Monday, January 16, 2017

মৃগাঙ্কবাবুর ভবিষ্যতবাণী

জ্যোতিষী হয়ে এই এক সমস্যা হয়েছে। নিজের মৃত্যুটাও স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। মৃগাঙ্কবাবুর অবশ্য আর পাঁচটা সাধারণ জ্যোতিষীর সঙ্গে তুলনা চলে না। তিনি নিজের মুখে বলতে চান না তবে এ যুগের নস্ট্রাডামুস লেবেলটা তাঁর ওপর নিশ্চিন্তেই সেঁটে দেওয়া যায়।

রাম শ্যাম যদু থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন; কারুর ব্যাপারে মৃগাঙ্কবাবুর করা কোনও ভবিষ্যৎবাণীই আজ পর্যন্ত বিফল হয়নি।

শুধু একটাই দুঃখ নিয়ে যাবেন মৃগাঙ্কবাবু, তাঁর এই অদ্ভুত ক্ষমতার কথা কেউ জানল না, কদর করল না। সাউথ ইস্টার্ন রেলের কেরানী হয়েই জীবনটা কেটে গেল তাঁর। অথচ জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠ হতে গিয়ে বিয়েথাও করা হয়ে উঠল না। যাক্ গে, কেউ না জানুক। মৃগাঙ্কবাবু নিজে অন্তত এ'টা জেনে মরবেন যে তার কোনও ভবিষ্যতবাণী এক চুলও এদিকওদিক হয়নি কোনওদিন।

রোজ সকালে উঠে নিজের হাত দেখে দিনটা বুঝে নেন মৃগাঙ্ক হালদার। সকালের দুধ মুড়ি খেয়ে আজও বসেছিলেন বারান্দায়, শীতের রোদে ডান হাতের তালু মেলে। বাড়ির কাজের ছেলে রাজু বেরিয়েছে বাজার করতে, সে ফিরলে এক কাপ চা খেয়ে তারপর অফিসের জন্য রওনা দেবেন। রাজু ব্যাটা বড্ড ফাঁকিবাজ,  চোখে চোখে রাখতে হয়।

সে যাক, নিজের হাত দেখতে গিয়েই বিপত্তিটা টের পেলেন মৃগাঙ্কবাবু। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চট্ করে প্যাড পেন টেনে নিয়ে সামান্য অঙ্ক করে টের পেলেন যে আজ সকাল আটটা বেজে বাহান্ন মিনিট থেকে আটটা বেজে চুয়ান্ন মিনিটের মধ্যে তাঁর মারা যাওয়ার কথা। অর্থাৎ আজ আর অফিস যাওয়াটাও হল না। ছাতে কাপড় মেলতে যাবেন ভেবেছিলেন, তারও আর কোনও মানে হয় না। দেওয়াল ঘড়ি আর নিজের হাতের ঘড়ি মিলিয়ে নিলেন মৃগাঙ্কবাবু। এখন  বাজে আটটা বত্রিশ, মানে আর কুড়ি থেকে বাইশ মিনিটের মধ্যেই ঘটে যাবে ব্যাপারটা। যা হোক্, এখন সময় মত মরতে পারলেই পরম তৃপ্তি নিয়ে ইহলোক ছাড়তে পারেন তিনি।

একশো শতাংশ সঠিক ভবিষ্যতবাণী।  সব কটা নির্ভুল,  নিখুঁত। বেশ নার্ভাস বোধ করছিলেন মৃগাঙ্কবাবু। এমন দুর্দান্ত রেকর্ড অক্ষত রেখে যেতে পারবেন তো? দেখা যাক। তবে মারা যাওয়ার প্রসেসটা অবশ্য কিছুতেই হিসেব কষে বের করতে পারছিলেন না তিনি, হার্ট অ্যাটাক? ভূমিকম্প? কে জানে।

**
আটটা ছাপ্পান্ন বাজার সঙ্গে সঙ্গে মন ভেঙে গেল মৃগাঙ্কবাবুর। ভূমিকম্প নেই, বুকে অসহ্য ধড়ফড় নেই। সব ব্যর্থ। সব মিথ্যে ছিল। সবই তার আকাশকুসুম বিলাসী স্বপ্ন, তিনি আদৌ শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী নন। তিনি সকাল আটটা বেজে চুয়ান্ন মিনিটের পরেও বেঁচে আছেন। জীবনটাই ঝুঠো, নির্মম পরিহাস মাত্র।

সিলিং ফ্যান থেকে মায়ের শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে যখন ঝুলেছিলেন মৃগাঙ্কবাবু, তখন দেওয়াল ঘড়িতে ন'টা বেজে বাইশ মিনিট।

**

দিব্যি ফুর্তির মেজাজে আজ বাজারে বেরিয়েছিলে রাজু। এতটাই আনন্দ ছিল মনে যে মাছ সবজী কেনার সময় দু'চার টাকা এদিক ওদিক করার কথা মনেও এলো না তার।

বেশ জব্দ করা গেছে খিটখিটে ছিটগ্রস্ত বুড়োটাকে। সকাল আটটার আগে বাজারে না এলা মিনুর সঙ্গে দেখা হয় না। মিনুর সঙ্গে দেখা না হলে রাজুর মন ভালো থাকে না। অথচ বুড়ো কিছুতেই তাকে সাড়ে আটটার আগে বাজারমুখো হতে দেবে না।

বাধ্য হয়ে গতকাল মাঝরাত্রে উঠে গোপনে বাড়ির সমস্ত ঘড়ি আধ ঘণ্টা এগিয়ে দিয়েছিল রাজু। ঘুমোনোর আগে হাতঘড়িটা পড়ার টেবিলে খুলে রেখে যান বাবু, সে'টাও রাজুর সতর্ক নজর এড়ায়নি।

1 comment:

Anari Minds said...

Majhe majhe ekta prosno jage apnar lekha pore. Apni roj eto sundor plot bhaben ki kore! Normally dekhechhi jara roj lekhen, tara gotanugotik jibonjatra ba ghatona niye likhte pachhondo koren.. kintu apni moshai gurudev.. fan hoye jachhi kromoso apnar..

amra koekjon uthti lekhok mile kichhu lekhar chesta kori.. onuprerona pai apnar lekha gulo pore.. apnar theke aro tips pele badhito habo.