Skip to main content

তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি

মহামুশকিল। রোজ বত্রিশটা সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে উঠে আসা। রোজ। রাতের খাওয়ার ঠিক আধ ঘণ্টা বাদে। নিয়ম করে। উইদাউট ফেল্‌।
মাংসের বাটি থেকে উঁকি মারা থ্যাবড়া মুখো আলুর মত চেনা এই রুট। বত্রিশ নম্বর সিঁড়ি টপকালেই ছাদের খড়খড়ে মেঝে। নিয়ম। স্যাটার্নের রোটেশন আর মারাকারির রিভোলিউশনের মত। অমোঘ।
এদিকে ব্যাপার অতি সামান্যই। নলি হাড়টা সড়াৎ করে শুষে নিতে গিয়েই ধড়াস করে হৃৎপিণ্ডটা গেল আটকে। ঠিক হ্যায়। অসুবিধে নেই। টেবিলে নিজের এঁটো হাতের মড়াকে রেখে উঠে আসতে হল। এই যা। এ আর এমন কী? দুমাদুম মানুষ মরছে, তাতে কার কী?বিশেষ করে সিঁড়িদের কিছু আসা যাওয়া উচিৎ নয়।
খোশমেজাজে দুদ্দাড়িয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছিলাম। খামোখা এই তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে পা পড়ায় মনটা গেল বেজায় খারাপ হয়ে। এ'সব কী? এ'সব কেন? মারা গেলাম; দ্যাট ইজ ওকে। কিন্তু তাই বলে ছাদের মুখে বাড়তি সিঁড়ি? আচমকার মৃত্যুর ওপর বিরক্তি এলো। তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়তেই হল। পার্লামেন্ট-ফেন্ট ভেবে মনে স্ফূর্তি আনার চেষ্টা করলাম। লাভ হল না। তবে দেখলাম ভূত হয়েও থুঁতনি চুলকানোয় বাঁধা নেই।
কে দিলে এই সিঁড়ি? এর পরে কি তবে ছাদ না চৌত্রিশ নম্বর সিঁড়ি এসে দাঁড়িয়ে গেছে? সিঁড়ি বাড়ছে কেন? তউবা তউবা। ঠিক এই মুহূর্তে একটা বড় আবিষ্কার হল। (ভূতদের জগতে আবিষ্কারকদের কদর কতটা? ভেবে লাভ নেই)। তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে টের পেলাম ভূতেরা গাঁট্টা খেতে রীতিমত সক্ষম। - বাবু! - বিন্তি তুই? - নয়তো কি আমার ভূত? - হুঁ? - আরে ঠাট্টা ঠাট্টা। ভূতই তো। - কবে হল?
- বিন্তি। মনে পড়ে? ক্লাস ইলেভেন বোধ হয়। বাবু ও পাশে কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ও ছাতেতে বিন্তি বসে আমার বিশ্বাস। বিন্তি ওপারে বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, বাবু ব্যাটা ল্যাদিছে ওপারে।
- দু'বছর। ক্যানসার। - আমি দু'মিনিট। নলি হাড়। - বাবু। - হুঁ। - কেমন আছিস? - বিন্তি। ভালো রে। কপাল দেখ। গতকালই শেষ হয়েছে। শরদিন্দু। - বাবু। - আজ আমি শেষ হলাম। - বাবু। বিয়ে করবি? - বিন্তি। - আজও বাঁধা বাবু? - হি হি। - বিন্তি। তোদের ছাতের ডালিয়া। ছাতের পাঁচিলে আচারের বয়াম। - তোদের ছাতে রাখা আধ ভাঙা চেয়ারখানা। - বিকেল ছিল তখন। - বিকেল। রেডিও। অ্যান্টেনা। - বিন্তি। - বাবু।
- ঝামেলা বলে ঝামেলা? ভয়ের চোটে আর সিঁড়ি ভাঙ্গিনি। যদি এর পরেও ছাদ না থাকে বাবু? যদি চোদ্দ নম্বর সিঁড়ি এসে মাতব্বরি করে? আবার ছাতের মায়া বড় মায়া রে। প্রাণে ধরে নেমেও যেতে পারিনি।
- শাদি করেগা? - ভাগ। ভূতের বিয়ে! ভাগ্যিস তেরো নম্বর সিঁড়িতে এসে পড়লি। তাই না দেখা হল? - তেরো? বলিস কী! এ তো তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি। - না। আমি তো তেরো নম্বরের সিঁড়িতে আটকে। সেই দু'বছর থেকে। সে বড় বিশ্রী ব্যাপার। ছোটবেলা থেকে জানি, বারো নম্বর সিঁড়ি পেরোলেই ছাদ। শ্যাওলার গন্ধ। কিন্তু দেখ কাণ্ড। এসে পড়লাম তেরো নম্বর সিঁড়িতে। - কী সাঙ্ঘাতিক ঝামেলা।
- উপায় নেই। করতেই হবে। বেঁচে থাকতে বিয়ের পিঁড়ি কোইনসাইড করানো গেল না যখন, দুই মড়ায় মিলে বিয়ের সিঁড়িটা রিফিউজ করার মানেই হয় না।
- বিন্তি রে। আমি ভাবছিলাম এটা তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি। বত্রিশটা সিঁড়ি পেরিয়ে রোজ ছাতে উঠি। আজ ছাদ পেলাম না। পেলাম নতুন সিঁড়ি। - কী কাণ্ড! - সিঁড়ি মিশে গেছে। - লাও ঠ্যালা। - লাও ঠ্যালা। - বাবু। বিয়ে করবি? - বিয়েতে বড় ঝামেলা রে।
- করবি না?

Comments

Mohua Roy said…
Imagination creativity and expression e sharey eksho

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু