Skip to main content

বাবু যুধিষ্ঠির


- অ্যাই। অ্যাই। চললেন কোথায় মশাই? চললেন কোথায়?
- না মানে। হাতঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেস্‌ল কিনা। জাস্ট খেয়াল করিনি। একটা জরুরী মিটিং আছে বুঝলেন। এখুনি না বেরোলে কোন উপায় দেখছি না। 
- ইয়ার্কি হচ্ছে? চারটে মড়া পড়ে রইল। আমার পিপাসা মিটল না। বাতেলা ঝাড়ার সময় তো আকাশ উপড়ে খাওয়ার তাল করছিলেন। বাবা! সে কী তম্বি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল খেলে মারা যেতে হবে। কত লেকচার মাইরি। কত কেতা! হাজার গণ্ডা সওয়াল ফ্লায়িং ডিস্কের মত ছুঁড়ে দিয়ে তারপর আবার নতুন র‍্যালা; সব ভাইকে বাঁচিয়ে দেব। বলি এ'সব কী? এরা এখনও ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে আছে তো! 
- না না। বুঝতে পারছেন না। এক কেমিক্যাল মেশাতে অন্য কেমিক্যাল মিশিয়ে দিয়েছি জলে। কাজেই অ্যান্টিডোটটা কাজ করছে না। তাই বলছিলাম, জলটা আপনিও না খেলেই ভালো।
- সর্বনাশ। কী ফেরেব্বাজ লোক মশাই আপনি।
- আরে। তাই বলে জামা ধরে টানবেন? এই আপনি ধর্মরাজ?
- এ'সব ফালতু কথা ছাড়ুন! ভীম অর্জুন না থাকলে ধর্মকে প্রটেক্ট করবে কে? গেল গেল সব গেল। 
- ইয়ে জামাটা ছাড়ুন। মিটিং আছে, মাইরি। 
- তবে রে রাস্কেল?
- যুধিষ্ঠিরের মুখে খিস্তি?
- কাঁচাগুলো তো থলে থেকে বার করিনি এখনও। এদের না বাঁচালে রক্ষে নেই আপনার। এই বলে দিলাম।
- আহ! কী মুশকিল। বললাম তো। ভুল কেমিক্যাল মেশানো হয়ে গেছে। ল্যাবরটেরি থেকে ভুল মাল পাঠিয়েছে নিশ্চই। ব্যাচেও গড়বড় হতে পারে। আমার কিছু করার নেই। ফিরে গিয়েই একটা কড়া করে কমপ্লেইন লেটার লিখে দেব'খন। 
- কিছু করার নেই মানে? নিজের বাবাকে বলো এ'সব কথা।
- পাণ্ডু পুত্রের বাপ তুলে খিস্তি দেওয়ার রিস্ক নেওয়াই উচিৎ না। 
- মুখ সামলে মুখ সামলে। 
- শুনুন। শুনুন। আমায় খিস্তি করে কী হবে? কলার না হয় ধরলেন, ক্যালাতে পারবেন? পারবেন না। আপনি ভীম নন। কথায় চাবকাতে পারবেন? পারবেন না। আপনি কেষ্টা নন। আর এদিকে যা কেস; বিশেষ কিছু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 
- কী?
- কাস্টোমার কেয়ারে কল করে বলুন কী ঘটেছে। টোল ফ্রি। 
- লাভ হবে?
- হবে না। তবু। মন হালকা হবে। 
- গেল গেল সব জলে গেল। 
- কী?
- সব। রাজ্য। পয়সাকড়ি। সব। এবার ঐ দুর্যোধন হারামজাদা ব্যসবাবুকে গ্রিপে নিয়ে নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ ফলিয়ে মহাভারত লেখাবে। আমার ক্ষমতা থাকলে আপনাকে আমি খুন করতাম এখন। 
- ক্ষমতা আছে?
- দম থাকে তো জাস্ট ভীমকে জাগিয়ে দিন। কার কত ক্ষমতা দেখিয়ে দেব। 
- থাক। খুব হয়েছে। আচ্ছা, এবার আমি আসি?
- হায় হায়। এ ব্যাটা সব মাটি করলে। আমায় পথে বসালে। রাজা হয়ে পাশবালিশ আঁকড়ে জুয়া খেলে দিন কাটাব, সে আর এ জন্মে হল না।  
- মশায় । ভেবে দেখুন। ক্ষতি কি সত্যিই হয়েছে?
- ফের প্রশ্ন? জুতিয়ে দাঁত ভেঙ্গে দেব! গাম্বাট কোথাকার। 
- আহ! চটছেন কেন? ভেবেই দেখুন না। ক্ষতি হয়েছি কি?
- হয়নি? ভাই গেল। রাজ্য গেল।
- তাতে কী?
- তাতে কী? ব্যাটাচ্ছেলে সব ভাসিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তাতে কী?
- সব ভেসে গেছে?
- যায়নি আবার? অমন পেল্লায় ভীম, অমন ধারাল অর্জুন, অমন আর্দালি নকুল, অমন পিওন সহদেব। আহা। বড় দুঃখ গো। অমন রাজকোষ। আহা, বুক ফেটে যাচ্ছে জাস্ট। 
- এটুকুই সব? এ লিস্টের বাইরে আর কেউ নেই?
- হুম?
- আর কেউ নেই?
- না মানে...।
- মানে?
- আছে। মানে ওই আর কী!
- ওই আর কে?
- পানু। 
- পানু? 
- পাঞ্চালী। এটা বেডরুমের ডাকনাম। 
- তাই বলে পানু?
- মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। আহা। বড় ভালো মেয়ে। অর্জুন এই একটা কাজের কাজ করেছে। আহা। বড় ভালো মেয়ে। 
- ভালো লাগে? পানুকে?
- এই। বৌদি বলুন। 
- সরি। বৌদিকে ভালো লাগে?
- আমি ও-অন্ত প্রাণ। আহা। এত নরম। এত কোমল। এত ভালোবাসার। এত...।
- বুঝেছি। বুঝেছি। আর এলাবোরেট করতে হবে না। তা, এখনও মনে হচ্ছে সব মাটি?
- নাহ! মানে...আসলে...। 
- আসলে...?
- অর্জুন ভীম বড় বেশি ডিস্ট্র্যাক্ট করত ওকে জানেন। আর নকুল সহদেব কন্সট্যান্ট ঘ্যানরঘ্যানর। চাট্টি সুখ দুঃখের কথা যে বলব...। সময়ই পেতাম না। 
- রাজ্য চাই?
- রাজ্য কে? 
- ভাই?
- জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। 
- তাই তো। তবে আপনি বললে নতুন অ্যান্টিডোটের একটা চেষ্টা করতে পারি। 
- আপনার কী একটা মিটিং ছিল বলছেন? এই দ্যাখো। আপনার জামা খামচে দাঁড়িয়ে আছি তখন থেকে। নার্ভাস হলে আমার আবার ইয়ে থাকে না। বিশ্রী। গেল তো ইস্তিরি নষ্ট হয়ে? যাক। এবার বেলা থাকতে বেড়িয়ে পড়ুন দেখি। অন্ধকার হলে আবার বড় অসুবিধে। এদিকে দিনকাল যা পড়েছে।
- আসি তবে?
- দুগ্‌গা দুগ্‌গা! 

Comments

Anonymous said…
যা,যা। দিল সত্যবাদিতার নড়া ধরে ঝাকিঁয়ে - কি লোক রে বাবা!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু