Skip to main content

মোরন দশা

-   বই?
-   বই।
-   বাব্বা! মিউজিয়াম টিউজিয়ামের বাইরে এ জিনিষ তো সহজে দেখা যায় না।  পেলে কোথা থেকে?
-   জেনিভা থেকে পাঠানো। পাঠিয়েছেন প্রফেসর ভনল্যান্থেন। এ কেতাবে উনিশশো সত্তর বা আশির দশকের ইংরেজি ব্যবহারের চমৎকার সমস্ত নিদর্শন রয়েছে।
-   নাইনটিন সেভেন্টি? বল কী! সাড়ে চারশো বছর আগের বই? দেখে মনে হয় না কিন্তু।
-   কেমব্রিজে একটা কনফারেন্সে আলাপ এই ভনল্যান্থেনের সাথে। আর্ক্‌টিকের সাহিত্যে আমাদের দু’জনেরই সবিশেষ আগ্রহ। সেই থেকে মাঝেসাঝে ভিডিও বার্তালাপ হয়ই।   বার্নে ভদ্রলোকের দাদুর বাড়ির এক কোণে এই বই পড়েছিল। ইংরেজিতে ওনার উৎসাহ বিশেষ নেই। উনি ভাবলেন আমার আগ্রহ থাকতে পারে। তাই পাঠিয়ে দিলেন।
-   বটে! তা বইটা তো দেখছি আদিম ইংরেজিতে লেখা।
-   হ্যাঁ।
-   বিষয়টা কী?
-   নাটক মনে হচ্ছে। সামাজিক প্লট। বিষয়টা সম্ভবত তৎকালীন সমাজব্যবস্থা।
-   কী জানলে? সে’সময়কার সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধে?
-   এ ভাষা বড় খটমট। সহজে এগোতে পারছি না। সম্যক বুঝতে সময় লাগবে। তবে যে’টা ইতিমধ্যে ঠাহর করতে পেরেছি সে’টা হল সে সময়কার ভাষা কতটা অদ্ভুত ছিল।
-   হরফ তো একই দেখছি। চেনা শব্দও বেশ রয়েছে। তবু মানে ঠাহর হচ্ছে না।
-   ওই যে বললাম। অদ্ভুত।
-   কী’রকম?
-   এই যেমন ধর আমরা যে বলি “You are a fucking moron”, সে’টাই সেই আদিম ইংরেজিতে কীভাবে বলা হত জানো?
-   কী ভাবে?
-   “I disagree with you”
-   ব্যাস?
-   দ্যাটস অল। “I disagree with you”। এমনকি “You are an imbecile”ও নয়। শুধু “I do not agree with you”।
-   আরিব্বাস! এটুকু বললেই হয়ে যেত তখনকার দিনে?
-   ভাবো। সে আদিম যুগেও অভিব্যক্তির ইকনমি কতটা ছিল।
-   সাঙ্ঘাতিক।
-   আবার যেমন ধর “You are a damned pseudo”, এটাই তখনকার যুগের ইংরেজিতে হয়ে যাবে “I do not understand the meaning of what you have just said”
-   বোঝ! কী কাণ্ড। আর?
-   আর যেমন ধর। “You are a x-tard”, আমরা এমন কথা আজকাল আকছার ব্যবহার করি! অথচ সে’সময়ে কেউ এমন ভাবে বলতই না। তখন বলা হত “I do not like X”
-   এমন হালকা মেজাজে কথাবার্তা! লোককে বোঝানো যেত?
-   যেত বলেই মনে হয়। ভুলে যেওনা না মানুষ তখনও গল্প কবিতা লিখছে। প্রেমে পড়ছে, রাজ্য চালাচ্ছে।
-   অভাবনীয়।
-   অভাবনীয়ই বটে। আসলে অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া এসে ভাষাকে পালটে দিয়েছি; বলা ভালো সমৃদ্ধ করেছিল। শুধু ইংরেজি কেন, সমস্ত ভাষাই ফুলে ফেঁপে উঠেছিল সেই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্কের আবহে।
-   মানে একুশ শতকের শুরু দিকে বলছ তো?
-   করেক্ট। ভাষা আর কলেক্টিভ ইমোশনের দিক থেকে সে এক যুগান্তকারী সময়। ইনফ্লেক্সন পয়েন্ট বলতে পারো।
-   নাহ! বইটা নেড়েচেড়ে দেখতেই হচ্ছে।
-   হ্যাঁ। নিশ্চই দেখবে’খন। তার আগে জরুরী কথাটা বলে নিই। বলছিলাম ও পাড়ার নিলু ভৌমিককে চেনা আছে?
-   নগেন হালদারের পাশের বাড়ি? যার বড় ছেলে উকিল আর মেজোছেলে কেমিস্ট?
-   হ্যাঁ। সেই। শুনেছ তিনি কী বলেছেন? দিদি নম্বর ওয়ান অনুষ্ঠান দেখলে নাকি তাঁর বমি আসে।
-   নিলু ভৌমিক বলেছে এ ক’থা? সেক্সিস্ট হারামি। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
-   চল গিয়ে ওর নাক ভেঙে আসি।
-   কয়েকটা পাঁজরা ভাঙলেও হত না? পাঁজরায় মোচড় দিতে না পারলে মনেই হয় না ডিবেট করছি।
-   বেশ। সে হবে’খন। চল। নগেনবাবুর সঙ্গে ডিবেটটা সেরে আসি। আমি হকিস্টিক নিয়ে নিচ্ছি। তুমি বরং তোমার ব্লেডটা নিয়ে নিয়ো। হারামজাদার কী সাহস! দিদি নম্বর ওয়ান নিয়ে কথা। কই! দাদাগিরি বেলায় তো কিছুতে কিছু না! সেক্স-স্টার্ভড হারামি কোথাকার। চলো তুরন্ত। 

Comments

Anonymous said…
সাধু সাবধান !!! ভাগ্যিস কলমের গলা নেই।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু