Skip to main content

জাকারবার্গের গল্প

- হাই।
- হ্যালো।
- বসুন, দাঁড়িয়ে কেন?
- থ্যাঙ্ক ইউ।
- কেমন আছেন মিস্টার অমু?
- ওই একরকম। 
- জল?
- নাহ! 
- কফি?
- ব্ল্যাক।
- বলুন।
- বলবেন তো আপনি মিস্টার জাকারবার্গ। ডেকেছেন আপনি।
- ওহ্‌। আমার বলার দিন অবশ্য শেষ। তবে আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছেটা দানা বেঁধেছিল। 
- আমারও বেশ লাগছে আপনার সাথে দেখা করে।
- আমাদের হাতে সময় বড় কম। পুরো অফিসের এই ঘরটাই খালি দখলে আছে। থাকবে আরও দশ মিনিট।
- তারপর এটাও ক্রোক হবে?
- স্বাভাবিক।
- এহ। কফিটা বড্ড ভালো ছিল। দ্বিতীয় কাপের বোধ হয় আর সময় নেই।
- নেই বোধহয়।
- আপনার আগ্রহ হয় না? জানতে? 
- আগ্রহের সীমা আছে বলুন? পরাশর বর্মা কেন সেরা বাঙালি গোয়েন্দা নয়, এই ভেবে কম হদ্দ হয়েছি? লোকে বিছানার বাইরে ঘুরতে যায় কেন? বাংলা ভাষা সাধু থেকে সাধুতর না হয় চলিতে পালক ঝেড়ে ফেলল কেন?
- আচ্ছা বেশ বেশ। হ্যাঁ। আগ্রহের সীমা থাকা উচিৎও না। তবে আমি বলছিলাম, এই যে ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে;  দু'মাসের মধ্যে এমন তামাম একটা অনলাইন সোশ্যাল সাম্রাজ্য ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল; অবাক লাগছে না? এই যে মিডিয়া হন্যে হয়ে আমায় খুঁজে বেড়ালো উত্তরের জন্য কিন্তু আমার টিকিটিরও দেখা পেলনা,  এদিকে এই যে আপনি; কলকাতা থেকে উড়ে এসে এখন সপাট আমার সামনে বসে। আগ্রহ হচ্ছে না? 
- এদ্দুর যখন ডেকে এনেছেন, তখন সে আগ্রহ ঘুচবেই; সে বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমাদের তো আবার সময় কম!
- আজ থেকে ছ'মাস আগে ফেসবুকের ইউজার সংখ্যা ছিল সোয়া দুই বিলিয়ন। আর আজ দু'জন। 
- হুম।
- একজন আপনি মিস্টার অমু। অন্যজন আমি।
- হুম। 
- অবিশ্যি। যেহেতু অন্য কেউ আর ফেসবুকে নেই, কারুর জানা সম্ভব না যে আমি আর আপনিই শেষ দুই বান্দা। স্বাভাবিক ভাবেই আপনি ঢাক পেটানোর লোক নয়; সে'টা হেল্প করেছে। 
- কিন্তু ফেসবুক ইউজাররা কেউই নিজে থেকে ফেসবুক ছাড়েনি। 
- করেক্ট। 
- আপনি তাদের সরিয়েছেন?
- সরানো কথাটা ভুল। সরাইনি। ফিল্টার করে দিয়েছি। 
- বিশ্রুত ফেসবুক? 
- অতি বিশ্রুত।
- ছাঁকনিটা কী'রকম ছিল? 
- সে'টা বলতেই আপনাকে ডাকা।
- আরেক কাপ কফি বলা যায় না? পাঁচ মিনিট তো আরও আছে। 
- বেশ।
- এবার বলুন। ফিল্টারটা কেমন? 
- ফিল্টারটা গোপন ছিল মিস্টার অমু। 
- সে'টা অবভিয়াস। 
- ফিল্টারের নাম ছিল হিউমসার। 
- হিউমসার?
- একটা অ্যালগরিদ্‌ম। যে'টা মানুষের ফেসবুক উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে তৈরি। ঘোলাটে ফর্মুলা দিয়ে আপনাকে বিরক্ত করব না। ব্যাপার হচ্ছে যে এই অ্যালগরিদমে সমস্ত ফেসবুক ইউজারের একটা হিউমসার ইন্ডেক্স তৈরি হয় গোপনে।
- হিউমসার ইন্ডেক্স? হিউমসারটা এবার বোঝা দরকার। 
- ফর্মুলা জটিল হলেও এই ইন্ডেক্সে মোদ্দা ব্যাপারটা হচ্ছে নিউমারেটরে সারকাস্টিক হওয়ার অদম্য ইচ্ছের পরিমাপ আর ডিনোমিনেটরে সেন্স অফ হিউমরের কোশেন্ট। সারকাজ্‌ম ব্যাপারটা সবার সহজাত নয় অমুবাবু।
- অফ কোর্স। সবাই তো সুখী হতে চায়, তবু কেউ সুখী হয় কেউ হয় না। মান্নাবাবু কদ্দিন আগে গেয়ে গেছেন। 
- সেখানেই গোলযোগ শুরু হয়েছে। এই ইন্ডেক্স কারুর স্কোর শূন্য দশমিক দুই পাঁচের বেশি হওয়া মানেই সে খিস্তি আর সারকাজ্‌মের ফারাক জানে না ।  দুই বিলিয়নের ফেসবুকের ইউসারের গড় হিউমসার ইন্ডেক্স কত জানেন?
- আন্দাজ করার সাহস নেই। 
- শূন্য দশমিক নয় সাত আট ছয়। সোয়া দুই বিলিয়ন মানুষ ক্রমাগত একে অপরের উপর আছড়ে পড়ছে এই ভেবে যে তাদের সারকাস্টিক লাইসেন্স রয়েছে অথচ প্রায় কেউই সারকাজ্‌মকে ডিকোড করতে পারছে না। 
- কালাম বলে গেছিলেন "না চাহিলে যারে পাওয়া যায়, তেয়াগিলে আসে হাতে"।
- ওই। সারকাজ্‌মকে মুঠোয় ধরতে গেলে যে মাতব্বরির খপ্পরে পড়তে হয়, সে'টা কেউ বুঝতে চাইল না। বোঝার সময়ও নেই বোধ হয় কারুর কাছে। ফেসবুক এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করতে চাইনি কিন্তু  এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশকে ফেসবুকের কারণে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হত মিস্টার অমু।     
- অস্বাভাবিক কিছু নয়। আচ্ছা, এই হিউমসার ইন্ডেক্স কি আপনি ফেসবুকের আগে তৈরি করেছিলেন?
- সময় থাকলে আরও এক কাপ কফি খাওয়াতাম আপনাকে অমুবাবু। ঠিক ধরেছেন। বিশ্ব জুড়ে হিউমসার টেস্ট করতেই ফেসবুকের সৃষ্টি। 
- লক্ষ্য?
- আমার হিউমসার ইন্ডেক্স স্কোর ছিল শূন্য দশমিক এক তিন। আমার লক্ষ্য ছিল আমার চেয়েও কম হিউমসার ইন্ডেক্সের কাউকে খুঁজে বের করা। হদ্দ হয়ে পাড়া প্রতিবেশীর স্কোর মেপে হতাশ হতে হয়েছিল। স্বাভাবিক। তখনই মাথায় আসে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের কথা। ব্যাপারটা সোজা কিন্তু সহজ ছিল না। এদিকে সেই ফেসবুক এই বাজে সারকাজমের ভারে ন্যুব্জ হতে শুরু করেছিল। বুঝলাম অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। প্রতি হপ্তায় শেষের দশ পার্সেন্টাইলকে ঠেলে বের করতে শুরু করলাম। কয়েক প্রস্থ বাদ দিয়েই বুঝলাম অজ্ঞাতবাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্যাঁদানির ভয়। 
- শেষ পর্যন্ত ফেসবুকে রয়ে গেলেন আপনি আর আপনার সাথে আমি।
- আপনি আমার সাথে নন অমুবাবু, উপরে। 
- আমার ইন্ডেক্স স্কোর?
- শূন্য দশমিক শূন্য আট।
- অতএব আপনি খুঁজে পেয়েছেন। 
- পেয়েছি।
- ফেসবুকের প্রয়োজন ফুরিয়েছে তাহলে। 
- অন দ্য কন্ট্রারি মিস্টার অমু। প্রয়োজন ফুরোয়নি। বরং ব্যবহারের এই তো শুরু। 
- কী'রকম?
- মাতব্বরের দুনিয়া থেকে সরে এসে আপনার সাথে গপ্পগুজব হবে। নিভৃতে। ফেসবুকে। আমার অনলাইন সোশ্যাল প্রেজেন্স বলতে আপনার ফেসবুক ইন্টারফেসটুকুই থাকবে। 
- এটুকুই?  
- না। এটুকু নয়। ফেসবুকে তিন নম্বর ইউজার আসবে কিছুদিনের মধ্যে। ম্যাক্সিমা। 
- আপনার কন্যা?
- হিউমর দিতে চাই ওকে। গালাগাল নয়, গলাবাজি নয়, অমুক ভালো তমুক খারাপ নয়। নির্মল মজা। ধারালো মজা। খুনে লোলুপতা নয়। বাপ মেয়ের সাথে দিনের কয়েক মিনিট কাটাবেন মিস্টার অমু? ফেসবুকে?

(ছবি ঃ গুগল ইমেজেস)

Comments

Writer said…
খুব সুন্দর, অসাধারন, অসংখ্য ধন্যবাদ।
Mohua Roy said…
A.Mu decoded.Humsor decoded . trying application (need training). Lekha durdanto. Mogoj dharalo.Mostishko urbor.Brilliant.
Unknown said…
অসাধারণ !!!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু