Skip to main content

নরেনবাবু ও ম্যামথ

কুস্তির প্রয়োজনীয়তা প্রাগৈতিহাসিক।  নরেনবাবু জানেন। মানুষ পাথর ছুঁড়ে ম্যামথ মেরে ডিনার করার জন্য প্রোগ্র‍্যামড। গাছের মগডাল থেকে ফল পাতা পেড়ে ব্রেকফাস্টের আয়োজনে  শশব্যস্ত থাকাই তার ভবিতব্য। দুনিয়াটা বাকল-বিকিনি আর লুঙ্গি মুগুরবাজে পরিপূর্ণ থাকার কথা ছিল।
দমাদম ফ্রি সেক্স, দুমাদুম মুগুর-পেটা,
আজ ডাইনোসরের রোস্ট তো আগামী সাতদিন ঘাস-ছোলা;
মানব-জীবনের সহজ ইকুয়েশন এ'সব ভ্যারিয়েবলগুলোর মধ্যেই থাকা উচিৎ ছিল। অন্তত নরেনবাবুর তাই বিশ্বাস।

সমস্ত মাটি করলে সিভিলাইজেশনের হাভাতেপনা ঢুকে পড়ে। অটোর জন্যে খুচরো রাখ রে, জন্মদিনে পায়েস খাও রে, প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে গা ঘিনঘিনে মনোগ্যামাস চিঠি লেখো রে, ভুবন সোম দেখে "মন্দ না" বলে ঢেঁকুর তোল রে অ্যান্ড ওয়ার্স্ট অফ অল; কথায় কথায় না কিলিয়ে ডিবেট করা।

নরেনবাবুর হাড় হিম হয়ে আসে ডিবেটের প্রসঙ্গ এলেই। কারণ তিনি জানেন; মানুষ তর্ক করে সত্যান্বেষণের জন্য নয়। মানুষ ডিবেটের নামে ম্যামথ তাক করে পাথর ছোঁড়ে। গাছের ডালে চড়ে বসে ল্যাজ খেলায়। হাতে থাকে অদৃশ্য মুগুর, মুহুর্মুহু যা দমাস করে চাপিয়ে দেওয়া হয় টেবিলে। ওদিকে টেবিলকুমার বিরুদ্ধমতাবলম্বীর মাথার তালুর রোল প্লে করে চলে।
এ'সবই জানেন নরেনবাবু।

এদিকে সভ্যতার আবার গোঁফ গজিয়েছে, নরেনবাবুর তাতে বাড়তি আতঙ্ক; অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া। তিনি স্পষ্ট দেখতে পান সে মোম ঘষা গোঁফের কাঁপুনি।
এই যেমন নরেনবাবুর প্রতিবেশী জীবন সমাজপতি।  সোফায় বসে বেশ মিনমিনে মেজাজে গপ্পগাছা করে থাকেন। ফেসবুক খুললেই তিনি খুঙখার।
সোফায় হয়ত তিনি পা দুলিয়ে নরেনবাবুর পলিটিকাল ওপিনিওন কে নস্যাৎ করে বলছেন "নাহ হে নরেন, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়!"। ওদিকে ফেসবুকে সেই জীবনবাবুই কথা শুরু করেন মোরনিক অ্যাসহোল দিয়ে  এরপর থরে থরে সাজিয়ে দেন সিউডোওমুক, তমুকটার্ড ইত্যাদি।
নরেনবাবু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যান।

ফেসবুকি জীবনবাবুকে দেখলেই নরেনবাবু দিব্য চক্ষু মেলে দেখতে পান যে জীবনবাবু সেবারটুথ টাইগারের পিঠে চেপে কচাকচ ব্রয়লার কাটার মত ম্যামথ ছাড়াচ্ছেন। রাতে কষানো ঝোল হবে।তার সামনে বসে এক প্রাগৈতিহাসিনী আর পিছনে আরেক। জীবনবাবু স্যান্ডুইচ মেজাজে হাসছেন। তাঁর মুখের ফেসবুকি গনগনে আঁচটা একদম নেই।

সেই জীবনবাবু যখন ফেসবুকে তার লেজ টেনে লিখলেন; "জে এন ইউ; ভেবে দেখার সময়। হিসেব বুঝে নেওয়ার সময়। চিনে নেওয়ার সময়" - ফিলিং ডিসগাস্টেড উইথ নরেন বসুমল্লিক অ্যান্ড সেভেন্টি নাইন আদার্স।
নরেনবাবুর বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো।

খবরের কাগজ তিন দিন পড়া হচ্ছে না। হোমিওপ্যাথির রিসেন্ট যে ওষুধ খাচ্ছেন সে'টার সাথে আবার পেঁয়াজ আর নিউজচ্যানেল একদম চলে না। জেএনিউ তে কিছু একটা তালগোলের খবর এসেছে ঠিকই কিন্তু কোন দলে নাম লেখানোটা সেফ তা ঠিক মালুম করে উঠতে পারেননি। ডালহৌসি টু মনোহরপুকুর রোডের বাইরে বড়জোর খানিকটা উত্তরপাড়ার সামান্য খবর তিনি রাখেন; কারণ সেখানে রাঙাপিসিমা থাকতেন আর মারা যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত চমৎকার বড়ি-পাঁপরের তরকারি রেঁধে গেছেন।

সোজা হিসেব। একটা দলে ভিড়তেই হবে। না ভিড়লে অ্যাপাথেটিক ডাম্বঅ্যাস বলে বদনাম রটবে। আখড়ায় বসে শান্তিপুরি ধুতির পেখম মেলা যায় না, জাঙিয়াতে নেমে আসতেই হবে।

নরেনবাবু চান্স নিলেন না কোনও। সোজা ফেসবুকে ঝেড়ে দিলেন:

" হারামির গাছ যত। তোদের হচ্ছে"- ফিলিং কনসার্ন্ড উইথ জীবন সমাজপতি অ্যান্ড ফিফটি সেভেন আদার্স।

তারপর সোজা ইন্টারনেট বন্ধ করে পুরোন ইন্দ্রজাল হাতে ডিনার টেবিলের দিকে হেঁটে গেলেন নরেনবাবু। ঘরের কোণের ম্যামথটা একটা ভ্যাবাচাকা "ফোঁত" শব্দ করে দাঁড়য়ে রইল, সেবারটুথটা বোধ হয় কনফিউসনের চোটেইই সোফা কামড়ে ধরলে।

নরেনবাবু যতক্ষণে ভাতের পাহাড়ের মাথায় ডালের বাটি উপুড় করে দিয়েছেন ততক্ষণে তাঁর ফেসবুকের কমেন্টে বারোটা লাইক আর শ'খানেক কমেন্ট। পরে দেখেশুনে একটা সিভিলাইজড পাথর ছোঁড়া দল বেছে নিলেই হবে'খন। আপাতত আদিম সুখের পরশে টেনে নিলেন আলু পোস্তর বাটিখানা।

Comments

Souvik said…
অনবদ্য। যাকে বলে গিয়ে Bull's eye 😆

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু