Friday, February 12, 2016

নিলয় গার্গীর সমস্যা

- কী ব্যাপার? এমন হুড়মুড় করে ডাকলে? অফিসে কী সাঙ্ঘাতিক কাজের প্রেশার ছিল জানো! অনেক চেষ্টা চরিত্র করে বেরোতে পেরেছি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরতে হবে।
- কী অর্ডার করব?
- একটা কাটলেট। ইউসুয়াল।
- দু'টো ফিশ কাটলেট আর দু'টো থাম্‌স আপ।
- এখন বলো। কী হয়েছে?
- দু'দণ্ড জিরোতে দাও। গরমটা বেশ পড়ে গেছে।
- তুমি যতটা ঘামছ, ততটা গরমও আজ নয়। কী হয়েছে বলবে নিলয়?
- আহ! বলছি। বলার জন্যেই তো তোমায় ডেকেছি গার্গী।
- এমন কী ব্যাপার যেটা ফোনে বলা যেত না? তুমি এত টেন্স যা নিয়ে? আমাদের বিয়ে নিয়ে তোমার কোন ডাউট আছে?
- কী বলছ! কত কাঠখড় পুড়িয়ে বাবামাকে রাজী করাতে পেরেছি।
- তাহলে ব্যাপারটা কী?
- কাটলেটের জন্য অপেক্ষা করলে হত না?
- থামস আপ তো আছে। বিষম লাগার ভয় নেই। তুমি বলো। আর আমার হাতে সময়ও নেই এত।
- আগামী মাসের পয়লায় আমাদের বিয়ে গার্গী।
- আমি জানতাম তোমার মধ্যে বিয়ে নিয়ে ডাউট আছে। আড়াই বছরের প্রেম আর তুমি তবুও...।
- বলছি তো না। বিয়ে নিয়ে ডাউট নেই। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। পাগলের মত। অ্যাজ ইন, আর চারটে সিনসিয়ার প্রেমিক যে ভাবে চাইবে।
- তাহলে ব্যাপারটা কী?
- একটা জরুরী কথা তোমায় জানানো দরকার।
- জরুরী কথা? যেটা আমি এখনও জানি না?
- হ্যাঁ। এবং যেটা তোমার অবশ্যই জানা উচিৎ।
- পুরনো প্রেম? বা প্যারালালি কাউকে ডেট করেছ?
- না না। ইনফেডিলিটি সংক্রান্ত নয়। তুমি জানো তো, আমার নেচারটা।
- ব্যাপারটা কী নিলয়?
- ব্যাপারটা মানে...।
- আমার কোন কিছু তোমার অপছন্দ? আমায় কিছু পাল্টাতে হবে?
- আরে ধুস। না। আমার নিজের ব্যাপারে একটা জিনিষ তোমায় জানাতেই হবে। বিয়ের আগে সেটা জানা তোমার দরকার।
- উফ! এবার আমার রীতিমত টেনশন হচ্ছে। বলবে তো ব্যাপারটা কী?
- মনে আছে সে'বার আমাদের ফ্ল্যাটটা ফাঁকা ছিল, তুমি আসতে চেয়েছিলে...ওই একটু ইন্টিমেসির জন্য...।
- হ্যাঁ। গত ডিসেম্বরে। তোমার মনে হয়েছিল সে'টা করা মানে তুমি তোমার বাবা-মায়ের ট্রাস্ট বিট্রে করবে।
- এগজ্যাক্টলি।
- দ্যাট ওয়াজ এক্সট্রিমলি সিলি অফ ইউ। বাট এনিওয়েজ। বাদ দাও। হঠাৎ সেই রেফারেন্স আজকে তুলছ কেন?
- না মানে। সেদিন যে বলেছিলাম বাবামায়ের ট্রাস্ট বিট্রে করার কথা ,সে'টা ঠিক...ইয়ে সত্যি ছিল না।
- হোয়াট? তাহলে মিথ্যেটা বলেছিলে কেন?
- আমার একটা...একটা...।
- তোমার একটা কী?
- নার্ভাস করে দিও না। কাটলেটটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। খাও।
- টু হেল উইথ ইওর কাটলেট। হোয়াই ডিড ইউ লাই টু মি?
- কারণ আমার একটা...।
- তোমার একটা...?
- আমার একটা...শারীরিক সিচুয়েশন আছে। আমি জাস্ট হেসিটেট করছিলাম তোমায় জানাতে...।
- হেসিটেট করছিলে! আই অ্যাম সরি...নিলয় তুমি কি...ইয়ে...ডোন্ট গেট মি রং...আমার ভালোবাসা অল আউট কার্নাল নয়। আই রিয়েলি লাভ ইউ অ্যান্ড আই ওয়ান্ট টু বি উইথ ইউ নো ম্যাটার হোয়াট। কিন্তু তোমার যদি পোটেন্সি ইস্যুস থাকে আমায় বলতে পারো...।
- পো...না না...সে’সব নয়। আমি নর্ম্যাল।
- নর্ম্যাল?
- মানে...ইট ফাংশন্‌স পার্ফেক্টলি ওকে।
- ওহ। আচ্ছা। বেশ। ওকে। ফাইন। তাহলে কী এমন ব্যাপার নিলয়? আর তুমি এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করছ কেন?
- কারণ। আমার শারীরিক সিচুয়েশনটা তোমায় জানানো আমার কর্তব্য। জরুরী।
- সে’টা কী?
- গার্গী। আমার। আমার একটা লেজ আছে।
- হোয়াট?
- লেজ। টেল। টি এ আই এল।
- তোমার লেজ আছে?
- লেজ। আছে।
- উফফ।
- কী হল?
- এটা কী ধরনের ঠাট্টা?
- পূর্ণ সত্য।
- তোমার লেজ আছে?
- আছে। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। প্যান্টগুলো স্পেশ্যালি ডিজাইন করা। টু ক্যামোফ্লেজ। আমি হাফ প্যান্ট বার্মুডা পরি না।
- ওকে। হাউ ইজ ইট?
- লেজটা? এই। এক ফুট তিন ইঞ্চি। ফ্লেক্সিব্‌ল, ভলেন্টারি কন্ট্রোল আছে। লেজের মাথায় অল্প চুল, ওই যেমন গরু-টরুর হয় আর কী। নর্মাল চামড়ার রঙের।
- ইট ইজ নট আ জোক?
- নো।
- হুম...। আচ্ছা, তুমি ওটাকে সার্জিকালি বাদ দিচ্ছ না কেন?
- বহু বছর ধরে কনসাল্ট করেছি। বহু ডাক্তার। বড়দা আমেরিকাতেও নিয়ে গেছিল। ডাক্তারদের একটাই কথা। এ লেজের সঙ্গে মেরুদণ্ডের নিবিড় যোগাযোগ। সার্জিকালি কিছু করতে গেলেই পিঠ থেকে নিয়ে গোটা শরীর প্যারালিসিস হয়ে যাওয়ার চান্স শতকরা নিরানব্বই ভাগ।
- ওহ!
- সো?
- তাতে কী আর হল। আমরা ভালবেসেছি। লেজের জন্য বিয়ে করব না এতটা ঠুনকো নাকি আমি?
- ওহ! বাঁচালে।
- তুমি বড্ড বোকা নিলয়। এটুকুর জন্য এত নার্ভাসনেস?
- একবার দেখবে?
- তোমার লেজ? কী দরকার। ফুলশয্যার রাতেই বরং...।


**

গার্গী ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছিল। শরীরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠছিল তার। নিলয়ের জড়িয়ে ধরার রেশটুকু সহজেই মিলিয়ে একটা বমিভাব তৈরি হয় যখন নিলয়ের লেজের ঝাপটা লাগে তার উরুতে কোমরে পেটে। অথবা যখন দুর্বার মাদকতায় নিলয়কে জাপটে ধরতে গিয়ে ওর লেজে হাত পড়ে যায়; শিউরে ওঠে গার্গী। শরীর অবশ হয়ে আসে। ভিতরের ভালো লাগাটা নিমেষে যন্ত্রণায় পরিণত হয়। এমনটাই হয়ে এসেছে গত দেড় বছর ধরে। গার্গী অনেক চেষ্টা করে যাতে নিলয় বুঝতে না পারে, অভিনয়ও করে কতকটা। কিন্তু উচ্ছ্বাস অভিনয়ে সহজ হবে কী করে ?
নিলয় বুঝতে পারে। টের পায়। গার্গীর ভিতরটা ন্যুব্জ হয়ে আসে একটা অসহ্য যন্ত্রণায়।
সিগারেট মদ দিয়ে বিয়ে টেকানো যায় না। গার্গী জানে।

**
-        ইটস ওকে। আই আন্ডারস্ট্যান্ড।
-        আমি চেষ্টা করেছি নিলয়। কিন্তু...।
-        আমি জানি।
-        আমি তোমায় আর ঠকাতে পারব না।
-        আমি জানি, তুমি কোনদিনই তা চাওনি গার্গী।
-        কিন্তু আমি রাতগুলোকে ভয় পেতে শুরু করেছি নিলয়। এভাবে বিয়ে আঁকড়ে থাকার মানে হয় না।
-        অভিরূপ ভালো ছেলে। তোমায় ভালো রাখবে।
-        আই লাভ্‌ড ইউ নিলয়। ট্রুলি।
-        আমি বুঝি। বুঝি। তুমি না থাকলে যন্ত্রণা থাকবে, তবে হয়তো ম্যানেজ করে নেব। কিন্তু কিছু হয়নি এমন ভান করার মানেই হয় না।
-        আসি।
-        - এসো।

**
সমস্ত গুলিয়ে যাচ্ছিল গার্গীর। তিনবার সুইসাইডও করতে গেছিল। পারেনি।
এমনটা যে হবে সে’টা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। স্বপ্নেও না। নিজেকে, নিজের মনকে, নিজের শরীরটাকে চিনতে গিয়ে এতটা বোকা বনতে হল তাকে? কী ভীষণ সুন্দর ছিল অভিরূপের সাথের প্রথম কয়েকদিন। অস্বস্তিটা মাথাচাড়া দিল মাসখানেক পর। মনের কোন অন্ধকার কুঠুরি থেকে যে সাপটা বেরিয়ে এসে গার্গীকে ছোবল দিয়েছিল।
অন্তরঙ্গতার গভীরতম মুহূর্তে একদিন অভিরূপের কোমর জড়িয়ে ফাঁকাভাবটা অনুভব করেছিল সে। বুকের মধ্যের এক প্রবল ছ্যাঁত অনুভব করেছিল। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এটা চেয়েই তো নিলয়ের থেকে দূরে আসা। নিজের উরুতে লেজের স্পর্শটুকু না পেয়ে মনে মনে ককিয়ে উঠেছিল সে।
ছিঃ! নিজেকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল গার্গীর। এ কী! এটা অন্যায়। অভিরূপের জন্য এবং তার নিজের জন্য। এটা সুস্থ নয়। এটাকে সে এতদিন ঘৃণা করে এসেছে, এর সাথে পরমসুখের যোগ নেই। থাকতে পারে না।
কিন্তু না। একটা লেজের অভাবেই তৃপ্তি আটকে যেতে শুরু করেছিল গার্গীর। ছুঁচ থেকে মহামারীর আকার নিতেও সময় লাগেনি। মাসখানেকের মধ্যে প্রায় পাগল হয়ে যেতে বসেছে সে। অভিরূপকে দেখলে শিউরে ওঠে, অভিরূপের ছোঁয়ার ভয়ে ক্রমাগত পালিয়ে বেড়ায়। প্রবল ভালোলাগার সাথে লেজ-স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা এমনভাবে মিলে যাবে, গার্গী সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।

***
কলিং বেলটা বাজিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল গার্গী। মিন্টু দরজা খুলবে। নিলয় নিশ্চই সোফায় বসে গল্পের বই পড়ছে। জাপটে ধরবে ওকে। খোলাখুলি বলবে যে ওকে ছাড়া গার্গী আর এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। চুমুতে ভরিয়ে দেবে ওকে। জাপটে ধরবে। আদরে প্রমাণ করবে যে নিলয়কে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ও কতটা অনুতপ্ত। নিলয় ফেরাবে না ওকে; গার্গী নিশ্চিত।
যথারীতি মিন্টুই দরজা খুলল। বৌদিমনিকে দেখে তো সে অবাক।

সোফায় অবিশ্যি ছিল না নিলয়। মিন্টু জানালে নিলয় ব্যালকনিতে রয়েছে। এক ছুটে ব্যালকনিতে গেল গার্গী। নিলয় সেখানে হুইলচেয়ারে বসেছিল, তার ঘাড় ঝুলে পড়েছে বাঁদিকে। মিন্টু এসে সাহায্য না করলে ঘাড় সোজা করতে পারে না সে। সেই প্রথম গার্গী নিলয়কে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখল।

2 comments:

Anonymous said...

Asadharan. Ki bhabe bolbo jani na... I am totally amazed.

Banasri said...

Khub touchy