ভাবে ভিভিড।
- সিগারেট?
- নাহ। লেটস গেট অন উইথ দিস।
- শরীর নাও দিতে পারে।
- জাস্ট গেট অন উইথ দিস।

**
আলো ভারি হয়ে পকেট ভরে আসছিল। সিরিয়াসলি। মাস অফ লাইট। পকেট থেকে মুঠো মুঠো আলো খুবলে ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম ছাতের ওপারে। ফতুয়া ছিঁড়বে নাকি শেষে আলোর ভারে?
ক্লান্তি। নুয়ে আসছিলাম। ঘাসের ডগার শিশির দানাটার মত; ওর বয়স তো কম নয়।

নীল স্কার্ট ঝলসে গেল চোখের সামনে,  কতকটা আলোভার লাঘব হল। পাশের ছাদে খালি গায়ে সোনা মাখা ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন।পরনের ট্রাউজারটা শতচ্ছিন্ন। কিন্তু সোনালি দাড়িগোঁফ ছাপিয়ে কান ভাসানো হাসিটা অদ্ভুত।  ভালোবাসা, পরিচিতি আর অল্প ঝাল মেশানো।

**
- টিকিট?
- হুঁ?
- টিকিট?

ফোন বাড়িয়ে দিলাম। আইকার্ড দেখতে চাইলেন না। পাশে এসে বসলেন।
"আকাশের অবস্থা দেখেছেন? ফের ঢালবে"।

**

- ট্রেন? ট্রেনে ফেলে রাখলে?
- গোটাটাই তো ট্রেন। কন্টিনিউইটি।
- ফিলোসফি ঝেড়ো না। গেট মি আউট অফ হিয়ার।
- এখান থেকে বেরিয়ে কোথায়?
- ছাদের ওপাশে সে দাঁড়িয়েছিলে।
- সে?
- আমার মনে হয় সেলকার্ক।
- না। না। সেটা আমার দাদুর চিন্তা। দ্যাট টু ডায়িং হ্যালুসিনেশন।
- আমি ওকে দেখেছি। স্পষ্ট। ইট ক্যান নট বি।
- ডু নট অ্যাক্ট স্মার্ট। আমার আবিষ্কারে আমাকেই ঘোল খাওয়াবে সেটা হবে না।
- কীসের কী আবিষ্কার? নীল স্কার্ট। সেলকার্ক। শিশির।
- ওহ শাট আপ। দ্যাট ওয়াজ জাস্ট আ ডেমোন্সট্রেশন অফ হাউ ট্রেন অফ থট ইস সাপোজড টু ওয়ার্ক। এই থট রিফ্লেক্টরে তোমার মাথায় গুঁজে দেওয়া।
- স্বপ্ন।
- ননসেন্স। দ্যাটস ট্রুথ। আমার সত্যি, তোমায় এক্সপিরিয়েন্স করতে ধার দিয়েছি। প্র‍্যাক্টিকাল ডেমো। রিল্যাক্স।
- নীল স্কার্ট আমারই চিন্তা নয় সেটা কী করে বুঝব? এখানে কল্পনার প্রবেশ তো অবাধ দেখছি।
- কারণ এটা আমি পরিচালনা করছি। তাই। আমি জানি হোয়াট ইজ হোয়াট।
- হোয়াই দ্য ট্রেন??
- গতি। গতিতে না ফিরলে চিন্তার ট্রেন বাগ মানবে না।
- এরোপ্লেন কেন নয়?
- ট্রেনে গতি আরও ভালো অনুভুত হয়। চিন্তা আশ্রয় পায়। কমপার্টমেন্টস। লাইন মেপে চলে। আমার আবিষ্কারের তুমি এস-ওয়ান থেকে বি-থ্রি হয়ে এস-ফাইভে চলাফেরা করেছ অবাধে। এটা অস্বাভাবিক।
- নীল স্কার্টকে আমি চুমু খেয়েছি।
- ইউ আর সিক্।
- না সিরিয়াসলি।
- এ ভাবে লেগপুল করবে?
- লেগপুল নয়। ট্রাস্ট মি। নীল স্কার্ট সাথে এসেছিল। আধো নীলচে অন্ধকার ছিল। ঠোঁটের নরম ছিল। রীতিমত। জিভ।
- স্মুচ?
- টোট্যাল। মোর দ্যান ওয়ান্স।
- আহ! আমার রিয়ালিটি তুমি এগিয়ে নেবে কী করে? যত্তসব বাজে ঠাট্টা। 
- ওই যে। গতি ছিল। কল্পনার সাইকেলে। ট্রেনের সমানে ছুটেছিল ঢাল বেয়ে। কালভার্টের পরেই।
- কিন্তু তোমার চিন্তা আমি দেখেছি।
- নাহ! ট্রেনে আমায় একলা ছেড়েছিলে। বোর হচ্ছিলে হয়তো।
- থামো। ট্রেন আমারই প্লেস করা। সেখানে টিকিট চেকার বাদে কেউ ছিল না।
- তাকে বিশ্বাস করলে?
- করলাম। হাসছ যে বড়?
- ভারি কালো কোটে সে নীল স্কার্ট ঢেকেছিল। কী ধুন্ধুমার বৃষ্টি। কেমন নরম ভাবে পাশে এসে বসলে। তার নাম বৃষ্টি হলে মানায়।

***

বর্ধমান স্টেশনে হকারদের পুরি-আলুরদমের হাঁকডাকে তন্দ্রা নষ্ট হল। ট্রেন আধ ঘণ্টা লেট চলছিল।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু