Skip to main content

একুশ, বুল্টি ও বাঙালি

- বুল্টি।
- দাদা।
- বুল্টি। আমার গলার মধ্যে যে কন্সার্ন, থুড়ি, যে চিন্তা মিশে আছে সে'টা টের পাচ্ছিস?
- আজ মা নিরামিষ রাঁধছে?
- সিরিয়াস বুল্টি। থুড়ি। ইয়ে। পরিস্থিতি গম্ভীর কিন্তু।
- ব্যাপার কী?
- আজকের দিনটা খেয়াল আছে?
- রোববার। তোর সকাল সকাল ওঠার কথা নয়।
- ধ্যার। ভাষা দিবস। একুশে। আমার ভায়ের রক্তে।
- ওহ। তাই তো।
- তাই তো মানে? আর কদ্দিন?
- কদ্দিন কী?
- কদ্দিন তুই বাংলা সাহিত্যকে অবহেলা করে অংবং ক্রিস্টি রোলিঙয়ে আটক থাকবি? সে'সব পড়। কিন্তু এবারে শরদিন্দু,  বিভূতিভূষণ না পড়লে যে আর চলবে না।
- চলবে  না?
- নাহ! আর যে যা করে করুক। আমার বোন বাঙালি হয়ে বাংলা পড়বে না, সে'টা আমার হজম হবে না। আর শোন। এ বিষয়ে তোর ইচ্ছে তৈরি করাটা জরুরী। কাজেই আমি দায়িত্ব নিয়ে কাল থেকে টেলিগ্রাফটা বন্ধ করে দিয়েছি। স্রেফ আনন্দবাজার।
- হোয়াট??
- হোয়াট নয়। বল "কী"।
- দাদা, প্লীজ।
- বুল্টি, তুই বাঙালি। ইংরেজিতে এত চমৎকার সব প্রবন্ধ লিখছিস। এবার বাংলায় লেখ! মানে লিখতেই হবে তোকে।
- কী মুশকিল। বাংলায় লিখতে আমি কমফর্টেবল নই। ইংলিশ মিডয়ামে পড়ছি বলেই হয়তো...।
- এক্সকিউজ.. থুড়ি...অজুহাত দিস না বুল্টি।  ইংরেজি মাধ্যমে আমিও পড়েছি।
- আই অ্যাম রিয়েলি প্রাউড যে তুই বাংলায় এত ভালো দাদা। আমার পিছনে পড়লি কেন?
- প্রাউড? প্রাউড আবার কী? বাঙালি মেয়ে হয়ে গর্ব বলতে পারিস না? আরে বাংলার মত মিষ্টি ভাষা হয় না। বাংলাই সেরা।
- দাদা।
- বুল্টি।
- ল্যাঙ্গুয়েজ সুইটনেস ইনডেক্স আছে কোনও?
- এ আবার কেমন কথা?
- তুই ভারতীয়। তুই মানিস যে ভারতবর্ষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ?
- না।
- গুড। আমিও মানি না। আচ্ছা, তোকে কেউ যদি বলে রোজ বাইশবার তেরঙ্গার সামনে সেলাম ঠুকতেই হবে?
- আমার ইয়ে...তেরঙ্গায় অ্যালার্জি নেই। তবে কেউ হুকুম করলে গা জ্বালা করে।
- যদি কেউ বলে সকাল সকাল চার বার বন্দেমাতরম না বললে তোক জব্বর কানমলা দেওয়া হবে, তাহলে?
- আরে এ তো আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
- বেশ। এবার হে স্বাধীন ব্যক্তি, আমার ইংলিশ ডেইলি যদি ইমিডিয়েটলি চালু না করেছ, তুমি দাদা বলে আমি তোমার বাঙালি কলারটা ছেড়ে দেব না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু