Skip to main content

দীপক চ্যাটার্জী আর আবছায়া

কনুইয়ের নিচ পর্যন্ত গোটানো খয়েরী সাদা চেক জামার হাতা। বুকের দু'টো বোতাম খোলা। দীপক চ্যাটার্জীর মোজা জোড়া জুতোয় আর জুতো জোড়া হাতে। প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটুর ওপর। গোড়ালির বেশ কিছুটা ওপর পর্যন্ত জল, বাড়তি ঢেউয়ের আনাগোনা হাঁটু ছাপিয়ে প্যান্ট ছোপাচ্ছে অহরহ। 

মুখে ঝাপটে পড়া হাওয়া। হাওয়া। রাতের হাওয়া। সমুদ্র চষা হাওয়া কিন্তু ঝোড়া নয়, মিঠে। এদিকটা ফাঁকা। কিন্তু দীপক চ্যাটার্জী একটা অবিশ্বাস্য একা না থাকার জেদ নিয়ে লোফালুফি করে চলেছেন। ভলকে ভলকে মুহূর্তরা চোখ নাক মুখ ছুঁয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, দীপক পালটা ঢেউয়ে বঙ্গোপসাগরকে চুবনি খাওয়াচ্ছেন। 

মনে মনে। 

কাঁচা সন্ধ্যেরা বড় বেশি স্মৃতিগ্রাহ্য। সন্ধ্যারা বুকপকেটে বাড়ে। ঢেউ হাওয়ার ঘর্ঘস শোঁশোঁ ছাপিয়ে সাইকেল বেলের টুংটাং টের পান দীপক চ্যাটার্জী। সামুদ্রিক আকাশের নিংড়ে ঝেড়ে ফেলা অন্ধকার ঘোলাটে হয়ে আসে তার চোখের সামনে, চাষিপাড়ার দক্ষিণের সরু গলিটার পোলের বাতিতে। দীপক চ্যাটার্জী বোতাম খোলা বুকের পরিসরে চেনা শিরশিরানি অনুভূত হয়।   সে সুবাসের সাথে সে গলির আলো মিশে থাকতো। ঘোলাটে কালচে শ্যাওলা মেশানো; আদর পাকিয়ে আনা আলোর সলতেটুকু সে গন্ধে। নরম। পশমের মত নরম গন্ধ। ল্যাভেন্ডার।  তাতে শাড়ির আঁচল মিশে যেত। সুতির শাড়ি। সুতির ব্লাউজ। ক্লাস টুয়েল্ভ সাদা লাল পেড়ে। আঁচলে ল্যাভেন্ডারে, শ্যাওলায়, হলদে ম্যাটম্যাটে আলো মেশানো সুবাস নিষ্পাপ বয়ে আনত।  

গলিটা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলতে পারত। বেঁধে ফেলেও। আজও। আজহারি কবজির মোচড়ে। 
সবুজ হারকিউলিস সাইকেলের ডগা ছুঁয়ে দাঁড়ানো মেরুন লেডিবার্ডের সামনে রাখা অদরকারি বাস্কেট। অদরকারি খাতাপত্র রাখা। সমুদ্র ঘন হয় আসে, সন্ধ্যেগুলো ঝাপটা দেয়।  

"বাবু, এসেছিস?"। 

আবছায়া ফুঁড়ে ঘুরে দাঁড়ান দীপক চ্যাটার্জী। 
যেমন ঘুরে দাঁড়ানো পুরনো গলির কোণে। টুংটাংয়ে। লেডিবার্ডের বেলটুকুও হারকিউলিসের চেয়ে নরম; আসমানি। 

"বাবু"। মেঘের মত ভাসমান। অপেক্ষমাণ। সজল। মেঘে ল্যাভেন্ডারের গন্ধ। লেডিবার্ডের বাস্কেটে রাখা অঙ্ক খাতার গন্ধটুকুও চেনা। ল্যাভেন্ডার মেঘ, সুবাসে ভাসা গলি। গলির ঢেউ গোড়ালি বেয়ে সম্বিতে টেনে আনে। 

বুকে ঝনাৎ মোবাইল বেজে ওঠে। 

"বাবু, আর কতক্ষণ?"।

"এই আসছি মা"।  আর শুধু কিচি ডাকত; "বাবু"।  আবছায়া ফুঁড়ে ঘুরে দাঁড়ান দীপক চ্যাটার্জী।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু